Saturday, December 29, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ১২

ডরোথীন স্ট্রাসের ইট বিছানো রাস্তায় চৌচক্রযানের ঘরঘর শব্দ কর্ণিকাগুহ্য ভেদে মস্তিষ্কে অবস্থান জানান দেয়। মুহূর্তেই দৃশ্যপট পালটে চলে যায় মেলবোর্ণ। জেনকিন্স স্ট্রীটের পরিচিত শব্দ, নিমেষেই স্থান-কাল-অবস্থানের প্রাচীর দুমরে ফেলে। চোখের পলকে রাস্তাটা বদলে হয়ে যায় রেইলওয়ে প্যারেড। স্টেশনের পাশের বাড়ি থেকে ধুমধাম কানে আসে। মনোযোগে শুনলে ভ্রম হয় নিজের বলে। এক পশলা ঠান্ডা বাতাস কনকনিয়ে নাসিকা-কর্ণ বিদীর্ণ করে। ভাবনার পাখা, মেলার বিপরীতে চুপসে ঢেসে যায় কোটরে। চরিত্রগুলো মুষলধারে এগিয়ে আসতে থাকে অনবরত কথোপকথন চালানোর নিমিত্তে। পা, তার চলার নির্দেশ পেয়ে যায় আগেই। আনমনো হাত পকেট হাতড়ে হলুদখামের যন্ত্র তুলে আনে। নিঃস্তব্ধতায় ইন্দ্রিয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যেনো। সময় গুলো তাহলে কেটেই যাচ্ছে বেশ, উইদাউট দিস !ওএফইউ!

Tuesday, December 25, 2007

হ্যাপী থ্যাংক্স গিভিং...

ঘুমাতে গেছি সকালে। কয়েকদফা বিঘ্নের পরেও অবিরাম ঘুমেই পাই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে খাঁটি বাংলায় ভেতরে আসার জন্য বলি। কেউ আসে না, খানিক বাদে আবার ঠকঠক। আবারো আসতে বলি। বার তিনেক খটখটানোর পর উষ্কোখুষ্কো চুল, রুই মাছের মতো ফোলা চোখ নিয়ে টলতে টলতে দরজা খুলে দেখি ইয়ান। আকর্ণ হাসিতে জিজ্ঞেস করলো আমি তার সঙ্গে খাবো কিনা! আমাকে ঘুম তখনো ছাড়েনি, চোখে হয়তো কোনাখামচিতে কোথাও 'কেতুর' ও লেগে ছিলো, গায়ে নিশ্চই ঘুমের ভকভক গন্ধ! এই অবস্থায় কেমনে একজনের দাওয়াত রক্ষা করি ঢুলুঢুলু মাথা সে সাড়া দিলো না। সরাসরি 'না' করলে কেমন শোনায়, কিন্তু অন্যকোন শব্দ খুঁজে না পেয়ে তা দিয়েই চালিয়ে দিলাম সাথে বারকয়েক ঘুমন্ত ধন্যবাদ সহযোগে। বেচারা 'অ, তুমি বোধহয় ঘুমাচ্ছিলে' বলে হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমিও আবার বিছানায় কাত হয়ে গেলাম।

স্বপ্নদেবীর ক্রোড়ে কয়েক পশলা কাবাডি খেলে কিঞ্চিৎ পরে টেডির ন্যায় রেডী হয়ে বের হবার পথে কিচেনে 'চুপি' দিয়ে দেখি ইয়ান তার মায়ের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল। হাইলিগার আবেন্ড কে সামনে রেখে পরিবারের সবাই একসাথে ২৪ তারিখ রাতে ডিনার করে, সবাই সবাইকে উপহার দেয়। এই রীতিতেই ইয়ানের মা টুবিংগেন থেকে এসেছেন ছেলেকে নিয়ে যেতে। জিজ্ঞেস করলাম, খাওয়া শ্যাষ? মাথায় এবং মুখে পজিটিভ সম্মতি দিতেই বললাম অসুবিধা নেই পরে কখনো ঘটা করে রক্ষা করা যাবে তোমার দাওয়াত। ফিরতি প্রশ্ন আমার, ফিরছো কবে? জানুয়ারীর ৭ তারিখ ।আমি এতোটা দেরী আশা করিনি। মনটা দমে গেলো। আমার কি 'না' করাটা ঠিক হলো তখন!

বড়দিনের শুভেচ্ছার সঙ্গে নতুন বছরের বাড়তি শুভকামনাটুকু যোগ করতে হলো। মা-ছেলেতে হাসি মুখেই বিদেয় দিয়ে সঁপে দিলো আমাকে হাঁড় কাঁপানো 'ফ্রস্ট'-র ডিসেম্বরের বিকেলে। বাসের জন্য অপেক্ষার সময় দেখলাম একটা পিচ্চি একা একা ইনলাইনারে করে যাচ্ছে। টুকটুক করে হেঁটে যাচ্ছে, ভালো করে চলতে পারে না। বেচারা রাস্তা পার হতে গিয়ে ধপাশ করে পড়েই গেলো। ভাগ্য ভালো তখন কোন গাড়ি চলে আসেনি আচমকা। যতোক্ষণ দেখা গেলো তাকিয়ে থাকলাম পিচ্চিটির দিকে। একসময় সে আড়াল হলো আমারও বাস এলে উঠে পড়লাম টুক করে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে চোখ পড়লো সামনে, আমারি দিকে মুখ করে থাকা এক ললনা যাত্রীর দিকে। হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ, কাঁধে বিশাল 'পিঠবস্তা', হাইলিগার আবেন্ডের আগের দিন এমন দৃশ্য খুবই সাধারন। মেয়েটি কথা বলছিলো ফোনে, হাসছিলো। আমি দেখছিলাম ফিরে ফিরে। এতো নিরেট সুন্দর মানুষ হয় কী করে! 'বিধাতা তার সবকিছু গড়িয়াছেন অতীব যতনে'। সেন্ট্রালে এসে সে গেলো স্টেশনের দিকে আর আমি চলে গেলাম জেমস ব্লান্টকে স্মরণ করে।

রাতে ঘরে ফিরে কতোক্ষণ মি. বিন দেখলাম। হট শটস - পার্ট ডুয়েক্স দেখে দু'ভাই ঠাঠা করে হাসলাম। লবন ছাড়া খিচুড়ি ভক্ষণ করলাম 'বয়দাভাজিপেয়াজা' (*) সহযোগে। হিরোস সেকেন্ড সীজনের কয়েকটা এপিসোড দেখলাম, তারপর একসময় পুট করে নিদ্রাদেবীর আঁচলে মাথা মুড়িয়ে ফেললাম।

হাইলিগার আবেন্ডের দিন থেকেই শুরু হয় বিষণ্ণতার আনাগোণা। ৫ টার মধ্যে সব কিছু বন্ধ। রাস্তায় কুকিলটিও থাকে না। ক্রিসমাস মার্কেটের পসরা উঠে গেছে আগেই। কেমন কার্ফিউ কার্ফিউ অবস্থা। ঘুরতে বেরিয়েও ৬টার মধ্যে ঘরে ফিরতে হলো। ফিরেই চাগার দিয়ে ওঠা ক্ষুধার অণলে স্বরচিত বার্গার খেলাম। তারপর বিছানার সনে যৎসামান্য অভিসারের পর লেগে গেলাম বিরিয়ানী (**) প্রস্তুতকরনে। মাঝখানে টিভিরুমে গিয়ে দু'টা সিনেমা আর আধা প্যাকেট মার্লবোরো মেরে দিলাম। এবারে কাঁচা শশা, পাকা টমাটো আর মদনের দোকানের ঝাল আধা কাঁচা মরিচের সমন্বয়ে পেট ভরাট করলাম রসনার সন্তুষ্টি সাপেক্ষে। ইউটিউবে খুঁজে উত্তম-সুচিত্রার প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তুর দেখে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে এখন ইফ টুমরো নেভার কামস শুনে নিজেকে তালে ফেরানোর চেষ্টা করছি।

ক্যালেন্ডার থেকে চলে যাচ্ছে আরেকটা বছর। কতো কিছু দাগাদাগি করা ছিলো এবছরে। খুব জোরে পিছনে রিউইন্ড করে গেলে কোথায় কিছু ঠেকে না, কারণ অনেক দাগাদাগির পরেও বছরটা মসৃণই রয়ে গেছে, সম্পাদিত হয়নি কিছুই। বছরের শেষের দিকে এসে অন্তত ভালো কিছু শুনবো, সে আশারও গুঁড়ে বালি দিলো কতিপয় বরেণ্য। হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন গুলি নাকি খোয়া গেছে কেমনে কেমনে। যতো পদের পদি এসেই গদিতে বসুক আর তত্ত্বাবধানের নামে আমাদের রক্ষা করার অঙ্গীকার নিক, যেই হেই সেই হেই। বাঙালের তাল এতো সহজে ঠিক হওয়ার নয় চান্দু!

সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। হ্যাপী থ্যাক্সস গিভিং।

---------------------------------------------

* - আমার এই মেন্যুটা খাদকায়তনে কমপিট করার যোগ্যতা রাখে। পাবলিক খায়া বাম হাতের কাইড়া আঙুলের নখ শুধ্যা চাটবো, আই প্রমিজ।
** - এইটা নিয়ে আমার নিজেরই কিঞ্চিৎ সন্দেহ আছে। এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়া মজাই হইছে, মাগার পরের বার রানলে পাবলিক খায়া মাইর দিবো না চুমা, সেইটা এখনি কওন যাইতাছে না।

Wednesday, December 12, 2007

দিন যায় দিন... রাত আসে রাত

অবশেষে গেলাম। তার আগে অনেক জল্পনা-কল্পনা, কোথায় গেলে পাবো তারে। কত খুঁজলাম রাস্তার সাইনবোর্ডে, পিলাপাতায়, পেলাম না।অবশেষে অবস্থার বেগতিকে অনেকটা বাধ্য হয়েই গেলাম গালিভার সাইজের এক ব্যাটার কাছে কোন মহিলা ডাক্তার না পেয়ে। মনে কতো আশা ছিলো এট্টু টাংকি টুংকি মারবো! কপালে সইলো না। অবশ্য মহিলা ডাক্তারের অনুপস্থিতি পুষিয়ে দিলো ডাক্তার হাইশ-এর রিসেপশনের দুই ললনা।

স্পেসিমেন রেখে বিদেয় করে দিলো ৯ দিন পরে নতুন এক অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে। বেখেয়াল হলেও এইসব ব্যাপার মারাত্মক যতনে মাথায় রাখি আমি। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট করলাম মিস। কারণ তেমন জটিল কিছুই না। হার্টের কথা না শুনে মাইন্ডের ফিসফিসানিতে কান দিলাম। হার্ট বলছিলো যাওয়া উচিৎ, কিন্তু মাইন্ড বলে ধুর ব্যাটা ঘুমা চুপ কইরা! আমি আর কী করি, গেলাম আবার ঘুমাইয়া। পরেরদিন বিকেলে মুখটা যৎসামান্য কাচুমাচু করে ডাক্তারের ললনা রিসেপসনিস্টের লিফটগোড়ায় আবার আমি। আমাকে দেখেই হাউকাউ করে উঠলো বেচারী। তোমার লাইগ্যা ডাক্ঠার হাইশ পুরা আধা ঘন্টা বইসা থাইকা বেঁহুশ হইয়া গেছে। এই বেচারীরে আর হার্ট মাইন্ডের খপ্পরে ফেলে হার্ট করতে ইচ্ছে করলো না। বরং বললাম, আমি ইট্টু ডাক্তার সাবের কাছে যাই? বললো দাঁড়াও জিজ্ঞাসি লই আগে। আমি সেই অধমপাপী সাক্ষাতপ্রার্থী শুনে ডাক্তার সাফ মুখে জবাব দিয়ে দিলো, মুখ দেখতে চাইনা আমি ঐ পাপিষ্ঠের!

মুখ ভোঁতা করে আমি ডিসেম্বরের গুদগুদি বৃষ্টিপড়া সন্ধ্যার মুহূর্তে আলো ঝলমলে শহরের রাস্তায়। হাঁটছি আর ভাবছি মনখারাপ ভাবটা কাটাতে হলে কিছু একটা করতে হবে শীঘ্রই। অন্যসময় হলে চে'গেভারাতে গিয়ে দুপাত্র ফরাসী মেরলো অথবা রিসলিং কিম্বা ব্যাকার্ডি-স্প্রাইট মেরে দিয়ে ধ্যুম হয়ে মাধুরীর সাথে দিল ধাক ধাক কারনে লাগা নাচ শুরু করে দিতাম। সেটা হওয়ারও কোন চান্স এখন নেই। পাগলা পানির সাথে কিঞ্চিৎ মনকষাকষি পর্ব চলছে এখন যদিও তথাপি ইদানিং মনে বড়ই সাধ হয় একটু চেখে দেখি না বরং আগের মতোই রবি শংকর ইউরেনাসে বসে ভেনাসের কাঁধে তাঁর সেঁতার রেখে তাতে ফ্লোরাবশীকরণ সুর বাজায় কিনা! এমনি আবঝাব ভাবতে ভাবতে, চোখ ডলতে ডলতে, পথ চলতে চলতে দেখি একটা গাড়ি এসে থামলো একেবারে ঠিক রাস্তার পাশে, আমার অদূরে। চালক ক্ষণিকায় বিশাল বপু তরুনী। গাড়িটার পশ্চাতদেশ রাস্তার ওপর রেখে গ্রীবা ফুটপাথের সঙ্গে খানিক ঘষাঘষি করে শেষতক নেমে পড়ে হাঁটা দিলো অন্যদিকে। শিকার পেয়ে আর দেরী করে কোন হালায়! পরনের কালো জ্যাকেটটা টেনেটুনে ঠিক করে, তার পকেট থেকে একটা কলম বের করে হাতের কালো প্যাকেটটাকে এমনভাবে রাখলাম যেনো মনে হয় কোন মেশিন। গাড়ির কাছে গিয়ে একবার সামনে দাঁড়াই, পরক্ষণেই ঘুরে পেছনে যাই, পার্কিং দাগ দেখি গভীর মনোযোগে, দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে কি জানি ভাবি তারপর কাগজে কিছু লেখার জন্য যেইনা কলম হাতে ভাব নিচ্ছি অমনি বৃহদাকায় ললনা দৌড়ে এসে নিতান্ত কাতর অনুরোধ পরায়ন, বিশ্বাস করেন আমি এই মাত্র গাড়িটা এইখানে রাখছি।
খুব ইমার্জেন্সী দরকার ছিলো।

আমি নিরুত্তর, নিশ্চুপ, অচল এবং অটল।

ললনা কাঁদু কাঁদু। আধা মিনিটও হয় নাই আমি এখানে আসছি। আমি এখন থেকে আর এভাবে পার্ক করবো না! বিটে বিটে বিটে!!!

চান্স পাইলেই মানুষরে গুঁতাই। কখনো উল্টা গুঁতা খেয়ে ঠান্ডা হয়ে থাকি। তবে বেশিরভাগই গুঁতানোর ডান্ডা অপরপক্ষের দিকেই তাক করা থাকে।
উদাসী মন খানিকটা দাস হলো এই ঘটনার পরে। আরও আনন্দের ব্যাপার হলো ডাক্তার হাইশ-এর রিসেপশনিস্ট ফোন করলো নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে। এবছর কোন ফাঁকা জায়গা নেই আমাকে ফিট করার। আর্লিয়েস্ট ২ জানুয়ারী, আগামী বছর। প্রত্যুষ পৌনে অষ্ট ঘটিকা। আমি জানি এটা ঐ ব্যাটা গালিভারের বদমাশী। ব্যাটা দেখেশুনেবুঝে, ইচ্ছে করেই আমাকে ঐরকম একটা খাইষ্টা টাইমিঙের মধ্যে ফেলছে। ফোন ছাড়ার আগে রিসেপশনিস্ট ললনা কয়েক হালি বার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলো এবার যেনো মিস না করি, তাইলে ঘটনা বিশাল প্যাঁচ খাইবে।আমি কেমনে বুঝাই আমি হার্ট-মাইন্ডের এক চিড়ারমিলে গোবদা গোবদা ধানের মতো চিপা খেয়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। তবে শালা গালিভাররে একটা শিক্ষা দিতে হবে, এটা নোট করে রাখলাম টু-ডু-লিস্টে।

এক পরিচিত ট্রাভেল এজেন্টের কাছে দুইদিন ধর্ণা দিয়া তার করুনার ঝর্ণায় পানিটি বর্ষণ করাতে পারলাম না। 'টিকেট নাই'। এসটিএ ট্রাভেলসে গেলাম। বলে, ডিসেম্বর! ভুইলা যাও!! জানুয়ারীতে পাইবা তাও দাম পড়বো ৯১৩ টেকা, একদাম!!মনটা আবার রাজা মার্কা বেলুনের মতো ছ্যাঁদা হয়ে চুপশে চটচটে হয়ে গেলো। চুপসানো মন ফর্মে আনতে কি কি করলাম এই ক'দিন! তার একটা বিশাল ফিরিস্তি দেয়া যায়। কিন্তু তারও আগে মনেহয় এখন প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত ঘুমেরে। আমার এখন গভীর ঘুমে স্বপ্নাচেতন হয়ে মাধুরীর সঙ্গে দুষ্টু দুষ্টু গল্পে মশগুল থাকার কথা। তো না ঘুমিয়ে আমি এখন ব্লগাচ্ছি কেনো?

Wednesday, December 05, 2007

আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমে

সাগরিকা দেখার পর থেকেই ধাক্কা খেয়ে প্রেমে পড়ার নেশা পেয়ে বসে। সেই স্কুলবয়সী আমি থেকে আজকের আমি, এখনো সেই ধাক্কার অপেক্ষা আমার। আমি জানি, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্তও এই ধাক্কার অপেক্ষায় থাকা হবে আমার। জীবদ্দশায় দরোজা খুলে কিংবা দেয়ালের ওপাশ থেকে ছুটে আসা সাগরিকার মতো টানাটানা কাজল চোখের কারো সাথে আচমকা ঢুঁশ লাগবে না। মিষ্টি হাসি দিয়ে কেউ আর আমাকে তার পরশে সিক্ত করতে পারবে না। লাশকাটা ঘরে আমার বুক চিরলেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা কৈশোরের সেই গোলগাল মায়াবী মুখের কিশোরিটিকে। যাকে মনে করে 'সব ভালো গান' শোনা হতো তখন। হিম বৃষ্টির ঝমঝম ধ্বনিকে মনে হতো তার রিনিকঝিনিক নূপুরের শব্দ। মগ্ন হয়ে রইতাম এমন কি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকেও। একসময় পরিবর্তন এলো মনে। এক চোখে প্রেমে পড়ার তুমুল প্রত্যাশা নিয়ে আরেক চোখে উঠে এলো সমাজ বদলের স্বপ্ন। ইঁচড়ে বয়সে হাতে উঠে গেলো জন ডানের কবিতার বইয়ের পাশাপাশি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর জীবনী। হাভানা সিগার চোখে গেভারার পোস্টারের দিকে চোখ, কানে বেজেছে ভূপেনের আমি ভালোবাসি মানুষকে।

লতার একটা গানের ব্যাপারে আসি। গানটায় বারবার ফিরে আসে কৈশোরের মায়া মুখের সেই কিশোরিটি। আমার সঙ্গে খুনসুটি করে, লুকোচুরি খেলে স্মৃতির ঘুলঘুলিয়ায়। খানিক থেমে কাজল দেয়া ডাগর চোখ দুটো মেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি আদৌ প্রেমে পড়েছি কীনা!

আমি তার দিকে মুচকী হাসি দেই, আমার কখনোই সাগরিকার সাথে ধাক্কা খাওয়া হলো না, আমার কখনোই এতো শখের প্রেমে পড়া হলো না। আমার কানের পরে বহুবছর পর আবার লতা, সেই ঝিমমূখর বৃষ্টি, সেই দিনগুলির ঘ্রাণ!

Sunday, December 02, 2007

স্বপ্ন, যাও তোমাদের ছুটি দিলাম

স্বপ্নরা সবসময়ই আমায় ঘিরে থাকে। লাল, নীল, বেগুনী, আর গোলাপী স্বপ্নেরা আমায় ছুঁয়ে থাকে সারাক্ষণ। আমি কাবাডি খেলি, গোল্লা খেলি, ফুটবল-ক্রিকেট সবই খেলি সেসব স্বপ্নের সঙ্গে। রাগ করি, অভিমান করি, মুখ ভার করে বসে থাকি। স্বপ্নেরা তখন দল বেঁধে এসে আমার ঘরের দাওয়ায় ভিড় করে। প্রতি বর্গইঞ্চি জায়গা নিজের বলে দাবী করে, আমার উঠোন হয় স্বপ্নপুর। আর আমি আনন্দিত হয়ে যেই ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ডাকি- অমনি পালিয়ে যায় সব। আমার মন খারাপ হয়, অভিমান হয়- "সব নিজের বলে নিতে চাও, অথচ ঘরে ঢুকতে দ্বিধা করো!"

স্বপ্নের সঙ্গে আঁড়ি নেই আমি। স্বপ্নেরা মুখ ভোঁতা করে এসে ফিরে যায় বারবার। আমি চুপটি করে পাশ ফিরে থাকি। আমি আর তোমাদের সঙ্গে খেলবো না, আর তোমাদের সঙ্গে বেড়াবো না। আমি একা একা আকাশের নীল ছুঁয়ে আসবো, সবুজ ফড়িঙের ডানায় ভর করে উড়বো না আর তোমাদের সঙ্গী হয়ে। আমি ঘুমাবো, প্রকান্ড লম্বা একটা ঘুম। গালিভারের চাইতেও লম্বা, হাল্কের চাইতেও প্রশস্ত। সেখানেও আমি তোমাদের চাই না। তোমাদের সবার ছুটি দিয়ে দিলাম আজ।