Monday, May 07, 2007

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এবং ব্যর্থ কিছু 'কমিটমেন্ট'

সময়টা আসলেই খারাপ, খুব খারাপ। এতো চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এরকম 'হা-ভাত' অবস্থায়তো পড়তে হয়নি কখনোই। সবসময়ই একটা সচল, ঝরঝরে অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে পেরেছি, তেমন কোন ঝামেলা ছাড়াই- কিন্তু এখন!

বলছিলাম লেখার সম্ভাবনা নিয়ে। আগের মতো সাবলীল ভাবটা যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। ব্লগের পাতা খুললেই মনে হতো লিখে ভাসিয়ে দিই। আর এখন ঠিক উল্টো। আলসেমী একটা কারণ হলেও প্রধান কারণ যেনো অন্যকিছু। অন্য কোন কারণে, অন্য কোনখানে, অন্য কোন প্রয়োজনে, অন্য কিছু করে যাচ্ছি, অন্য ভাবে বুনে যাচ্ছি সময়ের সূতা।

ইদানিং একটা সিরিয়াল নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি। সারারাত জেগে দেখতেও ক্লান্তি জাগে না। অদ্ভুত এক ঘোর নিয়ে আটকে থাকি। "এলিয়াস" এ সিআইএর নানা দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ডের মাঝেও বিভিন্ন সম্পর্কের প্রতি কমিটমেন্টটা সুদারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে কলাকুশলীরা। এজেন্ট সিডনী ব্রিস্টো আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে পুনরায় জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মাঝখানে যখন কেটে যায় দুটো বছর, এলএ থেকে নিজেকে আবিষ্কার করে হংকং-এ, সেইফহাউজে দেখা হয় সহকর্মী ভন এর সাথে- সবকিছুই কেমন খাপছাড়া লাগে।

ফিরে আসার পরে সিডনীর জানা হয় ভন এর সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার গভীরতা। ছয়মাস দেশের বাইরে কাটানোর পর এনএসএ-র একজন অফিসারের সাথে পরিণয়, সিআইএ ছেড়ে ফ্রেঞ্চ শিক্ষক হিসেবে আত্মনিয়োগ, এসবই ছিলো দুবছর আগের প্রাপ্ত উপাত্তের ডিএনএ পরীক্ষায় সিডনীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর, তাঁর স্মৃতি জাগানিয়া জায়গা গুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে ভন এর এরূপ আচরণ।

সাজানো সেট, সাজানো কাহিনী হলেও কেমন একটা ধাক্কা মারার মতো অবস্থা। বুঝতে পারি, মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। তথাপি কোথায় যেনো কি বেজে ওঠে, কোথায় যেনো নি:শব্দেই 'একটু খারাপ লাগা' ডুকরে উঠে। শরত বাবুর কথার মতো একেবারে গলা পর্যন্ত ফেনাইয়া উঠে...!


প্রতি বছরের মে মাসের প্রথম শনিবার রাইন ল্যাণ্ডের অধিবাসীরা এক অদ্ভুত উৎসব করে। "রাইন আম ফ্লামেন"- আতশবাজির আলোতে রাইন নদী। বিশ্বের নামকরা সঙ্গীতের মূর্ছনার সাথে নদীর উপরের আকাশে খেলা করে নানা রকমের আতশবাজি। বিয়ার-মদের মহোৎসব হয়, চিৎকার, চেঁচামেচি, কোলাহল সব কিছুতেই ভরে থাকে চারদিক।

একবারই গিয়েছিলাম, প্রথমবার। তারপর থেকে আর যাওয়া হয় নি। ইচ্ছে করেনি এমন না, কিন্তু ঐ যে কমিটমেন্ট। নিজের সাথে কিছু কমিটমেন্টের কারণে খুব প্রিয় একটা বিনোদন থেকে স্বেচ্ছায় গুটায়ন।

হ্যামিলন, শহরটা খুব বেশী দূরে নয়! জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তেই চলে "মিউজিক্যাল র্যাট" উৎসব। যেদিন থেকে জানলাম ছোটবেলায় জানা হ্যামিলন শহরটার খুব কাছেই আছি, সেই থেকেই একেক করে দিন গুনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে কবে আমার কমিটমেন্ট পূরণ হবে, কবে আমি শতশত ইঁদুরের মাড়ানো রাস্তায় পা ফেলবো, কবে আমি সেই পাহাড়টি একটু ছুঁয়ে দেখবো যে পাহাড়টির ওপাশে হারিয়ে গেছে একদল কিশোর ভবিষ্যতের কমিটমেন্ট নিয়ে।

ইনস্ট্রুমেন্টালের দিকে ঝোঁক নতুন না। খুব ভেতর থেকে নাড়িয়ে যায় এমন ইনস্ট্রুমেন্টালের ভক্ত আমি বরাবরই। জুবায়ের এর বাশীর এই ইনস্ট্রুমেন্টালটা যখন শুনলাম ভালো লাগাতে সময় লাগে নি খুব বেশী।

রাতে বিছানায় শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে বাঁশীর সুরের সাথে মিশে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম, আমি দাঁড়িয়ে আছি সবুজ ঘাসের একটা খোলা মাঠে। ঝুম করে সূক্ষ্ণ ধারায় বৃষ্টি নেমেছে, বোতাম খোলা সাদা পাতলা শার্টের শরীর ও হাতা নিয়ে বৃষ্টি ও বাতাস কাড়াকাড়ি করছে, আমি শুনছি ইনস্ট্রুমেন্টটা, চুল বেয়ে, কানের ধার বেয়ে, গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে... এক অজানা কমিটমেন্ট নিয়ে!

No comments: