Friday, July 28, 2006

“ছালা, গালি কী গাছে ধরে.....“

শঁাখারী বাজারের কোন এক গলি। একটা স্বর্ণকারের দোকানের সামনে খাড়ায়া আছি। হালার গেছি দূর্গা পঁূজার দাওয়াত রক্ষা করতে। আমার ইমিডিয়েট বস, তারপর আবার বড়ই সেনেহ করেণ, না গিয়া থাহি ক্যামনে?

শাপলার মোড় থেইক্যা রিáা লমু চিন্তা করছি। কোন রিক্সাওয়ালাই যাইবো না। মেজাজ টা গেলো বিলা হইয়া।

আগাইতে আগাইতে ইত্তেফাকের মোড়। এক চান্দুরে পাইলাম। বড়ই রসিক মনে কইলো। মাথায় তেল চুপচুপ করে। মাঝখান দিয়া সিঁথি করা।

: অই মামু যাইবেন ওয়ারী?

: হ যামু। মাগার ওয়ারী কোন্ডে নামবেন?

অহন ডিরেকশন দেই ক্যামনে? অর মাথাডাই বাইছ্যা লইলাম। মাথার চুল ধইরা আগাইতে আগাইতে নাক পর্যন্ত নাইমা কইলাম। এইহানে যামু....। লগের জন হাসে, “আপনে পারেণ ও ভাই...“।

লইয়া গেলো। রাস্তায় প্রবীর দাদার বারকয়েক ফোন, অই মিয়া আইতাছ তো?

গিয়া হুনি ’মা’রে নিয়া নাকি লোকজন রওনা দিয়া দিছে। দাদা আমাগো লাইগা যায় নাই। লগে লগে কইলাম লন দেহি দাদা, মা’রে বিসর্জন দিয়া আহি। দাদা অবাক, কয় কী হালায়? মুসলমানের পোলা হইয়া যাইবো মা’রে বিসর্জন দিতে?

দৌড় লাগাইলাম শঁাখারী বাজারের দিকে। রাস্তায় গিয়াই দেখা মিল্লো তাগো বিসর্জন যাত্রার। গিয়া দেহি আরো অনেকরেই চিনি। পোলাপাইন কয়, কি কর মিয়া এইহানে? কথা না বাড়াইয়া কই দেও দেহি কান্ধে লই।

শঁাখারী বাজারের এদিকে গিয়াই দেহি বিশাল জ্যাম। টেরাক টোরাক লইয়া লোকজন রওনা করছে পুরাণ ঢাকার চিপা গল্লি দিয়া। লোকজন সব খাড়াইয়া গ্যাছে আগাইতে না পাইর‌্যা। আমি আরো ৩ জন রাস্তার পাশে একটা স্বর্ণের দোকানের সামনে খাড়াইয়া রইছি, কাঠামের লাহান। হঠাত আমার চোখ পড়লো উপরে।

বড়ই সৌন্দর্য। উপর থাইকাও দেহি টাংকী ভালোই চলতাছে। সমানে চালাইলাম... সাপোর্টিং ও আছিলো ভালোই। এর মাঝে স্বর্ণের দোকান থাইক্যা এক চাচা মিয়া আইসা কয়, “এইহানে খাড়াইয়া কী করেণ? মা’র গাড়ি ধইরা না গিয়া খাড়াইবেন।“ যতোই বুঝাই আমরা ভালা পোলা, টাংকী কী জিনিষ চিনি ই না, হালার বুইড়া হুনলোই না। দিলো খেদাইয়া।

মনের দুঃখে আইয়া রাস্তায় খাড়াইলাম আবার। এদিকে চলতাছে যা চলোনের। হালার বুইরা অহন কী কইবা? - - এই পর্যন্ত ঠিক ই আছিলো, বাস্তব উপাখ্যান।

আজিব কারবার, দেখি মাইয়াডা নাইমা আইতাছে, আমার রক্ত হীম হওয়া ধরছে। দূরে থাইক্যা বহুত কিছুই করণ যায় মাগার সামনে আইলে সিংহের ও বুক কঁাপে পয়লা পরথম। তাই হইতাছিল আমার। ঠিক করতাছি কী করুম, কী কমু না কমু, কোন জায়গায় পয়লা ডেট টা হইবো এইসব....।

হঠাত ই আমার বেসুরা ফোনটা ক্যান ক্যান কইরা সুমধুর স্বরে চেঁচাইয়া উঠলো। দপ্তরের কাম বাড়িতে বইয়া করতে গিয়া ঘুমাইছি ই ঘন্টা খানেক হয়। এই নিশী রাইতে আবার কেডা জ্বালাইতে ফোন করলো?

হাত বাড়াইয়া, চোখ বুইনজাই ধরলাম। “হ্যালো...“কোন কথা নাই, দি্বতীয় বার হ্যালো, হের পর কথা হুনলাম। অপরিচিত না। ভাবলাম কেউ হয়তো শয়তানী করতাছে। উত্তর আইলো, “আছেন ক্যামন, কী স্বপ্ন দেখতাছিলেন !“ আমি কই হালার খাজুরা আলাপের আর টাইম পাওনা, আছি ক্যামন!

ক্যাডা আপণে?
:আমি? আমি শোধ নেবার লাইগ্যা ফোন করলাম।

আমি চিন্তা কইর‌্যা পাইতাছি না কার বারা ভাতে ছাই দিছি আমি যে শোধ নিতে এই রাইত বিরাইতে আমার এতো সুন্দর স্বপ্নের চৌদ্দটা বাজায়া দিলো। একবার পাইলে হইতো, বুঝাইতাম মজা কারে কয়। অহনো ধরবার পারতাছি না ক্যাঠা।

অই পাশ থাইকা কয়, হোনেন, আপনের ঘুম ভাংছে না? এইবার রাইখা দেই!

আমি কইলাম মিয়া অহনো যে গাইল পারি নাই আপনের কপাল ভালা। হুইন্না দেহি ব্যাটা খুশী ই হইলো। কয় দ্যান দেহি কয়েকটা গালি।

আমি তো পুরা ফঁাপড়ে। হারা জীবন মাইনষেরে আমি ভড়কাইয়া গেলাম আর আইজকা দি্বতীয় বারের মতো নিজেই ভড়কাইয়া গেলাম?

গালি তো দিবার পারলাম না। মাগার মনে মনে ঠিক ই কইলাম, “ছালা গালি কি গাছে ধরে যে ঝাকি দিবা আর টুপটুপ কইর‌্যা পড়বো“?

সর্ব সাকুল্যে দেড় ঘন্টা ঘুমাইয়া কামে যাওনের সময় অনেক কষ্ট কইরা মনে কইরা বাইর করলাম পাবলিক টা ক্যাডা যে আমার সুইট ড্রীম ডারে বিটার বানাইয়া দিছে...।

ঈমানে কইতাছি, রাগ লাগলেও ভালাই লাগছে পরে। কারণ নেক্সট শোধটা আমি লমু.... টাইম মতো। তহন বুঝবো চান্দু মজা, কত ধানে কত চাইল হয়!

Sunday, July 23, 2006

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ৪)

বাইরের অন্ধকারের সাথে সুর মেলাতেই কিনা প্রবল শব্দে কাছে কোথাও কিছু একটা বিস্ফোরিত হওয়ার সাথে সাথেই ঘরটা অন্ধকারে ডুবে গেলো। লোডশেডিং, অন্যসময় হলে হয়তো শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠতো একটা মোমবাতির জন্য- অথচ এখন এই অন্ধকারটাই ভালো লাগছে তার। থেকে থেকে চমকে ওঠা বিদুøতের ঝলকানী, জানালার গ্রীল ভেদ করে আসা ঠান্ডা, ভেজা বাতাস, আকাশের অঝোর কান্না যেনো এতোক্ষণ এই অন্ধকার টুকুরই প্রতীক্ষায় ছিলো পূর্ণতা পাবার।


সেদিনের সেই দেখা হবার পর তো অনেকগুলো দিন কেটে গেলো শুভ্রা শিপলুর টিকিটিও খুঁজে পেলো না ক্যাম্পাসের নানা জায়গা চষেও। একদিন তো শিপলুর দেয়া নাম্বারে ডায়ালও করেছিল সে। উফ, কী অস্থিরতাটাই না কাজ করছিল সেসময়।

দুরুদুরু বুকে ৯৮৭... ... ডায়াল করে শেষ সংখ্যাটা চাপার সাথে সাথেই দুরুদুরুবু শব্দটা ধুপধাপ ছাপিয়ে দামামার আওয়াজ জানান দিচ্ছিলো বুকে। প্রতিটা রিঙের “টু-উ-উ-উ-ট“ শব্দ কানে আসার সাথে সাথে শুভ্রার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তার হার্ট এটাক হলো! ওপার থেকে একটা “হ্যালো“ শুনেই চকিতে “ঘড়াত“ করে রেখেদিয়েছিলো ফোনটা।

পরে নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছিল সে। এমন একটা কাজ কেন করলো সে! সেতো এতোটা আনস্মার্ট না যে কাউকে ফোন করে কথা না বলে রেখে দিবে। কিন্ত সেসময় তার এমন লাগছিলো কেন? নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো, বুকের ধুরুপ ধারুপ শব্দটা গলা পর্যন্ত এসে যেন চেপে ধরতে চাইছিলো তার। এ অবস্থায় কী করে সে কথা বলতো, কী করে জিজ্ঞেস করতো “আমি কি শিপলুর সাথে একটু কথা বলতে পারি...?“।

আচ্ছা তখন কথা হলেই বা কী জিজ্ঞেস করতো শুভ্রা, কী হতো তাদের কথোপকথন!

ঃএই যে কেমন আছেন?
ঃ ঐ যে, ফাটাফাটি! তা আপনি কেমন আছেন?

ঃ ভাআআআলো তো!
ঃ হুমমম, তা গরীবকে কি জন্য ইয়াদ করলেন বলেন দেখি।

ঃ এমনি ফোন করা। হাতে তেমন কোন কাজ নেই, ভাবলাম আপনাকে একটু ডিস্টার্ব করি।
ঃ যার নেই হাতে কাজ, বসে বসে খই ভাজ। আপনিও এই কাজটা করতে পারেণ। খই ভাজা প্র্যাকটিস করতে থাকেন। ভবিষ্যতে কাজে দিবে...।

ঃ হাহাহা, আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়? অমাবস্যায় চাঁদ দেখে বেড়ান নাকি নিজেকে ডুমুরের ফুল হিসেবে ভাবতে ভালো লাগে? নাকি দাম বাড়ান নিজের...!
ঃ হাহাহাহা

ঃ হাসছেন কেন? যা জানতে চাইছি ঠিক ঠিক উত্তর দিন।
ঃ আরে মুশকিল, আপনি কি আমার বিয়ে করা ঘরের বউ নাকি যে ঠিকঠিক সব উত্তর দিতে হবে নাহলে হরতাল, ধম্মঘট ডেকে দেবেন....!

এতটুকু ভাবতেই শুভ্রার মুখটা লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট বাঁকা হয়ে সেখানে লজ্জার একটা হাসি নিজেই টের পেলো। “বিয়ে করা ঘরের বউ“, কথাটা জানি কেমন! কথাটায় খারাপ কিছুই নেই, অথচ কেমন লজ্জা লজ্জা কথাটা! এই কথাটা কেনো তার মনে এলো?

এই হয়েছে একটা সমস্যা তার। নিজের মনেই নিজে একটা কল্পিত চিত্র এঁকে, আবার নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া শুভ্রার অবচেতন মনের একটা কাজ। যখন একা থাকে, নিজের অজান্তেই সে অনেক কিছু ভাবে যার অনেক গুলোরই শেষ হয় কান, মুখ লাল হয়ে যাওয়া দিয়ে! যেমনটা হলো এখন। আর ভাবনা গুলোও এমন, যতোই লজ্জা হোক, যতোই কান লাল হোক, ভাবতে ভালোই লাগে, অদ্ভুত শিহরণ লাগে মনে। নিজেকে মনে হয় প্রজাপতির রঙীন ডানায় ভর করে উড়ে চলেছে।

এমনই অসম্ভব ভালো লাগা কিছু কথা ভাবতে ভাবতে বাঙলা একাডেমির সামনের রাস্তাটা ধরে কার্জনের দিকে যাচ্ছিলো শুভ্রা। ওখানে পুরো গ্রুপটার থাকার কথা, সেখান থেকে সবার সাথে নন্দনে যাবার কথা। অনেকদিন আগের প্ল্যান, সবার একত্রে সময় সুযোগের অপেক্ষায় খালি পিছিয়ে যাচ্ছিল তারিখটা।

হাঁটতে হাঁটতে বাঙলা একাডেমির টাইলস ফেলা ফুটপাথ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথাটা উঁচু করে সামনে তাকাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলোনা শুভ্রা। সামনে থেকে একটা রিক্সায় করে এদিকেই আসছে শিপলু। এও কী সম্ভব!

পড়নে গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পলো টি-শার্ট, চোখে কালো রোদচশমা। সাথে একগাদা কাগজের স্তুপ। শুভ্রার কাছে আসতেই রিক্সাটা থেমে গেলো।

শুভ্রা যেনো কিছুই দেখতে পায়নি, এমন একটা ভাব করে, একটুও দেরী না করে পাশের চুড়িওয়ালার রেশমী চুড়ির ঝুড়ির উপর ঝুঁকে পরে চুড়ি দেখতে লাগলো সে...

“দেখি তো মামা ঐ নীল রঙের গুলো.....“

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ৩)

সারা বাড়িময় চেঁচামেচি, চিতকার, সবার এদিক ওদিক ছোঁটাছুটি- সব মিলিয়ে বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। এরই মাঝে ডায়রীতে ঘষঘষ করে কী যেনো লিখে যাচ্ছে শুভ্রা, গত জন্মদিনে বাবার দেয়া ’মাউন্ট ব্লঁা’ কলমটা দিয়ে।

কলমের কালীর সেই গন্ধটা, খাতায় লেখার সেই আওয়াজ সে এখনো পাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর পর, আজকের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়। ভেজা বাতাসের ছোঁয়ায়। জানালার গ্রীলের পাশে। উড়ে চলা সাদা সিফনের শাড়ির অঁাচলের সাথে নিজেও উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে সেদিনের সেই সময়টায়।

সারা বাড়ি জুড়ে উতসবের প্রস্ততি, মার্বেলে বঁাধানো বারান্দা, সিঁড়িতে ধপধপ করে চলা, নিজের ঘর, বারান্দায় দঁাড়িয়ে খোলা চুলে বাতাস মাখা... সবকিছু যেনো সময়ের গহীন উপত্যকা থেকে তঁার ইন্দ্রীয়ের সামনে এসে হাজির হয়েছে।

নাকি সময়-কাল সব থেমে আছে এখন, আর সে নিজেই সময়ের অভিযাত্রী হয়ে ছঁুটে যাচ্ছে অবচেতন মনের কোনায় সচেতন হয়ে পড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পোস্টমর্টেমে!

অনেক জঁাকজমকের ভেতর দিয়েই মার্বেল পাথরের বাড়ির উতসব শেষ হলো। শুভ্রার মা হঁাফ ছেড়ে বঁাচলেন, কী খঁাটুনি টাই না গেলো এই ক’দিন। শুভ্রার নিজেরো বেশ ক’দিন ক্লাশ কামাই হয়েছে।

এটা অবশ্য বড় কোন ব্যাপার না ওর জন্যে। ও মাঝে মাঝেই ইউনি, ক্লাশ, টিউটোরিয়াল সব ফঁাকি মেরে বেড়ায়। কিন্ত বন্ধুত্বে ফঁাকি মারে না। সময় করে দল বেঁধে শহরময় চষে বেড়ানো, আড্ডায় মাতোয়ারা হওয়া, অকারণে হাসির ফুলঝুড়ি উঠা, ধানমন্ডি মাঠের সামনে বসে ফুচকা খাওয়া, চারুকলার সামনে ভেনালের কঁাঠাল পাতায় মোড়া ঠোঙায় বিরিয়ানী খাওয়া, ইচ্ছে হলেই নীরবে গিয়ে ভর্তা-ভাত গলাধঃকরণ - সবই চলে। বন্ধুরাও সব ওরই মতো, স্ক্রু-ঢিলা টাইপ।

এমনই একদিন চারুকলার দেয়াল ঘেঁষে কাঠের চেয়ারে বসে, ভেনালের কঁাঠাল পাতার ঠোঙায় সাদা প্লাষ্টিকের চামচের সাথে হাসির ঝড় উঠছে একেকজনের মুখে। শুভ্রার দৃষ্টি আটকে গেলো অস্থায়ী দোকানটার সামনের দিকে দঁাড়িয়ে অর্ডার দিতে থাকা একজনের দিকে।

বারকয়েক আপাদ মস্তক দেখে নিল সে ছেলেটাকে। চোখে রোদ চশমা, চুল ছোট করে ছঁাটা, হাফ হাতা শার্ট, গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল।

কোথাও আগে এনকাউন্টার হয়েছে শিওর, কিন্ত মনে পড়ছে না কোথায়, কীভাবে। পরক্ষণেই মস্তিষ্ক তঁার আহবানে সাড়া দিল, পরশুদিন সন্ধ্যার দিকে ডাস থেকে চা নিয়ে ফেরার সময় এর সাথেই প্রায় সংঘর্ষ এড়িয়ে নিজের এবং বন্ধুদের চায়ের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অপমান থেকে রক্ষা করেছিল শুভ্রা।

দুইটা ’সরি’ বিনিময়, তারপর যারযার পথে চলে যাওয়া, এইতো! এক নিমিষের জন্য তাকিয়েছিল বলে দেরী করে হলেও ধরতে পেরেছে, এই ছেলেটি ই ডাসের সেই ছেলেটি। কিন্ত এতো অল্প সময়ে তো শুভ্রার কারো চেহারা মনে থাকে না।

“হুমমম, ব্রেন ব্যাটার উন্নতি হয়েছে মনে হয়“ নিজের মনেই নিজে হেসে উঠলো।

“কিরে একা একা হাসছিস কেনো, জ্বীণে ধরছে নাকি“? এই নিয়ে সবার মাঝে আবার হাসির রোল। জ্বীণে ধরার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চারুকলার ইয়া বড় বকুল গাছ থেকে শুরু করে আই ই আর-এর নির্জন ক্যাম্পাস হয়ে ফুলার রোডের সাড়ি সাড়ি কড়ই গাছ, কিছুই বাদ গেলো না। একেকজন একেক কথা বলে, আর সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে।

এর ঠিক তিনদিন পর টি এস সি থেকে বের হয়ে, সামনে দঁাড়িয়ে শুভ্রা অপেক্ষা করছে বন্ধুদের। আবারো সেই ছেলে, এবার মস্তিষ্ক আর সময় নিল না সাহায্যে এগিয়ে আসতে।

“এক্সকিউজ মী, আপনি মফিজ না?“

ছেলেটা থমকে দঁাড়িয়ে ঘাড় ঘুরে একবার পিছনে তাকিয়ে নিয়ে বলে, “আমাকে বলছেন?“

“হঁ্যা, আপনাকেই বলছি। এতো ঢং করছেন কেনো?“

“আরে মুশকিল, ঢং করবো কেন? আমি ভাবলাম আমি ভবিষ্যতে চলে গেছি আর আপনি আমার ছেলেকে ডাকছেন। আমার নামতো মফিজ না, তবে ছেলে হলে তার নাম ’মফিজ’ ই রাখবো, কথা দিচ্ছি“।

“উপপস, সরি, কিছু মনে করবেন না। আমার মনে হচ্ছিল আমি আপনাকে চিনি.....“

“ব্যাপার না, অনেকের ই অনেককে দেখে চেনা চেনা লাগে। পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ, সৃষ্টিকর্তা হয়তো মজা করার জন্যেই কারো কারো মাঝে মিল দিয়ে পাঠিয়েছেন...“।

“আপনি কি নিশাত কে চিনেন...“?

“কোন নিশাত! উত্তরার?..... ওহ ওয়েইট, আপনি ই কি সেই বদমেজাজী মহিলা“?

“জ্বি... আমি ই সেই বদমেজাজী মহিলা“ - হাসতে হাসতে বল্লো শুভ্রা।

পরিচয়ের শুরুটা এখানেই। এখানেই দঁাড়িয়ে আধা ঘন্টার মতো কথা হয়েছিল সেদিন ওদের। শিপলু বুঝতে পারেণি মেয়েটা এতোটা প্রানোচ্ছ্বল কথা বলতে পারে। অন্তত সেদিনের ঘটনার পরতো নয়ই।

শুভ্রাও ভাবতে পারেণি অভদ্র বলে যাকে গালি দিয়েছিল, তার মধ্যে এতোটা সমীহ জাগানোর মতো সন্মান বিদ্যমান। তাড়াহুড়ার কারণে শিপলুকে সেদিন ছুটতে হয়েছিল।

কিন্ত টি এস সি-র সামনে থেকে শুরু হওয়া তাদের সেই পথ চলা গঁুটি গঁুটি পায়ে এগিয়েছিল সেই দিনটি পর্যন্ত, যেদিন শিপলু টি এস সি-র সামনে থেকেই শুভ্রার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল, শেষ বিদায়....।

Tuesday, July 11, 2006

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ২)

.... বাইরে ঝুম ঝুম শব্দে আকাশ কেঁদে চলেছে। জানালার গ্রীল গলে আসা ঠান্ডা বাতাস টা যেনো সেদিনকার বারান্দার সেই বাতাস। প্রচন্ড রাগে, ঘৃণায় লাল হয়ে যাওয়া মুখের ওপর এলোচুল গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিলো।

উড়ে চলা সাদা সিফনের অঁাচলটা এবার টেনে ধরলো শুভ্রা, চুল গুলো থাকলো সেভাবেই। নষ্টালজিয়া আজ তাকে পেয়ে বসেছে, কোন বঁাধাই আজ মানার নয়। বঁাধা সে নিজেও দিতে চায় না, আজকে সে মনের গহীণে ঝাপ দিয়ে দেখতে চায়, কি আছে ওখানে। কেন স্বপ্ন গুলো অবাস্তব এখন, কেন আকাশ ও ভয় পায় এমন স্বপ্ন দেখতে!

সেদিনের অনুভূতিটা কতো প্রখর, কতো জীবন্ত আজো, এখনো। সে এখন বসে আছে বিষন্নমনে জানালার ধারে, বৃষ্টিস্নাত পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য অবলোকনে। অথচ নিজেকে আবিষ্কার করছে সেদিনের সেই বারান্দায়, অপরিচিত একজনের হাতে নিজের প্রিয় থেকে প্রিয়তর ডায়রীটি ধরা অবস্থায়।

“কে আপনি? কী চান এখানে? আমার ডায়েরী পড়ছেন কেন আপনি, হঁ্যা...?“- আগুন ঝরে পড়লো শুভ্রার কন্ঠে।

হতভম্ব হয়ে যাওয়া যুবকটি আমতা আমতা করে বললো, “না মানে ইয়ে, আমি.... আমি নিশাতের চাচাতো ভাই....। আন্টি মানে ইয়ে, আপনার মা আমাকে....“

“মা ডেকে পাঠিয়েছেন তো এখানে কি করছেন? আর আপনি আমার ডায়েরী ই বা খুললেন কেনো। এটা তো কোন ভদ্র মানুষের পরিচয় না“!

এবার মনেহয় যুবকটির কোথাও লাগলো খুব। ঠাশ করে বলে উঠলো, “তা আপনি যেভাবে কথা বলছেন সেটা বুঝি খুব ভদ্রতার পরিচায়ক“?

“হাউ ডেয়ার ইয়্যু টু কল মি ইনডিসেন্ট.....“

“ইংরেজী গাল দিবেন না দয়াকরে। আমি আপনাকে ইনডিসেন্ট বলিনি। বলেছি আপনি যেভাবে আমাকে অভদ্র বলছেন সেটাও কোন ভদ্র মানুষের বলার ধরণ না। আর বারবার যেটা বলে অপবাদ দিচ্ছেন আপনার ডায়েরীর গুপ্তধন চুরি করে ফেলছি বলে, সেটাও ঠিক না। আমি এসেছি, কারণ আমাকে বলা হয়েছে এই বারান্দাটায় আল্পনার কাজটা দেখতে। সে জন্যেই এখানে আসা। এসে দেখলাম বাতাসে আপনার এই সাতরাজার ধনের প্রায় সব পাতাই উড়ে যাচ্ছিল পতপত করে। ধরে গুছিয়ে যেইনা বন্ধ করেছি, অমনি শুরু করে দিলেন এক ধামা বুলি। ধামা চিনেন? তা চিনবেন কি করে, চিনেন কতগুলা ইংরেজী শব্দ, আর জানেন কি করে তা যেখানে সেখানে অব্যবহার করা যায়। ধরেণ আপনার সম্রাট অশোকের হারানো সোনার চামচ......“।

ধরাক করে ডায়েরীটা মেঝেতে ফেলে রেখে খটখট করে চলে গেলো ছেলেটা।

ধাতস্থ হতে খানিক সময় নিল শুভ্রা।
কী হয়ে গেলো এটা? তার মুখের ওপর তো এমন করে কেউ কথা বলে না।

এই ছেলে কি অপমান করে গেলো তাকে? আশ্চর্যতো, ছেলেটার মিনিমাম কোন ডীসেন্সী, ওহ না, নো ইংলিশ - ন্যুনতম শালীনতা জ্ঞান ও কি নেই? একটা মেয়ে মানুষের সাথে কি করে কথা বলতে হয় শেখেনি, ছোঁহ....!

Sunday, July 09, 2006

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ১)

..... সাদা শিফনের শাড়ির পেছনের ঘটনাটাই সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। এইতো সেদিন, অথচ এর মাঝে কেটে গেছে কয়েকটা বছর। স্পষ্ট মনে আছে সব। চোখের সামনে ভাসছে একের পর একটা মুহুর্ত। সেদিনের গন্ধটাও নাকে লাগছে, মনে হচ্ছে যেন হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাবে সবকিছু।

মার্বেল পাথরের বারান্দায় উবু হয়ে নিজের ডায়রীতে কিছু একটা লিখছে শুভ্রা। সারা বড়িময় শোনা যাচ্ছে এর ওর ইতস্ততঃ ছুটাছুটি, দাপাদাপি আর কোলাহল। মায়ের গলা কানে আসছে একটু পরপরই। মায়ের সবকিছু কড়ায় গন্ডায় পরিপূর্ণ হওয়া চাই। কোন খঁুত থাকা চলবেনা কিছুতে। তাই নিজের হাতেই সব তদারকি করছেন। হঠাত ই কানে এলো, “শুভ্রা কই গেলি। এদিকে একটু আয় তো“!

ব্যস কম্মো সাবার। মায়ের ডাক পড়লে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক শুভ্রা, ঠিকই তার ছুটে আসা চাই। “আসি মা“, বলে ডায়রীটা সেখানেই ফেলে রেখে ধুপ ধুপ শব্দে বারান্দা ধরে দৌড়।

তেমন কিছুই না। সিঁড়িতে গঁাদা ফুলের মালা লাগনো হবে। মালা লাগাবে ফুলওয়ালারাই। মায়ের অন্যকাজ আছে বলে এই তদারকির দায়িত্বটা পড়েছে শুভ্রার ঘাড়ে।

“দেখবো তোর রুচিবোধের পরীক্ষা, কেমন সাজাতে পারিস আজ। অবশ্য আমার বিশ্বাস আছে তোর ওপর“।“কি আর দেখবে, আমি তো তোমারই মেয়ে মা!“

মা তার ভুবন ভুলানো হাসিটা দিয়ে চলে যাবার মুহুর্তে শুভ্রার কপালে একটা ছোট্ট আদর করে দিলেন। বুঝতে শেখার পর থেকে কেবল মাত্র মা ছাড়া তার গাল, কপাল কেউ ছঁুতে পারেনি, আদর করা তো দুরের কথা।

অনেক কসরতের পর সিঁড়ি ঘরটাকে খুব সুন্দর করে সাজনো গেলো। ভাগ্যিস মা ওকে ডেকেছিল, নাহলে ফুলওয়ালারা যেভাবে সাজানো শুরু করেছিল, এতো সুন্দর মার্বেল পাথরে মোড়া বাড়িটাও শাহবাগের মোড়ের কোন অগোছালো, স্তপিকৃত ফুলের দোকান হয়ে যেতো এতোক্ষনে।

থ্যাংক গড.... বলে রুপোর নূপুর পড়া কঁাচা হলুদ রঙের পা ফেলে সিঁড়ি ভাঙতে গিয়েই মনে পড়লো ডায়রীর কথা। আবারো ধপধপ করে দৌড়ে উঠে এলো মার্বেলের বারান্দায়।

অপরিচিত একজনকে নিজের ডায়রী হাতে দেখে জ্বলে উঠলো শুভ্রা। আলগা বাতাসে উড়ে চলা খোলা চুলের কঁাচা হলুদ রঙের মুখটা মুহুর্তেই হয়ে উঠলো লাল টকটকে। লজ্জ্বায় নয়, প্রচন্ড রাগে, ঘৃণায়......