Wednesday, January 24, 2007

নাগরিক হালচাল : অরণ্যের আহবান

নগরে নগরে ঘুরেও নিজের মধ্যে নগরায়ণ ঘটাতে ব্যর্থ আমি। আমাকে পল্লী বাংলার পলি মাটির মায়াবী আদরে সিক্ত পললের বুক চিড়ে উঠে আসা মাঠভর্তি সবুজ ধানের চারা এখনো হাতছানি দেয়। বাতাস যেনো কানে কানে ফিসফিস করে বলে যায়, 'ছুঁড়ে ফেল এই কৃত্রিম সভ্যতা, আমি তোকে তোর অরণ্য ফিরিয়ে দেবো'। এক মাঠ ভরা সর্ষে ক্ষেত, হলুদ ফুলের সমাহার, কাঁধে পাকা ধানের ঝাঁপি বয়ে নিয়ে যাওয়া চুক্তি ভিত্তিক কৃষি-শ্রমিক, মেঠো পথে হৈ হৈ করে দৌড়ে যাওয়া একদল উচ্ছবল কিশোরের উল্লাস, গাঁয়ের ঠিক ঢোকার পথে মোড়ের দোকানটার বাঁশের বেঞ্চিতে পা তুলে বসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে তৃপ্তির চুমুক - সবই ফিরে পেতে ইচ্ছে জাগে, সব...।

ইচ্ছে জাগে, কনকনে শীতের সকালে আরিচা ঘাট থেকে পেট ভরে খেজুর রস খেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাসে ঢুকে গায়ে চাদরটা জড়িয়ে খানিক ঘুমিয়ে নিতে। ইচ্ছে জাগে ওয়ার্ণার ব্রাদার্স থেকে কেনা 'লুনী টুনস' এর ছবি আঁকা সাদা টি-শার্ট টা গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ি কোন এক গোধূলি বেলায়। আলতা পায়ে, এক প্যাঁচের তাঁতের শাড়ি পড়া কোন তরুণীর ফিতা বাঁধা বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে চলে যাওয়া দেখি চোখ ভরে। ইচ্ছে জাগে সন্ধ্যার ক্ষণে পুকুর পাড়টায় বসি, সেই কৃষäচূড়া গাছটার নিচে। সকালে উঠে রাস্তার ধারের দূর্বায় জমে থাকা শিশির কণার স্পর্শে ঠান্ডায় 'ফেটে যাওয়া' ভাব নিয়ে উদ্দেশ্যহীন পথচলা কতদিন হয় না।

নাগরিক জীবন, নগরে বসবাস, নিজেকে উত্তরাধুনিক রূপে উপস্খাপন করার প্রয়াস - সব মেকি হয়ে যায় একটা সময়। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে, মজ্জা কাঁপানো শীতে গৃহ-উত্তাপক যন্ত্রের প্রভাবে উষä ঘরে ফিরতে মন সায় দেয় না। থেকে থেকে মন এই নাগরিক সভ্যতা ছেড়ে কেবলই চায় চলে যেতে সেই অরণ্যে, যেখানে প্রজাপতির ডানায় ভর করে আসে পলাতক জোছনার বন্যা। সেই জোছনায় হারিয়ে যেতে চায় মন। পাথরের স্কয়ারে বসে বাজানো বেথোফেনের সপ্তম সিম্ফনীর চাইতে মহুয়ার গন্ধে মাতাল করা আকাশের নিচে আলতা রঙের পদ্ম ফুলের পুকুরের ধারে বসে সাঁওতাল রাতের হাওয়ায় ভাসানো কোন বাশী বাদকের সুর শুনতে বড়ই ইচ্ছে জাগে আমার।

No comments: