বধুয়া
: ঘুমাচ্ছিস বুঝি...! তোর হাতটা একটু ধরি?
আমার আজন্ম সাধ তোর হাতটা ধরার, তোকে একটু ছুঁয়ে দেয়ার- আলতো করে।
: ক্যান, হাত ধরবি ক্যান!
চোখ বন্ধ রেখেই তুই ঝলমলিয়ে উঠলি। কিন্তু পরক্ষণেই আমার ঘোলা দৃষ্টির কথা ভেবেই কী না তুই মৃদু করে হাসলি। বললি,
: আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যাই, হাত বাড়াইলেই চান্দের আলো, ধরতে গেলেই নাই...
আমি পুরোপুরি বুঝতে পারলাম তোকে। সম্ভবতঃ এই প্রথমবারের মতো। হাত বাড়িয়ে দিলাম তোকে ছুঁয়ে দেবার জন্য। তোকে স্পর্শ করলাম। বিশ্বাস কর একদম বাস্তব, সত্যি ছোঁয়া। তোর উষ্ণতা আমার হাতের আঙুলে লেগে গেলো। তোর স্পর্শ এখন আমার অস্তিত্বে। কিন্তু আমি জানি তুই এসবের কিছুই অনুভব করিসনি। জোছনার মতোই তোর হাত গলে অনুভবহীন আমার স্পর্শ গড়িয়ে পড়ে গেলো!
: তুই আগে বলতিস। একটা ডোরাকাটা মাছ হয়ে সূর্য্যের আলোয় ঝিলমিল করতে থাকা শান্ত নীলাভ পানিতে সাঁতরে বেড়াতে ইচ্ছে করে খুব তোর। এখন করে না?
: করে তো, এখনো করে। কিন্তু নীল রঙটা কেমন একটু ফ্যাকাশে ঠেকে এখন। আগের সেই উজ্জ্বল আবহটা কেমন যেনো নাই হয়ে গেছে রে। তোরও তো একটা নীলরঙা পাখি হয়ে নীল পাহাড়ে বৃষ্টির পর রঙধনুর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো!
: আমার তো রঙধনুর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা এখনো করে!
আমি জানি আমার পাখি হবার সেই বাসনা কখনো শেষ হয়ে যাবে না, যেমনটা শেষ হয়ে যাবেনা তোর আশেপাশে ঘুরঘুর করার, তোকে একটু ছুঁয়ে দেখার অন্তঃপ্রাণ ইচ্ছেটা। কখনো শেষ হয়ে যাবে না আমার বুকের মধ্যে বৈশাখের ঝড়, তোর জন্য!
: জানিস, আমি সেদিন একটা তাঁতের শাড়ি কিনেছি। কালো জমিনে সোনালী পাড়। খুব সুন্দর। এখনো পরিনি, ভাজ গুলোও খুলিনি।
: শাড়িটায় তোকে খুব সুন্দর লাগবে বুঝতে পারছি। এখন পরবি নাকি! যা পরে আয়, আমি দেখি।
: তুই আসলেই একটা পাগল। এখন পরবো ক্যামনে, আমি ঘুমাচ্ছি না...?
: হ্যাঁ, তাইতো। তুই তো চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিস!
: আর এখন শাড়িটা পরবোও না। সামনে একটা প্রোগ্রাম আছে। ওখানে শাড়িটা পরবো, ছবি তুলে তোকে দেখাবো...।
: ঠিক আছে, তাই হোক তাহলে।
আমি জানি এটা সম্ভব না। তুইও জানিস। হয়তো বিশ্বাস করছিস না। বিশ্বাস আমিও হয়তো করছি না। থাকুক না আমাদের বিশ্বাসটুকু এই মুহূর্তের জন্য তোলা হয়ে। আমরা ভেবে যাই যেমনটা আমরা ভাবতে চাই। এখন... এই মুহূর্তে... দুজন পাশাপাশি...।
: তোর কালো টিপ আছে না?
: আছে তো।
: কতো বড়ো!
: তোর না প্রশ্নের কোনো মাথামুণ্ডু নাই। টিপের আবার বড়-ছোট-মেঝো কি। আমার কড়ে আঙুলের মুখের সমান হবে!
: নাহ্, অতো বড় না। তোর সঙ্গে এতো বড় টিপ যায় না। তুই পরবি একদম ছোট টিপ। মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় যে সাইজের বৃত্তগুলো ভরাট করতে হয়, ওরকম আকারের টিপ।
: হাহাহা... তুই আবার টিপ বিশেষজ্ঞ হলি কবে?
: এগুলো হলো টেস্ট মাদাম, বিশেষজ্ঞের ব্যাপার না। ও হ্যাঁ, হাতে চুড়ি পরবি ঝিনুকের, সোনালী অবশ্যই। তোর আছে আমি জানি।
: বাহ্ তুই তো দেখি আমার কাবার্ডের ভেতরের জিনিষের ব্যাপারেও ধারণা নিয়ে বসে আছিস।
: হাহাহা... তা তো আছিই! তোর কাবার্ডের কোন ড্রয়ারে কোন জামা রেখেছিস সেটাও জানি আমি। কোন ড্রয়ারে শাড়ি আর কোন ড্রয়ারে অন্তর্বাস আছে বলি...?
: না...! একদম না!! তুই থামবি!!! তোর সব ব্যাপারে মহাজ্ঞানী হওয়ার কোনো দরকার নেই। আপনার সুমর্জি হলে কিছু কিছু ব্যাপার নাহয় আমার উপরেই থাকুক মহারাজ!
আমি তোর রিনিঝিনি হাসি অনুভব করলাম। তুইও কি করলি একইভাবে আমাকে? তোর বাম গালে ছোট্ট টোলটা দেখতে পাচ্ছি আমি। ঈশ, তুই জানিসও না তোর গালের ওই ছোট্ট টোলটা দেখার জন্য আমি শতাধিকবার নশ্বর হতেও রাজী।
: তুই কি আমাকে ভাবিস?
: হুম, ভাবি।
: কী ভাবিস!
: ভাবি, তুই কেনো অমন করে সেদিন আমাকে কিছু না জানিয়ে পালিয়ে গেলি? কী করে পারলি তুই!
: তোকে অনেক ভালোবাসি যে!
: এ কেমন তোর ভালোবাসা...!
: তুই বুঝবিনা।
: বুঝবো, তুই বল।
: শোন, আমার অনিশ্চয়তার সঙ্গে তোকে জড়িয়ে ফেলতে চাইনি। যখন রিপোর্টগুলো হাতে পেলাম আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো যেনো। নিজের শরীরের এতোটা খারাপ অবস্থা, অনেকটা অজান্তেই ছিলো আমার। আমার সামনে তখন দুটো পথ খোলা ছিলো, দামী চিকিৎসায় নিজেকে সমর্পন করে ভাগ্যের হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া অথবা সব পেছনে ফেলে বাকী ক'টা দিন নিজের মতো করে বেঁচে থাকা। আমি দ্বিতীয় পথে হেঁটে গেছি। এই পথে তোর কোনো স্থান নেই যে! এই পথটা কেবলই আমার একার। মায়ার জালে জড়িয়ে গেলে তখন ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হতো রে, ছেড়ে দিতে তোর ও অনেক কষ্ট হতো!
: (তোর হাসি হাসি মুখটা আর নেই) এখন কি খুব সুখ হচ্ছে বলতো! তুই কি জানিস তোকে আমি কতো খুঁজেছি। সারাটা শহর তন্নতন্ন করে চষে বেরিয়েছি তোর খোঁজে। তুই ছিলি না। তোর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো পথই তুই খোলা রেখে যাসনি। একেকটা দিন আমার কি বিষাদে কেটেছে তুই জানিস না! তোর কষ্টে বুকের ছিঁড়ে যাওয়া একেকটা ধমনী কী করে জোড়া লাগিয়ে এখনো বেঁচে আছি, তুই বুঝিস...!
তোর গালের টোলটা মিলিয়ে গেছে সেই কখন। একি, তোর চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে! তুই কাঁদিস না প্লীজ।
আমার ওখানে অনেক অন্ধকার। তুই জানিস, আমি অন্ধকারে থাকতে পারি না। অস্বস্তি হয়। তোকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়। তোর হাসি, গালের টোল দেখতে চলে আসি তাই। তোর চুলের গন্ধ আমাকে বেঁচে থাকার স্বাদ যোগায়। বিশ্বাস কর, তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য আসি না। আমি যে তোকে ভালোবাসি, এখনো।
আমি জানি আজ তুই ঘুম থেকে উঠে কতোক্ষণ জানালা দিয়ে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবি। তারপর তৈরী হয়ে তোর নতুন তাঁতের শাড়িটা ভাজ ভেঙে পরবি। কপালে কালো রঙের ছোট্ট টিপ দিবি, হাতে সোনালী ঝিনুকের চুড়িগুলো গছাবি। তারপর কিছু না খেয়েই বেরিয়ে যাবি। শাহবাগ থেকে আমার পছন্দের গোলাপ-গেন্দা-রজনীগন্ধার একটা তোড়া নিবি। একটা সিএনজি ডেকে বলবি, "মহাখালি বাসস্ট্যাণ্ড!" ভাড়া বেশি চাইবে, তুই কিছুই বলবি না, চুপচাপ উঠে বসবি। কিছুক্ষণ পরে তুই টাঙ্গাইলের বাসে চেপে বসবি। তোকে আজ অন্যরকম লাগবে। একদম অপরিচিত কেউ। বাসের জানালা দিয়ে আসা বাতাস তোর চুলগুলো এলোমেলো করে দিবে। তুই কাঁদবি, কিন্তু কেউ তোর কান্না দেখবে না। টাঙ্গাইল নেমে তুই যাবি ভবনটেকি গ্রামে। ওখানে একটা পরিত্যক্ত জায়গায় ক্ষয়ে যাওয়া বাঁশের চাইয়ে ঘেরা একটা কবরের পাশে ফুলের তোড়াটা রেখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকবি অ-নে-ক-ক্ষ-ণ। গোধূলি বেলায় তুই আবার ফিরে আসবি। ফেরার পথে হয়তো দেখবি কোনো এক নীলরঙা পাখি উড়ে যাচ্ছে কোথাও! সাঁঝের আলতো বাতাসে তুই মুখ বাড়িয়ে বসে থাকবি, আর ভাববি বাতাস হয়ে বুঝি আমি তোর চুলে আদর করে দিয়ে যাচ্ছি। তুই ফিরে যাবি আমাকে অন্ধকারে একা রেখে। আমি জানি, তুই আবার আসবি, আবারো। কারণ তুই যে আমার বধুয়া!
16 comments:
অসাধারন, চমৎকার
ভাল লাগলো।
Khub vhalo laglo vaiaa
Sundor collection, Thank you for sharing.
nice
http://www.refreshonlinecenter.com/
Can I simply just say what a relief to find an individual
who truly knows what they're talking about over the internet. You definitely realize how to bring an issue to light and make it important. More and more people should check this out and understand this side of your story. I was surprised that you're not more popular since you certainly have the gift.
Here is my website ... registry cleaners
My web site: best registry cleaners
likhta sundor.
bdtender
Thanks for very nice and informative sites........
Alpha Homeo Care is a health news and article related website. Here discuss about various types of health problem, natural care and cure, discuss about Homeopathy treatment.
Alpha Homeo Care
ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানার ছিল। আমরা অনেকে অনেক কিছুই জানি না। আপনা এই পোস্টটি দ্বারা অনেকে কিছু তথ্য জানতে পারবে।আমি আপনাকে কোন প্রকার অফার করছি না। ছোট একটি তথ্য আপনার উপকারে আসতে পারে
Rental office
আপনি কি ঘরে বসে আয় করতে চান ? তাহলে সাইন আপ করুন। http://eshopori.com/
কবিতাটা খুব সুন্দর ...
আরো সুন্দর সুন্দর ঘটনা জানতে এই লিংক এ ক্লিক করুন......
http://www.obakkando.com
valo laglo. My Site
Love Shayari in Bengali For Girlfriend
BD Property helps connect property renters, buyers and sellers across Bangladesh, covering Dhaka, Chattogram, Sylhet, Khulna, Mymensingh, Rajshahi, Rangpur and Barisal. for more details here : Flat Rent in Dhaka
Falcon Solution ltd provide best service with best price for Epoxy resin floor coating, Epoxy floor paint in Bangladesh. for more details here : Epoxy Flooring in Bangladesh
Post a comment