Friday, January 11, 2008

ইজ্জতের ফালুদা, ডাক্তারবাড়ির সুন্দরীনামা এবং কেছকি মাছ


দুই তারিখে একটা খাইষ্টা সময়ে ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো। নির্ধারিত সময়ের পনেরো মিনিট পর লাল লাল চোখ, উষ্কোখুষ্কো চুল নিয়ে রিসেপশনের সুন্দরী সহকারীর দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিতেই বললো ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে। খানিকটা ঝিমিয়ে নেয়া যাবে, এই উদ্দেশ্য নিয়ে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আর যথাযোগ্য গাম্ভীর্যতায় যেই না পা মেলে, গা এলিয়ে চোখ বুজেছি, অমি ডাক্তারের পুতুল পুতুল সহকারীনী এসে তাড়া দিলো। আমিও কার্টুন ছবির কোন চরিত্রের মতো ট্যাং ট্যাং করে তাকে ফলো করলাম।


আমাকে বদ্ধকুঠুরীর মাঝে পুরে, সোয়েটার, শার্ট, টি-শার্ট এমনকি আমার স্যান্ডো পর্যন্ত খুলিয়েও সে ক্ষান্ত হলো না। একখানা খালি বিছানা দেখিয়ে আমাকে সেখানে শায়িত হয়তেও নির্দেশ দিলো। আমি হতভাগা, এই পরবাস জার্মান দেশে এসে নিজের হাতেই নিজের ইজ্জতের এভাবে ফালুদা হওয়ার চাক্ষুস সাক্ষী বণার প্রহর গুণতে লাগলাম।


আমার শত গাঁইগুঁই উপেক্ষা করে সে কম করে হলেও কয়েক গ্যালন রক্ত নিয়েছে আমার নগ্ন বাহু থেকে। একবার ভেবেছি উঠে দৌঁড়ে বাঁচি এই অত্যাচার থেকে, কিন্তু বংশের মুখে চুনকালি মাখার কথা চিন্তা করে, নিরস্ত করলাম নিজেকে। ড্রাকুলার মতো চুকচুক করে কয়েক ড্রাম রক্ত নেবার পর কতোগুলো সাপের মতো লিকলিকে জিনিষের ফোঁসফোঁস করা মাথা গুলো চুম্বকের মতো আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফিট করে দিলো। কাতুকুতু লেগে আমি হেসে উঠতেই 'হুঁশ' করে নড়াচড়া না করে মরার মতো পড়ে থাকতে বললো। মিনিট পাঁচেক বাদে তার এই যন্ত্রণাদানের পরিসমাপ্তিতে আকর্ণ বিস্তৃত হাসিতে বললাম, 'ঈদ মোবারক'। ললনা পুতলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে 'ডাংকে' বলে চলে গেলো। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, 'ঈশ অল্পতে চোখটা বাচছে। ইজ্জত গেলে পাইতাম কই আমি!'


এক্সরে-র ব্যবস্থা না থাকায় পাঠিয়েছিলো অন্যখানে। ওখানে গিয়ে আরও ক্যাচালের শামিল। প্লাস্টিক চেহারার এক ললনা এসে আমাকে আধা-অন্ধকার ঘরে যে কি করলো কতোক্ষণ। ছিঃছিঃ, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায় এগুলা বলতে।


কালকে ছিলো ডাক্তারের কাছে ফিরতি অ্যাপয়েন্টমেন্ট। কৃতকর্মের ফলাফল জানানোর। আমাকে সামনে রেখে ডাক্তার বাবু এই ফাইল ঘাঁটেন, ঐ ফাইল ঘাঁটেন, খানিক কম্প্যুটারে উঁকি মারেন, কতোক্ষণ থুতনী খাউজান, আমার দিকে যখনই দেখেন আমি দাঁত বের করে একটা অসহায় গ্লুকোজ হাসি দিয়ে দেই। বেচারা খানিক্ষণ ঘটনাগুলোর লুপ চালিয়ে হঠাৎই 'গো-টু' কমান্ড ব্যবহার করে বসলেন। আমাকে বললেন, 'কোথাও তো কোন গ্যাঞ্জাম নেই। তাইলে সমস্যটা কি?'খানিক ইতং বিতং করে যেই বললেন সিগারেট ছাড়লে ভালো হয়। অমনি আমি তাকালাম বাঁকা চোখে। নেহায়েৎ ভদ্রলোক তিনি, নিজেকে শুধরে নিলেন, 'না না আমি বলেছি রিডিউস করতে, ছাড়তে না!'


কানের পরে একগাঁদা উপদেশের বানী নিয়ে রিসেপশনের পুতুল পুতুল মুখ গুলোকে পুনরায় দেখা হবার আশ্বাস জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। অনেক হলো, এবার কেছকি মাছ খাওয়ার প্রজেক্ট হাতে নেবার বাসনা পোষন করলাম।


পরিকল্পনা মোতাবেক মৎস কেনা হলো এবং রন্ধিত হলো। মোবাইলটা তখন হাতের কাছে না থাকায় রন্ধনপ্রণালীর সচিত্র বর্ণনা করা গেলো না। সেটা তোলা থাকলো খাদকায়তনের কম্পিটিশনে এবং পরবর্তী বারের জন্য।

ভক্ষণের অপেক্ষায় কেছকি

কোলেস্টেরল বাড়ুক আর না বাড়ুক, গরু খাওয়া আপাতত বন্ধ। এই ক'দিন মৎসের উপর দিয়ে চালাবো কীর্তন। পরিশেষে জয় মা শাকসব্জি! ততোদিন পর্যন্ত খানিকটা মাংশাসী হয়েই থাকি না হয়!

No comments: