Saturday, January 20, 2007

বিশেষ প্রতিবেদন : আমি তাকে কাছ থেকে দেখেছি

শেষ পর্যন্ত আমি তারে কাছ থেকে দেখেছি। তার স্পর্শ না পেলেও তার গায়ের গন্ধ আমার নাকে লেগেছে। আমাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে গেছে সে সন্তর্পণে। আমাকে সে যারপরনাই করেছে শিহরিত, আহ্লাদিত, চমকিত, পুলকিত, বঞ্চিত!

সবাই যেখানে তাকে নিয়ে মাতামাতি করছে, তখন আমার ভাগ্যে সে চলে এলো অপ্রত্যাশিত ভাবেই। আমি বাজি ধরেই বলতে পারি, আমি উহাকে যেরূপে পাইয়াছিলাম, সেইরূপে অন্য কেহই তাহাকে উপলব্ধি করিতে পারে নাই। ভাবছিলাম তার উষä পরশের ছুঁয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটুকু নিজের মধ্যেই রেখে দিবো, দেবো না কভু তারে অন্যের তরে বহিতে - কিন্ত বাঁধ সাধলো যে এখানে...!

সকালে খালাতো ভাইয়ের ফোন পাই। এই খবর সেই খবরের মাঝেও সে খবরটা ঠিকই দিয়ে দেয়, “আজ তো সে আসছে তোর ওখানে“। ভাব করি যেনো কিছুই হয়নি, কিন্ত ভেতরে একটা উত্তেজনা কাজ করতে থাকে চেপে থেকে। একটা সময় চিপায় পড়ে ভুলেও যাই তার কথা, তার আসার কথা, তার চলার কথা। তার সাথে “হতে পারে দেখা“ টাইপের সম্ভাবিলিটির কথাও।

দৌড়ে ইশটিশানের সাদা রঙের রেলগাড়িটাতে চড়ে বসি। যাচ্ছি আর ভাবছি- বয়ে যাওয়া সময়ের কথা, ঢুলু ঢুলু চোখে কাটানো নির্ঘুম রাতের কথা, জানালার কাঁচে বৃষ্টির ঝটকা...। হঠাৎ মনে হলো সে আসছে, তার নুপূরের সুর যেনো কানে ভেসে এলো আমার। তার চুড়ির শব্দ আমার কানে রিমঝিম রিমঝিম ঝঙ্কার তুলে যাচ্ছে যেনো।

নিজের মাথায় আলতো করে টোকা দিয়ে সম্বিত ফিরে পাই, ধুর, কী ভাবি এইসব? দুইরাত না ঘুম আর আসতে চাওয়া জ্বরের আগমনী বার্তায় গিঁঠে গিঁঠে ব্যাথাকে বাহবা দেই এই ভাবালুতার জন্য। কিন্ত তারপরেও সে আসছে, অন্য সবাই বুঝতে পারছে কিনা কে জানে, আমি পারছি...।

হঠাৎ এ্যানাউন্সমেন্ট, “... ভিয়ার বিটেন ইয়ার এন্টশুলডিগুং“। বসে রইলাম ঠাঁয়। একটু পর আবার চলতে শুরু করলো ঝাঁকি দিয়ে, কিন্ত সে আসছে, এখনো আসছে, শুধু বুঝতে পারছি না কোন দিক থেকে - সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডাইনে নাকি বায় থেকে?

হঠাৎ কোন এক অজানা জায়গায় নামিয়ে দিলো আমাদের। ওমা, জীবনেও কাস্ট্রপ রাক্সাওয়ের নাম শুনিনি। এ ক্যামন জায়গা রে বাবা? মুখে কুলুপ আঁটা আমি অন্য সবার সাথে নেমে আসি। একবার মনেহয় এই ভর সন্ধ্যে বেলাম ডাকাতি হবে নাতো আবার? ছি: ছি: জার্মান, তোমরা এতো খারাপ? এক বাঙালরে একলা পাইয়া ডেকাতি করবা? পারলে দলবল সহ ধইরো! কিন্ত ঘটনা হলো আমি তো একলা না, সাথে আরো প্রায় মোর দ্যান আধা শতক কর্ম ফেরত পাবলিক।

কাস্ট্রপ রাক্সাওয়ের বাইরের স্কয়ারে এসে দাড়াই...। মনে মনে একটা বিড়ি ফুঁকার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করছি, এমনই সময়... হ্যা ঠিক এমনই সময় ঘটলো তার সাথে আমার প্রবল সাক্ষাত, একটা জোড় ধাক্কা!

আরেকটু হলেই পড়ে যেতাম, কোন রকমে সামনে নিয়ে উলটা দিকে দৌড়। যতোক্ষণ না নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছেছি ততোক্ষণ আর পিছন ফিরে তাকাইনি। এরই মধ্যে উদগ্রীব ভাই আর কয়েকজনের মুঠো ফোনে পালস আসা শুরু করেছে। সারা দেশে তার আগমনের কারণে ট্রেইন চলাচল বন্ধ!

হ্যাঁ ভাইসব আমি “তার“ কথাই বলছি। কালকে সন্ধ্যায় তান্ডব চালানো সেই টর্নেডোটি। যার আঘাতে কিনা কেবল জার্মানীতেই মারা গেছে ১১ জন। ধংস হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, স্খাপনা।.... .... ...।

আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। শইলডা ভালা না। দূব্বল পাইতাছি না...

No comments: