Saturday, March 31, 2007

নিজের দেখা / শোনা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার আর্কাইভের জন্য-

71 সালের মাঝামাঝি কোন একটা সময়। আমার স্মৃতিশক্তি বিট্রে করছে ইদানিং আমার সাথে, নাহলে তারিখটা সহ-ই বলা যেতো। আমাদের মাধবদী এলাকায় যুদ্ধে লিপ্ত আছে কয়েকটা মুক্তিসেনার গ্রুপ। তেমনি এক গ্রুপের কমান্ডার আনোয়ার। ভীষন সাহসী আর নির্ভিক। আলগী নামক গ্রামে এক অপারেশনে আসে। এই আলগী গ্রামের অবস্থান মাধবদী বাজার থেকে খুব বেশী দূরে নয়। মাধবদী বাজারে অপারেশন চালানোর জন্য কান্দাপাড়া আর আলগী গ্রামের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

নুরালাপুর হয়ে আনোয়ারের গ্রুপ আলগী ভুঁইয়া বাড়িতে অবস্থান নেয়। পাক-হানাদারদের ভয়ে আলগী গ্রাম প্রায় ফাঁকা তখন। আলগী গ্রামে তখন ইতস্ততঃ ঝোপঝাড় আর জঙ্গল। একটা বড়, মাটির রাস্তা এঁকে বেঁকে মাধবদী বাজারের দিকে চলে গেছে।

ভুঁইয়া বাড়ির দোতলা দালানটিতে গড়ে ওঠে আনোয়ারদের আস্তানা। উদ্দেশ্য, এখান থেকেই আস্তে আস্তে মাধবদী বাজার মুক্ত করে সামনে পাঁচদোনার দিকে এগুবে তাঁরা।

সব প্ল্যান ঠিক হয়। কবে অপারেশন হবে, কে কোথায়, কোনদিক দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালাবে, সবকিছু। অপারেশনের আগের রাতে, যখন সবাই গভীর ঘুমে। তখনই হঠাৎ বুটের ধুপধাপ আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আনোয়ারদের। কিছু বুঝার আগেই বাড়িটি তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে পাক সেনারা। বাকি একদিকে কাঁটাবন। লম্বা চাবুকের মতো লতার সারা গায়ে কাঁটা। ঐ কাঁটার ঘন জঙ্গল ছিলো সেদিকটায়। কয়েকজন ঝুপ ঝুপ করে লাফিয়ে পড়ে সেই কাঁটায়। কোন মতে সারা শরীর ছিলে বের হয়ে দৌড়ে চলে যায় ডৌকাদীর দিকে। পালাতে পারে না আনোয়ার সহ কয়েকজন। আটকা পড়ে তারা।

ঘরে ঘরে তল্লাশী হয়। পাওয়া যায় যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম। "সাক্ষাৎ মুক্তি"- প্রমাণিত। এগিয়ে আসে রশীদ, রাজাকার রশীদ নামে যিনি এখন সর্বাধিক পরিচিত। মাধবদীর অদূরে বাগবাড়ি নামক জায়গায় যার বাড়ি। তার নির্দেশে বেঁধে ফেলা হয় আনোয়ার আর তাঁর সঙ্গীদের। আনোয়ার শুধু একবার বলে, "আপনে না আমার চাচতো ভাই...! আপনে এই জালিমগো হয়া আমারে মারোনের লাইগ্যা লইয়া যাইতাছেন, রশীদ ভাই? অহনো সময় আছে আমরা ইচ্ছা করলেই এগোরে শ্যাষ কইরা দিতাম পারি...।" রাজাকার রশীদ তখন আনোয়ারকে ধমক দিয়ে বলে, "দেশের লগে গাদ্দারী করছস তুই। এহন তোরে মায়া কইরা আমি মরমু নিহি"?

বাড়ির নিচে কাঁঠাল গাছের সাথে বাঁধা হয় তিনজন মুক্তি সেনানী কে। তারপর রাজাকার রশীদের নির্দেশে তাঁদের বুক বরাবর চালানো হয় গুলি। গুলির ধাক্কায় দেহ গুলো লাফিয়ে ওঠে, রক্তে ভেসে কাঁঠাল গাছের তলা...। রশীদেরা ফিরে যায় একসময়। আনোয়ারদের লাশ ফেলে রেখে যায় রক্তের নালায়।

আমি যতোবারই ঐ বাড়িটির সামনে দিয়ে যেতাম, ততবারই মনে হতো- হয়তো ঠিক এখানটাতেই পড়েছিলো আনোয়ারের মুক্তিকামী শরীরটি, হয়তো এখনো তিনি ঘোলা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে এক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে। আমি, স্বাধীনতা-উত্তর এক প্রজন্ম, কী-ই বা করতে পেরেছি আনোয়ারদের জন্য?

কিছু যে করিনি তাও তো নয়। যখন সেভেনে পড়ি তখন রশীদ রাজাকারের ছোট ভাই আমাদের বাড়িতে আসে। আমি সবার সামনেই চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম, "তোমার ভাই একটা রাজাকার..."। প্রবল শাসনের ভেতর রাখা আমার মা আমার এমনতর 'ঔদ্ধত্বে' সেদিন কিছুই বলেনি। কেউ যদি ঢাকা থেকে সিলেট গেলে পাঁচরূখী বাজারের পর একটা জায়গায় 'উট মার্কা ঢেউটিন'-এর কারখানা দেখতে পাবেন। জায়গাটার নাম বাগবাড়ি। লোকাল বাসের এখানে একটা স্টপেজ আছে, "রশীদ রাজাকারের বাড়ি"। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর মনে হয় স্টপেজটা ঐভাবে আর বলে না কেউ।

লোকটি এখনো জীবিত যে!

Friday, March 30, 2007

এখন ই সময় স্বপ্ন বোনার...


আমরা স্বপ্নে বাঁচি, স্বপ্ন গড়ি, স্বপ্ন বুকে ধরে দেবো পাড়ি, বহুদূর...

একই চাঁদ - - একই আকাশ তলে আমরা জোছনা দেখি ওরা কাণ্না ভোলে। করি আজকে তাই স্বপ্ন বাছাই, পূর্ণিমার আলোয় তাদের দেখাই।।

হঠাৎ থমকে উঠি। সারা শরীর নেচে ওঠে। ভালো লাগায় না, শংকায়। চোখ খুলে বুঝতে পারি ঘুমাচ্ছিলাম। ভেঙে যায়। কষ্ট হয় দুচোখের পাতা আবার এক করতে, আবার ঘুমের রাজ্যের মেঘ ধরে ধরে দৌড়ে বেরাতে!

শীত শেষের বরিষন। বলা উচিৎ বসন্তের আগমনের। কান পেতে থাকলে বুঝা যায়- ঝরঝর ঝরঝর। নুপূরের শব্দ ভালো লাগে। বৃষ্টি যদি নুপূর হয়ে কারো পায়ে ঝরতে থাকে। নুপূর পায়ে বৃষ্টির রিনঝিন রিনঝিন নাচ...। তন্দ্্রালু হয়ে সেই শব্দে বিভোর হয়ে যাই। চোখ মুদে আসে আপনা থেকেই, ক্লান্ত যে খুব! আবারো স্বপ্নের দেশে, মেঘের রাজ্যে, দু'হাতে স্বপ্ন আর মেঘ ছুঁয়ে দেই আমি।

শুকনা বালুর পায়ের নিচে সুড়সুড়ির জ্যান্ত অনুভুতি। সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত- ঠিক মনে নেই। তবে আলোটা দারুণ লাগে। সমূদ্্রপারের সুড়সুড়ি জাগানো বালুর তট ধরে হেঁটে যাই আনমনে। একদম একা!

মাথার ভেতর কথোপকথন। পূর্ণেন্দু পত্রীর না। আমার নিজের। নিজেকে নিজে বুঝাই, আর কতো! ওপেন দ্যা ডোর...। আবার নিজেই বলি- কই ভোরতো হয়নি! দোর খুলে যে বাতাস আসতে দিতে চাও, সে বাতাস তো তোমার জন্য বহমান নয়। এ যে স্বপ্নের বাতাস, ভুল বাতাস, তোমাকে শীতল করতে পারে না। তুমি স্বপ্ন দেখছো। স্বপ্ন!!

জীবনের সবচাইতে বড় কমপ্রোমাইজটা করে ফেলেছি, তাও এই স্বপ্নের জন্যই। কখনোতো হার মেনে নেইনি। আচ্ছা কমপ্রোমাইজ কি হারের সাথে তুলনা হয়! হয় বৈকি! না হলে- হোয়াই মী এন্ড অনলি মী...!

স্বপ্নের কথা আপাতত বাদ। হঠাৎই ভাঙা ঘরের চালা ভেদ করে ঠিকরে পরে এসে চাঁদের রূপালী আলো যেন। আহ কতগুলো দিন পর আবার আনন্দে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে। ভাসতে চাই এরকম অনবরত। ভোর বেলার স্বপ্ন পুরণ হয় শুনেছি। আমি বোধহয় সেই আশাতেই বুক বেঁধে আছি...।

প্রয়োজন শুধু একটু আশার, এখনই সময় স্বপ্ন বোনার- আমরা স্বপ্নে বাঁচি, স্বপ্ন গড়ি, স্বপ্ন বুকে ধরে দেবো পাড়ি, বহুদূর...

আমি পরাজিত হবো না, আমরা পরাজিত হবো না। মেঘেরা কখনোই পরাজিত হয় না...! স্বপ্নেরা কখনোই পরাজিত হয় না...!!

Monday, March 26, 2007

স্বাধীনতা দিবসের স্যালুট :: ঘোষক নিয়ে ক্যাচাল

লেখাটা একই সাথে হাজারদুয়ারীতে প্রকাশিত, যা আজকেই আপ হয়েছে।

========================

স্বাধীনতার 36তম বার্ষিকীতে এসেও যে বিষয় গুলো এখনো মুখরোচক, ঘোষক বিতর্ক তার মধ্যে অন্যতম। এতগুলো দিন অতিবাহিত করার পরেও স্বাধিনতার ঘোষক বিতর্কে এখনো একমত হওয়া গেলো না। স্থান দেয়া গেলো না স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জন্য সংরক্ষিত আসনে, দেওয়া হলো না তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার, অন্যতম মুক্তিসেনানী মেজর জিয়াউর রহমানকে তাঁর যোগ্য সম্মান।

বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে চলেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক ক্ষেত্র এদিক দিয়ে সবচাইতে এগিয়ে। বর্গীদের হানা বন্ধ হলেও তাদের উত্তরসূরীরা কখনোই থেমে ছিলো না এদেশে। ধন-সম্পদের মতো তারা তাদের হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকেও। কালো পর্দা দিয়ে দৃষ্টি ঢেঁকে দিয়েছে এদেশের মানুষের, রেখেছে অন্ধকারে। রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস, যে ইতিহাস সত্যকে ধারণ করেনা সে ইতিহাস। স্বাধীনতার নানা ঘটনার সাথে চাপা পরে গেছে "স্বাধীনতার ঘোষক"-এর প্রকৃত নাম।

স্বাধীনতার ঘোষকের কথা বললে সাধারনভাবে যে প্রমান সবাই চোখের সামনে পেতে চায় তা হলো 'দি স্টেটসম্যান' পত্রিকার মার্চ 27, 1971 এর সংখ্যাটি। মি. রহমান-এর উদ্বৃতি দিয়ে প্রকাশ করা ঘোষনাটিকেই ধরা হয় মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষনা। বলাহয় মি, রহমান বলতে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানকেই বুঝিয়েছিলো স্টেটসম্যান। আর তাই মেজর জিয়াউর রহমান হলেন বংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা ছিলো খানিকটা ভিন্ন। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে প্রথম যে ঘোষনাটা পাঠ করেন (বঙ্গবন্ধুর পক্ষে) তার সময় ছিলো 27 মার্চ সন্ধ্যা 7টা 30 মিনিট। 27 মাচের্র সন্ধ্যায় প্রচারিত ঘোষনাটি 27 তারিখের পত্রিকায় আসাটা কোনভাবেই যুক্তিসিদ্ধ হয় না। তাহলে দি স্টেটসম্যান কোন ঘোষনার কথে উল্লেখ করেছিলো, আর মি, রহমান বলতে তাহলে কাকে বুঝিয়েছিলো?

ইতিহাস বিকৃতির স্বীকার অনেকেই মানতে নারাজ যে 25শে মাচের্র কালো রাতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতে আটক হবার আগেই আলোচনা ভেস্তে গেলে কি পরিস্থিতি হতে পারে তা আঁচ করেছিলেন এবং তাঁর লিখিত দু'টি ঘোষনার পাশাপাশি নিজের কণ্ঠে একটি মেসেজ তৈরী করেছিলেন যা কিনা 25শে মাচের্র কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হত্যাজজ্ঞ শুরু হওয়ার পর একটি হ্যান্ডি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে প্রচার করা হয়।

এই প্রিরেকর্ডেড মেসেজ এবং হ্যান্ডি ট্রান্সমিটারের বিষয়টি গোঁপন থাকে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং এবং তাঁর খুব কাছের কয়েকজন সিনিয়র সহকর্মীর মাঝে। 25শে মার্চ রাত 11:30 মিনিটে বলধা গার্ডেন থেকে হ্যান্ডি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে 'রেডিও পাকিস্তান ঢাকা'-এর ফ্রিকোয়েন্সীর খুব কছাকাছি ফ্রিকোয়েন্সীতে প্রচার করা হয় প্রি-রেকর্ডেড মেসেজটি, যাতে করে যারা যারা রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র শুনবে তারা তখন মেসেজটিও শুনতে পাবে, এই ছিলো উদ্দেশ্য। আর সবচেয়ে বড় যে উদ্দেশ্যটি ছিলো তা হলো ঢাকায় অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কাছে মেসেজটি পৌঁছানো। সে উদ্দেশ্য যে সফল হয়েছিলো তার প্রমান ডেভিড লসাকের 'পাকিস্তান ক্রাইসিস' বইটি। এই মেসেজটিই হচ্ছে মহান স্বাধীনতার ঘোষনা যা বাংলাদেশ ডকুমেন্ট হিসেবে ভারতে সংরক্ষিত আছে এবং যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলে রস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর আমলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তৎকালীন ডেইলী টেলিগ্রাফের সাংবাদিক লসাক তাঁর বইটি প্রকাশ করেন বিলেত ফিরে গিয়ে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগেই।

গোটা পৃথিবী যাতে বাংলার মানুষের স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলনকে উগ্র-বিচ্ছিণ্ণতাবাদীদের আন্দোলনে রূপ না দিতে পারে সেজন্যই বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা করেছিলেন সঠিক সময়ের। সিদ্দিক সালিক তাঁর "হুইটনেস টু স্যারেন্ডার"-এ লিখেছেন যে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সিনিয়র সহকর্মীর মাঝে গোঁপন বৈঠকের সময়ই নির্ধারিত হয়েছিলো যুদ্ধ বাঁধলে কয়টা সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ পরিচালিত হবে এবং কে হবেন যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।

25 শে মার্চ রাতে ইয়াহিয়া বাঙালী জাতিকে ব্লাফ দিয়ে পালিয়ে যাবার পরই বঙ্গবন্ধু গোঁপন পরামর্শ মোতাবেক সিনিয়র নেতাদের ভারতে পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার নির্দেশনা দেন। অত:পর তিনি নায়ীম গওহর ও মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে টেলিফোন বার্তা পাঠান চট্টগ্রামে জহুর আহম্মদ ও এমআর সিদ্দিকের কছে। এর পরপরই বলধা গার্ডেন থেকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর "দিস মে বি মাই লাস্ট মেসেজ, ফ্রম টুডে বাঙলা দেশ ইজ ইন্ডিপেন্ডেন্ট..." এই অবিস্মরণীয় প্রি-রেকর্ডেড মেসেজটি। এই মেসেজটির কথা ইয়াহিয়া খান 26 মার্চ বেতার ভাষনে বলেছিলেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত শ্বেতপত্রেও উল্লেখ করা হয়।

একই ঘোষনার মেসেজ ইপিআর যখন পাঠাতে শুরু করে ততোক্ষণে 25 শে মাচের্র রাত শেষ হয়ে 26 শে মার্চ শুরু হয়ে গিয়েছিলো বলেই আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করি 26 শে মার্চ।

রবার্ট পেইনের ম্যাসাকার অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু তখন আরেকটি যুদ্ধ ঘোষনার মেসেজ ডিকটেট করেন "পাক আর্মি সাডেনলী এট্যাক্ট ইপিআর বেইস এট পিলখানা এন্ড রাজারবাগ পুলিস লাইন, কিলিং সিটিজেন্স..."।

26 শে মার্চ দুপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় এম এ হান্নানের ভরাট কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা বার্তা। বেলাল মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানে আবুল কাশেম সন্দীপ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার উল্লেখ করে সাধারণকে উদ্দীপ্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন।

এর মধ্যে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ফোর্স নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে করতে পিছিয়ে পটিয়া চলে আসেন। তখন তাঁকে অনুরোধ করা হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাহারা বসানোর জন্য। মেজর জিয়া সে অনুরোধ সানন্দে গ্রহন করেন এবং 27 তারিখ সন্ধ্যায় তিনি বেতার কেন্দ্র পরিদর্শনে এলে বেলাল মোহাম্মদ তাঁকে অনুরোধ জানান যেন সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে তিনি একটি ঘোষনা দেন।

মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পরপর দুটি ঘোষনা পাঠ করেন যার দ্বিতীয়টি ছিলো এরকম, "আই, মেজর জিয়াউর রহমান ডু হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার দ্যা ইনডিপেন্ডেস অফ বাংলাদেশ অন বিহাফ অফ আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লীডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান...", বেলাল মোহাম্মদের "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" বইতে উল্লেখ আছে তা।

একথা ঠিক যে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষনা সবচাইতে বেশী মানুষ শুনেছে এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকে পলিটিশিয়ানদের সাথে সেনাবাহিনীও যোগ দিয়েছে যুদ্ধে- এই ঘোষনায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তুমুল জাগরণ তৈরী হয়।

পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার মেসেজ পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধুর প্রি-রেকর্ডেড সেই মেসেজটির মাধ্যমে। আর মাস পিপোলের কাছেই যদি মেসেজ পৌঁছানোর কথা বলি, তাহলে 7-ই মাচের্র সেই অবিস্মরণীয় ভাষনের কথা বলতে হয়।

আরো দলিল আছে, চাইলে আরও দেয়া যাবে। এখানে যতটুকু আপাতত দরকার, দিলাম এখানে-এবার আপনারাই ঠিক করুন, স্বাধীনতার ঘোষকের স্থানে কাকে বসানো যায়,
সিদ্ধান্ত আপনাদের...

---------------------

রেফারেন্স:

*পাকিস্তান ক্রাইসিস - ডেভিড লসাক
*হুইটনেস টু স্যারেন্ডার - সিদ্দিক সালিক
*আমেরিকান স্লট রিপোর্ট
*পাকিস্তান সরকারের শ্বেতপত্র
*ম্যাসাকার - রবার্ট পেইন
*স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র - বেলাল মোহাম্মদ
*বাহজাদ আহমেদ

Saturday, March 24, 2007

বাতিঘর সকাশে চরৈবতি

আচ্ছা ঐযে দূরে একটা চূড়া দেখা যায়, ওপরে খুব সম্ভবত একটা বাতি- ওটার নাম কি?
ঐটা লাইটহাউজ, বাতিঘর। উপকূলে জাহাজীদের অভিভাবক। কোন এক ঝড়ের রাতে যখন সমূদ্্র উতলা-রাক্ষসী রূপ ধারণ করে, তখন জাহাজীদের একমাত্র আশ্রয় খুব সম্ভবত এই "বাতিঘর"।

দূরের জাহাজগুলো বাতিঘরের ঠিকরে পড়া আলো দেখে পথ খুঁজে নেয়, এগিয়ে চলে গন্তব্যে, নির্বিঘ্ণে নির্ভার হয়ে। বাতিঘর থেকে যায় তাঁর আপন জায়গায়, অন্য জাহাজকে পথ দেখানোর নিমিত্তে। বাতিঘর কিন্ত নিজেও জানে না যে সে কতগুলো জাহাজকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করেছে কোন এক ঝড়ো তিমিরে। সে শুধু জানে আলো বিলাতে... বিলিয়ে যায় সে, কোন শর্ত ছাড়াই!

অরণ্যকেশী, স্বল্প পরিচয়ের কোন এক দ্্রৌপদীকে একনিমিষেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তব জীবনের বাতিঘরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রেই দ্্বিতীয়বার ভাবা যায় না। কিছু কিছু ব্যাপার থাকে, সিদ্ধান্ত নিতে হয় তড়িৎ- কোন সমীকরণ মেনে হয় না তা। এই সিদ্ধান্তটা এরকমই এক অংকবহির্ভূত সমীকরণ, যার অনুসরণে গণিতের মার্কায় "সর্বই" কাটা গেলেও আত্মউপলব্ধির মুকুটে আরো একটা সফল পালকের সংযুক্তি ঘটে।

সেই আত্মোপলব্ধির মাত্রাটা বেড়ে যায় যখন বুঝা যায় পরাজিত মেঘের দলে আরো একটা খন্ড মেঘ এসে আপন করে নেয় সবকিছু, বাতিঘরের আলো অনুসরণকারী আরো একটা জাহাজের সংখ্যা বাড়ে...

সিদ্ধান্তের বাস্ত ব রূপায়নে পু-ঝিকঝিক না হলেও খুব শান্ত ভাবে অথচ ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে যায় দ্্রুতগামী পাত-গাড়ী, রাস্তায় জমে থাকা ঝরে যাওয়া পাতার ওপর থেকে দৃষ্টি চলে যায় কৃত্রিম বরফ দিয়ে বানানো "স্কেটিঙের মঞ্চে" হৈ হুল্লায় মেতে থাকা মেশিনরূপী মানুষের পানে।

লেখাটার সূত্র : পাওয়া যাবে এখানে (1ম থেকে 3য় খন্ড)

Thursday, March 15, 2007

দিবা-রাত্রির গল্প

নষ্টালজিয়া, প্রবাসী কিম্বা পরবাসী বাঙালীর তৃষ্ণাকাতর হৃদয়ে এক ফোঁটা বৃষ্টি-বারির ছোঁয়া। নষ্টালজিয়ার ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে অভুক্ত মন এক মুহূর্তে ছুটে যায় গাঁয়ের সেই পথটি ধরে, সেই বাড়িটির সামনে। যে বাড়ির রাণ্নাঘরে মা সযতনে উনুনের পরে ভাতের হাঁড়ি চড়ায় ফি বেলায়।

মায়ের হাতের বানানো আলু ভর্তায় গাছের কাগজি লেবু চটকিয়ে গরম ভাত খাওয়ার পরম স্বাদ অন্য কোন কিছুতেই পূরণ হবার নয় নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন কোন বাঙালী মায়ের সন্তানের। ম্যাকডোনালডসের সুস্বাদু, সুদর্শন রয়েল টিএস ও ফেল মারে অতি সাধারন ভাবে রাঁধা মায়ের হাতের মুরগীর সালুনের কাছে। লাল লাল ঝোলের মুরগীর সালুন, ঘি দিয়ে ভাজা আলু ভর্তা, লেবু আর মায়ের উদ্বিগ্ন চোখের চাহনী সহযোগে কতোদিন খাইনা পেট পুরে, গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে!

পরদেশের বাঙালী রেস্টুরেন্ট গুলোও পরবাসীই হয়। সেখানে মসলা গুলো একই থাকলেও কোথায় যেনো কী নেই। আসলেই তো মায়ের হাতের মমতার ছোঁয়া তো সুদূর পশ্চিমের এই রেস্তোঁরা গুলোয় পাওয়া দুষ্কর। কখনো সখনো এরকম কোন এক রেস্টুরেন্টে দেখা মিলে অরণ্যকেশী লাবণ্যের। না, শেষের কবিতার লাবণ্য না, একেবারে সাবঅলটার্ণ যুগের লাবণ্য, একজন রাত্রি!

এই রাত্রির লাবণ্যময় চোখের গভীরতা, চিবুকের গাঢ়ত্ব কিংবা চুলপ্রপাতের মাঝে ডুব দিয়ে একনিমিষেই চলে যাওয়া যায় নিজের রচিত কোন সমান্তরাল পৃথিবীতে। যেখানে সে বিকেলের চায়ের সাথে ডালপুরী ভেজে উপস্থিত করে গ্রীনরোডের কোন এক ছোট্ট এ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর লাল-সবুজ গ্রামীন চেকের শাড়ির আঁচলে কখনো গুটিসুটি খায় ছোট্ট ছেলে, আর কখনো আলতো করে টান দেয় নাস্টালজিয়ার কার্পেটে ভাসতে থাকা পরবাসী বাঙালী।

হঠাৎ করেই মিস্টি সম্বোধনে অ্যালিসের ওয়ান্ডার ল্যান্ড থেকে ফিরে আসে ক্ষুধায় কাতর নস্টালজিক মানুষটি। টের পায় রেস্টুরেন্টের খাবার সামনে ঠান্ডা হয়ে গেছে, খাওয়ার ইচ্ছে উবে গেছে সেই কখন। জানাহয়, এতোক্ষণ ধরে স্বপ্নের জাল বুনে চলা সঙ্গীটির নাম জানা হয় রাত্রি না, দিবাও না। অরণ্যকেশীর নাম আসলে দ্বীপান্বিতা।

এগিয়ে চলে মাহির সাথে দ্বীপান্বিতার কথোপকথন

Tuesday, March 13, 2007

তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো...

ভায়োলিনের সুর আমার বরাবরই পছন্দ। বাঁশী আর ভায়োলিনের মধ্যে একটা ঠান্ডা-লড়াই ও জমে উঠতে পারে অবশ্য এনিয়ে। কিটারোর চাইতে শেরাটনে বাজানো বাঁশিওয়ালার প্রতি আমার আলাদা একটা টান অনুভূত হয়, সেটা বোধকরি সুরের আধুনিকতার সীমানা ছাড়িয়ে শিল্পীর আন্তরিকতার ছোঁয়ার কারনে। প্রবাস জীবনের শুরুর দিকে আমার কাছে একটা এ্যালবাম ছিলো, "রোমান্টিক ভায়োলিন"। সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকতাম ভায়োলিনে।

যখন বাঁশীর সুরে "ফ্লাই" শুনলাম প্রথম, মজে গেলাম সেটাতেও। একেএকে জড়ো করলাম সেই এ্যালবামের মনেধরা সুর গুলোও। সব ছাঁপিয়ে তখন ঘর উজার করে বাজতো ফ্লাই- ফ্লাই - আর ফ্লাই, মনের মধ্যে উড়িয়ে চলা ভাবনার উদ্্রেক করে।

যাযাবরী মনন লালন করি আমি, খালি উড়াল দিতে চায় ফাঁক-ফোঁকর পেলেই। বাঁধা-ধরা কোন কিছুই বেশীদিন ভালো লাগে না। সুযোগ পেলেই দে-দৌড়, ধনাধন দৌড়...।

এবারো দিলাম একটা দৌড়, না আপাতত উলটো না। সোজা সাপ্টা দৌড়, যে কারনেই ফেরার তাগিদটাও ততটাই বোধ করছি, যতোটা করেছিলাম দৌড় দেবার সময়ও। মাঝখান থেকে চারটা দিন আরো কিছু উদ্ভট পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়েছে। উপায় নাই গোলাম হোসেন- হয়ে মাথা কাত করে, ক্যাবলা কান্তের মতো নাক-মুখ খিঁচিয়ে নিম পাতার রসের মতো গিলতে হয়েছে।

শুরুটাই আসলে ভালো হয়নি! মোবাইলে নতুন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহার করি। বড়ই তামশার জিনিষ। একবার নেট-এ ঢুকলে বের হবার আর রাস্তা খুঁজে পাইনা। ভাষা ইংরেজী করে চেষ্টা করেছি, নেটে ঢুকে না। বিদেশী ভাষায় কানেক্টেড হবার পরে, ডিসকানেক্ট ক্যামনে হয়- এইটা তো যাযাবর জানে না! ফলাফল, নেট চলে টিল দ্যা এন্ড অফ...

সেদিন মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকাইয়া ট্রেন থেকে নামতে গিয়া প্লাটফরমে খাইছি উষ্ঠা! ব্যাপার না, অনেকেই শুকনাতেও হোঁচট খায়, আমিও খাইছি, নম্মাল! কিন্ত আমার এইবার যাযাবরী যাত্রার শুরুতে - কোলন শহরের নয়মার্কট (নিউমার্কেট)- এর (সাবওয়ে) ট্রাম স্টেশনে নামতে গিয়া ঘটলো অঘটন টা।

চোখ আমার যথারীতি মোবাইলের সুন্দরী স্ক্রীনে। সিঁড়ি দেখলেই লাফায়া নামার নিয়ম। সেই নিয়ম পালন করতে গিয়াই...। নব্য টাইলস করা সোঁপানে ডান পা পড়লো প্রজেক্টেড জায়গাটার একটু তফাতে, খানিকটা ত্যাড়া হয়েই। চোখ তখনো মোবাইল থেকে সরে না। একটু পরে ধপাস শব্দ শুনে "কোন হালায় শুকনার মধ্যে আছাড় খাইলোরে" বলে বিরক্তি ভরে চারদিক তাকিয়ে বুঝলাম, উক্ত ব্যাক্তিটি আমিই।

সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখি সিঁড়িতে কাইজ হয়ে পড়ে আছি, ডান পা নাড়াতে পারছিনা। সবচাইতে যে অস্বস্তিকর ব্যাপার ছিলো তা হলো চারদিকে কম করে হলেও চারজোড়া ললনার আটজোড়া চোখ, এদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। মোবাইলটা কিন্ত তখনো হাতে ধরা! "যাক বইছি যখন, পানডা খাইয়া লই" ভাব নিয়া টুইস্টেড ঠ্যাঙটা নিয়ে টেনে টেনে ট্রামে উঠলাম। কারন তখন ব্যাথার চাইতে অক্টেড ললনার চোখ গুলোই বেশী পীড়া দিচ্ছিলো (মনখারাপ)।

ভাইয়ের বাসায় আসলে সময়টা ভালোই কাটে। ইচ্ছেমতো, পাগলের মতো ঘুমাই। ভাবী বিদেশী হলেও রান্নাটা শিখে গেছে আগুন। আমি গরীবে-মুফতি, কি-না-কি খাই, এই দিকটা বেশ ভালোই চিন্তা করে। আর আমিও এখানে এলে আগামী এক মাসের খাওয়া উটের মতো করে স্টোর করে নিয়ে যাই! খাওয়া আর ঘুম ছাইড়া যাইতে শখ হয় না। কিন্ত যাইতে তো হইবোই, আইজ আর কাইল...।

শিরোনামটার সাথে লেখাটা গেলো কি? আসলে শিরোনামটার উদ্দেশ্য ছোট্ট তুমিন! -যার একটু শুভকামনা পাওনা আমাদের কাছ থেকে!

গানটার জন্য ধন্যবাদ তাঁকে, যার কাছ থেকে পেয়েছি।

Wednesday, March 07, 2007

শোক সংবাদ : দুষ্টু রাজপুত্তুর ধরা পড়িয়াছে

সারা পৃথিবীতে আপামর বাঙালীর মাঝে শোকের মাতম পড়িয়া গিয়াছে। কেহ কেহ রাস্তায় নামিয়া বুক-পিঠ চাপরাইয়া “হায় আজপুত্তুর... হায় আজপুত্তুর“ বলিয়া মহরমের ন্যায় শোক মিছিল করিতে নামিয়া গিয়াছে। কাহারো কাহারো আখি জলে রাস্তা প্লাবিত হইয়া জনজীবনে ধ্বস নামিয়া গিয়াছে। সবার কথা একটাই- “কামঠা কি ঠিক হইলে বাহে“?

আজপুত্তুরের বেলায় না হয় ঠিক হয় নাই মাগার তাহার সহিত জোটে জোট লাগানো দলের শিক্ষার্থী সংগঠনের সভাসদের পদ অধিকারী দুগ্ধে ধৌত তাহের ছাহেব (সালাম)কে কোন বেয়াক্কেল আটক করিয়াছে উহা জানিতে বড়ই মন চাহিতেছে। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ পাইয়াছে, এই ঘটনায় ও সর্ব সাধারন ক্রন্দন করিতে করিতে মূর্ছা গিয়াছেন।

আপনারা যারা উপরিউক্ত সংবাদদ্বয়ে মর্মাহত, বিমর্ষ হইয়া পড়িয়াছেন - উহারা একেএকে, দলেদলে, সদলবলে, আস্তে কইরা একটা টোকা মাইরা যাইয়েন।

ভাইয়েরা আমার, আমি দু:খের জ্বালায় আর লেখতে পারতাছি না, আঁখির জলের বানের কারনে কিছুই দৃশ্যম করিতে পারিতেছি না বিধায় এইখানেই লেখাখানির ইতি টানিতে হইলো।

ভবদীয়,
শোক সন্তপ্ত এক ভক্ত

অগ্নি ঝরা মার্চ :: লিখুন মনের দুয়ার খুলে

অগ্নিঝরা মার্চ মাস, বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিসত্তায় ওতপ্রোতভাবে জড়ানো একটি মাস। এই মার্চ না এলে বাংলাদেশ নিজের স্বরূপে প্রস্ফুটিত হতে পারতো কি না কে জানে! বঙ্গবন্ধুর অণলবর্ষি ভাষন, নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমন, স্বাধীনতা ঘোষনা এবং বীর বাঙালীর নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া- এসবই জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের উপাদান।

গর্বিত বাঙালীর চোখের সামনে বাংলা মা বারবার হয়েছে লাঞ্ছিত, অপমানিত। সম্মানের মার্চ মাস এবং তার আবেদন হয়েছে প্রতিমুহূর্তে অবলুণ্ঠিত। রাজনীতি নামক কুইনাইনের ফাঁদে পড়ে ৩৫ বছরেও বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হতে পারলো না। ক্ষমতায় আসীন হয়ে শাসকগোষ্ঠি দেশের চেয়ে, দেশের মানুষের চেয়ে নিজের অবস্খানকেই সর্বাগ্রে ঠাঁই দিয়েছে। জন্মের এতগুলো বছর পরেও বাংলাদেশ তাঁর নিজের একটি শক্ত রাজনৈতিক অবকাঠামো পেলোনা যার জোরে খুব শক্ত একটা ভিত্তি দাবী করতে পারে জাতি।

পেশাদারী রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বাঁক নিয়েছে সুশীল সমাজের রাজনীতির দিকে, অ্যামেচার রাজনীতির বিশাল সূচনা (গ্র্যান্ড ওপেনিং) হতে চলেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। কতোটা কি ভালো হচ্ছে, কতোটা কি হবে- সেটা সময়ই ভালো বলে দিবে আমাদের।

আমরা দেশের ভালো প্রত্যাশা করি, উন্নয়ন প্রত্যাশা করি, জনগনের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রত্যাশা করি। কোন নাগরিকই যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে, কোন নাগরিককেই যেন খোলা আকাশের নিচে দাড়াতে হয় পরিবার সহ - এই নিশ্চয়তা টুকু চাই আমরা আমাদের সো-কলড সুশীল এবং প্রফেশনাল রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে।

আমাদের অনেক কিছুই বলার আছে, অনেক কিছু ভাবার আছে। আমরা বলতে চাই, দেশের রাজনীতিতে সাধারন মানুষের নিশ্চিত অংশগ্রহন চাই। আমরা বলবো দেশের রাজনীতি নিয়ে, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে, দেশের চলমান পরিস্খিতি নিয়ে - আমরা, হাজারদুয়ারী ডট কম।

দেশমাতার একজন সচেতন সন্তান হিসেবে তুলে ধরুন বাংলাদেশ নিয়ে আপনার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা হাজারদুয়ারীর পাতায়। দেশীয় চলমান প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্খার প্রেক্ষিতে মেলে ধরুন আপনার ভাবনা সবার সামনে। লেখা পাঠিয়ে দিন hajarduari@gmail.com - এই ঠিকানায় ১২ই মার্চের মধ্যে।

হাজারদুয়ারী আপনার ভাবনা প্রকাশের জায়গা, আপনার নিজের চেতনার উঠোনে প্রবেশের একটি দুয়ার!

হাজারদুয়ারীতে লেখালেখি নিয়ে আরো জানুন এখানে