Thursday, April 24, 2008

ভালোবাসা দিবস, ন-হণ্যতে এবং একটি ডোভ মূর্তি

১.

আমরা একই স্কুলে পড়তাম। আমরা মানে আমি, আর সুষ্মিতা। নামে মিতা আর শুরুতে সু শব্দটি থাকলেও সুষ্মিতার মাঝে সুমিতা দেবীর মতোই খান্ডারনী স্বভাবটি রাজত্ব করেছে পুরোটা সময়, তার সুন্দরের সুষম বন্টনকে পাশ কাটিয়ে। আর সুমিত ভাষণ! 'তিনি থাকেন বাংলার প্রমিত ডিকশনারীতে, ভগবানের কৃপায় তাকে সুষ্মিতার শব্দ-পল্লীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর'।
বাংলা শব্দকোষে যে এরকম একটি শব্দ আদতে জলজ্যান্ত বিদ্যমান সেটাই দিব্যি অস্বীকার করে সে আমার চেহারা মুবারক খানা দেখলে।

নাইনে উঠে প্রথমবার সরাসরি কথা বলার আগ পর্যন্ত তার দেড় ক্রোশ দূরে থাকাটাই নিরাপদ মনে করতাম। সেই কথা বলা আর সামাজিক জীব হিসেবে পরিচয় পরিচিতির প্রথম পর্বের পর দূরত্বটা আরো আধাক্রোশ বাড়াতে বাধ্য হই আমি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অসহায় আবেদনে।

"কিন্তু কাহাতক আর! এভাবে তো আর চলে না! এর একটা বিহিত তো অবশ্যই করা লাগে!" - ফ্যারাডের মাথায় যেমন করে বুদ্ধি খেলে গেলো বিদ্যুৎ আবিষ্কারের আগে, ঠিক তেমনি আমার মাথায়ও ময়ূরীর নাচ নেচে গেলো বুদ্ধি!

সন্ধি!

"সাদা নিশান আর সাদা কপোত নিয়ে হাজির হবো তার সামনে। তারপর করজোরে জিজ্ঞাসা করবো এই অধমের প্রতি তার এহেন বিরাগের কী হেতু!" - বন্ধুদের এভাবে প্রস্তাবনাটা জানাতেই সোজা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো।

"এইসব কপোত-ফপোত রাখো মামা। রোমান্টিক কিছু ভাবো। এইসব উত্তম কুমার আমলের কবুতর মার্কা রোমান্সে কাম হইবো না। উল্টা নিজের নাকশার নকশা বদলাইয়া ফিরতে হইতে পারে...!"

আসলেই ভাবনার কথা। কিন্তু বন্ধুরা যেভাবে ভাবছে আমি সেভাবে ভাবতে পারছি না। কারণ অবশ্য আছে বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে সবচাইতে ধর্তব্য যে কারণ সেটা হলো, 'আমার হাতে সাত-পাঁচ ভেবে কদম ফেলার পর্যাপ্ত সময় আর অবশিষ্ট নেই!'

এমনি নানা ভাবনার অতলে তলিয়ে যাবার আগেই বাদল বাঁচালো 'বই' নামক বয়া দিয়ে। সবাই সম্মতিও দিলো। পরের ঘটনাগুলোও ঘটে গেলো বেশ দ্রুত। বই কেনা হলো, সেটা আবার রাঙতা কাগজে মোড়ানোও হয়ে গেলো। ঠিক হলো পরদিনই সন্ধির আবেদন করা হবে সুষ্মিতার কাছে, সশরীরে।

ক্লাশ শেষ। বারান্দায় সুষ্মিতাকে দলছুট পেয়ে পাকড়াও করে ঘড়ির কাঁটার হিসেবে পৌণে একদিনের রিহার্সেল দেয়া আবেদনের কথাগুলো তোতাপাখির মতো গরগর করে উগড়ে দিলাম। আমার কথায় ও কি বুঝলো, কি বুঝলোনা সেটা ঠিক বুঝা গেলো না। তবে তার কথা থেকে আমি যা বুঝতে পারলাম তা হলো, 'সন্ধি নিয়ে কথা বলতে হলে সময়ের প্রয়োজন। আর আজকে সেটা সম্ভব না, কাল বিকেলে প্রাইভেট টিউটরের বাসা থেকে বের হয়ে কিছুটা সময় হাতে আছে। তখন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সন্ধি নিয়ে কথা হতে পারে!'

তা হতে পারে বৈকি! এই ভেবেই পরের দিন, নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের পাক্কা দেড়ঘন্টা আগেই এসে বসে আছি। অংক পরীক্ষার মতো টেনশন হচ্ছে। পাটীগণিতের সুদ-কষায় প্যাচ লাগলে যেমনটা হয়। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা না তো! তবে কি আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কোন জটিল-ভেজাল-সমীকরণের আভাষ দিচ্ছে?

প্রত্যাশিত সময়ের কিছু আগেই সুষ্মিতার দেখা মিললো। কলাপাতা রঙের থ্রী-পিস, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, খুব ধীরে, দৃষ্টিনন্দন ভঙিমায় হেঁটে আসছে এদিকে। হাঁটার এই স্টাইলটি সুস্মিতার একদমই নিজস্ব। সুস্মিতাকে আসতে দেখে নির্জন জায়গাটি যেনো আরো নির্জন হয়ে গেলো হঠাৎ করেই। গাল বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা ঘাম পড়ে গেলো নিচে, অথচ আমার চারপাশে তখন কেমন যেনো শীতল একটা অনুভূতি। আলগোছে বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া আমি, নীল রাঙতায় মোড়া সবুজ 'ন-হণ্যতে'টা আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম...।



২.

বিকেলটা একদমই সুবিধার না। সকালটা একটা ঝলমলে দিনের সূচনার কথা বললেও দুপুর থেকেই আকাশের মন চুপশে যেতে শুরু করেছে। যতোটা গর্জায় আকাশ নাকি ততোটা বর্ষায় না, সেটাই আপাতত আশার কথা। না হলে ছোট্ট ছাতায়, মাথা কাকভেজা হওয়া থেকে বাঁচলেও রাধিকার বস্ত্র শেষরক্ষা পাবে না!

উফ, কালকে এই বদ ছোরাটা আমাকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিয়েছিলো একেবারে। বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে সামনে এসে খই ভাজার মতো পটপট করে কি সব ঘোড়ার মাথা বলা শুরু করলো! স্কুলের বারান্দায় তার অতর্কিত প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়াটা মোটেই প্রত্যাশিত ছিলো না। ভড়কে যে গিয়েছিলাম সেটা ঢাকার জন্যই তো এই নাকাবন্দী! 'কী হবে, কী বলবে'- এই ভাবনাটা সারাটাক্ষণই তটস্থ করে রেখেছে।

পড়তে আসার আগে নিজের সবচাইতে পছন্দের জামাটা পরেছি। বাসা থেকে বেরুবার আগে ছোট মামার দেয়া আমার সবচাইতে সুন্দর ডোভ মূর্তিটা ব্যাগে নিয়েছি। আচ্ছা, ও উলটা পালটা কিছু করবে নাতো! ধুর, কি সব ভাবছি। ওর চোখ দেখে মনে হয় না ঝামেলা করতে পারে।

কিন্তু যদি এমন কিছু করেই ফেলে তখন! তার চাইতে বোধহয় না গেলেই ভালো হয়। যাহ্, এখনতো মনেহচ্ছে দোটানায় পড়ে গেলাম। একমন বলে যেতে, আরেক মন বলে না যেতে। মহা ঝামেলায় পড়া গেলো তো!

এম্পটি জ্যাকফ্রুট চান্দু, দেখলেই রাগ চিরচিরিয়ে ওঠে। সারাক্ষণ পিন্ডি জ্বালানো আলটপকা মন্তব্য! সেদিন আগ বাড়িয়ে পরিচিত হতে এসেছে। আরে ব্যাটা তোকে তো আমি সেদিন থেকেই চিনি যেদিন স্কুল ফাংশনে গান গাওয়ার রিহার্সেলের পর বলেছিলি, "গলা তো না যেনো ফাটা বাঁশ তাও আবার দুই নম্বর সূই-সূতা দিয়ে সেলাই করা!"

আমাকে আড়ালে সুই-সূতা বলে ক্ষেপাস ব্যাটা বদের হাড্ডি। যেতে ইচ্ছে করছে না একদম। রাগ চড়ে যাচ্ছে। তোর সাথে কোনো সন্ধি নাই, যা ভাগ!

এক সঙ্গে পড়তে আসা মেরী খোঁচা দিয়ে বলে, "কী রে, দাঁত কিড়মিড়িয়ে আছিস কেনো!" আমি হেসে ফেলি, ডে ড্রীম!

যাবো না যাবো না করেও শেষ পর্যন্ত কৌতূহলের কাছে হার মানতেই হলো। দেখাই যাক না চান্দু কী বলে!

দূর থেকে দেখেই নার্ভাস মনে হচ্ছিলো তাকে। প্রতি সেকেন্ডেই নড়েচড়ে উঠছে। মনে হচ্ছে যেনো কাঁটার পিড়িতে কেউ জোর করে বসিয়ে দিয়েছে। একটু পরপর সাদা কিছুতে মুখ মুছছে। ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে এদিকেই তাকিয়ে আছে দেখে হঠাৎই মায়া হলো। আহারে বেচারা! তাড়াহুড়ো করে গেলে ভয় পেয়ে উঠে দৌঁড় লাগাতে পারে। আর আস্তে গেলে নিজের ধুপধুপ আওয়াজটাও একটু নিয়ন্ত্রনে আসবে।



৩.

সুষ্মিতা যেমনি ধীরে হেঁটে এসেছে ঠিক তেমনি ধীরে বসলো, ঠিক যেনো সবুজ রঙের কোনো বার্বির মতো। যেনো কোনোই তাড়া নেই তার। আকাশের অবস্থাও সুবিধার না, সেদিকেও ভ্রুক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না। ব্যাগে ছাতা আছে কী না কে জানে! বৃষ্টি মাথায় করে যাওয়াটা নিশ্চই শোভন হবে না পাতলা থ্রী-পিস পরা এক বঙ্গ-ললনার জন্য। গুমোট আবহাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে আমার অবস্থা তথৈবচ। জামা ভিজে চুপচুপ করছে, আসার পথে কেনা সুগন্ধি টিস্যুর প্যাকেটেও শেষ কয়েকটা আছে। ওগুলো দিয়ে ঘাম মুছে ফেললে সন্ধির সাদা নিশান পাবো কই! পরিস্থিতি বিগড়ে যাবার আগেই বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার কাজটা সেরে ফেলা উচিৎ। 'ওহ্ গড আই ডোন্ট হ্যাভ এনাফ টাইম ফর দ্যাট!'



৪.

অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কেউ ই কোনো কথা বলছি না। বরফ ভাঙলো সাগর নিজেই। 'ফ্যাঁ'র প্যাকেট থেকে একটা সাদা টিস্যু বের করতেই জুঁই ফুলের মাতাল করা গন্ধ নাকে এসে লাগলো। টিস্যুটি আমার সামনে বিছিয়ে বললো, "এইযে সাদা কেতন! চলো এবার সন্ধি করি..."

আমার কেনো যেনো খুব হাসি পেলো। সাগরের বলার ভঙিটার কারণেই বোধহয়। হেসে তার টিস্যুটি কুড়িয়ে নিয়ে বললাম, "না থাক। তার চাইতে চলো গল্প করি! সন্ধি করা লাগবে না, ঝগড়া মিটমাট!" মনে মনে ভাবি, তুমি ডাকতে এতো দেরী করলে কেনো বোকা ছেলে!

হালকা-মজার গল্পে মনের ভেতরে পুষে রাখা রাগটা উবে চলে যায় সাগরের ওপর থেকে। এখানে বেশিক্ষণ থাকাটা বোধহয় ঠিক হবে না আর। যেকোনো মুহূর্তেই ঝুপ করে নেমে আসতে পারে বৃষ্টি। কয়েক ফোঁটা ইতোমধ্যেই টুপাটুপ আদর করে গেছে ধরনীকে। সাগরকে বলতে সেও মাথা নেড়ে সায় দিলো। "চলো তবে ওঠা যাক"- বলেই তড়াক করে এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। আমি ব্যাগ থেকে সাদা ডোভ মূর্তিটা হাতে নিয়ে, দাঁড়িয়ে সেটা সাগরের দিকে বাড়িয়ে বলি, "নাও এটা তোমার জন্য। আমার সবচেয়ে প্রিয়...।"

সাগর মনে হয় প্রস্তুত ছিলো না এর জন্য। ওর হা করা মুখটাও দেখার মতো ছিলো। খুব হাসি পাচ্ছিলো আমার বেচারার করুণ চেহারা দেখে! কিছুই আন্দাজ করতে পারেনি নির্ঘ্যাৎ। 'ওহে তব্দা খাওয়া বালক, স্বয়ং বিধাতাই নারীর মন বোঝেনি, তুমিতো এক নগণ্য আদম সন্তান!'



৫.

সুষ্মিতা আমাকে অবাক করে দিয়ে যে ডোভ মূর্তিটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো সেটা বিখ্যাত এক শহরের পাবলিক স্কয়ারে রাখা ভাস্কর্য। প্রেমের শহরে, ভালোবাসার নিদর্শন বুঝায় অপ্সরার মাথা ওয়ালা এই ডোভটি। সেই শহরের ঐতিহ্য অনুযায়ী 'ডোভ মূর্তিটি উপহার হিসেবে দেয়া মানে প্রেম নিবেদন' - এই কথাটা কি বোকা মেয়েটা জানে!

জেনে দিক, আর না জেনেই দিক। এখন তো মনে হয় আমারও কিছু দেয়া উচিৎ তাকে। কিন্তু কীভাবে যে দিই!

ছাতা খুলে ধরা সুষ্মিতাকে বললাম, "তুমি কি চোখ দু'টো একটু সময়ের জন্য বন্ধ করবে প্লীজ। আর হ্যাঁ, আমি না বলা পর্যন্ত খুলবে না- এটাও একটা প্লীজ...!"



৬.

সাগরের হাতে সেই তখন থেকেই একটা নীল প্যাকেট দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার জন্যই এনে থাকবে হয়তো, অথচ দিচ্ছে না! প্যাকেটটা আমার জন্যই কী না, সেটাও জিজ্ঞেস করতে পারছি না। এমনওতো হতে পারে তাকে আজকের দিনে অন্যকেউ দিয়েছে, কিংবা সে কাউকে দিতে এনেছে! অন্যকারো জন্য হলে, তখন লজ্জা পাবো ভীষন। তার চেয়ে কৌতুহল অবদমন করে রাখাই শ্রেয়। ওর চোখ বন্ধ করার অনুরোধ আর অনুরোধের ধরণ শুনে আরও এক পশলা হাসি পেলো। হাসি মুখেই চোখ বন্ধ করলাম, জোরে, হাত সামনে বাড়িয়ে...!

এক মুহূর্ত- দুই মুহূর্ত- তিন মুহূর্ত!

কী ব্যাপার ব্যাটা কিছু দেয় না কেনো হাতে! কী ভাবছে তাই চিন্তা করছি। 'আরে ব্যাটা দিবিই যখন দিয়ে দে, আর কতোক্ষণ আন্ধা বানিয়ে রাখবি!'

চার মুহূর্ত- পাঁচ মুহূর্ত- ছয় মুহূর্ত- হঠাৎ...!

মুখের ওপর উষ্ণ এক চাপ অনুভব করলাম আমি। উষ্ণ-ভেজা চাপ। আমার দম বন্ধ হয়ে এলো, সারা শরীর শিউরে উঠলো। পা টলে উঠলো, যেনো সমস্ত শক্তি হুট করে চলে গেলো আমাকে ছেড়ে। কাঁধ থেকে ব্যাগটা টুপ করে পড়ে গেলো, নিজেকে হঠাৎই খুব হালকা মনে হলো, খুবই! যেনো বকের পালকের মতো আমি ভেসে যাচ্ছি... ভেসে যাচ্ছি বাতাসে দোল খেতে খেতে...!

অনুভব করলাম, সাগরের হাত আমার হাতটা টেনে ধরেছে। শক্ত কিছু একটা ধরিয়ে দিয়ে কানের কাছে ফিশফিশ করে বললো, "ভালো থেকো তবে!"

ভালোলাগা নেশায় আরও কিছুক্ষণ ডুবে থেকে চোখ খুললাম। সাগর তখনো চোখের আড়াল হয়ে যায় নি। মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। হাতের নীল রাঙতা মোড়ানো প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করি, "বেকুবটা কি জানতো আজ ফেব্রুয়ারীর কতো তারিখ!"



৭.

এই বৃষ্টিস্নাত বিকেলটাই নিজবাসভূমে সাগরের কৈশোর জীবনের ইতি। সে রাতেই পশ্চিমাগামী এক উড়ানে চেপে বসে সে। পশ্চিমেই হবে তার বাকী পড়াশুনা, আলাদা হয়ে যাওয়া বাবা-মা, মেঝো চাচার এটাই ইচ্ছা। সাগরের ইচ্ছেটাও ওরকমই ছিলো। বাবা-মার থেকে অনেক দূরে থাকতে পারলেই সে বাঁচে। কিন্তু এখন মাঝরাতের কোন উড়ানের উইন্ডো সীটে বসে, পাশের কাঁচের জানালার ওপাশে গড়িয়ে পড়া পানির সর্পিল রেখা দেখতে দেখতে সাগরের অদম্য ইচ্ছে হয় ছুটে বেরিয়ে যায় এই উড়ান থেকে। এক ভোঁ-দৌঁড়ে চলে যায় বন্দর ছেড়ে।

উড়ান চলতে শুরু করে, সাগরের কিশোর বুকটা দুমড়ে যেতে থাকে যেনো উড়ানের চাকাগুলো গড়ায় সেখানেই। লুকিয়ে হাতের উলটো পাশে চোখ মুছে সাগর। পাশে বসা মেঝো চাচা মাথায় হাত বুলিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলেন, "বাবা-মার কথা মনে পড়ছে খুব, না রে!"
সাগর ইয়ার ফোনের প্লাগটা কানে গুঁজে দেয়। ৬ নম্বর স্টেশন থেকে মস্তিষ্কে সোজা আঘাত করে হিউম্যান নেচার। সামটাইমস আই উইশ দ্যাট আই কুড টার্ণ ব্যাক টাইম...



৮.
সুষ্মিতা ঘোরে থেকেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো চোখ খুলে দেখতে পায় সাগর হেঁটে অনেকটা দূর চলে গেছে। সাগরের চলে যাওয়াটা উপলব্ধি করার অবস্থায় সে তখনও আসেনি। ঠিক এই মুহূর্তে সুষ্মিতার মনে হয় তার চাইতে সুখী আর কেউ নেই। শিরা-উপশিরা গুলো অদ্ভুত এক চঞ্চল আনন্দ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার সারা শরীরে। চারপাশের সবকিছুই অসম্ভব ভালো লাগতে শুরু করে। মুখে মিষ্টি একটা স্বাদ লেগে আছে। ব্যাগটা আস্তে করে তুলে নিয়ে, নীল রাঙতা মোড়ানো প্যাকেটটা শক্ত হাতে ধরে সে ঘরে ফিরে আসে।

অনেক রাতে টেবিল ল্যাম্পের মৃদু-মায়াবী আলোয় প্যাকেটটা খোলে সুষ্মিতা। ন-হণ্যতে।
সাদা জায়গায় গাঢ় সবুজ কালিতে সাগরের হাতের লেখা- "তোমাকেই দিলাম"। বইটা হাতে নিয়ে সুষ্মিতা উল্টে-পাল্টে দেখে, নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেয়, চোখ বন্ধ করে বিকেলের সেই পাগল করা অনুভবটা পেতে চেষ্টা করে আবার। সাগর- তার হাত- লম্বা লম্বা আঙুল- সুষ্মিতার চোখ বন্ধ- মুখে উষ্ণ তীব্র চাপের ভেজা স্পর্শ!



শেষ.

সুষ্মিতার জানালার বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে, বাইরে থেকে জানালায় কান পাতলে ভেতর থেকে খুব আবছা আওয়াজে ঈগলসে'র 'লাভ উইল কীপ আস এ্যালাইভ' গানটা ভেসে আসে। সুষ্মিতার জানালা থেকে সরে আসার সময় কাছেই কোথাও হঠাৎ বজ্রপাতের তীব্র শব্দ হয়। নীলচে আলোয় ভরে ওঠে চারদিক। সুষ্মিতা-সাগরের জন্য আকাশের যেনো অনেক কষ্ট, সেই কষ্টেই বুঝি নীল হয়ে যাচ্ছে সে বারবার।

সুষ্মিতা জানলো না এই গল্পটির পথ কোন দিকে যাবে, কোথায় গিয়ে শেষ হবে এই গল্প!

সাগর ও সুস্মিতার এর মাঝে আর কখনোই দেখা হয়নি, কথা হয়নি, যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে তারা একই শহরে বাস করে, তাদের হঠাৎ দেখাও হয়ে যায়, কিন্তু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, বড্ড ভুল সময়ে। অপ্সরার মাথা ওয়ালা বিশাল ডোভ মূর্তিটির নীচে ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝে অনবরত কথা বলতে থাকা ফুটফুটে একটি বাচ্চা মেয়ের তুলার মতো নরম হাত ধরে, সাগর দাঁড়িয়ে দেখে, সেদিনের সেই কলাপাতা রঙের সুস্মিতার পাশে আজ অন্য কেউ, অন্য কোনো প্রয়োজনে!

"ড্যা-ডি, হোয়েন উইল উই গো টু মাম্মী!"

কথা বলা পুতুলটির টানে সম্বিৎ ফিরে পায় সাগর। স্টেফানী, অনেক ভালোবাসতো তাকে। প্রতি সপ্তাহের এই দিনে মেয়েকে নিয়ে সে বউয়ের কবরের দিকে যায়!

Monday, April 14, 2008

একটি গোলাপের আদর

: হ্যালো...
তুই অনেক ঘুম জড়ানো কন্ঠে ওপাশ থেকে বললি।

: ঘুমাচ্ছিস বুঝি!
: ছুটির দিন, ভোর বেলা লোকজন তো ঘুমাবেই নাকি?
: তা ঘুমাবে যদি না আমার মতো কেউ হঠাৎ ফোন করনে ওয়ালা না থাকে।
: হুমমম
: যদি বলতে পারিস কেনো ফোন করেছি তাহলে তোকে ইউরেনাস গ্রহটা লিখে দিয়ে দেবো!
: এতো বড় গ্রহ নিয়ে আমি কী করবো! রাখবো কই!
: আচ্ছা তাহলে যা, তোকে শনি গ্রহের একটা বলয় লিখে দেবো।
: হে, ওখানে বসে বসে কি পা ঝুলাবো আমি? লাগবে না আমার।
: আরে ভেবে দেখ, একেবারে ৫০০ টাকার স্ট্যাম্পে দস্তখত দিয়ে লিখে দেবো, ঈমানে কই।
: তুই কি পুরা সৌরজগতের লীজ নিলি নাকি?
: আরে তুই একবার বলে তো দেখ, তোকে গোটা ছায়াপথটাই ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো ধূমকেতুর ল্যাজে চড়িয়ে।
: হইছে থাম থাম। পরে পিছলা খাইয়া পড়ুম।

আমার আজকে কী হলো, রাজ্যের ক্ষুধা পেয়ে বসলো। ক্ষুধায় আমার কথা জড়িয়ে এলো। ঘুমজড়ানো গলায় তোর কথা বুঝি না, ক্ষুধায় চোটে নিজের গলায় কথা সরে না।

: পেটে আমার জ্বলন্ত ক্ষুধা, বুকে আমার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা। কী যে করি!
: ক্ষুধা লাগলে খা। ঘরে কিছু নাই?
: আছে তো, কিন্তু আমার যে ঢেঁড়স ভাজি দিয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত খেতে ইচ্ছে করছে কাগজি লেবু চটকিয়ে।
: ঈশ, ঢেঁড়স জিনিষটা আমার একদম পছন্দ না আর এটার কথাই বললি!
: তোকে শিখিয়ে দিই কীভাবে ঢেঁরষ ভাজতে হয়। প্রথমে একটা কড়াইয়ে তেল গরমল করবি...
: আমি জানি কীভাবে ঢেঁড়স ভাজি করতে হয়।
: ওহ্, তাও জানিস! কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছে করছে যে।
: এক কাজ কর। তুই তোর পরিকল্পনা মতো হালচাষ শুরু করে দে। তখন দেখবি কেউ গামছায় বেঁধে তোর জন্য ধোঁয়া ওঠা ভাত আর ঢেঁড়স ভাজি নিয়ে আসছে। তুই সেগুলো ক্ষেতের আলে বসে বসে খাবি।
: মশকরা করস? ক্ষুধার্তের সঙ্গে মশকরা করা কিন্তু ঠিক না। ক্ষুধা বেরাজি হয়।
: মশকরা কই করলাম। হাজার মাইল দূরে তোর জন্য ঢেঁড়স ভাজি করে কে নিয়ে যাবে? এক কাজ কর, বেরিয়ে যা ঘর থেকে।
: বের করে দিচ্ছিস?
: আরে, বের করে দিচ্ছি না বেকুব। বলছি বাজারে যা, ঢেঁড়স কিনে নিয়ে আয়।
: কোথায় যাবো, কারওয়ান বাজার নাকি দক্ষিনখান?
: থাক যাওয়া লাগবে না, বসে থাক।

তুই বললি আমি নাকি আজ স্বপ্নে ঢেঁড়স দেখবো। আস্ত জলজ্যান্ত, নিরীহ মুখের একটা ঢেঁড়স, তার দিকে আমি ছুরি উঁচিয়ে যাচ্ছি। ঢেঁড়সটা ভয় পেয়ে ছুটে যাচ্ছে, আমি পেছন পেছন দৌড়াচ্ছি। তুই এই সব কথা কোত্থেকে বলিস কে জানে। আমার দারুণ লাগে, ভালোলাগে। নইলে ক্ষুধা পেটে আমি এতো মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলি!

: চোখ বন্ধ করে আছিস এখনো?
: তুই কি দেখতে পাচ্ছিস!
: নাহ্, তা পাচ্ছি না।
: তো বলছিস যে!
: চোখ খোল।
: মাথা ব্যাথা করবে যে!
: করলে করবে, চোখ খোল তোকে একটা কথা বলবো।
: নে খুললাম, এবার বল।
: উঠে বস।
: উফ, আবার বসতে হবে কেনো!
: আহা, বোস ই না।

তোর ঘুম জড়ানো কন্ঠ গলে কী বের হলো, কিছুই বুঝলাম না।

: হুমম, তুই খালি ঝামেলা করিস।
: হাহাহা
: আমার ঘুম পুরো হয়নি। মিনিমাম আরও ঘন্টা তিনেকের কোর্স।
: হুমম, বসেছিস, চোখ খোলা?
: হ্যাঁ তো...
: শুভ নববর্ষ
: হাহাহা... পারিসও তুই। তোকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

: তুই আমার জন্য একটা কাজ করবি? এটা একটা প্লিজ!
: হুমম, বল।
: করবি তো!
: আহা, বল ই না। বললাম তো রে বাবা করবো।
: তুই কখনো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠিস?
: উঠি তো মাঝে মাঝে।
: হুমম। আমার জন্য একদিন উঠবি। অনেক সকালে। সূর্য ওঠার আগে। উঠে ছাদে যাবি। আচ্ছা তোদের ছাদে যাওয়া যায়?
: হ্যাঁ, যায়। কিন্তু এতো সকালে ছাদ তালা দেয়া থাকে যে!
: চাবি নিয়ে রাখবি কোনো একদিন। পারবি না।
: হুমম পারবো।
: ছাদে গিয়ে কী করবি?
: তালা খুলবো, তারপর লাগিয়ে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়বো!
: তোরে কি আমি তালা খোলা আর লাগানোর জন্য এই ভোর বেলা উঠতে বলছি?
: তো কী করবো, বলিসনিতো!
: হুমম। ঘুম থেকে উঠে চোখে মুখে পানি দিবি। একটু শীত শীত লাগলে ওড়নাটা চাদরের মতো করে জড়িয়ে নিবি। তারপর ছাদে যাবি। রেলিঙ ধরে দাঁড়াবি সূর্যোদয়ের আগে। তোর চোখের সামনে দিয়ে সূর্য উঠবে। তখনকার তোর একটা স্কেচ করে আমাকে দিবি, পারবি না!
: আমি কি আঁকতে পারি নাকি। স্কেচ করবো কী করে!
: আরে, স্কেচ কেবল পেন্সিলেই হতে হবে কেনো। বাক্যের গঠনেও তো হতে পারে। তুই সেটাই করবি। আমি দেখবো তোকে, ভোরের তোকে কেমন লাগে।
: কেমন লাগবে আমি জানি। ঘুমে চোখ ফোলা ফোলা, চুল খাড়া হয়ে থাকবে। আচ্ছা, বারান্দায় হলে হয় না?
: নাহ্, কেনো!
: আমাদের ছাদটানা খুব খারাপ। রেলিং খুব নিচু। ঘুমের ঘোরে যদি পড়ে যাই। তখন স্কেচ আঁকা বাদ দিয়ে তো জীবনের হালখাতা করতে হবে!
: হুমম, চিন্তার কথা। একটা কাজ করা যায়। ছাদে উঠেই মোটা একটা রশি নিয়ে কোমড়ে বেঁধে তার আরেক মাথা স্টেবল কোনো কিছুতে বেঁধে রাখতে পারিস। তাহলে পড়ে গেলেও ঝুলে থাকবি।
: হে, মাংকি জাম্পের মতো! আমার অনেক ভালো লাগে মাংকি জাম্প। দিতে না, দেখতে। লোকজন আআআ করে চিৎকার করতে থাকে।
: নেপালে করা যায় মনে হয়।
: তাই নাকি!
: তবে তোর সুবিধা হবে না। তুই কইলজ্যা ফাইট্যা মরে যাবি। আআআ করে চিৎকার দিয়েই তুই শেষ।
: হাহাহা, তা ঠিক।

তোকে, তোর শুভ্রতাকে ভোরের আলোর কুমারী শুভ্রতায় উপলব্ধি করার প্রবল বাসনা আমার। কোনোদিন হয়তো এই সময়টায় তোকে সামনে থেকে দেখা হবে না আমার। কপালের দোষ দেবো তোর মতো!

: তোকে একটা কথা বলতে চাই, বলবো!
: হুমমম
: না থাক, বলবো না।
: আমি শুনবো, বল।
: আমি আসলে বুঝতে পারছি না, বলাটা ঠিক হবে কীনা।
: হবে, বল।
: নারে, থাকুক কথাটা না বলাই।
: অর্ধেক কথা বলে! আর বলতে বলবো না। তুই তখন প্যাচাবি।
: থাক, বলিস না আর।

ভারী হয়ে যাওয়া আলাপ একটু হালকা করতে চাই। সিরিয়াস কোনো আলাপের সময় আমার মুখে কুলুপ এঁটে যায়, মেপে মেপে কথা বের হয়। তোর ও কি এমনটা হয়?

: তোকে আবহাওয়ার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিই!
: হুমম
: সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঝলমলে রোদ। তারপর দুপুরের দিকে মন খারাপ করে দিলো আকাশ। একটু কাঁদলোও বোধহয়। বিকেলের একটু আগে আবার হাসি ফোটালো ঠোঁটে। কিন্তু বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যায় আবার সেই মন খারাপ করা রূপ। বৃষ্টি না হলেও ভ্যাপসা একটা পরিস্থিতি। আর এখন, গুড়িগুড়ি ঝরছে। এখন বৃষ্টির পানি বেয়ে পড়া দেখি।
: পানি পড়া দিবি নাকি?
: কেনো, তুই দিবি?
: নাহ্, ঐটা তোরই কাজ। তুই ই দে।
: হাহাহা, তোর মনে আছে!
: হুমম, হাহাহা। আচ্ছা তুই কি বাইরে!
: হুমম
: বাইরে কী করিস!
: গাছ খুঁজি। তোকে শুভেচ্ছা জানালাম শোয়া থেকে বসিয়ে। এখন আমি গাছে চড়বো, আর তুই আমাকে শুভেচ্ছা জানাবি। হাহাহা
: হাহাহা

দুজনেই হেসে উঠি। একেবারে অকারণ, গুরুত্বহীন এবং নির্ভেজাল একটা হাসি। তোর হাসি চলতে চলতেই ভাবি একটা ধাক্কা দিই তোকে-

: আচ্ছা তুই আমার বউ হবি?
: তোর মতো পাগলের বউ হবার কোনো ইচ্ছা আমার নাই।
: তোরে কোন হালা বিয়ে করবে শুনি?
: আরে করবে করবে। খুব শীঘ্রই আমার বিবাহ হবে।
: ঐ হালার ঠ্যাং ভাংবো দাড়া।
: না না, ঠ্যাং ভাঙিস না। বেচারা অনেক ভালো মানুষ হবে রে!
: তাইলে তোরে বিয়ে করতে আসে কেনো!
: তো তুই কি চাস, কোনো খারাপ মানুষ আমাকে বিয়ে করুক!
: আমি তো চাই তোর বিয়েই না হোক। হাহাহা
: হ, তোর তো যতো খারাপ বুদ্ধি!

আলাপটা এর চেয়ে বেশিদূর যাবার দরকার নেই বোধহয়। তুই অনেক বুদ্ধিমতি...। আর আমারতো পায়ে বোম মেরেও এর চেয়ে সামনে আগানো যাবে না।

: আচ্ছা শোন। তুই ঘুমা আবার। অনেক সময় নিলাম তোর।
: হুমম। কতোক্ষণ নিলি, ক'টা বাজে এখন।
: সাড়ে আটটা।
: হুমম, দেড় ঘন্টার মতো।
: উঠে কী করবি!
: আরও ধর ঘন্টা খানেক ঘুমাবো। আমি এখনো চোখ খুলতে পারছি না। উঠে ঘর গোছাবো। টুকটুক যা কাজ আছে করে ফেলবো। বিকেলে হয়তো বেরুবো। তোর কাজ আছে না আজ!
: নাহ্, আজকে সারা বিশ্বজগতে সরকারী ছুটি, তুই ঘর গোছাবি যে!
: হাহাহা
: রাখি রে।
: শোন--- শুভনববর্ষ
: হুমম, তোকেও।
- এবং অটো ডিসকানেক্ট!

তোর সঙ্গে কথা শেষ হবার পরে পুরো ফিল্ম স্ট্রিপের মতো করে সামনে দিয়ে চলে গেলো একেকটা দিন-ক্ষণ-মুহূর্ত। তুই বলিস ইমোশনাল আমি বলি এসকেপিস্ট। তুই জানিস আমি হারতে পছন্দ করিনা। আমি প্রয়োজনে নিজেকে কলয়ডাল অবস্থায় নিয়ে যাই চাপতে চাপতে। অন্য কোনো অধ্যায় শুরু করে দিই, সবার অন্তরালে। সবাই ভাবে, এটাই সত্যি, তুইও কি তাই ভাবিস?

তোকে প্রথম যখন দেখেছিলাম, হেমন্তের দুপুরে, সন্ধ্যায় কার্ডিগান গায়ে, ভালো লেগে গিয়েছিলো তোকে। তখনও জানতাম না তোর ব্যাপারে। যেদিন জানলাম, তোর মন অন্যকারো সঙ্গে বাঁধা, তোর কসম করে বলছি- ভয়ানক কষ্ট পেয়েছি আমি। কখনো কি কাউকে কিংবা তোকে বুঝতে দিয়েছি? দেইনি। কিংবা তুই বুঝিসনি।

সবার চোখে ধূলো দিতে, এমন একটা কিছু করলাম- তুই নিজেও গোল পাকিয়ে ফেলেছিলি, বোধহয়। তুই কি কখনো খেয়াল করতিস তোর সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগতো সবচেয়ে বেশি। গালের কোনে কিংবা কানের লতিতে সামান্য রক্তিম আভাও হয়তো ছড়িয়ে পড়তো সন্তর্পনে, খেয়াল করতি কি? সামান্য একটু সুযোগ খুঁজতাম শুধু তোর সাথে কয়েকটা সেকেন্ড সময় কাটানোর জন্য। তুই বুঝিসনি কিছুই, না!

তোদের সম্পর্কটা যখন ভেঙে যাচ্ছিলো, সবচেয়ে বেশি কনসার্ণ কি আমি দেখাইনি? কী করবো বল। আমি যে এরকমই। তোর সাথে পরিচয়ের আগে বা পরে, যখনই খুব কাছের কিংবা প্রিয় মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে, আমি নিজে চেষ্টা করেছি, বুঝিয়েছি সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য। তুই প্রমাণ চাস, দিতে পারবো! কিন্তু কেনো এমন করছি, তা কি তুই তখন কিছুই আঁচ করতে পারিসনি, নাকি করতে চাসনি!

তুই, আমি, আমরা সবাই বড় হয়ে গেছিরে অনেক। অনেক গুলো দিন-মাস-বছর পেছনে ফেলে রেখে এসেছি। সময়ের সাথে সাথে আমরাও একটু একটু করে বিদগ্ধ হয়ে উঠেছি কিংবা উঠছি। সবদিক ভাবতে শিখেছি, তুই শিখেছিস। অংকে ভালো ছিলি, হিসাবেও তাই কাঁচা নস। মন কিংবা ইমোশন বাদ দিয়ে তুই হিসাব করতে পারিস, কর্পোরেট রোবট হয়েই গেলি তবে। আর আমি দিনমান রোবটদের সঙ্গে কাটিয়েও রোবটের মতো হতে পারলাম নারে। আফসোসটা রয়েই গেলো। তুই ভালো থাকিসতো! অনেক ভালো, যতোটা ভালো থাকলে তুই ঝলমলে আলোর মতো না, বরং ঝুমাঝুম বৃষ্টির মতো সারাক্ষণ হাসতে পারিস। আমি তোর সেই হাসি শুনবো কান পেতে, উপলব্ধি করবো হৃদয় দিয়ে।
"মোর হিয়া যে বাঁধিনো তোমারই হিয়ার সনে"- কতদূর যাবি বলতো! পরকীয়া করবো তোর সাথে। কি, করবি না!

Thursday, April 10, 2008

গুরুচন্ডালী - ০০৫

ঘরে ঢুকে পিসি'র দিকে তাকাতেই দেখি এভিজি তার ছেলেপুলে, নাতিপুতি সহ আমার পেয়ারের ডেলের ওপর খবরদারী করছে। কপাট ভেঙে তার প্রতিটা ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে কী সব আবোল তাবোল সন্দেহজনক হামলাকারীর খোঁজে। পাশে তাকিয়ে দেখি দাঁত কেলিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসছে হুকুমের আসামী, এক্ষেত্রে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আমারি স্বনামধন্য ছোট ভাই। ওর হাসি দেখেই আমার ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো! বুঝলাম ঘটনা খারাপ, শুধু খারাপই না- বেজায় খারাপ।

হাজার চারেক সন্দেহজনক হামলাকারী খুঁজে বের করে দিয়ে যখন এভিজি সাহেব বিদেয় নিলেন, তখন ডাক পড়লো আমার। কারণটা আগেই আন্দাজ করা ছিলো। বেচারা কম্পু স্টার্ট হতে নাকি অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ঘুরে ফিরে খালি ওয়েলকাম স্ক্রীণে চলে যায়। আমি অবশ্য আমার ডাক পড়ার আগেই হাতুরি-বাঁটাল নিয়ে রেডি হয়ে ছিলাম। ডাক পড়াটা কেবল সময়ের দাবী ছিলো মাত্র! ঘটনা নতুন না তো। এই যেমন নয়া নতুন সনি'র পি-টু হান্ড্রেড কিনে দেয়ার মাস খানেকের মধ্যে ফ্ল্যাশ গন। তারও আগে আমার স্বাধের তোশিবা স্যাটেলাইট সিরিজের কপালেও ভালো কিছু জোটেনি, পিলিপস এমপিথ্রি প্লেয়ার, গেলো তার কন্ট্রোল নষ্ট হয়ে, একটা ডেস্কটপ পড়ে আছে টেবিলের কোণায়, এগুলো অবশ্য কোনোটাই বেচারা ছোটভাইয়ের দোষ না। জিনিষ গুলোই হঠাৎ মানুষের মতো আচরণ করে বিগড়ে বসলো। সেই ধারাবাহিকতায় এই ব্যাটা ডেল ইন্সপাইরন যে গত কয়েকটা মাস কী করে সার্ভাইভ করলো সেটাই অষ্টম আশ্চর্য আমার কাছে।

রাতে ঘরে ফিরে চালিয়ে দিলাম এক্সপি। উদ্দেশ্য এভিজি মিয়া যা যা সাফা করে দিয়েছে, সেই চোর ছেচ্চরগুলোকে লাল কার্পেট সম্বর্ধণা দিয়ে ফেরৎ আনা। দুই নাম্বার উইন্ডোজে এক নাম্বার লেটেস্ট ব্রাউজার আর মিডিয়া প্লেয়ার ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক কিছুই করতে হয়েছে দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে। যাইহোক, ভাগ্য অতীব সুপ্রসন্ন হলে নাকি অতলান্তিকেও চর দেখা দেয়। আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো না। ঊনচল্লিশ মিনিট রিমেইনিং নামক সাইনবোর্ডটা দীর্ঘ দু'ঘন্টা ধরে মনিটর জুড়ে ঝুলানো দেখে বুঝলাম কাজ হবে না। এরে ধরি, ও ভাই তোমার এক্সপি আছে? উত্তর আসে, পিসিই নাই- এক্সপি দিয়া কী করুম? আরেকজনরে জিজ্ঞেস করি, ভাব নিয়ে উত্তর দেয় ভিসতা ইউজ করি! আমি পড়লাম না মহা গ্যাড়াকলে!

অবশেষে, ৩২ বিটের প্রসেসর আর ৫১২ র‌‌্যাম নিয়ে একটা রিস্ক নিয়েই ফেললাম। দিলাম ভিসতার হোম এডিশন ঢুকিয়ে শালার ভেতরে। এই ভিসতা যোগার হলো এখ বিরাট ইতিহাস নিয়ে। সংক্ষেপে বলে রাখি, পুরা ফাঁকতালে পাইছি, তাও জেনুইন। একেবারে সাইনবোর্ড টানানো।

এখন, পিসিতো দুইদিন পর স্টার্ট করা গেলো কিন্তু নেটে আর ঢুকা যায় না। ঐ দিকে সাদাত অমিত তারেক লাঠি নিয়ে স্বপ্নে তাড়া করে! ডরের চোটে না ঘুমিয়ে রাত কাটাই। নেটে যাওয়াটা ফরযে ক্বেফায়া হয়ে দাড়ায়। এক্সপি'র নেটগীয়ার ভিসতায় কাজ করে না। যাদের নেট ব্যবহার করি, শালারা চৌদ্দটা থেকে বিশটা পর্যন্ত দপ্তর খোলা রাখে। চৌদ্দটা বাজতে বাজতে আমার নিজের ধৈর্য্য ঘড়ির ব্যাটারী শেষ হওয়ার পথে। সলুশন পেলাম, আমার ইমেইল একটা লিংক পাঠানো হলো। সেখান থেকে ড্রাইভার ইনস্টল করে নিলেই হলো। আমি হাসলাম। যে আমি গত আড়াই দিন ধরে নেট সেবা পাইনা তার কাছে পাঠানো হয়েছে ইমেইল, 'ব্যাটা ইতর কোথাকার'। ইতর কথাটার মানে না বুঝে ব্যাটা বলে, "ভি বিটে!" আমি বলি কিছু না, ডাংকে।

কিচেনে গিয়ে আমার সিগারেট মেইট চান্দুকে জিজ্ঞেস করলাম নেট আছে কী না। কয় কাজ করে না। সুন্দরী আনিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম খালি মেইল চেক করবো! ছেমরি কয়, "জেয়ার টয়ার!" আমি কই, যা ফোট, মুড়ি খাগা গিয়া!

ড্রাইভার ইনস্টলড হলো। শত্তুরের মুখে পুরা ছাইয়ের স্তুপ ছড়িয়ে দিয়ে আমার নেট আবার আগের অবস্থানে ফিরে এলো। কিন্তু ঝামেলা বাধালো বত্রিশ বিট। একটা ব্রাউজার খুললেই হার্ডড্রাইভের বাতি আর নিভে না। ভাবে মনে হয় এই ব্যাটা টুয়েন্টিফোর-সেভেন সার্ভিস দেবার জন্য জানপ্রাণ! কী আর করা, এক ক্লিক করে আধা ঘন্টার একটা ঘুম দিয়ে উঠে তারপর ক্লিকের ফলাফল দেখতে পারি। মন্দ না। যাত্রা দেখার সাথে কলা বেঁচাও হয়ে যাচ্ছে আমার।

আমার স্কুল বেলায় সারাংশ লিখনে ফাঁকিবাজি এখন টেরপাই হাতেনাতে। পিসি খারাপ হইলো, এই ঘটনা লিখতে গিয়ে পুরা এক মহাকাব্য লিখে ফেললাম। এখন আমি সেই ঘটনাটা লেখি কেমনে? আরে ঐ যে সেদিন ট্রেনে কানে মোবাইলের তার ঠেসে ধরে গান শুনছিলাম যে। তারপর যে একটা কল এলো, আমার মোবাইলে সারাক্ষণই বীপ করা থাকে। সাধারণত কেউ বুঝেনা আমার কল এসেছে। এবারো তাই হলো। আমি বাইরের কন্ট্রোল থেকে রিসিভ করে কথা বলছি। ঠিক সামনে বসেছিলো দজন শুলারিন। একজন আবার দেখতে সেইরম। (আমি যে কেন শুলার হৈলাম না, আফসোস লাগে ) আমি যখন কথা শুরু করলাম ফোনে, সেইরম চেহারাধারী শুলারিন ললনার চোখের সঙ্গে টু টাইমস নাইনটি ডিগ্রী এঙ্গেল। ললনা আমাকে জিজ্ঞেস করে তাকে কিছু বলছি কিনা। আমি কোনো শব্দ না করে, তার দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা চালিয়ে যাই। মেয়েটা জবাব দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাষাগত অর্থোদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ক্ষ্যান্ত দেয়। এবার আমি আস্তে করে মাথা ঝাঁকিয়ে ঠোঁট নেড়ে বুঝাই তোমাকে না, মোবাইলে কথা বলি। মেয়েটা হাসিতে ভেঙে পড়ে, মদন হওয়ার আনন্দে। দুজনেই হাসে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। ফোনে কথা শেষ করে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমিও হাসি। ওদের মতো না। আমার মতো। তা দেখে তারাও হাসে। আমি খুশী হই। যাত্রা ভালো লাগে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নেমে যায় সুন্দর সেই ললনা। আমি আবারও বিষাদে ডুবে যাই। নীল নয়নার ফাঁদে অল্পের জন্য পড়া হলোনা বলে আফসোস হয় বাকিটা পথ!

Thursday, April 03, 2008

আজ মন খারাপ করা দিন

আসাম ব্লেণ্ডের টি-ব্যাগ, ওয়াটার কুকারে টগবগ করে ফুটতে থাকা পানি, পাশে কি জানি একটা বিদঘুটে নামের কনডেন্সড মিল্কের টেট্রাপ্যাক। খুঁজে পেতে চা খাওয়ার মগটা বের করা গেলেও চিনির কৌটাটা কেনো যেনো আমার সঙ্গে 'লুকোচুরি' খেলছে। সব হাতের কাছে থাকার পরেও তাই চিনি ছাড়াই চা মুখে তুলতে হচ্ছে।

আমার চা খাওয়া নিয়ে কতোজনই কতো কথা বলে। সর্বশেষ যে কথাটা যোগ হয়েছে তা হলো, আমি নাকি চা খাই-ই চিনি খাওয়া হবে তাই। চিনিহীন চা গলায় ঢালতে ঢালতে টলতে থাকা পায়ে কম্পুর সামনে এসে বসি। একে একে সবগুলো মেসেঞ্জারে লগইন করি, মেইল গুলো খুলে বসি। উঁহু, সব ফকফকা। নতুন কিছু নেই। গত বিশ দিনে সাহারায় হঠাৎ বয়ে যাওয়া সামান্য মরুবাতাসের মতো কেবল একটা মেইলই জ্বলজ্বল করে আসছে। আরএসভিপি ডট কম ডট এইউ থেকে। অকাজের মেইল, জঞ্জালবাক্সে যাবার কথা থাকলেও মেইলটাকে খুলি, প্রতিটা লাইন পড়ি তারপর আবার 'আনরেড' করে রেখে দিই। পরেরবার একই কাজ করি। করছি গত বিশ দিন ধরেই। মেইলটার প্রতিটা শব্দ মুখস্থ হয়ে গেছে। আচ্ছা মুখটা তিতা লাগছে কেনো? আসাম ব্লেন্ডের জন্য! শালার চিনির কৌটা!

এরএসভিপি'র উচ্চারণটা কী! সিলভোপ্লে!! মানে কি দয়াকরুন!
- কে দয়া করবে?

: কে আবার, তনয়া!

- তনয়া, তনয়া কে?

: এহ্, ন্যাকামো করো? তুমি চেন না কে তনয়া?

- সত্যি বলছি, চিনি না। আমার কি তাকে চেনার কথা?

: নয়তো কি? এতোগুলো বছর তার সঙ্গ নিয়ে পার করেছো...!

- আমি পার করেছি তনয়ার সঙ্গ নিয়ে? কি বলছো যা-তা!

: আশ্চর্য! যা-তা বলবো কেনো? তোমার মনে নেই নাকি মনে করতে চাচ্ছো না! ভয় পাচ্ছো, তুমি একটা ভীতু। তুমি কষ্টকে ভয় পাও। তনয়াকে মনে করলে তুমি কষ্ট পাবে, তাই মনে করতে চাইছো না।

- আমি ভীতু না। আমি কোনো তনয়াকে চিনি না। যাকে চিনি না তাকে মনে করে কষ্ট পাবো কেনো!

: তুমি নিজের সঙ্গেই মিথ্যে বলছো।

- মিথ্যে বলবো কেনো? সত্যি বললেই বা তুমি কি ক্ষতি করবে!

: সত্যি বা মিথ্যে- আমি কোনোভাবেই তোমার ক্ষতি করতে পারবো না। আমি তো তুমিই! আমি কেবল তোমার ভুলটা ধরিয়ে দিতে পারবো।

- লাগবে না তোমার ভুল ধরাতে। তুমি যাও। তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

: আরেকটু থাকি? এটা একটা প্লীজ!

- থাকতে পারো। কিন্তু তনয়া ফনয়া নিয়ে কথা বলতে পারবে না।

: আচ্ছা ঠিকাছে। চলো তাহলে অন্যকিছু নিয়ে কথা বলি। আচ্ছা তোমার কি সে জায়গাটার কথা মনে আছে? ঐযে অনেক বিস্তীর্ণ হলুদ রঙের মাঝে হঠাৎ বয়ে চলা একটা সরু সাগর...!

- কোন জায়গার কথা বলছো? সাগর আবার সরু হয় কী করে! এমন কোনো আজগুবি জায়গা কি আমার চেনার কথা!

: আশ্চর্য! এটাতো তোমারই প্রিয় জায়গা। তুমি আমাকে জায়গাটার গল্প বলেছো এই সেদিনও। মনে নেই তোমার!

- একদমই মনে পড়ছে না। তুমি কি আমাকে বলবে জায়গাটার কথা!

: আমিতো বলতেই চাই। ঐযে একটা পায়ে চলা সাদা মেঠো পথ। বাহাদুরপুরের কালীবাড়ির বটগাছটার মতো একটা বুড়ো বটগাছ, তার পাশ দিয়ে বেঁকে নেমে গেছে পথটা সরু হয়ে। যেতে যেতে পথটা ক্ষেতের আল হয়ে যায়। অনেকদূর হেঁটে গেলে হলুদ শর্ষে ক্ষেত। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। সেখানে একটা সাগর। খালের মতো সরু। ঘাসময় ঢালু পাড়ে পা ছড়িয়ে বসলে বিছানো হলদে চাদর ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। সামনে দিয়ে দুয়েকটা ভটভটি জাহাজ পাল উঁচিয়ে চলে যায়। সেখানে সূর্যের তেজ কম, মৃদু বাতাস বয়, তাতে চামেলীর গন্ধ। তুমি সেখানে বসে থাকো। তোমার পাশে বসে থাকে তনয়া। তোমার হাতে হাত রেখে, তোমার কাঁধে মাথা রেখে....।

- থামো থামো। এমন কোনো জায়গার কথাই তো আমি মনে করতে পারি না। আমি কখনোই এমন একটা জায়গায় যাইনি, তোমাকে গল্প বলবো কোত্থেকে! আমি নিজেই যেখানে যাইনি, সেখানে তনয়া নামের অস্তিত্ব কোথায় পাও তুমি বলতো! আমিতো এই নামে কাউকে মনেই করতে পারছি না!

: তুমি মনে করতে চাচ্ছোনা বলে পারছো না। আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও, তোমাকে তনয়ার গল্প বলি। তুমি মনে করতে পারবে সব। তার হাতভর্তি রেশমি চুড়ি, সে তনয়া। কোমরসমান লম্বা চুল, সে তনয়া। চোখ নাচিয়ে হাসে খিলখিল করে, এক পায়ে পরা নুপুরের কেমন অদ্ভুত শব্দ তুলে দৌড়ে যায় শর্ষে ক্ষেতের আল ধরে, সে-ই তো তনয়া। শুনবে তুমি, শুনবে তনয়ার গল্প?

- না না, আমার এখন সময় নেই। তুমি যাওতো এখন। তনয়ার গল্প শোনার চেয়ে আমার এখন বেরিয়ে পড়া জরুরী। কাজে দেরী হয়ে যাবে নয়তো...!