Friday, January 18, 2008

স্বদেশ যাত্রার ইতিকথা

ডিএম, শ্লেকার, কারস্টাড্ট, কাউফহফ এবং অবশেষে লিডেল ঘুরে, তাদের ব্যবসায়িক লাভের সমুদ্রে বিন্দু পরিমান জলদান করে ঘরে ফিরে প্যাক করার সময় বাধলো আসল বিপত্তি।

এথনিক প্যাসেঞ্জার হিসেবে ৩৫ কিলো পাওয়া গেলো বটে কিন্তু আধা ঘন্টায় লাগেজ গুছিয়ে সেটা ওজন দেয়ার পর চল্লিশ ছাড়িয়ে গেলো! তারওপর এখনো একটা ছোট ব্যাগ পাল্লায় তোলা হয়নি। হাতে থাকার কথা ল্যাপটপের ব্যাগটাও। খালাতো ভাইয়ের দশ কিলো আসবে এয়ারপোর্টে! কী রেখে কী নেই, এই চিন্তায় মাথার ভনভন কাটাতে ঢুঁ মারি সচলে, সামহোয়ারে, পেপার পড়ি, গান শুনি, এক দুই টুকরা টম এন্ড জেরী দেখি- খো খো করে হাসি, কিন্তু পরিত্রাণের উপায় আর পাই না।

সব খুলে আবার ঢুকালাম এক এক করে, একেবারে ওজন মেপে। যা না নিলেই নয়, সেটা কমে দাঁড়ালো ২৪ কিলোতে। বাকিগুলো ঢুকানো হলো আলাদা ব্যাগে। খালাতো ভাইয়ের দশ কিলো সাঁটিয়ে যতটুকু নেয়া যায় যাবে, বাকিটুকু থেকে যাবে। এই আশায় একটা পিঠব্যাগও স্ট্যান্ডবাই রাখা হলো। তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে লাল লাল চোখে, ঢুলুঢুলু আমেজে আইসিইতে একটানে ফ্রাঙ্কফুর্ট।

আমার জীবনে ফ্লাইটের এতো আগে কখনো এয়ারপোর্টে যাওয়ার রেকর্ড নেই। সময় মারার জন্য এদিক ওদিক ঘুরি, এটা সেটা দেখি, খাই- ইত্যাদি।

খালাতো ভাই এলে তার জিনিষ ঢুকিয়ে জিনিষ পত্তর শাফল-রিশাফল করে চেকইনে গিয়ে দেখা গেলো ৪৯ কিলো+। পিঠে তখনো সাড়ে পাঁচ কিলোর ব্যাগটা পড়ে আছে। পড়বি তো পড় একেবারে দজ্জাল মহিলাটার কাছেই গিয়ে পড়লো সিরিয়াল। মহিলা কোন কথাই শুনতে রাজী নন। 'তিনি সবই জানেন' কিন্তু 'ওজন কমান' ছাড়া কিছুতেই আপোষ করতে রাজী নন। দিলো ফিরিয়ে। এইবার তিন মাথা বসে নানা ফন্দি আঁটি। ফলিত কাজ কিছুই হয় না। মাথায় কি চিন্তা আসতেই ব্যাগ থেকে কাপড় খুললাম, ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ তার কেবল, চার্জারসহ বের করলাম। এবার আবার নিলাম মহিলার কাছে। তিনি দেখলেন, ৪৩,৫- 'হুঁ, এবার ঠিকাছে। কিন্তু এর চেয়ে বেশী জিনিষ নিতে পারবেন না এবং কোন জিনিষ আর ঢুকাতেও পারবেন না।' টিকিট, বোর্ডিং কার্ডে লিখে দিলেন নিজের তেলাপোকা মার্কা হাতের লেখায়, 'কেবল ল্যাপটপ; অন্য কোন হাতে বহনযোগ্য বস্তা নয়'!

এবার আবার মাথা চুলকানী। এখন কী হবে। আমি ফলিত তত্ত্বে বিশ্বাসী। মুহূর্তেই ল্যাপটপের ব্যাগখানা ফুলে ঢোল হয়ে গেলো। স্ট্যান্ডবাই থাকা পিঠের বস্তাটিও পিঠে ঝুলিয়ে দিয়ে বললাম, 'ওকে, হ্যাভ এ নাইস জার্ণী!'

'আছি এখানেই, সমস্যা করলে এসে ব্যাগ ফেরৎ দিয়ে যেও'- ঠেলেঠুলে ছোটভাইকে পাঠিয়ে দিলাম ইমিগ্রেশনে।
আধাঘন্টা পর এসে ফুচকি দিয়ে জানালো সবঠিকঠাক। এখানে ঝামেলা হয় নি। 'দৌড়ের উপরে থাক'- শুনেই টংটং করতে করতে হাঁটা দিলো ভেতরের দিকে। একটু পর ফোন করে জানালো বোর্ডিং পাস পাইছে, ঝামেলা হয় নি। আমি মনে মনে হিসাব করলাম, ৪৯ যোগ সাড়ে পাঁচ সমান সমান সাড়ে চুয়ান্ন কিলো! সাব্বাশ!!

No comments: