Monday, May 28, 2007

ক্রীড়ারঙ্গ!!

আগে মাঠের মধ্যে প্রায়শ:ই বৃক্ষ দেখা যেতো। মাঠের মধ্যে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতেই কিনা তখন বৃক্ষনিধন হতো না। এমনি এক মাঠে খেলা হচ্ছে কাউন্টি ক্রিকেট। বাউণ্ডারীর ঠিক পাশে বিরাটকায় এক বৃক্ষ, তার ঠিক পরেই একটা পার্ক, স্টেডিয়ামের ধার ঘেঁষে।

প্রথমদল বেশ শক্তিশালী! আগে ব্যাট করে রান করলো একশ সত্তর। এখন পরবর্তী দল ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়। ওয়ানডাউনে নেমে এক ব্যাটসম্যান বল এমন তুলে মারলো বল গিয়ে পৌঁছালো গাছের মাথায়। কোন ফিল্ডার এটা দেখেনি। সবাই ধরে নিয়েছে বিশাল ছয়। কিন্তু আম্পায়ার কোন সাইন দেখাচ্ছে না, বাধ্য হয়ে ব্যাটসম্যানরা জায়গা পরিবর্তন করেই চলেছে।

বলটা কেবল দেখেছে লেগ আম্পায়ার, টেকনিক্যালি সে সেজন্য বাউণ্ডারীর কোন সাইনও দিতে পারছে না!

এদিকে আম্পায়ারের সাইনের অপেক্ষা করে না পেয়ে ফিল্ডাররা সমানে খুঁজে চলেছে বল। একেবারে গরু খোঁজা যাকে বলে!
অবশেষে অবশ্য বলটা খুঁজে পাওয়া গেলো। কিন্তু ততক্ষণে দুই ব্যাটসম্যান জায়গা বদল করেছেন একশ ষাট বার।

বাকি দশটা রান তুলতে এই দলের সবগুলো উইকেট খোয়া গিয়েছিলো।

**********************

আঠারশো শতকের কোন এক সময় ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যান ডেনিস লিলি টাইপের বলে খিইচ্যা আতাইল্যা ব্যাট চালাইয়া শরীরের ভারসাম্য আর রক্ষা করতে না পেরে পিছলা খেয়ে পড়ে গেলো ক্রিজে আর বল সোজা স্ট্যাম্পস উপড়ে ফেলে চলে গেছে কীপারের হাতে। আউট!!!

ফিল্ডাররা যখন আউট উদযাপনে ব্যস্ত, সহযোদ্ধা ব্যাটসম্যান দলের বিপর্যয়ে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনারত, আম্পায়ারদ্বয় নিজেদের ওয়াইফ নিয়ে 'বীচিং'-এ মগ্ন, আউট হওয়া ব্যাটসম্যান তখন মাটিতে পড়ে থাকা ব্যাটখানা বগল দাবা করে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করলেন।

বাউণ্ডারী লাইনের কাছে এসে হঠাতই কোন এক ফিল্ডারের চিতকার কানে এলো তার। কী ব্যাপার, আউট হওয়া ব্যাটসম্যানকে আবার ডাকে কেনো? খুব বিরক্তিভরে পেছন ফিরে তাকালেন। এক কামান গালি ছুড়তে যাবেন অমনি তাকিয়ে দেখেন এক আম্পায়ার তারদিকে ভুড়ি দুলিয়ে দৌড়ে আসছেন আর বলছেন, "আরে করছো কি!! দিয়ে যাও বলছি, দিয়ে যাও..."!

একেতো মনের ক্ষেদ তারওপর পেছন থেকে ডাকাডাকি! আম্পায়ারের মাথা বরাবর বারি দেবার জন্য বগলের ব্যাটটা রেডি করতে গিয়ে বেচারা ব্যাটসম্যান সামনে তাকিয়ে দেখেন ক্রিজে তার ব্যাট পড়ে আছে, মানে ব্যাটের বদলে পড়ে থাকা স্ট্যাম্প বগলে নিয়ে হাঁটা দিয়েছেন বাল্লেবাজ মহাশয়!

Saturday, May 26, 2007

ক্রীড়ারঙ্গ!

উরুগুয়েতে যেবার বিশ্বকাপ হয় তখনকার কথা। ফাইনাল খেলা, তুমুল উত্তেজনা। সেকেণ্ড হাফের ও শেষের দিক। যে কেউ একটা গোল দিয়ে ফেললেই কেল্লা খতম!
আর্জেন্টাইন কোচ ভদ্রলোক ঘেমে নেয়ে ফেলে শার্ট খুলে টিশার্ট পরেছেন। অস্থিরচিত্তে হাফদৌড় দিচ্ছেন সাইড লাইনের সমান্তরালে। হঠাৎ আর্জেন্টিনা দলের প্রধান খেলোয়ার প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের ঠ্যাঙের সাথে প্যাঁচ খেয়ে ধরাশায়ী। গ্যালারীতে সবাই হায় হায় করে উঠলো। অবস্থা গুরুতর, খেলোয়াড়টি শুয়ে পড়ে এপাশ ওপাশ করছে। হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে, থেরাপিস্টের ব্যাগখানা তুলে কোচ নিজেই দৌড় লাগালেন প্রিয় খেলোয়াড়ের শুশ্রূষা করতে। কিন্তু বাধ সাধলো অমসৃন মাঠ। উল্টে পড়ে গেলেন তিনি। ব্যাগের ভিতরে থাকা কাঁচের ক্লোরোফর্মের শিশিও গেলো ভেঙে। ফলফল যা হবার তাই। খেলোয়াড়কে ফেলে রেখে এখন কোচকে স্ট্রেচারে করে এনে শুইয়ে রাখা হলো রিজার্ভড বেঞ্চের পাশে।
খেলার বাকি সময়টা নিশ্চিন্তে তিনি নাক ডেকে গভীর ঘুম ঘুমিয়েছেন!

*****************

স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সময়ের একটা ম্যাচের কথা বলি। তখন ক্রিকেটের অনেক নিয়ম কানুনই পাকাপোক্তভাবে আসেনি। অস্ট্রেলিয়া ইংল্যাণ্ডের একটা ম্যাচ চলছে তখন। অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস। বেলা শেষের দিকে উইকেটের টার্ণ কাজে লাগিয়ে স্পিনাররা বল করছেন। এরকমই এক ঘূর্ণীবলে মারতে যাবার আগে পা পিছলে পড়ে গেলেন ব্যাটসম্যান আর বল গিয়ে আঘাত করলো ঠিক তার মাথায়। না ভাইসব ভয় পাইয়েন না, রমন লাম্বার মতো কিছু হয়নি, মাথায় হেলমেট ছিলো! কিন্তু ঘটনা প্যাঁচ খাইছে অন্য জায়গায়। স্ট্যাম্পের সামনে ঠ্যাঙ থাকলে এলবিডব্লিউ দেয়া যায়, মাথা থাকলে কি আউট দিবে আম্পায়াররা?

এই নিয়ে রীতিমতো হাউকাউ। আউট হয়েছে এটা কনফার্ম শুধু টাইপটা নিয়েই জটলা। পরে অনেক হুমড়িতুমড়ির পর ঠিক হলো, 'এইচবিডব্লিউ'। বিশ্বাস করেন, ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই একমাত্র 'এইচবিডব্লিউ' আউট, মানে "হেড বিফোর দ্যা উইকেট!"।।

Tuesday, May 15, 2007

পিসি মিত্তিরের রহস্য উন্মোচন : পিয়ালীর বিয়ে!

নাগরী বাজারের সেমেট্রির ওয়ালে বসে বসে বাদামের প্যাকেটের ভেতর অমনযোগী হাত চালাচ্ছেন গোয়েন্দা প্যারীচাঁদ মিত্তির। পিসি মিত্তির বলে যিনি এক নামে পরিচিত একেবারে সুউচ্চ ডন এলবাবাদমদম এর কাছেও।

হাতের ডানদিকে কতগুলো কাগজ, তার ওপর একটা আতশী কাঁচ। হাতের বাম দিকে আধো খাওয়া বাদামের প্যাকেট। এই নির্জন সেমেট্রির ওয়ালে পিসি মিত্তিরকে পা দুলিয়ে আয়েশী ভঙিতে পায়েস খাবার মতো মনে হলেও ঘটনা কিন্তু একদমই সেরকম না। এবারের 'কেইস'টা একটু বিখাউজ্যা। জটলা খুলতে গিয়ে গিট্টু আরো লেগে যাচ্ছে। সাসপেক্টসরাও ইয়্যুজুয়াল না। সবাইকেই মনে হচ্ছে পুকুরের কাঁদার কাছাকাছির। "দেয়ার মাস্ট বি সাম ওয়ে..." বলেই শ্যাওলা পড়া ওয়ালে ডান হাত দিয়ে একটা কিল মারে পিসি মিত্তির। হাতের কনুইয়ের খোঁচা লেগে আতশী কাঁচ সহ কাগজ গুলো পরে যায় মাটিতে।

সুন্দর জোছনা রাত। সাক্ষাত পূর্ণিমা। ইয়া বড় একটা চাঁদ মনেহয় কয়েকশো মিটার দূরেই আছে। এমন রোমান্টিক একটা পরিবেশে কিনা তাকে ভাবতে হচ্ছে একটা ঘিরিঙ্গি মার্কা কেইস নিয়ে! চার্চের দিকে তাকিয়ে পিসিমিত্তির দেখে ফাদার স্টিফেনের ঘরের বাতি এখনো জ্বলছে। ফাদারের সাথে দেখা করতে যাবে নাকি পানজোরা ফিরে যাবে এমন দোটানায় যখন সে দুলছে ঠিক তখনো কাছে কোথাও 'পতপত' শব্দ তুলে একটা প্যাঁচা উড়ে গেলো, ঠিক তার পরক্ষণেই ডেকে উঠলো ভয়ার্ত কণ্ঠে!

ডাকটাকে অনুসরণ করতে গিয়েই তার চোখ আটকে গেলো মাটিতে পড়ে থাকা কাগজ গুলোয়। চাঁদের স্পষ্ট আলোয় ঝলমলে মুখের ছবিটা দেখতে পেলো সে। হাতে তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো সাসপেক্টসদের প্রোফাইলগুলো আবার...

সাসপেক্ট ১ : শরিফ বেগতিক
বয়স : ৩২ বছর ৩ মাস ৩ দিন
বাবার নাম : অজ্ঞাত,
বউয়ের নাম : অজ্ঞাত,
শালির পরিমান : সম্ভবত ১ টা (শিউর না),
শালির বয়স : অজ্ঞাত,
পেশা : ব্লগিং (ফুলটাইম)
স্পেশাল কোয়ালিটি : রমনীভাগানী;


সাসপেক্ট ২ : টাকশিক
বয়স : ৩৩ বছর ৫ মাস ৪ দিন
বাবার নাম : অজ্ঞাত,
বউয়ের নাম : অজ্ঞাত,
শালির পরিমান : ১টা,
শালির বয়স : বেশী না,
পেশা : ফাঁপড়বাজী,
স্পেশাল কোয়ালিটি : গালাগালি;

সাসপেক্ট ৩ : কামাল ডাঙ্গর
বয়স : ৩৫ বছর ৯ মাস ৬ দিন,
[সাসপেক্ট বড়ই ঘিরিঙ্গি। কোন রেকর্ড নাই]

প্রথম পাতা উল্টিয়ে পিসি মিত্তির যেইনা দ্বিতীয় পাতায় সাসপেক্ট ৪ -এর ডিটেইলসে চোখ বুলাতে যাবে ঠিক তখনি অদূরে কেউ যেনো সেমেট্রির ঝরা পাতায় খুব দ্রুত পা মাড়িয়ে পেছনের অপেক্ষাকৃত অন্ধকারের দিকে ছুটে গেলো। পিসি মিত্তিরও কাগজ গুলো রেখে ছুটলো পেছন পেছন। কালো গাউন পরা কেউ দৌড়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। সেমেট্রির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে একটা ইঁদুরের গর্তে পা ফেঁসে গিয়ে ধপাস করে না পড়লে হয়তো ধরে ফেলতে পারতো গাউন পরা "ছায়া" টাকে। একটু পরেই একটা সাদা রঙের মাইক্রো বেড়িয়ে যেতে দেখলো মাটিতে ধপাস অবস্থাতেই।

"বাহ্‌, শুরু করতে না করতেই লেজে 'কোম্পানী' লেগে গেলো"! -ঠোঁটের কানায় হাসি ঝুলিয়ে পিসি মিত্তির উঠে পড়লো। হাত দিয়ে ঝাপ্টিয়ে জামায় লেগে থাকা ধূলা ঝেড়ে রওনা দিলো শ্যাওলা পরা ওয়ালের দিকে, যেখানে আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেট আর কাগজগুলো পড়ে আছে।

ফিরে এসে কাগজগুলো হাতে নিয়েই কিছু একটা অসামঞ্জস্য ঠেকলো তার। কাজগগুলো উল্টে দেখলো ভেতর থেকে কয়েকটা মীসিং। সাসপেক্ট ১, ২, ৩, তারপরে ৪ আসার কথা। কিন্তু সেই এনটায়ার পাতাটাই গায়েব। এবার শব্দ করে হেসে ওঠে পিসি মিত্তির। ওভার কোটের ভেতর থেকে টিনের কৌটায় চুমুক দেবার পরপর সেই হাসিটাও মিলিয়ে যায় যখন সে টের পায় তার আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেটটাও হতচ্ছাড়াটা নিয়ে পালিয়েছে।

পিসি মিত্তিরের এবার কান্নায় গলা ধরে আসে!



(-চলবে-)

দ্যা নেমেসিস

"মাথার ওপরে অদ্ভুত রকমের এক পাখি উড়তে থাকবে, ডাকতে থাকবে তার বিচিত্র সুরে। আশ্চর্য হলো, সেই ডাক কেবল তুমিই শুনবে, উপর দিকে তাকালে পাখিটি কেবল তোমারই দৃষ্টিগোচর হবে! তোমার সাথে থাকা এমনকি তোমার সবচাইতে কাছের বন্ধুটিও কিছুই বুঝতে পারবে না। মনে রাখবে, এর জন্য কেবল তোমাকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। তোমাকেই মুক্ত করতে হবে তাকে, তার সাথেই তোমার পরিণতি। একটা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে তোমার তাকে অর্জন করে নিতে হবে" - এই পর্যন্ত শুনেই হঠাত মাথার ওপরে অদ্ভুত আকারের এক পাখির অস্তিত্বের সাথে তার আশ্চর্য রকমের ডাক্‌ অনুরণিত হলো।

"যদি কিছু দেখে থাকো, যদি কিছু শুনে থাকো - তাহলে সময় চলে এসেছে। এখন আর পিছু হটার কোন পথ নেই। তোমাকে যেতেই হবে, যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে, রাজকন্যাকে মুক্ত করে তার গলায় মালা তোমাকেই পড়াতে হবে"।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা গেলো রাজকন্যা নিজেই হাজির "যোদ্ধা"কে নিয়ে যেতে। কিন্তু একি, রাজকন্যার মাথার চুল চাঁছা কেনো! কোজাক রাজকন্যার জন্য যুদ্ধে মারা যাবার রিস্ক নেবো না, ভাবতেই কিনা দিলো হামলা করে! আমার আবার স্বগতোক্তি , "আগেরটাই তো ভালো ছিলো"।

রাজকন্যার (!) সঙ্গীসাথী পাকড়াও হলো, তাঁকে বলা হলো 'তুমি এগোও আমি আসছি'। সে তার সাথীদের নিয়ে নিজের চ্যারিয়ট ছুটিয়ে দিলো। বন্দীদের খাবার তদারকী দেখতে গিয়ে দেখা হলো ফ্রেড এর সঙ্গে।
: সেকি ফ্রেড তুমি এখানে কি করো!

খুব দুঃখের সঙ্গে ফ্রেড দুই লাইনে তার কথা বললো। ভাবছি, ফ্রেডকে সাথে নিয়ে নেবো কিনা। হাজার হোক, পুরনো বন্ধু। একা একা জঙ লড়ার সময় ভরসা তো পাবো...!

Friday, May 11, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ১০

বরিষনের ছোঁয়া থেকে গা বাঁচিয়ে এঁকে বেঁকে হেঁটে যায় মাঝবয়সী রমনী রঙীন ছত্রী হাতে। অদূরে বিদ্যালয় ফেরত বালিকার কলরবে মুখর বিকিকিনির ঘর। গোল পাকিয়ে উঠতে থাকা সিগারের ধুসর ধোঁয়ার সাথে চিন্তাও কুণ্ডলী পাকায়। কালবৈশাখীর প্রবল তোড় থেকে বাঁচতে কিশোর আশ্রয় নেয় সুবিশাল বটবৃক্ষের তলে। চোখের সামনে উড়ে যায় চালা, উপড়ে যায় বৃক্ষ সমূলে। ভয়ে সিঁথিয়ে গেলেই মনে পড়ে যায় মায়ের মুখ। বাতাসের ঝাপ্টা কমতেই ভৌঁদৌড়। মায়ের ভর্ৎসনার সাথে মিশিয়ে ঘরে বানানো ঝালমুড়ি খায়। মুক্তিবেগে চিন্তা ধাবিত হয়ে ফিরে আসে আবার যান্ত্রিক সভ্যতায়, মাঝের অনেক গুলো দশক ছাড়িয়ে। সর্বশেষ সুখটান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে জ্বলন্ত সিগার, 'এখনো অনেক কাজ করার বাকী'!

Monday, May 07, 2007

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এবং ব্যর্থ কিছু 'কমিটমেন্ট'

সময়টা আসলেই খারাপ, খুব খারাপ। এতো চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এরকম 'হা-ভাত' অবস্থায়তো পড়তে হয়নি কখনোই। সবসময়ই একটা সচল, ঝরঝরে অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে পেরেছি, তেমন কোন ঝামেলা ছাড়াই- কিন্তু এখন!

বলছিলাম লেখার সম্ভাবনা নিয়ে। আগের মতো সাবলীল ভাবটা যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। ব্লগের পাতা খুললেই মনে হতো লিখে ভাসিয়ে দিই। আর এখন ঠিক উল্টো। আলসেমী একটা কারণ হলেও প্রধান কারণ যেনো অন্যকিছু। অন্য কোন কারণে, অন্য কোনখানে, অন্য কোন প্রয়োজনে, অন্য কিছু করে যাচ্ছি, অন্য ভাবে বুনে যাচ্ছি সময়ের সূতা।

ইদানিং একটা সিরিয়াল নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি। সারারাত জেগে দেখতেও ক্লান্তি জাগে না। অদ্ভুত এক ঘোর নিয়ে আটকে থাকি। "এলিয়াস" এ সিআইএর নানা দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ডের মাঝেও বিভিন্ন সম্পর্কের প্রতি কমিটমেন্টটা সুদারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে কলাকুশলীরা। এজেন্ট সিডনী ব্রিস্টো আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে পুনরায় জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মাঝখানে যখন কেটে যায় দুটো বছর, এলএ থেকে নিজেকে আবিষ্কার করে হংকং-এ, সেইফহাউজে দেখা হয় সহকর্মী ভন এর সাথে- সবকিছুই কেমন খাপছাড়া লাগে।

ফিরে আসার পরে সিডনীর জানা হয় ভন এর সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার গভীরতা। ছয়মাস দেশের বাইরে কাটানোর পর এনএসএ-র একজন অফিসারের সাথে পরিণয়, সিআইএ ছেড়ে ফ্রেঞ্চ শিক্ষক হিসেবে আত্মনিয়োগ, এসবই ছিলো দুবছর আগের প্রাপ্ত উপাত্তের ডিএনএ পরীক্ষায় সিডনীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর, তাঁর স্মৃতি জাগানিয়া জায়গা গুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে ভন এর এরূপ আচরণ।

সাজানো সেট, সাজানো কাহিনী হলেও কেমন একটা ধাক্কা মারার মতো অবস্থা। বুঝতে পারি, মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। তথাপি কোথায় যেনো কি বেজে ওঠে, কোথায় যেনো নি:শব্দেই 'একটু খারাপ লাগা' ডুকরে উঠে। শরত বাবুর কথার মতো একেবারে গলা পর্যন্ত ফেনাইয়া উঠে...!


প্রতি বছরের মে মাসের প্রথম শনিবার রাইন ল্যাণ্ডের অধিবাসীরা এক অদ্ভুত উৎসব করে। "রাইন আম ফ্লামেন"- আতশবাজির আলোতে রাইন নদী। বিশ্বের নামকরা সঙ্গীতের মূর্ছনার সাথে নদীর উপরের আকাশে খেলা করে নানা রকমের আতশবাজি। বিয়ার-মদের মহোৎসব হয়, চিৎকার, চেঁচামেচি, কোলাহল সব কিছুতেই ভরে থাকে চারদিক।

একবারই গিয়েছিলাম, প্রথমবার। তারপর থেকে আর যাওয়া হয় নি। ইচ্ছে করেনি এমন না, কিন্তু ঐ যে কমিটমেন্ট। নিজের সাথে কিছু কমিটমেন্টের কারণে খুব প্রিয় একটা বিনোদন থেকে স্বেচ্ছায় গুটায়ন।

হ্যামিলন, শহরটা খুব বেশী দূরে নয়! জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তেই চলে "মিউজিক্যাল র্যাট" উৎসব। যেদিন থেকে জানলাম ছোটবেলায় জানা হ্যামিলন শহরটার খুব কাছেই আছি, সেই থেকেই একেক করে দিন গুনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে কবে আমার কমিটমেন্ট পূরণ হবে, কবে আমি শতশত ইঁদুরের মাড়ানো রাস্তায় পা ফেলবো, কবে আমি সেই পাহাড়টি একটু ছুঁয়ে দেখবো যে পাহাড়টির ওপাশে হারিয়ে গেছে একদল কিশোর ভবিষ্যতের কমিটমেন্ট নিয়ে।

ইনস্ট্রুমেন্টালের দিকে ঝোঁক নতুন না। খুব ভেতর থেকে নাড়িয়ে যায় এমন ইনস্ট্রুমেন্টালের ভক্ত আমি বরাবরই। জুবায়ের এর বাশীর এই ইনস্ট্রুমেন্টালটা যখন শুনলাম ভালো লাগাতে সময় লাগে নি খুব বেশী।

রাতে বিছানায় শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে বাঁশীর সুরের সাথে মিশে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম, আমি দাঁড়িয়ে আছি সবুজ ঘাসের একটা খোলা মাঠে। ঝুম করে সূক্ষ্ণ ধারায় বৃষ্টি নেমেছে, বোতাম খোলা সাদা পাতলা শার্টের শরীর ও হাতা নিয়ে বৃষ্টি ও বাতাস কাড়াকাড়ি করছে, আমি শুনছি ইনস্ট্রুমেন্টটা, চুল বেয়ে, কানের ধার বেয়ে, গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে... এক অজানা কমিটমেন্ট নিয়ে!

Saturday, May 05, 2007

ললনাদুর্ঘট : গল্পের শুরু

মেজারের বিলা হওয়ার রেট জ্যামিতিক হারে বাড়তাছে, যেকোন মূহুর্তে উষ্ণ পারদ ঠাশ কইরা গিয়া ব্রক্ষ্মতালুতে হিট করতে পারে।

কইতাছিলাম হল্যাণ্ডের সেই ললনারে বিদায় দেয়ার সময়টার কথা। ট্যাঁওট্যাঁও শব্দে আইসিই ট্রেইনের দরজা বন্ধ হওয়ার সময়টার কথা! দরজা লাইগা গেলো, কাঁচের ঐপাড় থেকে দেখলাম তখনো খাড়ায়া আছে। চোখে প্রশ্ন, মাগার উত্তর কই? হাত নাইড়া বিদায় নিলাম, ট্রেইনও আস্তে আস্তে সাপের মতো মোচড়াইতে মোচড়াইতে কোলনের ডয়চেব্রুকের ওপর দিয়া হাঁটা দিলো, আর কাঁটাপাতলা দিলাম সামনে আগাইয়া ডোমের নিচ দিয়া।

মিউজিয়াম লুডভিগের এইখানে রেলিঙের উইঠা পা দোলাইয়া বইসা কতোক্ষণ মনের আনন্দে বাংলা গান গাইলাম। খুব যে খারাপ গাইছি তার প্রমাণ হইলো, গান গাইলাম অথচ কোন হালায়ই পয়সা টয়সা দিলো না। অবশ্য এমন চিপায় দেয়ারও কথা না। যাইহোক, আমার গানের প্রতিভা মোটামুটি মাঠেই মারা গেলো এই যাত্রায়। হাতের মোবাইলটা বাইর করলাম কি মনে কইরা!

"সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে,লোহার ঐ ব্রীজটা তোমার ভারে ভাইঙা না পড়লে তুমি এখন ডুসেলডর্ফ ছাড়াইছো। ঘরযাত্রা শুভ হোক তোমার"! সেণ্ড করে দিলাম ০০৩১৬...
সাথে সাথেই রিপ্লাই, "মোবাইলটা হাতেই আছিলো। ভাবতেছিলাম তুমি শর্ট ম্যাসেজ করবা। আমি খুব খুশী হইছি। তুমি কি করো"!

একই জায়গায়, একইভাবে বইসা কতোক্ষণ ম্যাসেজ ম্যাসেজ খেললাম। এখন এগুলা লেখতে গেলে পাঠক কইবেন আমি শিমুলের ছাদের কাউয়া খেদানের ধান্ধায় নামছি। থাকুক, কইয়া কাম নাই। আমি রেলিং থেকে নাইমা হাঁটা দিলাম নয়মার্কটের দিকে। পেটের ভেতরে ততক্ষণে বিলাই টম, ইন্দুর জেরীরে সমানে দৌড়াইতাছে!

তার বেশ অনেকদিন পর, হঠাত ফোন কল। হল্যাণ্ড থেকে আবার ক্যাডা ফোনায় আমারে? ধরলাম, হ্যালো কইতেই শুনি সেই চিবানি ইংরেজীতে জিগায়, "আছো কেমন"? জরুরী ভিত্তিতে ইমেইল ঠিকানা নিলো। একটু পরে মেইল চেক কইরাই দেখি কয়েক লাইনের একটা চিঠি। "আমি মনেহয় খুব শীঘ্রই জার্মানীতে আসতেছি"। ভালো তো, আসলে আসো, দেখা হইলে হবে। রিপ্লাইও করলাম এই-সেই, ইনিয়ে-বিনিয়ে।

কয়েকদিন পরে জানাইলো 'পরশুদিন' আসতেছে, সকালের ট্রেইনে। সকাল মানে সকাল সাড়ে দশটায় কোলনে নামবো। লে হালুয়া, আমার অবস্থা টাইট। এমনিতেই পুঁজিবাদীরা আমারে সহ্য করতে পারে না, তারওপর কামলায় ঢোকার আগেই যদি বাং মারি তাইলে উল্টা পোঙা নিজেরই যাইবো। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গেলাম স্টেশনে। ঠাণ্ডায় সব জইমা আছে, আমি খালি ঘামতাছি। বাইরে না, ভিতরে ভিতরে। শালার ট্রেইন ও আইজকাই লেইট করতে হইলো। আসে না আসে না... খাড়াইয়া আছিতো আছিই।

সাপের মতো মোচড়াইয়া ট্রেইনটা অবশেষে প্লাটফরমে ঢুকলো। থামলে পরে প্যাটপ্যাট শব্দে দরজা খুলতে থাকলো। আমি তখন ভাবলাম, মাস খানেক আগে দেখা হইছে, তাও খুব বেশী সময়ের জন্য না। চিনতে পারুম তো!

লোকজন নামতে শুরু করলো, আমার অবস্থা তখন চরমে। সবাইরেই মনে হয় চিনি। সেইরম অবস্থা একেবারে, ঘামছিও মনেহয় একটু আধটু - এমন অবস্থা হইলে আমি অনেক পরিচিত মানুষও চিনতে পারি না। মনে ভয় ঢুইকা গেলো, যদি চিনতে না পারি তাইলে কি হইবো!

Friday, May 04, 2007

ললনা গল্পের খসড়া-

সময়টা বড়ই দুর্গম, তবে দুর্বার কিনা জানি না- বারবার টেরাই মাইরাও কিছু বাইর হইতাছে না। হাল ছাড়ি নাই এখনো, "খাড়াও তুমি জরিনা, আমি তোমারে ছাড়ুম না। লেইখাই ছাড়ুম তোমারে নিয়া কাহিনী, ভয় নাই লাগেও যদি পিছে তোমার প্রেমিক বাহিনী"!

কইতাছিলাম আইফেলের সেই ললনাদুর্ঘটের কথা।

আমি হা কইরা হাঁপাই আর টেরাইয়া টেরাইয়া চাইয়া একটা মুচকি হাসি দেই ছুড়ির দিকে। হঠাত দেখি সে কেমন পরিচিত ভাষায় কথা বইলা উঠলো। আমি চোখ ডলি, ভুল শুনি নাকি ঘরে ঘুমাইয়া খোয়াব দেখি, বুঝতাছি না।

আহা কতদিন পরে পরিচিত ভাষায় কথা শুনলাম। আঙুলের কর গোণা ধরলাম, কইদিন হইলো সেই হিসাব বাইর করতে। শয়তান ছেমরী দিলো আমার হিসাবের তেরোটা বাজাইয়া- "এই ট্রেইন খাড়ায়া রইছে ক্যালা, সিঙ্গেল ট্র্যাক নাকি!"?

ইচ্ছা করতাছিলো চিক্কুর মাইরা কই, "নজমুল হুদা কি ত্রিভুজের কিছু লাগে? আমি ক্যামনে কমু ট্রেইনের লাইন কয়ডা"!
কিছু কইলাম না, দাঁত বাইর কইরা হাঁসি দিয়া কইলাম, এনাউন্সে তো কইলো উল্টা দিকের রেল গাড়ি আইতে দেরী হইবো, চুপ কইরা বইয়া থাকো, কথা কইয়ো না...। ফুড ফর ওয়ার্ক- কথা কম কাজ বেশী!

বেটিগা থ' খাইয়া। কয় কি হালায়! আমন্ত্রন জানাইলো পাশের সিটে বসার। ভাইবা দেখলাম মন্দ না, এক ঘন্টার ভ্রমনটা খারাপ হয় না তাইলে!

বইসা গেলাম পাশের সিটে। তার চিবানী মার্কা কথা শুইনাই বুঝলাম পাশের দেশ হল্যাণ্ডের পাবলিক। ভাইয়ের এখানে বেড়াইতে আসে মাঝ সাঝে। স্কেটিং খুব পছন্দের একটা স্পোর্ট, আর ক'দিন পর বরফ ভালো করে জমলে অস্ট্রিয়া যাবে ভাই-ভাবীর সাথে।

মেয়েটার মাথা পরিষ্কার, কথা বলে দারুণ, আমার মতো ভোম্বল টাইপের না। জমে গেলাম কথায় কথায়। এই কথা সেই কথা নানান কথা এলোপাথারী কথায়! কেটে গেলো ঘন্টা, কোলনে পৌঁছে গেলাম সময় মতোই। ঘড়ি দেখে বললো, হাতে এখনো ৩৫ মিনিট সময় আছে, আমার তাড়া না থাকলে যেন ওকে একটু সময় দিই। দিমু না, হইবো না, যা বেটি ভাগ, খাইয়া আর কাম নাই! নিজের সাথে এই টাইপের যুদ্ধ করেও নিজেকে মানাতে বাধ্য হলাম। স্টেশনের নিচেই একটা দারুণ ক্যাফেতে বসলাম সময় কাটানোর নিমিত্তে!

আমার কথার সাধারণত কোন লাইন বাইন থাকে না। সেই জন্যই বলতে পারছি না এক্সাক্টলী কি কথা হইছিলো সেদিন, তবে মনে আছে পশ্চিমে এই প্রথম কোন সুদর্শনা ললনার সাথে একলা বইসা কফির গেলাসে চুমুক মারতাছি।

৫ মিনিটের মধ্যেই ৩৫ মিনিট শেষ হইয়া গেলোগা (হালার ঘড়ি)। এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে গিয়া তারে আইসিই ট্রেইনে তুইলা দেবার আগেই নিজের ফোন নাম্বারটা দিয়া কইলো যেন যোগাযোগ করি। দরজা বন্ধ হওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে আইসা আমারে জড়াইয়া ধইরা কইলো, "আমি আবার আইতাছি..."!

আমি কিছু বুইঝা, কিছু কইতে গিয়া দেখি, ও ততক্ষণে ট্রেইনের ভিতরে, দরজা ট্যাঁওট্যাঁও শব্দ কইরা বন্ধ হইয়া যাইতাছে!