Tuesday, December 25, 2007

হ্যাপী থ্যাংক্স গিভিং...

ঘুমাতে গেছি সকালে। কয়েকদফা বিঘ্নের পরেও অবিরাম ঘুমেই পাই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে খাঁটি বাংলায় ভেতরে আসার জন্য বলি। কেউ আসে না, খানিক বাদে আবার ঠকঠক। আবারো আসতে বলি। বার তিনেক খটখটানোর পর উষ্কোখুষ্কো চুল, রুই মাছের মতো ফোলা চোখ নিয়ে টলতে টলতে দরজা খুলে দেখি ইয়ান। আকর্ণ হাসিতে জিজ্ঞেস করলো আমি তার সঙ্গে খাবো কিনা! আমাকে ঘুম তখনো ছাড়েনি, চোখে হয়তো কোনাখামচিতে কোথাও 'কেতুর' ও লেগে ছিলো, গায়ে নিশ্চই ঘুমের ভকভক গন্ধ! এই অবস্থায় কেমনে একজনের দাওয়াত রক্ষা করি ঢুলুঢুলু মাথা সে সাড়া দিলো না। সরাসরি 'না' করলে কেমন শোনায়, কিন্তু অন্যকোন শব্দ খুঁজে না পেয়ে তা দিয়েই চালিয়ে দিলাম সাথে বারকয়েক ঘুমন্ত ধন্যবাদ সহযোগে। বেচারা 'অ, তুমি বোধহয় ঘুমাচ্ছিলে' বলে হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমিও আবার বিছানায় কাত হয়ে গেলাম।

স্বপ্নদেবীর ক্রোড়ে কয়েক পশলা কাবাডি খেলে কিঞ্চিৎ পরে টেডির ন্যায় রেডী হয়ে বের হবার পথে কিচেনে 'চুপি' দিয়ে দেখি ইয়ান তার মায়ের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল। হাইলিগার আবেন্ড কে সামনে রেখে পরিবারের সবাই একসাথে ২৪ তারিখ রাতে ডিনার করে, সবাই সবাইকে উপহার দেয়। এই রীতিতেই ইয়ানের মা টুবিংগেন থেকে এসেছেন ছেলেকে নিয়ে যেতে। জিজ্ঞেস করলাম, খাওয়া শ্যাষ? মাথায় এবং মুখে পজিটিভ সম্মতি দিতেই বললাম অসুবিধা নেই পরে কখনো ঘটা করে রক্ষা করা যাবে তোমার দাওয়াত। ফিরতি প্রশ্ন আমার, ফিরছো কবে? জানুয়ারীর ৭ তারিখ ।আমি এতোটা দেরী আশা করিনি। মনটা দমে গেলো। আমার কি 'না' করাটা ঠিক হলো তখন!

বড়দিনের শুভেচ্ছার সঙ্গে নতুন বছরের বাড়তি শুভকামনাটুকু যোগ করতে হলো। মা-ছেলেতে হাসি মুখেই বিদেয় দিয়ে সঁপে দিলো আমাকে হাঁড় কাঁপানো 'ফ্রস্ট'-র ডিসেম্বরের বিকেলে। বাসের জন্য অপেক্ষার সময় দেখলাম একটা পিচ্চি একা একা ইনলাইনারে করে যাচ্ছে। টুকটুক করে হেঁটে যাচ্ছে, ভালো করে চলতে পারে না। বেচারা রাস্তা পার হতে গিয়ে ধপাশ করে পড়েই গেলো। ভাগ্য ভালো তখন কোন গাড়ি চলে আসেনি আচমকা। যতোক্ষণ দেখা গেলো তাকিয়ে থাকলাম পিচ্চিটির দিকে। একসময় সে আড়াল হলো আমারও বাস এলে উঠে পড়লাম টুক করে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে চোখ পড়লো সামনে, আমারি দিকে মুখ করে থাকা এক ললনা যাত্রীর দিকে। হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ, কাঁধে বিশাল 'পিঠবস্তা', হাইলিগার আবেন্ডের আগের দিন এমন দৃশ্য খুবই সাধারন। মেয়েটি কথা বলছিলো ফোনে, হাসছিলো। আমি দেখছিলাম ফিরে ফিরে। এতো নিরেট সুন্দর মানুষ হয় কী করে! 'বিধাতা তার সবকিছু গড়িয়াছেন অতীব যতনে'। সেন্ট্রালে এসে সে গেলো স্টেশনের দিকে আর আমি চলে গেলাম জেমস ব্লান্টকে স্মরণ করে।

রাতে ঘরে ফিরে কতোক্ষণ মি. বিন দেখলাম। হট শটস - পার্ট ডুয়েক্স দেখে দু'ভাই ঠাঠা করে হাসলাম। লবন ছাড়া খিচুড়ি ভক্ষণ করলাম 'বয়দাভাজিপেয়াজা' (*) সহযোগে। হিরোস সেকেন্ড সীজনের কয়েকটা এপিসোড দেখলাম, তারপর একসময় পুট করে নিদ্রাদেবীর আঁচলে মাথা মুড়িয়ে ফেললাম।

হাইলিগার আবেন্ডের দিন থেকেই শুরু হয় বিষণ্ণতার আনাগোণা। ৫ টার মধ্যে সব কিছু বন্ধ। রাস্তায় কুকিলটিও থাকে না। ক্রিসমাস মার্কেটের পসরা উঠে গেছে আগেই। কেমন কার্ফিউ কার্ফিউ অবস্থা। ঘুরতে বেরিয়েও ৬টার মধ্যে ঘরে ফিরতে হলো। ফিরেই চাগার দিয়ে ওঠা ক্ষুধার অণলে স্বরচিত বার্গার খেলাম। তারপর বিছানার সনে যৎসামান্য অভিসারের পর লেগে গেলাম বিরিয়ানী (**) প্রস্তুতকরনে। মাঝখানে টিভিরুমে গিয়ে দু'টা সিনেমা আর আধা প্যাকেট মার্লবোরো মেরে দিলাম। এবারে কাঁচা শশা, পাকা টমাটো আর মদনের দোকানের ঝাল আধা কাঁচা মরিচের সমন্বয়ে পেট ভরাট করলাম রসনার সন্তুষ্টি সাপেক্ষে। ইউটিউবে খুঁজে উত্তম-সুচিত্রার প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তুর দেখে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে এখন ইফ টুমরো নেভার কামস শুনে নিজেকে তালে ফেরানোর চেষ্টা করছি।

ক্যালেন্ডার থেকে চলে যাচ্ছে আরেকটা বছর। কতো কিছু দাগাদাগি করা ছিলো এবছরে। খুব জোরে পিছনে রিউইন্ড করে গেলে কোথায় কিছু ঠেকে না, কারণ অনেক দাগাদাগির পরেও বছরটা মসৃণই রয়ে গেছে, সম্পাদিত হয়নি কিছুই। বছরের শেষের দিকে এসে অন্তত ভালো কিছু শুনবো, সে আশারও গুঁড়ে বালি দিলো কতিপয় বরেণ্য। হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন গুলি নাকি খোয়া গেছে কেমনে কেমনে। যতো পদের পদি এসেই গদিতে বসুক আর তত্ত্বাবধানের নামে আমাদের রক্ষা করার অঙ্গীকার নিক, যেই হেই সেই হেই। বাঙালের তাল এতো সহজে ঠিক হওয়ার নয় চান্দু!

সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। হ্যাপী থ্যাক্সস গিভিং।

---------------------------------------------

* - আমার এই মেন্যুটা খাদকায়তনে কমপিট করার যোগ্যতা রাখে। পাবলিক খায়া বাম হাতের কাইড়া আঙুলের নখ শুধ্যা চাটবো, আই প্রমিজ।
** - এইটা নিয়ে আমার নিজেরই কিঞ্চিৎ সন্দেহ আছে। এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়া মজাই হইছে, মাগার পরের বার রানলে পাবলিক খায়া মাইর দিবো না চুমা, সেইটা এখনি কওন যাইতাছে না।

No comments: