Saturday, May 05, 2007

ললনাদুর্ঘট : গল্পের শুরু

মেজারের বিলা হওয়ার রেট জ্যামিতিক হারে বাড়তাছে, যেকোন মূহুর্তে উষ্ণ পারদ ঠাশ কইরা গিয়া ব্রক্ষ্মতালুতে হিট করতে পারে।

কইতাছিলাম হল্যাণ্ডের সেই ললনারে বিদায় দেয়ার সময়টার কথা। ট্যাঁওট্যাঁও শব্দে আইসিই ট্রেইনের দরজা বন্ধ হওয়ার সময়টার কথা! দরজা লাইগা গেলো, কাঁচের ঐপাড় থেকে দেখলাম তখনো খাড়ায়া আছে। চোখে প্রশ্ন, মাগার উত্তর কই? হাত নাইড়া বিদায় নিলাম, ট্রেইনও আস্তে আস্তে সাপের মতো মোচড়াইতে মোচড়াইতে কোলনের ডয়চেব্রুকের ওপর দিয়া হাঁটা দিলো, আর কাঁটাপাতলা দিলাম সামনে আগাইয়া ডোমের নিচ দিয়া।

মিউজিয়াম লুডভিগের এইখানে রেলিঙের উইঠা পা দোলাইয়া বইসা কতোক্ষণ মনের আনন্দে বাংলা গান গাইলাম। খুব যে খারাপ গাইছি তার প্রমাণ হইলো, গান গাইলাম অথচ কোন হালায়ই পয়সা টয়সা দিলো না। অবশ্য এমন চিপায় দেয়ারও কথা না। যাইহোক, আমার গানের প্রতিভা মোটামুটি মাঠেই মারা গেলো এই যাত্রায়। হাতের মোবাইলটা বাইর করলাম কি মনে কইরা!

"সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে,লোহার ঐ ব্রীজটা তোমার ভারে ভাইঙা না পড়লে তুমি এখন ডুসেলডর্ফ ছাড়াইছো। ঘরযাত্রা শুভ হোক তোমার"! সেণ্ড করে দিলাম ০০৩১৬...
সাথে সাথেই রিপ্লাই, "মোবাইলটা হাতেই আছিলো। ভাবতেছিলাম তুমি শর্ট ম্যাসেজ করবা। আমি খুব খুশী হইছি। তুমি কি করো"!

একই জায়গায়, একইভাবে বইসা কতোক্ষণ ম্যাসেজ ম্যাসেজ খেললাম। এখন এগুলা লেখতে গেলে পাঠক কইবেন আমি শিমুলের ছাদের কাউয়া খেদানের ধান্ধায় নামছি। থাকুক, কইয়া কাম নাই। আমি রেলিং থেকে নাইমা হাঁটা দিলাম নয়মার্কটের দিকে। পেটের ভেতরে ততক্ষণে বিলাই টম, ইন্দুর জেরীরে সমানে দৌড়াইতাছে!

তার বেশ অনেকদিন পর, হঠাত ফোন কল। হল্যাণ্ড থেকে আবার ক্যাডা ফোনায় আমারে? ধরলাম, হ্যালো কইতেই শুনি সেই চিবানি ইংরেজীতে জিগায়, "আছো কেমন"? জরুরী ভিত্তিতে ইমেইল ঠিকানা নিলো। একটু পরে মেইল চেক কইরাই দেখি কয়েক লাইনের একটা চিঠি। "আমি মনেহয় খুব শীঘ্রই জার্মানীতে আসতেছি"। ভালো তো, আসলে আসো, দেখা হইলে হবে। রিপ্লাইও করলাম এই-সেই, ইনিয়ে-বিনিয়ে।

কয়েকদিন পরে জানাইলো 'পরশুদিন' আসতেছে, সকালের ট্রেইনে। সকাল মানে সকাল সাড়ে দশটায় কোলনে নামবো। লে হালুয়া, আমার অবস্থা টাইট। এমনিতেই পুঁজিবাদীরা আমারে সহ্য করতে পারে না, তারওপর কামলায় ঢোকার আগেই যদি বাং মারি তাইলে উল্টা পোঙা নিজেরই যাইবো। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গেলাম স্টেশনে। ঠাণ্ডায় সব জইমা আছে, আমি খালি ঘামতাছি। বাইরে না, ভিতরে ভিতরে। শালার ট্রেইন ও আইজকাই লেইট করতে হইলো। আসে না আসে না... খাড়াইয়া আছিতো আছিই।

সাপের মতো মোচড়াইয়া ট্রেইনটা অবশেষে প্লাটফরমে ঢুকলো। থামলে পরে প্যাটপ্যাট শব্দে দরজা খুলতে থাকলো। আমি তখন ভাবলাম, মাস খানেক আগে দেখা হইছে, তাও খুব বেশী সময়ের জন্য না। চিনতে পারুম তো!

লোকজন নামতে শুরু করলো, আমার অবস্থা তখন চরমে। সবাইরেই মনে হয় চিনি। সেইরম অবস্থা একেবারে, ঘামছিও মনেহয় একটু আধটু - এমন অবস্থা হইলে আমি অনেক পরিচিত মানুষও চিনতে পারি না। মনে ভয় ঢুইকা গেলো, যদি চিনতে না পারি তাইলে কি হইবো!

No comments: