Sunday, February 17, 2008

গুরুচন্ডালী - ০০১

বাতি নিভে যাবার আগে যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে, তেমনি করে এবারের শীত গত কয়েকদিন ধরে চামড়া, মাংস ভেদ করে সোজা হাড়ে গিয়ে কামড়টা বসাচ্ছে। এটা এমন বিশেষ কিছু না। প্রতিবছরই কিছু না কিছু তুষারপাত হয়, এবার তুষারের দেখা মেলেনি। মাঝ-ফেব্রুয়ারীতে শীতের কামড়টা সামান্য অশ্লীলই হবে, এ আর এমন কী!

একাধারে অনেকক্ষণ একই জিনিষ দেখা কিঞ্চিৎ একঘেয়ে বটে! টানটান উত্তেজনায় ভরা ইংরেজী কোন ছবি হলে সেটা মেনে নেয়া যায় দৈর্ঘ্যের কথা বিবেচনায়। কিন্তু এক্ষেত্রে হিন্দি ছবি প্রায়ই মার খেয়ে যায় আমার কাছে। তিন ঘন্টায় কম করে হলেও সাড়ে পাঁচবার বিরতি নেয়া হয়। 'ইদানিং বাংলা ছবি দেখি'- একথা শুনলে জনগণ তেড়ে আসবেন মেরে ঠান্ডা করে দেবার আশায়, তাই না হয় উহ্যই রাখলাম আমার বাংলা সিনেমাপ্রেম! আর বিয়ের ভিডিও? টেনেটুনে, ফরোয়ার্ড-রিওয়াইন্ড করে কখনোই বোধকরি সিকি ভাগের কোটা ছাড়াতে পারিনি। ব্যতিক্রম ঘটিয়ে দিলো ভাইয়ের বিয়ের ভিডিওটা। এখন পর্যন্ত সোয়া দুইবার দেখা হয়ে গেছে কী না!

একটু ট্রেলার দিই বরং, কী আছে সেখানে।

আমার মা। ভিডিও ক্যামেরার সামনে যাকে মনে হয়েছে পুরা রোবোকপ। হাতে নানা জিনিষ, কণের বাড়ি যাচ্ছেন, জিনিষ বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ঘর থেকে বের হয়েছেন, চলাফেরা করছেন- কিন্তু মুখ একদম বন্ধ আর চোখ? সটান খোলা। নো পলক, নো নড়ানড়ি! বেচারী, এতো পছন্দের পান মুখ ভর্তি করে রেখেও সেটা চিবাতে পারছেন না ক্যামেরাম্যানের ভয়ে!

আমার বাবা। সবচাইতে যার ভিডিও তথা ছবি কম উঠেছে তিনি এই ব্যক্তি। হ্যালীর ধূমকেতুর মতো হঠাৎ নজরে এসে যাওয়া মোবাইল হাতে বাবাকে দেখে ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করতে ভাই জানালো, এটা আব্বার নতুন বাতিক! কারণে অকারণে মোবাইল টেপাটেপি করা। মা এজন্য মহা বিরক্ত। আমি হাসি আর ভাবি, মা'র বিরক্তির কারণই তাহলে বাবার এই বাতিকের পেছনের কারণ!

ভাইয়া। বিয়েটা তারই। বেচারাকে দেখে মনেহয় পুরা পেরেশানীতে পড়ে গেছে। কয়েক জায়গায় দেখলাম খালি চড়কীর মতো ঘুরছে। কণের গায়ে হলুদে যাবার গাড়ি বহরের পাশে এক সুদর্শন যুবক কে দেখে ছোট ভাইকে যেই বললাম, বাহ্ ড্রাইভারটা তো বেশ স্মার্ট। অমনি ছোটভাই হায় হায় করে বলে, আরে ড্রাইভার দেখলা কই? এটাতো ব-বে! (মানে বড় ভাই)

ছোটভাই। হ্যাঁ এ হলো সেই যার জন্মদিনে আপনারা শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন অনেকেই। খুব খুশী হয়েছিলো সেদিন। সবাইকে ফিরতি ধন্যবাদ জানিয়েছে অকাতরে। বিয়েতে মধ্যমণি ছিলো সে-ই। সারা ভিডিও জুড়ে মনে হলো কেবল তাকেই ক্যামেরাম্যান শ্যুট করেছে। একবার কোয়ার্টার প্যান্ট আর কালো টিশার্ট পরে মানির বোতল টানে তো পরের শটে দেখা যায় ভীষণ মাঞ্জা মেরে মেহমান বরণ করছে। ঠিক তার পরের শটেই দেখা যায় কাকে হাত নেড়েনেড়ে কি ডিকটেশন দিচ্ছে। সারাক্ষণই হাসে ব্যাটা। চশমার ভেতর দিয়ে পিটপিট করে তাকায় আর দাঁত বের করে হাসে। হাতে ২৬টা দিন নিয়ে সব কিছু সূচারু ভাবেই সম্পন্ন করে এসেছে, বুঝা যায়। সবার শেষে ভাইয়াকে হলুদ দিতে স্টেজে যেতেই দেখলাম দুজনে পালা করে কেঁদে দিলো। ভাইয়ার কপালে হলুদ ছোঁয়াতেই ভাইয়া কেঁপে উঠে টিস্যুতে চোখ মুছে আর এটা দেখে ছোটভাই সারা শরীর কাঁপিয়ে দুহাতে চোখ ঢেকে স্টেজ থেকে পালালো। ঘটনার আকষ্মিকতায় আমার দৃষ্টিও খানিকটা ঝাপ্সা মনে হলো। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি কাঁদিনি। কাঁদার মতো এতো নরম আমি মোটেও না।

আমার ভাবী। আমাদের পরিবারে নতুন সংযোজন। পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়ে উন্নীত করতে তার ভূমিকা অনেক। যেহেতু তাকে এখনো দেখিনি, তাই তাকে নিয়ে এখনি কিছু লিখছিনা। তুলে রাখলাম পরের বারের জন্য। তবে ফোনে যতটুকু বুঝলাম, আমাদের পরিবারের পারফেক্ট মেম্বার! 'মা তোমাকে অনেক মিস করে। মা'কে কাঁদাতে ভালো লাগে তোমার?' - আমাকে ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্নটি ছিলো তার!

No comments: