Sunday, October 28, 2007

মুহাম্মদ, তুমি তো মস্ত বড় যাদুকর!

চৌদ্দশ বছর আগের সেই ঘটনা। যখন আবু লাহাব বা আবু জাহেলের দল মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলেছিলো যদি চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দেখাতে পারো তাহলে তোমার কথা মেনে নিব। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করবো। ঘটনাক্রমে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হলো কিন্তু সেই দল তখন তাদের পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনুগত্য তো স্বীকার করলোই না বরং হাসতে হাসতে বলে চলে গেলো, 'বাহ্ মুহাম্মদ, তুমি তো মস্তবড় যাদুকর'।

কনফুসিয়াসের প্ল্যানচেট আয়োজনের সঙ্গে সামান্য যোগ করি। প্রমাণ, দলিল এগুলো দেখিয়ে কি লাভ! যারা দেখতে চাওয়ার তারা চাইবেই। কিন্তু দলিল, প্রমাণ দেখিয়ে চোখে আঙুল তুলে সত্য বুঝানোর পরেও হাসতে হাসতে নিজের পথেই চলে যাবে তারা। নিজের গায়ে ইসলামের ট্যাগ লাগাবে ঠিকই কিন্তু কাজে কর্মে প্রমাণ দিবে আবু লাহাব এবং আবু জাহেলের উত্তরসূরী হিসেবেই।

ইতিহাস মরে না, বারে বারেই আবর্তিত হয়। আবু লাহাব রাও ফিরে ফিরে আসে, বার বার, হাজারবার। তাদের অভিশপ্ত আত্মাও আমাদের আশে পাশেই ঘুরঘুর করে। তাদের মনোবাসনা হলো, 'আমি বুঝুম না, আমারে বুঝাইবো কোন হালায়!'

Monday, October 15, 2007

আমার ছেলেবেলা - ডিলিটেড সিন!

আমি ভয়ানক রকম অতীতচারী। হুটহাট করে চলে যাই সময়ের উপত্যকা পেরিয়ে অতীতের বিভিন্ন সময়ের খানা-খন্দে। নাচি, গাই, উড়ে বেড়াই নিজের মতো করে সেসব জায়গায়। রি-কল করি, স্মৃতির মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই টিমটিমে আলোয় স্মরণ করি হারিয়ে যেতে বসা মুখগুলোকে।অনেক আগে থেকেই ভাবছিলাম নিজের ফেলে আসা ছেলেবেলা কে তুলে ধরবো। ডায়েরী লেখার অভ্যাস কোন কালেই ছিলো না। ব্লগিং প্লাটফরম মনের আবঝাব বের করার একটা উপায় বের করে দিলো।

কথায় বলে স্বভাব যায় না মলে। আমি অলওয়েজ লেইট লতিফ। এগারোতম বেলায় কাজ না করলে হয় না আমার। সেই জন্যই লেখা শুরু করেও থমকে ছিলো। মাঝখানে পড়লাম অসুখে। নাক-কান-গলা এক হয়ে সম্মিলিত বাঁশরী বাজানো শুরু করলো। কাশি শুনলে যক্ষ্না রুগীও ভয়ে দৌঁড়ে পালাবে। এই অবস্থায় লেখাটা কোন ভাবেই এগুচ্ছিলো না। ঠিক করলাম ঈদের দিন যেহেতু বইটা বের হবে, ঈদের দিন সকাল সকাল লেখাটা পাঠিয়ে দেবো নে বেগতিক ভাইয়ের তড়িৎ ডাকে। এতো সকালে তো আর বই দিবেন না উনি। ঈদের দিন, সেমাই-দই খাবেন, খেজুর খোরমা খাবেন, ভাবীর সঙ্গে একটু খুনসুটি করবেন তার পরে না সচলায়তন!ওমা কীসের কি! সারা রাত বসে লেখা শেষ করে সচলে ঢুকে দেখি, ব্যাটা বই অলরেডি বানিয়ে আপ করে বসে আছে।

বিরাস বদনে তাও দিলাম লেখাটা পাঠিয়ে। কিন্তু বাদ পড়ে গেলো কিছু সিন। পরে চিন্তা করে দেখলাম ভালোই হলো। লেখাগুলোকে ডিলিটেড সিন হিসেবে চালিয়ে যাবে

ডিলিটেড সিন এক.

এসএসসি পরীক্ষার আগে। টেস্টের পর আমাদের স্কুলে কোচিং হতো। ওল্ড টেন বলে আলাদা একটা ক্লাসই ছিলো ঐতিহ্য অনুযায়ী। আমি এজ ইয়্যুজুয়াল একদিন গেলে তিনদিন কামাই মারি। তখন স্কুলে যাবার ব্যাপারটা আমার কাছে সিসটেম লস মনে হতো আসলে। তার চাইতে খাল পাড় ধরে হাঁটা। ঐ পাড়ের মেয়েদের সঙ্গে টাংকি মারা, পাট ক্ষেটের আইলে বসে সারা বেলা গল্প করতে করতেই আমার সময় কেটে যায়, স্কুলে যাবার বেইল কই?
দুই তিনদিন বাদে স্কুলে গিয়ে দেখি আবহাওয়া থমথমে। আমার সবার সঙ্গেই বিশেষ খাতির। ফার্স্ট গার্লের সঙ্গে বিটলামির ব্যাপারটা স্কুলের মোটামুটি সবাই জানে। যে কারণে মেয়েদের সঙ্গেও মাঝে মাঝেই গপশপ হয় আরকি!সেদিন দেখি অবস্থা ভিন্ন। কোন মেয়ে ছেলেদের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। আমার মেয়ে ইয়ার-দোস্ত গুলাও ক্যামন পানসে হয়ে গেছে। পিছনে বসে এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি!

রুমা। আমাদের ব্যাচের সবচাইতে সুন্দরী না হলেও একটা দিকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। নাইনে থাকা কালীন কে জানি রুমাকে উদ্দেশ্য করে দেয়ালে "মিল্ক ভিটা" লিখে রেখছিলো খড়িমাটি দিয়ে।ঘটনার দিন কিছু বাবজুইট্টা (আমি কই না, লোকে কয়) পোলাপান পিছনে বসে বসে বুট খাচ্ছিলো রউফ স্যারের ইংরেজী ক্লাসে। রউফ স্যার হলেন মাটির মানুষ। ক্লাসে এসে হয় নিজে লিখবেন নয় সবাইকে দিয়ে লেখাবেন। কে, কোথায় হাউ কাউ করলো সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ করেন না। সেদিন তিনি লিখছিলেন। রুমা বিষণ্ণ বদনে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকাদের মতো বেঞ্চে উবু হয়ে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে ঝিমাচ্ছিলো। বুট খাওয়া পোলাপাইন গুলার চোখ চলে গেলো জায়গা মতো। একজন আরেকজনের সঙ্গে বাজী ধরলো, "কেডা সই করতে পারবো"!নিয়ম হলো, নিজের বইয়ের উপর বুট রেখে তারপর আঙুলে টোকা দিয়ে ফায়ার করতে হবে। সোবহানের দোকানের আলুপুরী বাজি।

শইপ্যা, হলো ত্যাঁদরের একশেষ। ও কইলো আমি পারুম। সুন্দর কইরা বুট তার বইয়ের উপর রেখে দিলো ইয়া জোরে এক টোক্টা। সঙ্গে সঙ্গেই ভীষণ জোরে "উহঃ" বলে রুমা জায়গামতো হাত দিয়ে চেপে ধরলো। হঠাৎ উহঃ শব্দে রউফ স্যার পেছন ফিরলেন। বাকীরাও।সবার দৃষ্টি রুমার দিকে, রুমার দৃষ্টি এদিকে। কিন্তু কে মেরেছে, কোথায় মেরেছে সেটা তো আর বলা যায় না। ও শুধু বললো, এদিক থেকে ছেলেরা বুট দিয়ে ঢিল্লায়। ওর হাতের পজিশন দেখে স্যার যা বুঝার বুঝলেন। সাড় ধরে সামনের কয়েকটা বেঞ্চ বাদ দিয়ে নিজের মন উজার করে পিটালেন সব গুলাকে। আর বললেন, ভবিষ্যতে যেনো কোনদিন এরকম আচরণ না করে কোন মেয়ের সাথে।

রউফ স্যারের এক মেয়ে পড়তো আমাদের সঙ্গেই। ওর সঙ্গে মাঝে সাঝেই এয়ে, উয়ে বাতচিত করতাম। এই ঘটনার কথা শুনে, মাইরের ভয়ে আর তার সাথে একলা কোন জায়গায় দেখা করিনি। করলেও দুই মিনিটের বেশি না।

Monday, October 08, 2007

হেমন্তের পাতাঝরার দিনে

- একটা দু'টা করে পাতা ঝরে পড়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই মন খারাপ হয় শুধু শুধু। ঝিরঝিরে বাতাসে শুকিয়ে যাওয়া পাতা উড়ে যায় বলেই বোধহয়। আগে টিভিতে মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলীর এ্যাড দেখানোর সময় এমন দৃশ্য দেখাতো। তখনো এরকম একটা শুষ্ক অনুভুতি জাগতো মনে। জিন্সের পকেটে হাত পুরে আমি আপন মনে হেঁটে যাই লাল শুকনো পাতা মাড়িয়ে। হঠাৎ চোখ পড়ে পাশের বেঞ্চিতে। সোনালী চুলের বাদামী চামড়ার যুগল। খুব অন্তরঙ্গ হয়ে ছুঁয়ে আছে পরষ্পরকে। মনটা দোলা দিয়ে ওঠে। এমনতর দৃশ্যে নয়, ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে! গলায় মাফলারটা টেনেটুনে ঠিকঠাক করি আবার। সাতদিন ধরে ভুগছি, নইলে কি আর মাফলার আমার গলায় ওঠে! অয়োময়ের হানিফের মতো হঠাৎ কাশি ওঠে। বিষ্ময়ের চোখে দুইজোরা চোখ ফেরে আমার দিকে। খানিক অস্বস্তি হয়। পা থেমে থাকে না। সিগনালে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে তার কলাপাতা রঙের কিউটি সাইকেলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তার বাবা। দুজনের মাথায়ই সাইকেল হেলমেট। টকটক করে কি যেন বললো বাবাকে। কথা বলার ঢঙ দেখে মনে হলো, টুক করে খেয়ে ফেলি পিচকুটাকে। সবুজ হতেই এক্কাদোক্কা করে রাস্তা পার হয়ে একসময় দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো তারা। হারানো দিনের মতো করেই হারিয়ে গেলো সুন্দর মুখটা। পা চলে আবারো। একটা ফাঁকা বেঞ্চ পেয়ে বসে পড়ি আমি। ক্লান্ত পা আর চলছে না যে!

এখানকার ফ্লু গুলো কেমন জানি। শরীর ভয়ানক দুর্বল করে দেয়। একেকবার মনে হয় ডেঙ্গু হলোনা তো আবার! পরক্ষণেই মনে হয়, ধুর ডেঙ্গু হবে কেমনে? এখানে কি মশা কামড়ায় আমাকে? ক্লান্তি এবার আমাকে নস্টালজিক করে দেয়। হেমন্তেরএরকম একটা ঝলমল পড়ন্ত দুপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। সরষে ক্ষেত আমার দারুণ প্রিয়। সেই হলুদ সরষে ক্ষেতে আমি দৌড়ে গেছি কত শতবার। জ্বরের সময় মা মাথায় পানি দিতো আর ভর্ৎসণা করতো, খালি হাতে ধরে ধরে অসুখ বানায় । এখন মাথায় পানি দেয়ার জন্য মা কাছে নেই। বকা ঝকা করারও কেউ নেই। সেদিনও বলছিলো, তুই আসবিনা ? আমি কি সাধে পড়ে আছি এখানে?

শরীরটা আবারো দুর্বল লাগে। বসে থাকতেও ইচ্ছে হয় না। একটা রিক্সা করে শহরময় ঘুরে বেড়াতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। রাস্তায় থেমে কোন একটা বেস্ট ইন ঢাকায় দুধ-চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা মেরে দেয়া যেতো। আমার ঘরে চা নেই, কফিও নেই। কোন দোকানে ঢুকেও খেতে ইচ্ছে করছে না। কোন এপেটিটও নেই। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয় নি, তারপরও কোন ক্ষুধা নেই। তবে দুর্বলানুভুতিটা প্রকট। বাড়িতে থাকলে মায়ের কয়েক পশলা ঝাড়ি হয়ে যেতো এতোক্ষণে। সেদিনও জেরা করছিলো, কি খেয়েছি, কি রেঁধেছি, ঈদে কি করবো, এইসব হাবিজাবি। আমি হু-হা করি। মা কি করে জানবে হয়তো ঈদের দিনও সাত সকালে উঠে কামলা খাটতে দৌড়াতে হবে। ঈদের দিনও হয়তো সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরার টান থাকবে না। হয়তো এই বেঞ্চটিতে বসে কোন এক ঈদের স্মৃতিচারণ করবো। প্রচন্ড ঠান্ডায় হয়তো দুয়েকটা কাশি দেবো। গলায় মাফলার তুলবোনা তবুও। পরেরবার ফোনে কথা বলার সময় বসে যাওয়া গলার গরগর শুনে মা হয়তো অকাতরে ধমকে যাবে আবার।