Saturday, December 29, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ১২

ডরোথীন স্ট্রাসের ইট বিছানো রাস্তায় চৌচক্রযানের ঘরঘর শব্দ কর্ণিকাগুহ্য ভেদে মস্তিষ্কে অবস্থান জানান দেয়। মুহূর্তেই দৃশ্যপট পালটে চলে যায় মেলবোর্ণ। জেনকিন্স স্ট্রীটের পরিচিত শব্দ, নিমেষেই স্থান-কাল-অবস্থানের প্রাচীর দুমরে ফেলে। চোখের পলকে রাস্তাটা বদলে হয়ে যায় রেইলওয়ে প্যারেড। স্টেশনের পাশের বাড়ি থেকে ধুমধাম কানে আসে। মনোযোগে শুনলে ভ্রম হয় নিজের বলে। এক পশলা ঠান্ডা বাতাস কনকনিয়ে নাসিকা-কর্ণ বিদীর্ণ করে। ভাবনার পাখা, মেলার বিপরীতে চুপসে ঢেসে যায় কোটরে। চরিত্রগুলো মুষলধারে এগিয়ে আসতে থাকে অনবরত কথোপকথন চালানোর নিমিত্তে। পা, তার চলার নির্দেশ পেয়ে যায় আগেই। আনমনো হাত পকেট হাতড়ে হলুদখামের যন্ত্র তুলে আনে। নিঃস্তব্ধতায় ইন্দ্রিয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যেনো। সময় গুলো তাহলে কেটেই যাচ্ছে বেশ, উইদাউট দিস !ওএফইউ!

Tuesday, December 25, 2007

হ্যাপী থ্যাংক্স গিভিং...

ঘুমাতে গেছি সকালে। কয়েকদফা বিঘ্নের পরেও অবিরাম ঘুমেই পাই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে খাঁটি বাংলায় ভেতরে আসার জন্য বলি। কেউ আসে না, খানিক বাদে আবার ঠকঠক। আবারো আসতে বলি। বার তিনেক খটখটানোর পর উষ্কোখুষ্কো চুল, রুই মাছের মতো ফোলা চোখ নিয়ে টলতে টলতে দরজা খুলে দেখি ইয়ান। আকর্ণ হাসিতে জিজ্ঞেস করলো আমি তার সঙ্গে খাবো কিনা! আমাকে ঘুম তখনো ছাড়েনি, চোখে হয়তো কোনাখামচিতে কোথাও 'কেতুর' ও লেগে ছিলো, গায়ে নিশ্চই ঘুমের ভকভক গন্ধ! এই অবস্থায় কেমনে একজনের দাওয়াত রক্ষা করি ঢুলুঢুলু মাথা সে সাড়া দিলো না। সরাসরি 'না' করলে কেমন শোনায়, কিন্তু অন্যকোন শব্দ খুঁজে না পেয়ে তা দিয়েই চালিয়ে দিলাম সাথে বারকয়েক ঘুমন্ত ধন্যবাদ সহযোগে। বেচারা 'অ, তুমি বোধহয় ঘুমাচ্ছিলে' বলে হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমিও আবার বিছানায় কাত হয়ে গেলাম।

স্বপ্নদেবীর ক্রোড়ে কয়েক পশলা কাবাডি খেলে কিঞ্চিৎ পরে টেডির ন্যায় রেডী হয়ে বের হবার পথে কিচেনে 'চুপি' দিয়ে দেখি ইয়ান তার মায়ের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল। হাইলিগার আবেন্ড কে সামনে রেখে পরিবারের সবাই একসাথে ২৪ তারিখ রাতে ডিনার করে, সবাই সবাইকে উপহার দেয়। এই রীতিতেই ইয়ানের মা টুবিংগেন থেকে এসেছেন ছেলেকে নিয়ে যেতে। জিজ্ঞেস করলাম, খাওয়া শ্যাষ? মাথায় এবং মুখে পজিটিভ সম্মতি দিতেই বললাম অসুবিধা নেই পরে কখনো ঘটা করে রক্ষা করা যাবে তোমার দাওয়াত। ফিরতি প্রশ্ন আমার, ফিরছো কবে? জানুয়ারীর ৭ তারিখ ।আমি এতোটা দেরী আশা করিনি। মনটা দমে গেলো। আমার কি 'না' করাটা ঠিক হলো তখন!

বড়দিনের শুভেচ্ছার সঙ্গে নতুন বছরের বাড়তি শুভকামনাটুকু যোগ করতে হলো। মা-ছেলেতে হাসি মুখেই বিদেয় দিয়ে সঁপে দিলো আমাকে হাঁড় কাঁপানো 'ফ্রস্ট'-র ডিসেম্বরের বিকেলে। বাসের জন্য অপেক্ষার সময় দেখলাম একটা পিচ্চি একা একা ইনলাইনারে করে যাচ্ছে। টুকটুক করে হেঁটে যাচ্ছে, ভালো করে চলতে পারে না। বেচারা রাস্তা পার হতে গিয়ে ধপাশ করে পড়েই গেলো। ভাগ্য ভালো তখন কোন গাড়ি চলে আসেনি আচমকা। যতোক্ষণ দেখা গেলো তাকিয়ে থাকলাম পিচ্চিটির দিকে। একসময় সে আড়াল হলো আমারও বাস এলে উঠে পড়লাম টুক করে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে চোখ পড়লো সামনে, আমারি দিকে মুখ করে থাকা এক ললনা যাত্রীর দিকে। হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ, কাঁধে বিশাল 'পিঠবস্তা', হাইলিগার আবেন্ডের আগের দিন এমন দৃশ্য খুবই সাধারন। মেয়েটি কথা বলছিলো ফোনে, হাসছিলো। আমি দেখছিলাম ফিরে ফিরে। এতো নিরেট সুন্দর মানুষ হয় কী করে! 'বিধাতা তার সবকিছু গড়িয়াছেন অতীব যতনে'। সেন্ট্রালে এসে সে গেলো স্টেশনের দিকে আর আমি চলে গেলাম জেমস ব্লান্টকে স্মরণ করে।

রাতে ঘরে ফিরে কতোক্ষণ মি. বিন দেখলাম। হট শটস - পার্ট ডুয়েক্স দেখে দু'ভাই ঠাঠা করে হাসলাম। লবন ছাড়া খিচুড়ি ভক্ষণ করলাম 'বয়দাভাজিপেয়াজা' (*) সহযোগে। হিরোস সেকেন্ড সীজনের কয়েকটা এপিসোড দেখলাম, তারপর একসময় পুট করে নিদ্রাদেবীর আঁচলে মাথা মুড়িয়ে ফেললাম।

হাইলিগার আবেন্ডের দিন থেকেই শুরু হয় বিষণ্ণতার আনাগোণা। ৫ টার মধ্যে সব কিছু বন্ধ। রাস্তায় কুকিলটিও থাকে না। ক্রিসমাস মার্কেটের পসরা উঠে গেছে আগেই। কেমন কার্ফিউ কার্ফিউ অবস্থা। ঘুরতে বেরিয়েও ৬টার মধ্যে ঘরে ফিরতে হলো। ফিরেই চাগার দিয়ে ওঠা ক্ষুধার অণলে স্বরচিত বার্গার খেলাম। তারপর বিছানার সনে যৎসামান্য অভিসারের পর লেগে গেলাম বিরিয়ানী (**) প্রস্তুতকরনে। মাঝখানে টিভিরুমে গিয়ে দু'টা সিনেমা আর আধা প্যাকেট মার্লবোরো মেরে দিলাম। এবারে কাঁচা শশা, পাকা টমাটো আর মদনের দোকানের ঝাল আধা কাঁচা মরিচের সমন্বয়ে পেট ভরাট করলাম রসনার সন্তুষ্টি সাপেক্ষে। ইউটিউবে খুঁজে উত্তম-সুচিত্রার প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তুর দেখে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে এখন ইফ টুমরো নেভার কামস শুনে নিজেকে তালে ফেরানোর চেষ্টা করছি।

ক্যালেন্ডার থেকে চলে যাচ্ছে আরেকটা বছর। কতো কিছু দাগাদাগি করা ছিলো এবছরে। খুব জোরে পিছনে রিউইন্ড করে গেলে কোথায় কিছু ঠেকে না, কারণ অনেক দাগাদাগির পরেও বছরটা মসৃণই রয়ে গেছে, সম্পাদিত হয়নি কিছুই। বছরের শেষের দিকে এসে অন্তত ভালো কিছু শুনবো, সে আশারও গুঁড়ে বালি দিলো কতিপয় বরেণ্য। হাজার বছরের পুরনো নিদর্শন গুলি নাকি খোয়া গেছে কেমনে কেমনে। যতো পদের পদি এসেই গদিতে বসুক আর তত্ত্বাবধানের নামে আমাদের রক্ষা করার অঙ্গীকার নিক, যেই হেই সেই হেই। বাঙালের তাল এতো সহজে ঠিক হওয়ার নয় চান্দু!

সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। হ্যাপী থ্যাক্সস গিভিং।

---------------------------------------------

* - আমার এই মেন্যুটা খাদকায়তনে কমপিট করার যোগ্যতা রাখে। পাবলিক খায়া বাম হাতের কাইড়া আঙুলের নখ শুধ্যা চাটবো, আই প্রমিজ।
** - এইটা নিয়ে আমার নিজেরই কিঞ্চিৎ সন্দেহ আছে। এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়া মজাই হইছে, মাগার পরের বার রানলে পাবলিক খায়া মাইর দিবো না চুমা, সেইটা এখনি কওন যাইতাছে না।

Wednesday, December 12, 2007

দিন যায় দিন... রাত আসে রাত

অবশেষে গেলাম। তার আগে অনেক জল্পনা-কল্পনা, কোথায় গেলে পাবো তারে। কত খুঁজলাম রাস্তার সাইনবোর্ডে, পিলাপাতায়, পেলাম না।অবশেষে অবস্থার বেগতিকে অনেকটা বাধ্য হয়েই গেলাম গালিভার সাইজের এক ব্যাটার কাছে কোন মহিলা ডাক্তার না পেয়ে। মনে কতো আশা ছিলো এট্টু টাংকি টুংকি মারবো! কপালে সইলো না। অবশ্য মহিলা ডাক্তারের অনুপস্থিতি পুষিয়ে দিলো ডাক্তার হাইশ-এর রিসেপশনের দুই ললনা।

স্পেসিমেন রেখে বিদেয় করে দিলো ৯ দিন পরে নতুন এক অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে। বেখেয়াল হলেও এইসব ব্যাপার মারাত্মক যতনে মাথায় রাখি আমি। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট করলাম মিস। কারণ তেমন জটিল কিছুই না। হার্টের কথা না শুনে মাইন্ডের ফিসফিসানিতে কান দিলাম। হার্ট বলছিলো যাওয়া উচিৎ, কিন্তু মাইন্ড বলে ধুর ব্যাটা ঘুমা চুপ কইরা! আমি আর কী করি, গেলাম আবার ঘুমাইয়া। পরেরদিন বিকেলে মুখটা যৎসামান্য কাচুমাচু করে ডাক্তারের ললনা রিসেপসনিস্টের লিফটগোড়ায় আবার আমি। আমাকে দেখেই হাউকাউ করে উঠলো বেচারী। তোমার লাইগ্যা ডাক্ঠার হাইশ পুরা আধা ঘন্টা বইসা থাইকা বেঁহুশ হইয়া গেছে। এই বেচারীরে আর হার্ট মাইন্ডের খপ্পরে ফেলে হার্ট করতে ইচ্ছে করলো না। বরং বললাম, আমি ইট্টু ডাক্তার সাবের কাছে যাই? বললো দাঁড়াও জিজ্ঞাসি লই আগে। আমি সেই অধমপাপী সাক্ষাতপ্রার্থী শুনে ডাক্তার সাফ মুখে জবাব দিয়ে দিলো, মুখ দেখতে চাইনা আমি ঐ পাপিষ্ঠের!

মুখ ভোঁতা করে আমি ডিসেম্বরের গুদগুদি বৃষ্টিপড়া সন্ধ্যার মুহূর্তে আলো ঝলমলে শহরের রাস্তায়। হাঁটছি আর ভাবছি মনখারাপ ভাবটা কাটাতে হলে কিছু একটা করতে হবে শীঘ্রই। অন্যসময় হলে চে'গেভারাতে গিয়ে দুপাত্র ফরাসী মেরলো অথবা রিসলিং কিম্বা ব্যাকার্ডি-স্প্রাইট মেরে দিয়ে ধ্যুম হয়ে মাধুরীর সাথে দিল ধাক ধাক কারনে লাগা নাচ শুরু করে দিতাম। সেটা হওয়ারও কোন চান্স এখন নেই। পাগলা পানির সাথে কিঞ্চিৎ মনকষাকষি পর্ব চলছে এখন যদিও তথাপি ইদানিং মনে বড়ই সাধ হয় একটু চেখে দেখি না বরং আগের মতোই রবি শংকর ইউরেনাসে বসে ভেনাসের কাঁধে তাঁর সেঁতার রেখে তাতে ফ্লোরাবশীকরণ সুর বাজায় কিনা! এমনি আবঝাব ভাবতে ভাবতে, চোখ ডলতে ডলতে, পথ চলতে চলতে দেখি একটা গাড়ি এসে থামলো একেবারে ঠিক রাস্তার পাশে, আমার অদূরে। চালক ক্ষণিকায় বিশাল বপু তরুনী। গাড়িটার পশ্চাতদেশ রাস্তার ওপর রেখে গ্রীবা ফুটপাথের সঙ্গে খানিক ঘষাঘষি করে শেষতক নেমে পড়ে হাঁটা দিলো অন্যদিকে। শিকার পেয়ে আর দেরী করে কোন হালায়! পরনের কালো জ্যাকেটটা টেনেটুনে ঠিক করে, তার পকেট থেকে একটা কলম বের করে হাতের কালো প্যাকেটটাকে এমনভাবে রাখলাম যেনো মনে হয় কোন মেশিন। গাড়ির কাছে গিয়ে একবার সামনে দাঁড়াই, পরক্ষণেই ঘুরে পেছনে যাই, পার্কিং দাগ দেখি গভীর মনোযোগে, দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে কি জানি ভাবি তারপর কাগজে কিছু লেখার জন্য যেইনা কলম হাতে ভাব নিচ্ছি অমনি বৃহদাকায় ললনা দৌড়ে এসে নিতান্ত কাতর অনুরোধ পরায়ন, বিশ্বাস করেন আমি এই মাত্র গাড়িটা এইখানে রাখছি।
খুব ইমার্জেন্সী দরকার ছিলো।

আমি নিরুত্তর, নিশ্চুপ, অচল এবং অটল।

ললনা কাঁদু কাঁদু। আধা মিনিটও হয় নাই আমি এখানে আসছি। আমি এখন থেকে আর এভাবে পার্ক করবো না! বিটে বিটে বিটে!!!

চান্স পাইলেই মানুষরে গুঁতাই। কখনো উল্টা গুঁতা খেয়ে ঠান্ডা হয়ে থাকি। তবে বেশিরভাগই গুঁতানোর ডান্ডা অপরপক্ষের দিকেই তাক করা থাকে।
উদাসী মন খানিকটা দাস হলো এই ঘটনার পরে। আরও আনন্দের ব্যাপার হলো ডাক্তার হাইশ-এর রিসেপশনিস্ট ফোন করলো নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে। এবছর কোন ফাঁকা জায়গা নেই আমাকে ফিট করার। আর্লিয়েস্ট ২ জানুয়ারী, আগামী বছর। প্রত্যুষ পৌনে অষ্ট ঘটিকা। আমি জানি এটা ঐ ব্যাটা গালিভারের বদমাশী। ব্যাটা দেখেশুনেবুঝে, ইচ্ছে করেই আমাকে ঐরকম একটা খাইষ্টা টাইমিঙের মধ্যে ফেলছে। ফোন ছাড়ার আগে রিসেপশনিস্ট ললনা কয়েক হালি বার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলো এবার যেনো মিস না করি, তাইলে ঘটনা বিশাল প্যাঁচ খাইবে।আমি কেমনে বুঝাই আমি হার্ট-মাইন্ডের এক চিড়ারমিলে গোবদা গোবদা ধানের মতো চিপা খেয়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। তবে শালা গালিভাররে একটা শিক্ষা দিতে হবে, এটা নোট করে রাখলাম টু-ডু-লিস্টে।

এক পরিচিত ট্রাভেল এজেন্টের কাছে দুইদিন ধর্ণা দিয়া তার করুনার ঝর্ণায় পানিটি বর্ষণ করাতে পারলাম না। 'টিকেট নাই'। এসটিএ ট্রাভেলসে গেলাম। বলে, ডিসেম্বর! ভুইলা যাও!! জানুয়ারীতে পাইবা তাও দাম পড়বো ৯১৩ টেকা, একদাম!!মনটা আবার রাজা মার্কা বেলুনের মতো ছ্যাঁদা হয়ে চুপশে চটচটে হয়ে গেলো। চুপসানো মন ফর্মে আনতে কি কি করলাম এই ক'দিন! তার একটা বিশাল ফিরিস্তি দেয়া যায়। কিন্তু তারও আগে মনেহয় এখন প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত ঘুমেরে। আমার এখন গভীর ঘুমে স্বপ্নাচেতন হয়ে মাধুরীর সঙ্গে দুষ্টু দুষ্টু গল্পে মশগুল থাকার কথা। তো না ঘুমিয়ে আমি এখন ব্লগাচ্ছি কেনো?

Wednesday, December 05, 2007

আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমে

সাগরিকা দেখার পর থেকেই ধাক্কা খেয়ে প্রেমে পড়ার নেশা পেয়ে বসে। সেই স্কুলবয়সী আমি থেকে আজকের আমি, এখনো সেই ধাক্কার অপেক্ষা আমার। আমি জানি, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্তও এই ধাক্কার অপেক্ষায় থাকা হবে আমার। জীবদ্দশায় দরোজা খুলে কিংবা দেয়ালের ওপাশ থেকে ছুটে আসা সাগরিকার মতো টানাটানা কাজল চোখের কারো সাথে আচমকা ঢুঁশ লাগবে না। মিষ্টি হাসি দিয়ে কেউ আর আমাকে তার পরশে সিক্ত করতে পারবে না। লাশকাটা ঘরে আমার বুক চিরলেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা কৈশোরের সেই গোলগাল মায়াবী মুখের কিশোরিটিকে। যাকে মনে করে 'সব ভালো গান' শোনা হতো তখন। হিম বৃষ্টির ঝমঝম ধ্বনিকে মনে হতো তার রিনিকঝিনিক নূপুরের শব্দ। মগ্ন হয়ে রইতাম এমন কি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকেও। একসময় পরিবর্তন এলো মনে। এক চোখে প্রেমে পড়ার তুমুল প্রত্যাশা নিয়ে আরেক চোখে উঠে এলো সমাজ বদলের স্বপ্ন। ইঁচড়ে বয়সে হাতে উঠে গেলো জন ডানের কবিতার বইয়ের পাশাপাশি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর জীবনী। হাভানা সিগার চোখে গেভারার পোস্টারের দিকে চোখ, কানে বেজেছে ভূপেনের আমি ভালোবাসি মানুষকে।

লতার একটা গানের ব্যাপারে আসি। গানটায় বারবার ফিরে আসে কৈশোরের মায়া মুখের সেই কিশোরিটি। আমার সঙ্গে খুনসুটি করে, লুকোচুরি খেলে স্মৃতির ঘুলঘুলিয়ায়। খানিক থেমে কাজল দেয়া ডাগর চোখ দুটো মেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি আদৌ প্রেমে পড়েছি কীনা!

আমি তার দিকে মুচকী হাসি দেই, আমার কখনোই সাগরিকার সাথে ধাক্কা খাওয়া হলো না, আমার কখনোই এতো শখের প্রেমে পড়া হলো না। আমার কানের পরে বহুবছর পর আবার লতা, সেই ঝিমমূখর বৃষ্টি, সেই দিনগুলির ঘ্রাণ!

Sunday, December 02, 2007

স্বপ্ন, যাও তোমাদের ছুটি দিলাম

স্বপ্নরা সবসময়ই আমায় ঘিরে থাকে। লাল, নীল, বেগুনী, আর গোলাপী স্বপ্নেরা আমায় ছুঁয়ে থাকে সারাক্ষণ। আমি কাবাডি খেলি, গোল্লা খেলি, ফুটবল-ক্রিকেট সবই খেলি সেসব স্বপ্নের সঙ্গে। রাগ করি, অভিমান করি, মুখ ভার করে বসে থাকি। স্বপ্নেরা তখন দল বেঁধে এসে আমার ঘরের দাওয়ায় ভিড় করে। প্রতি বর্গইঞ্চি জায়গা নিজের বলে দাবী করে, আমার উঠোন হয় স্বপ্নপুর। আর আমি আনন্দিত হয়ে যেই ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ডাকি- অমনি পালিয়ে যায় সব। আমার মন খারাপ হয়, অভিমান হয়- "সব নিজের বলে নিতে চাও, অথচ ঘরে ঢুকতে দ্বিধা করো!"

স্বপ্নের সঙ্গে আঁড়ি নেই আমি। স্বপ্নেরা মুখ ভোঁতা করে এসে ফিরে যায় বারবার। আমি চুপটি করে পাশ ফিরে থাকি। আমি আর তোমাদের সঙ্গে খেলবো না, আর তোমাদের সঙ্গে বেড়াবো না। আমি একা একা আকাশের নীল ছুঁয়ে আসবো, সবুজ ফড়িঙের ডানায় ভর করে উড়বো না আর তোমাদের সঙ্গী হয়ে। আমি ঘুমাবো, প্রকান্ড লম্বা একটা ঘুম। গালিভারের চাইতেও লম্বা, হাল্কের চাইতেও প্রশস্ত। সেখানেও আমি তোমাদের চাই না। তোমাদের সবার ছুটি দিয়ে দিলাম আজ।

Sunday, October 28, 2007

মুহাম্মদ, তুমি তো মস্ত বড় যাদুকর!

চৌদ্দশ বছর আগের সেই ঘটনা। যখন আবু লাহাব বা আবু জাহেলের দল মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলেছিলো যদি চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দেখাতে পারো তাহলে তোমার কথা মেনে নিব। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করবো। ঘটনাক্রমে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হলো কিন্তু সেই দল তখন তাদের পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনুগত্য তো স্বীকার করলোই না বরং হাসতে হাসতে বলে চলে গেলো, 'বাহ্ মুহাম্মদ, তুমি তো মস্তবড় যাদুকর'।

কনফুসিয়াসের প্ল্যানচেট আয়োজনের সঙ্গে সামান্য যোগ করি। প্রমাণ, দলিল এগুলো দেখিয়ে কি লাভ! যারা দেখতে চাওয়ার তারা চাইবেই। কিন্তু দলিল, প্রমাণ দেখিয়ে চোখে আঙুল তুলে সত্য বুঝানোর পরেও হাসতে হাসতে নিজের পথেই চলে যাবে তারা। নিজের গায়ে ইসলামের ট্যাগ লাগাবে ঠিকই কিন্তু কাজে কর্মে প্রমাণ দিবে আবু লাহাব এবং আবু জাহেলের উত্তরসূরী হিসেবেই।

ইতিহাস মরে না, বারে বারেই আবর্তিত হয়। আবু লাহাব রাও ফিরে ফিরে আসে, বার বার, হাজারবার। তাদের অভিশপ্ত আত্মাও আমাদের আশে পাশেই ঘুরঘুর করে। তাদের মনোবাসনা হলো, 'আমি বুঝুম না, আমারে বুঝাইবো কোন হালায়!'

Monday, October 15, 2007

আমার ছেলেবেলা - ডিলিটেড সিন!

আমি ভয়ানক রকম অতীতচারী। হুটহাট করে চলে যাই সময়ের উপত্যকা পেরিয়ে অতীতের বিভিন্ন সময়ের খানা-খন্দে। নাচি, গাই, উড়ে বেড়াই নিজের মতো করে সেসব জায়গায়। রি-কল করি, স্মৃতির মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই টিমটিমে আলোয় স্মরণ করি হারিয়ে যেতে বসা মুখগুলোকে।অনেক আগে থেকেই ভাবছিলাম নিজের ফেলে আসা ছেলেবেলা কে তুলে ধরবো। ডায়েরী লেখার অভ্যাস কোন কালেই ছিলো না। ব্লগিং প্লাটফরম মনের আবঝাব বের করার একটা উপায় বের করে দিলো।

কথায় বলে স্বভাব যায় না মলে। আমি অলওয়েজ লেইট লতিফ। এগারোতম বেলায় কাজ না করলে হয় না আমার। সেই জন্যই লেখা শুরু করেও থমকে ছিলো। মাঝখানে পড়লাম অসুখে। নাক-কান-গলা এক হয়ে সম্মিলিত বাঁশরী বাজানো শুরু করলো। কাশি শুনলে যক্ষ্না রুগীও ভয়ে দৌঁড়ে পালাবে। এই অবস্থায় লেখাটা কোন ভাবেই এগুচ্ছিলো না। ঠিক করলাম ঈদের দিন যেহেতু বইটা বের হবে, ঈদের দিন সকাল সকাল লেখাটা পাঠিয়ে দেবো নে বেগতিক ভাইয়ের তড়িৎ ডাকে। এতো সকালে তো আর বই দিবেন না উনি। ঈদের দিন, সেমাই-দই খাবেন, খেজুর খোরমা খাবেন, ভাবীর সঙ্গে একটু খুনসুটি করবেন তার পরে না সচলায়তন!ওমা কীসের কি! সারা রাত বসে লেখা শেষ করে সচলে ঢুকে দেখি, ব্যাটা বই অলরেডি বানিয়ে আপ করে বসে আছে।

বিরাস বদনে তাও দিলাম লেখাটা পাঠিয়ে। কিন্তু বাদ পড়ে গেলো কিছু সিন। পরে চিন্তা করে দেখলাম ভালোই হলো। লেখাগুলোকে ডিলিটেড সিন হিসেবে চালিয়ে যাবে

ডিলিটেড সিন এক.

এসএসসি পরীক্ষার আগে। টেস্টের পর আমাদের স্কুলে কোচিং হতো। ওল্ড টেন বলে আলাদা একটা ক্লাসই ছিলো ঐতিহ্য অনুযায়ী। আমি এজ ইয়্যুজুয়াল একদিন গেলে তিনদিন কামাই মারি। তখন স্কুলে যাবার ব্যাপারটা আমার কাছে সিসটেম লস মনে হতো আসলে। তার চাইতে খাল পাড় ধরে হাঁটা। ঐ পাড়ের মেয়েদের সঙ্গে টাংকি মারা, পাট ক্ষেটের আইলে বসে সারা বেলা গল্প করতে করতেই আমার সময় কেটে যায়, স্কুলে যাবার বেইল কই?
দুই তিনদিন বাদে স্কুলে গিয়ে দেখি আবহাওয়া থমথমে। আমার সবার সঙ্গেই বিশেষ খাতির। ফার্স্ট গার্লের সঙ্গে বিটলামির ব্যাপারটা স্কুলের মোটামুটি সবাই জানে। যে কারণে মেয়েদের সঙ্গেও মাঝে মাঝেই গপশপ হয় আরকি!সেদিন দেখি অবস্থা ভিন্ন। কোন মেয়ে ছেলেদের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। আমার মেয়ে ইয়ার-দোস্ত গুলাও ক্যামন পানসে হয়ে গেছে। পিছনে বসে এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি!

রুমা। আমাদের ব্যাচের সবচাইতে সুন্দরী না হলেও একটা দিকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। নাইনে থাকা কালীন কে জানি রুমাকে উদ্দেশ্য করে দেয়ালে "মিল্ক ভিটা" লিখে রেখছিলো খড়িমাটি দিয়ে।ঘটনার দিন কিছু বাবজুইট্টা (আমি কই না, লোকে কয়) পোলাপান পিছনে বসে বসে বুট খাচ্ছিলো রউফ স্যারের ইংরেজী ক্লাসে। রউফ স্যার হলেন মাটির মানুষ। ক্লাসে এসে হয় নিজে লিখবেন নয় সবাইকে দিয়ে লেখাবেন। কে, কোথায় হাউ কাউ করলো সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ করেন না। সেদিন তিনি লিখছিলেন। রুমা বিষণ্ণ বদনে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকাদের মতো বেঞ্চে উবু হয়ে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে ঝিমাচ্ছিলো। বুট খাওয়া পোলাপাইন গুলার চোখ চলে গেলো জায়গা মতো। একজন আরেকজনের সঙ্গে বাজী ধরলো, "কেডা সই করতে পারবো"!নিয়ম হলো, নিজের বইয়ের উপর বুট রেখে তারপর আঙুলে টোকা দিয়ে ফায়ার করতে হবে। সোবহানের দোকানের আলুপুরী বাজি।

শইপ্যা, হলো ত্যাঁদরের একশেষ। ও কইলো আমি পারুম। সুন্দর কইরা বুট তার বইয়ের উপর রেখে দিলো ইয়া জোরে এক টোক্টা। সঙ্গে সঙ্গেই ভীষণ জোরে "উহঃ" বলে রুমা জায়গামতো হাত দিয়ে চেপে ধরলো। হঠাৎ উহঃ শব্দে রউফ স্যার পেছন ফিরলেন। বাকীরাও।সবার দৃষ্টি রুমার দিকে, রুমার দৃষ্টি এদিকে। কিন্তু কে মেরেছে, কোথায় মেরেছে সেটা তো আর বলা যায় না। ও শুধু বললো, এদিক থেকে ছেলেরা বুট দিয়ে ঢিল্লায়। ওর হাতের পজিশন দেখে স্যার যা বুঝার বুঝলেন। সাড় ধরে সামনের কয়েকটা বেঞ্চ বাদ দিয়ে নিজের মন উজার করে পিটালেন সব গুলাকে। আর বললেন, ভবিষ্যতে যেনো কোনদিন এরকম আচরণ না করে কোন মেয়ের সাথে।

রউফ স্যারের এক মেয়ে পড়তো আমাদের সঙ্গেই। ওর সঙ্গে মাঝে সাঝেই এয়ে, উয়ে বাতচিত করতাম। এই ঘটনার কথা শুনে, মাইরের ভয়ে আর তার সাথে একলা কোন জায়গায় দেখা করিনি। করলেও দুই মিনিটের বেশি না।

Monday, October 08, 2007

হেমন্তের পাতাঝরার দিনে

- একটা দু'টা করে পাতা ঝরে পড়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই মন খারাপ হয় শুধু শুধু। ঝিরঝিরে বাতাসে শুকিয়ে যাওয়া পাতা উড়ে যায় বলেই বোধহয়। আগে টিভিতে মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলীর এ্যাড দেখানোর সময় এমন দৃশ্য দেখাতো। তখনো এরকম একটা শুষ্ক অনুভুতি জাগতো মনে। জিন্সের পকেটে হাত পুরে আমি আপন মনে হেঁটে যাই লাল শুকনো পাতা মাড়িয়ে। হঠাৎ চোখ পড়ে পাশের বেঞ্চিতে। সোনালী চুলের বাদামী চামড়ার যুগল। খুব অন্তরঙ্গ হয়ে ছুঁয়ে আছে পরষ্পরকে। মনটা দোলা দিয়ে ওঠে। এমনতর দৃশ্যে নয়, ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে! গলায় মাফলারটা টেনেটুনে ঠিকঠাক করি আবার। সাতদিন ধরে ভুগছি, নইলে কি আর মাফলার আমার গলায় ওঠে! অয়োময়ের হানিফের মতো হঠাৎ কাশি ওঠে। বিষ্ময়ের চোখে দুইজোরা চোখ ফেরে আমার দিকে। খানিক অস্বস্তি হয়। পা থেমে থাকে না। সিগনালে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে তার কলাপাতা রঙের কিউটি সাইকেলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তার বাবা। দুজনের মাথায়ই সাইকেল হেলমেট। টকটক করে কি যেন বললো বাবাকে। কথা বলার ঢঙ দেখে মনে হলো, টুক করে খেয়ে ফেলি পিচকুটাকে। সবুজ হতেই এক্কাদোক্কা করে রাস্তা পার হয়ে একসময় দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো তারা। হারানো দিনের মতো করেই হারিয়ে গেলো সুন্দর মুখটা। পা চলে আবারো। একটা ফাঁকা বেঞ্চ পেয়ে বসে পড়ি আমি। ক্লান্ত পা আর চলছে না যে!

এখানকার ফ্লু গুলো কেমন জানি। শরীর ভয়ানক দুর্বল করে দেয়। একেকবার মনে হয় ডেঙ্গু হলোনা তো আবার! পরক্ষণেই মনে হয়, ধুর ডেঙ্গু হবে কেমনে? এখানে কি মশা কামড়ায় আমাকে? ক্লান্তি এবার আমাকে নস্টালজিক করে দেয়। হেমন্তেরএরকম একটা ঝলমল পড়ন্ত দুপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। সরষে ক্ষেত আমার দারুণ প্রিয়। সেই হলুদ সরষে ক্ষেতে আমি দৌড়ে গেছি কত শতবার। জ্বরের সময় মা মাথায় পানি দিতো আর ভর্ৎসণা করতো, খালি হাতে ধরে ধরে অসুখ বানায় । এখন মাথায় পানি দেয়ার জন্য মা কাছে নেই। বকা ঝকা করারও কেউ নেই। সেদিনও বলছিলো, তুই আসবিনা ? আমি কি সাধে পড়ে আছি এখানে?

শরীরটা আবারো দুর্বল লাগে। বসে থাকতেও ইচ্ছে হয় না। একটা রিক্সা করে শহরময় ঘুরে বেড়াতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। রাস্তায় থেমে কোন একটা বেস্ট ইন ঢাকায় দুধ-চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা মেরে দেয়া যেতো। আমার ঘরে চা নেই, কফিও নেই। কোন দোকানে ঢুকেও খেতে ইচ্ছে করছে না। কোন এপেটিটও নেই। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয় নি, তারপরও কোন ক্ষুধা নেই। তবে দুর্বলানুভুতিটা প্রকট। বাড়িতে থাকলে মায়ের কয়েক পশলা ঝাড়ি হয়ে যেতো এতোক্ষণে। সেদিনও জেরা করছিলো, কি খেয়েছি, কি রেঁধেছি, ঈদে কি করবো, এইসব হাবিজাবি। আমি হু-হা করি। মা কি করে জানবে হয়তো ঈদের দিনও সাত সকালে উঠে কামলা খাটতে দৌড়াতে হবে। ঈদের দিনও হয়তো সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরার টান থাকবে না। হয়তো এই বেঞ্চটিতে বসে কোন এক ঈদের স্মৃতিচারণ করবো। প্রচন্ড ঠান্ডায় হয়তো দুয়েকটা কাশি দেবো। গলায় মাফলার তুলবোনা তবুও। পরেরবার ফোনে কথা বলার সময় বসে যাওয়া গলার গরগর শুনে মা হয়তো অকাতরে ধমকে যাবে আবার।

Sunday, August 19, 2007

সান্ধ্যকালীন ডিটেকটিভ অভিযান

কালো রঙের ফক্স ওয়াগান রাতের আন্ধার কেটে এগিয়ে চলছে। ভেতর থেকে ফিসফিস আওয়াজ ভেসে আসে খুব করে কান পাতলে। যেহেতু শনিবার রাত, রাত দশ ঘটিকা। শহরতলীর রাস্তায় মানুষের যাতায়াত কম। কে জানে লোকজন কোন পাব, বার কিংবা ডিসকোতে কোন সাকীর দিকে তাকিয়ে সুরার গেলাস সামনে করে সাকীর সৌন্দর্য্য বয়ানে ব্যতিব্যস্ত কিনা!

এজেন্ট মুশাররাফ ডেপুটি ডিরেক্টরের সঙ্গে ফোনে বার্তালাপ করছেন। ফিসফিসের শব্দটা আসছে সেখান থেকেই। ডেপুটি ডিরেক্টর পাভেল অত্যন্ত ক্লাসিফাইড একটি মিশনে ওভারসীজ গেছেন। ক্লিয়ারড মুঠোফোনের মাধ্যমেই দরকারী তথ্য আদান-প্রদান হয় এজেন্টদের সঙ্গে।

কালো ফক্স ওয়াগানের পেছনে, ড্রাইভিং সীটের পেছন থেকে যথাক্রমে আছেন এজেন্ট বক্স, এজেন্ট তোশিবা এবং এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ।এজেন্ট খিল বসে আছেন স্টিয়ারিংটা ধরে, কারণ গাড়ির ড্রাইভিং সীটটা তার কবলে। ঘোষনাটা এলো তার কাছ থেকেই। "আমার সন্দেহ হচ্ছে...। গাড়ি ঘুরাবো?" এজেন্ট মুশাররাফ মুঠোফোন বাম হাতে কানে ধরে রেখেই ডান হাত ঘুরিয়ে নিজের মত প্রকাশ করলেন। মানে গাড়ি ঘুরানো যাক!

সঙ্গে সঙ্গেই পেছনের সীটের তিন এজেন্ট এক দিকে ছিঁটকে সরে গেলো এজেন্ট খিলের গাড়ি ঘুরানোর কেরামতিতে। এজেন্ট তোশিবা আবার খানিকটা টিউব লাইট। "কীসের সন্দেহ..."?গর্জে ওঠেন এজেন্ট বক্স, "কাভার্ট এজেন্টদের এতো সব বুঝাতে নেই। উড়াকথার ধুরা মার ধরতে পারলে ধরবি না পারলে নাই। চুপ করে বসে থাক বাছা"।

গাড়ি ভটভট করতে করতে এসে থামলো কোন এক দ্বিতল ভবনের পর্দা টানা এক এপার্টমেন্টের সামনে। "তুমি কি শিউর, এটাই সেই বাড়ি", এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ শুধায় শান্ত গলায়।এজেন্ট খিল জবাব দেয়, "আমি ডেম শিউর ম্যান। মিস ফিশি কখনো তার বারান্দায় পর্দা টানে না, কিন্তু এখন পর্দা টানা"।"দ্যাট মীনস, উই গট এ রাইট ট্রেইল", এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ হাতে হাত দিয়ে আঘাত করে।

এজেন্ট মুশাররাফ ডিডির সঙ্গে এখনো মুঠোফোনে বার্তালাপ করছেন। নতুন এক সমস্যা হয়েছে। কিছু মোল একটিভিটিজ সনাক্ত করা গেছে এজেন্সীতে। সেটা নিয়েই আলফা ক্লিয়ারেন্সের কথোপকথন।

দ্বিতল ভবনের ড্রাইভওয়েতে হেড লাইট নিভিয়ে কালো রঙের ফক্স ওয়াগেন দাঁড়িয়ে।

এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ, এজেন্ট খিলের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে একটা বিড়ি ধরায়। তাতে ফায়ার আপ করতে গিয়ে বিড়ি জ্বালাইলে গানে টান দিতেই এজেন্ট বক্স ফোঁশ ফোঁশ শব্দে গলা নিচু করার কথা মনে করিয়ে দেয়। "মনে রেখো, উই আর নট ইন শিভা, রাদার ইন এ ভেরী সেন্সেটিভ অপারেশন।"

পনেরো মিনিট কেটে গেছে আরও পাঁচ মিনিট আগে।

অপারেশন এবর্ট করার কথা যখন উঠছে ঠিক তখনি পেছনের রাস্তায় ঠোলাদের গাড়ি। ড্রাইভওয়েতে হেড লাইট নেভানো গাড়ির ভেতরে সন্দেহজনক নড়াচড়া!"এই গেছিরে"। জানালার কাঁচের ওপর দিয়ে অবশিষ্ট সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ অস্থির হয়ে বললো, "ইগনাইট দ্য কার, নাউ"।

ড্রাইভওয়ে থেকে কোন বাসিন্দার গাড়ি বেরিয়ে আসতে দেখে ঠোলা অন্য পথ ধরে। এজেন্ট খিল গাড়ি ঘুরিয়ে বিশাল ম্যাপল গাছের নিচে খানিকটা আঁধারে দাঁড় করায়। এখান থেকে দ্বিতল বাড়ির ভিউ আরও পরিষ্কার। "আরেকটু হলেই তাকিয়ে থেকে থেকে ঘাড় ত্যাড়া হয়ে যেতো" - মাংসল ঘাড়ে হাত বুলিয়ে এজেন্ট বক্স স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। "আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে না হলে, উই আর মুভিং"।এজেন্ট তোশিবা এতোক্ষণে মুখ খোলে,"উই শ্যুড গেট টু দ্য এন্ড"।"অল রাইট, উই আর স্টেয়িং আনটিল উই গেট দ্যাট ফোন কল"- টসটসে আরেকটা স্ট্রবেরী মুখে পুরে দিয়ে এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ সম্মতি দেয়।

কেটে যায় আরও কিছু মিনিট উৎকণ্ঠায়। সিগারেট পুড়তে থাকে একের পর এক।

পর্দা টানা এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে একজন। এজেন্ট খিল, খিলখিল করে নুয়ে পড়ে নিজের সীটে। এজেন্ট মুশাররাফ ও তাই। এজেন্ট বক্স মাথা লুকায় ড্রাইভিং সীটের আড়ালে। এজেন্ট তোশিবা ধারা বর্ণনা করতে থাকে ঘটনার। আর এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ?সাসপেন্টের শার্টের দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে। শার্টটা বড়ই চেনা চেনা লাগছে সামনের দিকে হাত স্ট্রেচ করতে থাকা লোকটির গায়ের। এক কদম সামনে এগিয়ে লোকটি দেড় কদম পিছনে আসে। মনে হচ্ছে কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে। বারান্দার পর্দা সরিয়ে ততোক্ষণে মিস ফিশি ব্যক্তিগত পোষাকে দৃষ্টির সীমানায়। রাস্তায় ট্যাক্সি থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে কালোশার্ট পরা সাসপেন্ট।

কালো ফক্স ওয়াগানের যাত্রীরা সবাই মাথা তুলে বসে এতোক্ষণে। "অপারেশন সাকসেসফুল" - এজেন্ট খিলের মুখে খিলখিল হাসি। "লেট মি টক টু করপোরাল হান্টার, এলোন" - এজেন্ট ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ -এর ধরে আসা গলা। "আই অলসো নীড মিস ফিশি'স নাম্বার, এ এস এ পি"।

Wednesday, August 08, 2007

ড্রীমগার্ল ও ড্রীমল্যান্ড (কন্টিনিউড)

পেগ শব্দটি ডেগ দ্বারা রিপ্লেসিত হয়ে উধাও হয়ে যায় আলাদীনের আশ্চর্য চেরাগ নিঃসৃত ঘোলাটে বায়ুতে। নাসিকা রন্ধ্রঃ বিদীর্ণ করে ফুসফুসের কোনা-খামচি, হৃদয়ের উপরি-খুপড়িতে ঢুশাঢুশি করে শেষমেষ গিয়ে ঘর বাধে মস্তিষ্কের জটিল সব কুঠুরীর মাঝে। ওস্তাদ রবি শংকর জিন্দা হয়ে পন্ডিত বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গে যুগলগন্দীতে মেতে ওঠেন। বাহবা দেবার আর কেই বা আছে আমাকে ছাড়া। বহোত খুব, বহোত খুব চেঁচিয়ে গলা ভাঙার আগেই ভোকাল কর্ড জানান দেয়, "মামা আর উচায় স্কেল নিওনা, অক্কা পাইয়া ওঁয়া ওঁয়া করবো"!
মুখটারে টেরাবেকা করে, পাঁচকে পরাজিত করে 'ঙ' রঙ ধারণ করে খিস্তি খেউর শুরু করি জগতসংসারের সকল প্রাণীর শান্তির উদ্দেশ্যে। 'এন্টশুলডিগুং' শুনে পাশ ফিরলে বুঝতে পারি কোন এক সবুজাক্ষী ললনা আমারই শুভ চিন্তায় সদর রাস্তা থেকে পদচলা পথের দিশা দেখিয়ে দিচ্ছে।যাহ্ ছালা, কামডা কী হইলো!

Friday, July 27, 2007

ব্রেকফাস্ট এট টিফানী

বছর পাঁচেক আগে রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ব্রেকফাস্ট এট টিফানী গানটা শুনতে শুনতে ভিজ্যুয়ালাইজ করেছিলাম এইভাবে যে কোন এক উইকএন্ডের সকাল বেলা মনে হলো ব্রেকফাস্ট করবো শহরের যান্ত্রিকতা ছাড়িয়ে কোন গাঁয়ের পথের ধারের অচেনা কোন এক জায়গায়, কোন এক বৃদ্ধার কাঠের মেঝে এবং বেড়ার লাল ধূলোউড়া কোন রেস্টুরেন্টে।জায়গাটা ডেফিনিটলী হবে অস্ট্রেলিয়ার সিবিডি এরিয়া ছাড়িয়ে, হাইওয়ে ধরে অনেকদূর। পথে যেতে যেতেই লাল সূর্যের দেখা মিলবে!

পাশে পড়ার টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা ছোট ভাই তখন বললো, আমারেও নিয়ো সাথে। আমি বললাম তুই কি মদ খাস? বলে, না। আমি তখন বলি, তাইলে তুই গিয়া কি করবি? আমি তো ওয়ার্লডের ফাইনেস্ট ওয়াইনে চুমুক দিমু তখন!ছোট ভাই বলে, তা দিও, আমি নাহয় এক কাপ কফি নিয়াই বসুম নে। তাও এরম একটা সুন্দর জায়গায় আমারে নিয়া যাইও...।

ও যখন অনেক ছোট ছিলো। মানে একেবারে গেদাবাবু। তখন একদিন আমার সাথে হাঁটতে হাঁটতে জংলা মতো একটা জায়গায় আমি একটু জোরে পা চালাতেই পেছন থেকে ডেকে বলে, "মাজি বাই, তুমি আমারে আফ্রিকার জংকলে একলা ফালাইয়া যাবা গা"?

ওর কথা বলার একটা ঢং আছে সেই বাবুবেলা থেকেই। বলতে বলতে ভুলে যাওয়া কি বলছিলো। আমি বেশ মজা পেতাম ওর এরকম একটা নেগেটিভ কোয়ালিটিতে। থেমে থেমে কথা বলে, মনে হয় একটা শব্দ বলে পরেরটা খুঁজে বের করে তারপর মুখ দিয়ে বের করে।

প্রথম যখন আমাকে এয়ারপোর্টে বিদায় দেয় তখন আমার কোমর সমান ছিলো। সবার সাথে বিডায় নেবার সময় দেখি কে যেনো আমার শার্ট ধরে নিচের দিকে টানে। তাকিয়ে দেখি ও। আমি টাকাতেই শার্টের কোণা ছেড়ে দিয়ে হাতের উল্টাপিঠ দিয়ে চোখ মুছে। কাছে ডাকি আসে না।দেশে ফিরে দেখি বিশাল বড় ব্যাটা হয়ে গেছে, আমার কাঁধ সমান। এসএসসি পরীক্ষা দিবে।

আমার যখন চলে আসলাম, এবার বিদায়ের সময় জড়িয়ে ধরে বিদায় দিলো। তিন ভাই জরাজড়ি করলাম একসাথে। এরই মাঝে কেটে গেলো কয়েকটা বছর। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার সেই থেমে থেমে কথা বলা গ্যাদা ভাইটাও বড় হয়ে গেলো। ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে উঠে গেলো। কথা ছিলো অনেক আগেই অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে শুরু করার।

আজকে সেই দিন। অনেক গুলো দিনের গণণা শেষে আর আধা ঘন্টা পরে এমিরেটস এর ফ্লাইট থেকে বের হবে এক তরুণ, আমার ছোট ভাই। সেই গুটি গুটি পায়ে হাফপ্যান্ট পরে দৌঁড়ানো আমার বাবু-ছোট ভাইটি না, দেখা মিলবে গোঁফ-দাঁড়ি কামানো এক তরুণের।

বিষণ্ণতার পুজারী

ঘুম ভাঙলে ধূমায়িত কফির মতো মনখারাপ প্যাঁচিয়ে ওপরে উঠতে থাকে।দেড়দিন ধরে ফোন বন্ধ, সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চেয়েও হচ্ছে কি! চারদিকে একটা বিষণ্ণতার ছোঁয়া, নিজের ভেতরে বিষণ্ণতার মেলা। ব্যস্ততার গহীন অরণ্যে পথহারা হঠাৎ রিলিফ কিছু নেই আর। সব কিছুই কেমন বিষণ্ণতায় ভরা...

Monday, July 23, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ১১

বেথোফেনের মূর্তির সামনে বহুদিন পরের ক্ষণ নিয়ে যায় বহুদিন পূর্বের ক্ষণে। সেদিন ছিলো বিশাল গোলাকায় চাঁদ। রূপালী আলোয় উদ্ভাসিত চত্বর। কিঞ্চিত দোলানো পায়ে ছিলো নেশার অন্যরকম সিম্ফনী। স্মৃতি মোটেও বিঘ্ন ঘটায় না। গোল্ডেন জন্মদিনের কথা মনে পড়ে। 'সর্বশেষ উইশার' ভিন্য দোতনা তুলে নেচে যায়। ডানে বামে তাকিয়ে কয়েকজনের অলস এগিয়ে যাওয়া। ভূতুরে আলো। জুপ পারফিউমের ভুভু ঘ্রাণ। দিনের ফ্ল্যাশব্যাকে ওয়াশ স্যালুনে হঠাত বেজে ওঠা মোবাইলের এলার্ট। বন্ধ করে দিয়ে ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। মার্লবরো লাইটের প্যাকেট খুলে যায়, ধপ করে জ্বলে ওঠে ফয়ারসুগ। নি:শব্দে পুড়তে থাকে আরো একটা ক্যান্সারের খনি!

Friday, June 29, 2007

নস্টালজিক ভাবনায় নস্টালজিয়া

থ্রী-তে থাকতে এক বিকেলের কথা। তখন বন্দর উপজেলা কমপ্লেক্সের সব পোলাপাইন ইউএনও'র বাসার পাশে বিকেল হলেই ভিড় করে। আমার সমবয়সী বলতে ছিলাম আমরা মাত্র দু'জন। শিমু আর আমি। এক বছর পরের আছে শরীফ, শিমুর ছোট ভাই রতন। বড়রা তখন ভাইয়াদের সাথের। ওদের গ্রুপটা বিশাল। আলমচাঁন হাইস্কুলে যায় সবাই। তো আমরা খেলতে গেলে প্রায়ই যুঁথী আপা আমাদের ধরে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতো, "আচ্ছা এরা কি দুধ খেয়ে ভাত খায়, নাকি ভাত খেয়ে দুধ"?

অনেকগুলো দিন কথাটার মানেই ধরতে পারি নি। কারণ, বাকী বড়রা যে উত্তরই দিতেন, আমরা খেলায় জায়গা পেতাম। কিন্তু স্ট্যাটাসে খানিক হেরফের হতো। আন্ডাবাচ্চা আমরা সেদিকে মনই দিতাম না। এক হাতে হাফপ্যান্ট টেনে ধরে আরেক হাত নেড়ে নেড়ে দৌড়াতাম সারা মাঠময়। গলা ছেড়ে চিৎকার করতাম শুধু শুধুই।

ফাইভে ওঠার পর শ্যামলরা এলো আমাদের বাসার ওপরের তলায়। আমার ক্লাসের শ্যামল আর তার ছোট বোন হাসিনা। জুয়েল ভাই, যুঁথী আপারা ততদিনে চলে গেছেন অন্য জায়গায়। কাজেই আমাদের কঁচিকাঁচা গ্রুপের ততদিনে খেলায় প্রমোশন হয়েছে। এখন আর সেই কোড কথা শুনতে হয় না, ডাইরেক্ট খেলাতে নিয়ে নেয়। কিন্তু তখনো কেনো যেন বুঝে উঠতে পারিনি সেই কথার আড়ালে কী ছিলো!

---------

ছোট মামার বিয়ে হয় সেসময়ই কোন এক বছর। সব কিছু মনে নেই শুধু বিয়ের দিনের একটা কথা মনে আছে। গেটে অনেক ঝামেলা হচ্ছিলো। হয় না, টাকা পয়সা নিয়ে? ঐরকম। আমিতো আর জানি না, আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বরবেশী ছোটমামাকে দেখি নদীর ঢেউয়ের মতো ভীড়ের তালে একবার এদিকে দোলেন আবার ওদিকে। ছোট মামার বন্ধু শহিদুল মামা সেদিন তাঁর বিশাল বপু দিয়ে নাদুসনুদুস দোস্তকে রক্ষা করেছিলেন। সেই থেকে শহিদুল মামা আমার চোখে হিরো! বিয়ের পরদিন সকালে ছোট মামার কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলেছিলাম, আর কখনো ঐ বাড়িতে গেলে শহিদুল মামাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন, তাহলে ওরা আর আপনাকে ওরকম করে এদিক-ওদিক দোলাতে পারবে না। সেদিন আমার ভয়ার্ত কথা শুনে ছোট মামা সশব্দে হাসিতে ফেটে পড়েছিলেন আর সবাইকে আমার কথা হুবহু বলেছিলেন। বাকীরাও হেসেছিলো, আমি বোকা হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবি, "এমন সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে কেউ হাসে"?

Thursday, June 28, 2007

না চাহিলে যারে পাওয়া যায়

আমি তোমার দূরে থাকি, কাছে আসবো বলেআমি তোমার কাছে আসিনা, চলে যেতে হবে বলেতোমাকে ভালোবাসিনা, তোমাকে হারাবার ভয়ে...

একটা সময় খুব ভাবতাম 'আধো বালি, আধো পানি'র একটা স্বপ্নের কথা। কী করে যেনো সেই স্বপ্নচিন্তাটা ভুলে বসে আছি। এখন আর ওসব চিন্তা ভাবায় না আমায়। একটু ভুল বললাম কি? হুম, হবে হয়তো। আসলে বলা উচিত, এখন অবশ্য ভাবতে ভালো লাগে না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, অঘটনকে না, বরং যা ঘটেছে কিংবা যা ঘটতে পারতো!

সবুজ প্যাকেটে মোড়া নীল-আকাশ! একটা একটা করে মায়ার সূতোয় বোনা বিশাল আকাশটায় আমার স্পর্শ দিয়ে খুব ছোট্ট একটা প্যাকেটে পুরে দেয়া কি দু:সাধ্য ছিলো কখনোই! আচ্ছা ওইযে ভেজা সিঁড়িটা। ঝুম বৃষ্টিতে চোখের পাতা মুদলেই যে ছাঁট এসে লাগে, ওখানটার কথা বলি? আমার যখন একুশ হলো, তখনকার 'হঠাত হারিয়ে যাওয়ার' কথা। চোখের সামনে দৃশ্যপটের ধীরগতিতে বদলে যাওয়ার কথাও বলা যায়। আচ্ছা হাউ এবাউট, সকালে উঠেই চলে গিয়েছিলাম যে, সেই গল্প!

আমার পেটে তো কথা পঁচে না। কিন্তু মেমোরী এতো বিট্রে করছে কেন? আলোক বর্ষ দূরত্বের তারাদের একে একে সরে যাবার আগের সব কিছুই নিকষ অন্ধকারে। উমমম, হ্যাঁ, আচ্ছা সেই যে রাতের বেলায় ল্যাপটপ ছেড়ে না চাহিলে যারে পাওয়া যায় শোনা, একেকটা ইচিঠিতে চাঁদের আগমন ঘটতো গগনে। একেকটা জুনের জন্য কেমন কেমন করে যেন প্রতীক্ষায় থাকা- যদিবা এই জুনই সেই জুন হয়! কিংবা সাবওয়েতে স্যান্ডউইচ সাপ্লাইয়ে শশ্রুমন্ডিত কোন সাধুর উপস্থিতি শেষে বাসায় ফিরে 'ধপাস'। নিজের বিছানা ছেড়ে যাবার কষ্টে অঝোর কান্না। উঁহু, সেইসব ও বলতে ইচ্ছে করছে না।
ঐযে একবার কাছে আসার খুব আগ্রহ হলো। বিশাল জলরাশি পাড় হবার সাহস ধরে গেলো। শেষে আর হলোই না, আচ্ছা সেই পাগলামীটা বাস্তব হলে কি হতো!কোথাও বেড়াতে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলার সেই যে ক্ষণটা, ওটা নিয়ে বলি বরং! মাউথঅর্গানটার সুর কানের ভেতর দিয়ে গিয়ে মস্তিষ্কে হাতুড়ি পেটা করেছিল যে, কানের সামনে সেই বেসুরো করে ফুঁ দেয়ার ঘটনাটা বলি!

কতো কিছুই বলতে ইচ্ছে হয়, লিখতে ইচ্ছে করে। তবু লেখা হয় না, শোনা হয় না, হিসাব করা হয় না এখন আর। কতদূর এলাম, কতদূর যাবার বাকি- এই ভাবনা আর ভাবতে হয় না এখন। মেইজটা বুঝি শাফলড হয়েই গেলো তবে! পৃথিবীটা ছোট হতে হতেও ক্রমশ: প্রসারিত হওয়া শুরু করলো গ্যালাক্সির অনুপাতে। অনেক হিসাব, অনেক নিকাশ সেখানে লুকায়িত। এখানে তাত্ত্বিক ভাবে অনেক ভ্যালু উপেক্ষা করা গেলেও ফলায়তভাবে করা গেলো না।

ফিরতে বড় ইচ্ছে করে, ফেরারী সেই পথটি ধরে-কিন্তু লক্ষ্য বিন্দু বুঝি কক্ষচ্যুত। শত বারণের চোখ রাঙানী শেষেও কথা বলা থেমে থাকে না, ভাবনা থেমে থাকে না, দিন গুলোর কথা ভুলে যাওয়া হয় না, দেখার ইচ্ছাটা উবে চলে যায় না!

নিজের অজান্তেই হিসাব মেলানো হয়ে যায় ২৩ + ৬ - ১৭ = ১২

ছ'বছর আগের চমতকার করে শুরু হওয়া একটা দিনের মতো সেই ভাবনা গুলো আজোবধি জেগে আছে, কেবল ওপরে একটা ধূলোর ডিবি জমে গেছে। সেই ডিবির ওপরে লালসালু উড়ছে, বিপদের আভাস দিতে না বরং জানান দিতে যে জায়গাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ!

কতো কিছুই বলার ছিলো, থাকুক নাহয় সব তোলা-আজ শুধু বলি - শুভ হোক এই পথচলা...

Wednesday, June 20, 2007

ড্রীমল্যান্ড ও ড্রীমগার্ল

বিছানায় শুয়ে শুয়ে বেরানোর ধারণাটা আগুন। গলার পরে কয়েক পেগ তরল ঢেলে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলেই মন চলে যায় রূপের নগরে! সেখানে একটা ঘোড়ার গাড়ি সাজানো থাকে গাড়োয়ানহীন। উঠে বসলেই ঘোড়া চলতে শুরু করে। ইটসুড়কীর বাঁধানো পথ পেরিয়ে, ঘন ঝোপের পাশ কাটিয়ে গাড়িটি হঠাৎ বাঁক নেয় অজানা এক মেঠোপথের দিকে। মেঠোধূলার পথ, কিন্তু কি আশ্চর্য, কোন ধূলা উড়ে না! গাড়োয়ানহীন গাড়িটি এগিয়ে যায়। টিমটিমে আলোর লোকালয় পড়ে থাকে পিছনে। হলুদ সরষে ক্ষেতের বুকচিরে গাড়ির চাকা গড়িয়ে চলে এক গহীণ বনের দিকে। আকাশ উপচে পড়া জোৎস্নার আলোয় এক নীলাভ ছায়া অবলোকিত হয়। অরণ্যের ওপারেই আছে স্বপ্নের সেই ভূমি যেখানে নীলাম্বরী এক চুল খোলা ললনা দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁয়। চিঁহিহিহি শব্দ তুলে ঘোড়াগুলো এগিয়ে যেতে থাকে...

Sunday, June 17, 2007

বাবা দিবসের আখ্যান

এদেশের লেবার রুমে যাবার নিয়ম কানুনে বেশ কড়াকড়ি। নিয়মকানুন ব্যাপারটাই আমার অসহনীয় লাগে। আর আমার 'লেইট' হওয়াটা কখনোই কাটাতে পারিনি, আজ এতোগুলো বছর পরেও।

প্রাণের সহধর্মীনি স্ট্রেচারে শুয়ে আছে লেবার রুমে, তাকে কথা দিয়েছি আমি তার সাথে থাকবো, কিন্তু এখনো আমাকে নানা রকম কাগজপত্রে সই করে যেতে হচ্ছে। ওদিকে আমার আদরের বউ বলে দিয়েছে আমার হাতে হাত রাখা ছাড়া এনাস্থেশিয়া নেবে না। ডাক্তাররা যতোই বুঝাচ্ছে এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে, কিন্তু বউ নাছোড় বান্দা হয়ে গোঁ ধরে রয়েছে।

একজন নার্স এসে আমাকে যখন জানালো এ কথা। আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠলো সতেরো বছরের সেই অবোধ বালিকার কথা। একগুঁয়ে আর কাকে বলে। সেই প্রথম দিন থেকেই তার একগুয়েমীটাকে আমার ভালো লেগে এসেছে। আশ্চর্য! কোনদিক দিয়ে দিন কেটে যায়। সেদিনের ১৭ বছরের বালিকা, যে চটাং চটাং কথা বলতো আমাকে, সে আজকে আমার মেয়ের মা হবে!

একগাদা কাগজ সই করার পর ডাক্তারের সাথে ঢুকলাম লেবার রুমে। আমাকে দেখেই সে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। "তুমি একটা এম্পটি হেড। এতো দেরী করলে কেন, কষ্ট তো হচ্ছে আমার, তুমি বুঝবাটা কি..." ডাক্তার নার্সরা এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ী করে। আমি আস্তে করে গিয়ে ওর বাম হাতটা আমার ডান হাতে নিলাম, কপাল থেকে রেশমী চুলের জঙলা সরিয়ে আলতো করে চুমো খেয়ে বললাম, "বধূ আমি আছি তোমার পাশে। আমাদের স্বপ্ন আজ জন্ম নিবে। জন্ম হবে একটা নতুন উচ্ছ্বাসের, এই উচ্ছ্বাস তোমার আমার। আমাদের 'তনয়া'...।"

ও আতংকিত চোখ করে বললো, "আমার ভয় করছে। আমি যদি না বাঁচি আর..."
বললাম, "ভয় পেয়োনা জান। ভেবে দেখতো কতোগুলো দিন আমরা এই স্বপ্নের জাল বুনে গেছি। কতগুলো বৃস্টিস্নাত রাত কাটিয়েছি আমরা খোলা আকাশের নিচে, সেই সিঁড়িতে বসে তোমার বাম হাত আমার ডান হাতে ধরা...। আমি আছি তোমার সাথে, ভয় নেই একটুও!

নার্সের হাতের মাস্ক ওর নাক-মুখ আড়াল করে দিতেই যেন গভীর ঘুমে ঢলে পড়লো। আমার ভেতরটা কেমন যেন খচ করে উঠলো, সয়ে নিলাম।

তনয়ার জন্ম হলো। আমার তনয়া, আমাদের তনয়া, আমাদের দুজনের মিলিত স্বপ্ন। আজকে আমার, আমাদের তনয়ার ৬ বছর পূর্ণ হলো বধূ, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো! তুমি কি দেখতে পাচ্ছো আমাদের স্বপ্নের বেড়ে ওঠা, আমার বাবা হওয়ার গম্ভীরতা!

Sunday, June 10, 2007

আজগুবি স্বপ্নের দু:স্বপ্নে ভ্রমন

আজকে পিকুলিয়ার একটা স্বপ্ন দেখলাম। একটু ভয়ও লাগছিলো। শিবিরের সাথে এনকাউন্টার হইছে, সরাসরি। ঘটনাটা এরকম।

বনের সিটিহলের সামনের স্টেজে বাংলাদেশের হর্তাকর্তারা বসে আছে। সাথে দেখলাম জামাতী অনেক হোমরা চোমরাও সেখানে আছে। তো সেখানে বাংলাদেশের দেশাত্ববোধক গান হইতাছে। কি একটা গান, তার মধ্যে জয় বাংলা, বাংলার জয় কথাটাও আছে। আমি স্টেজের বাম কোণায় বসা। এদিক থেকে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা হইতাছে।

গানটার মাঝে যখনই 'জয় বাংলা' শব্দটা আসে, সবাই কেমন মিন মিন করে গায়। আমি কি মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে মাইকের সামনে গিয়ে বেশ জোরেই কয়েকবার 'জয় বাংলা' কথাটা উচ্চারণ করলাম। সাথে সাথেই কয়েকজন এসে আমাকে নামিয়ে নিয়ে গেলো স্টেজ থেকে। এদের মধ্যে শিবির সভাপতিও ছিলো।

কোন একটা গলির মুখে আমারে নেয়ার পথে দেখলাম ব্লগের পরিচিত কয়েকজন সহ আরও কিছু লোকজন তাগোরে এটাক করছে। আমারে ছাইরা দিয়া তখন ওরা পজিশন নিছে 'মোল্লা মার্কেটের' এদিকে।

আমাদের এদিকে কলাপসিবল গেট আটকানো, ওরা গুলি করতাছে সেই গুলি গেটে লইগা ছিড়্ড়ুম ছিড়্ড়ুম আওয়াজ হইতাছে। এর মধ্যে খেয়াল করলাম আমার ছোট ভাইডারে পাইতাছি না। ও একদম পিচ্চি, ওরে জামাইত্যারা গুম কইরা দিছে। আমি সমানে খুঁজতাছি।

পুলিশ আইলো, আমাদের পিছন দিয়া আইসা গেট খুইলা ওগোরে চেক করলো। একটা পোলা, যে নাকি শিবিরের সভাপতি হইতাছিলো তার কোমর থাইক্যা উন্নত মানের এক অস্ত্র পাওয়া গেলো। যেইটারে ও নাম দিলো কি এক জাতের ব্লেড কইয়া। আমি তখন চরম অস্থিরতার মাঝে। ছোট ভাইডারে পাইতাছিনা, ভিতরে খুব খালি খালি লাগতাছে। কান্দোন আইতাছে সমানে...

ঠিক এই মুহূর্তেই ফোনটা টুট কইরা বাজলো, উইঠা গেলাম।
ভয়েড অনুভূতিটা এখনো, অলমোস্ট ৯ ঘন্টা পরেও যায় নাই। ঘুম কম হইছে বইলা চোখ ফুইলা আছে রুই মাছের চোখের লাহান।

স্বপ্নটা কেন দেখলাম বুঝতাম পারতাছিনা...!

Sunday, June 03, 2007

কোন এক হিরোর কথা

উপসাগরীয় যুদ্ধের অব্যবহিত পরের কথা। মধ্যপ্রাচ্য তখন সরগরম আমেরিকা-ইরাক ইস্যুতে। যুদ্ধবিধ্বস্ত কুয়েতের পূনর্গঠন প্রয়োজন। এর জন্য চাই প্রচুর শ্রমিক। প্রচুর বিদেশী শ্রমিক, অভাব অনটনে থাকা তৃতীয় বিশ্বের শ্রমিক যাদের অল্প পারিশ্রমিকে কাজ করানো যাবে। যারা তাদের সামর্থ্যের সেরাটা দিবে, এমন শ্রমিক চাই। সবদিক বিবেচনা করে উপমহাদেশের জোয়ান তরুণদের চাহিদা তুঙ্গে তখন মধ্যপ্রাচ্যে। জনশক্তি রপ্তানীর এজেন্টদের তখন রমরমা অবস্থা। লোকজন আসে, ইন্টারভিউ দেয়, মেডিক্যাল টেস্ট করায়, টাকা দিয়ে বাড়ি চলে যায়। "ভিসা লাগলে খবর দিমু নে"- এরকম কথার ওপর বিশ্বাস নিয়ে বাড়ি চলে আসে মধ্যপ্রাচ্য গমনে প্রত্যাশী তরুণ।

শফিকুল, চরম হতাশাগ্রস্ত একজন গ্রাম্য তরুণ। তেমন কিছুই করে না। তারা চার ভাই, দুইবোনের একজনের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। বাবার বেশ কয়েক বিঘা কৃষি জমি আছে। মোটামুটি চলে যায় সারাবছর কৃষিকাজ করে। উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে কুয়েত পুনর্ঠনে যোগ দিতে সচেষ্ট হয় সে। এজেন্টের কাছে টাকা দেবার অভিপ্রায়ে বেঁচে দেয়া হয় তাদের কয়েক বিঘা জমির অনেকটা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, এজেন্টের কাছ থেকে "কালকেই ফ্লাইট" টাইপের একাধিকবার নাকানী-চুবানী খেয়ে যখন সে ম্রিয়মান ঠিক তখনই একদিন খবর আসে তার "ভিসা লেগেছে", কাল ভোরে ফ্লাইট, এক্ষুনী যেতে হবে।

গাঁয়ের সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায় শফিকুল। পিছনে তার মা বড় রাস্তাটা পর্যন্ত আসেন আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে। ছেলে বিদেশ চলে যাচ্ছে কতগুলো বছরের জন্য কে জানে, এই ভাবনা তাঁকে কুঁড়ে খেলেও শফিকুলের বাবা ভাবেন তখন অন্যকথা। জমি বেঁচে দেয়া টাকা, যদি কোন রকমে ফসকে যায় তাহলে সংসারের কী হবে!

মায়ের চোখের পানি, বাবার উদ্বিগ্ন চোখ, ভাইদের আশান্বিত দৃষ্টি সাথে করে শফিকুল অবশেষে কুয়েতগামী বিমানে চড়ে বসে। হ্যাঙ্গার থেকে বের হয়ে বিমান ট্যাক্সিং করছে এখন, শফিকুল জানালা গলে বাইরে তাকিয়ে আছে। কী সুন্দর ঝলমলে রোদ! আচ্ছা, ও যেখানে যাচ্ছে সেখানে কি এরকম সুন্দর, মনোরম, ঝলমলে রোদ উঠে? সেখানেও কি বিকেল বেলা দক্ষিণ দিক থেকে আসা বাতাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া যায়? সেখানেও কি গোধূলী বেলাতে গোয়ালে গরু আনার তাড়া পরে যায়? সন্ধ্যা বেলায় কি সেখানেও কাটা ধান কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরে লোকজন, কারেন্ট চলে গেলে কি সেখাও বাড়ির সবাই উঠানে ওগলা পেতে বসে গল্পো করে? সেখানকার মানুষেরা কি অনেকদূরের গ্রামের কোন মানুষকে বিনা পরিচয়েই ঘরের দাওয়ায় বসিয়ে প্রজন্ড গরম থেকে বাঁচতে একটা বাতাসার সাথে এক গ্লস পানি দেয়?
হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে শফিকুল। বিমান ততক্ষণে ট্যাক্সিং থেকে রানওয়েতে, টেকঅফ করার মুহূর্ত! জানালার কাঁচে হাত রেখে শফিকুল কেঁদে চলে অনবরত। হাতের স্পর্শে সে যেন বাইরের আলো, বাইরের বাতাস, বাইরের প্রকৃতিকে ছুঁতে চাচ্ছে কিংবা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে যেমনটা মানুষ করে অতিপ্রিয় কোন জিনিষকে ছেড়ে যাবার সময়!

সময় চলে যায় নিজস্ব গতিতে। বাড়ি থেকে চিঠি আসে, চিঠি যায়। শফিকুল প্রতি চিঠিতেই জানতে চায় তার লাগানো জাম্বুরা গাছে জাম্বুরা ধরেছে কিনা, পুকুরের পাশের ডোবা এবর সেঁচা হলো কিনা, ইরির ফলন কেমন হলো এবার, পাশের বাড়ির রমুকাকা ছেলেপেলে নিয়ে এখনো কষ্ট করে কীনা, নিজের দাদী নেই, চাচাতো দাদীর বয়স হয়েছে যত্ন-আত্নির যেন কমতি নাহয় তার। এভাবেই সে চিঠি লিখে প্রতিবার, চিঠির সাথে পাঠিয়ে দেয় তার কষ্টের বেতনের থেকে বাঁচানো সিংহভাগের ব্যাংকড্রাফট!

শফিকুলদের বাড়িতে পাওয়ারলুম হয়েছে। সেখানে তার ভাইয়েরা কাজ করে। তাঁত বুনে, প্রতি মঙ্গলবারে সেই তাঁত তারা হাঁটে নিয়ে যায়, বেঁচে। বেড়ার ঘরের বদলে এখন ভিটপাকা চৌচালা হেছে শফিকুলদের। বড়ভাই বিয়ে করেছেন বছর খানেক হয়, বোনটার জন্য ভালো জায়গা থেকে সম্মন্ধ আসছে। মা চোখে দেখতেন না, ডাক্তার দেখিয়ে এখন চশমা নিয়েছেন। বাবাকে ভাইয়েরা রিটয়ারমেন্টে দিয়ে দিয়েছে "এখন আপনে আল্লা বিল্লা করেন" - এই বলে। সবই সুন্দর চলছে, সবকিছুই ঠিক। নিজের অজান্তেই শফিকুল একজন হিরো। তার পরিবারের সবার কাছে, তার চাচাতো দাদীর কাছে, তার রমুকাকার কাছে।

কিন্তু শফিকুল? সবাইকে ছেড়ে একা পড়ে আছে সুদূর মরুভূমিতে। হয়তো সে কাঠাফাটা রোদ্দুরে, দুপুরের কোন এক সময়ে হাড়ভাঙা খাটুনির ফাঁকে একটু বসে কোন জায়গায়। মাথা থেকে ময়লা লাগানো ক্যাপটা সরিয়ে ঘর্মাক্ত মুখটা ডানহাতের তালু দিয়ে মুছে উদাস দৃষ্টিতে ভাবে দেশে থাকার সেই দিনগুলোর কথা। নিজের গ্রামের কথা, সরষে ক্ষেতের আইল ধরে দৌড়ানোর কথা, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার কথা, মায়ের হাতের শোল মাছ দিয়ে গাছের প্রথম লাউয়ের ঝোল খাওয়ার কথা।
এসব ভাবতে ভাবতেই হয়তো একসময় ডাক পরে শফিকুলের, কাজে ফেরত যাবার ডাক!

অনিচ্ছা সত্বেও ময়লা ক্যাপটা মাথায় চাপায় শফিকুল। প্যান্ট গুটানো পা আবার শক্ত হয়ে ওঠে, না তার বিলম্ব করা উচিৎ হবে না একেবারেই। হিরোদের বিলম্ব করা মানায় না, হিরোদের থেমে গেলে চলে না। হিরো, আমাদের হিরো শফিকুলেরা!!

-।-।-।-।-।-।-।-।-।-।-।-।-

* একই সাথে হাজারদুয়ারীতে প্রকাশিত।

** যারা 'হাইলী লোস্পীড সিনড্রোমে' ভুগছেন তারা এখানে ট্রাই দিতে পারেন। ইউনিকোডে হাজারদুয়ারী

Monday, May 28, 2007

ক্রীড়ারঙ্গ!!

আগে মাঠের মধ্যে প্রায়শ:ই বৃক্ষ দেখা যেতো। মাঠের মধ্যে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতেই কিনা তখন বৃক্ষনিধন হতো না। এমনি এক মাঠে খেলা হচ্ছে কাউন্টি ক্রিকেট। বাউণ্ডারীর ঠিক পাশে বিরাটকায় এক বৃক্ষ, তার ঠিক পরেই একটা পার্ক, স্টেডিয়ামের ধার ঘেঁষে।

প্রথমদল বেশ শক্তিশালী! আগে ব্যাট করে রান করলো একশ সত্তর। এখন পরবর্তী দল ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়। ওয়ানডাউনে নেমে এক ব্যাটসম্যান বল এমন তুলে মারলো বল গিয়ে পৌঁছালো গাছের মাথায়। কোন ফিল্ডার এটা দেখেনি। সবাই ধরে নিয়েছে বিশাল ছয়। কিন্তু আম্পায়ার কোন সাইন দেখাচ্ছে না, বাধ্য হয়ে ব্যাটসম্যানরা জায়গা পরিবর্তন করেই চলেছে।

বলটা কেবল দেখেছে লেগ আম্পায়ার, টেকনিক্যালি সে সেজন্য বাউণ্ডারীর কোন সাইনও দিতে পারছে না!

এদিকে আম্পায়ারের সাইনের অপেক্ষা করে না পেয়ে ফিল্ডাররা সমানে খুঁজে চলেছে বল। একেবারে গরু খোঁজা যাকে বলে!
অবশেষে অবশ্য বলটা খুঁজে পাওয়া গেলো। কিন্তু ততক্ষণে দুই ব্যাটসম্যান জায়গা বদল করেছেন একশ ষাট বার।

বাকি দশটা রান তুলতে এই দলের সবগুলো উইকেট খোয়া গিয়েছিলো।

**********************

আঠারশো শতকের কোন এক সময় ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যান ডেনিস লিলি টাইপের বলে খিইচ্যা আতাইল্যা ব্যাট চালাইয়া শরীরের ভারসাম্য আর রক্ষা করতে না পেরে পিছলা খেয়ে পড়ে গেলো ক্রিজে আর বল সোজা স্ট্যাম্পস উপড়ে ফেলে চলে গেছে কীপারের হাতে। আউট!!!

ফিল্ডাররা যখন আউট উদযাপনে ব্যস্ত, সহযোদ্ধা ব্যাটসম্যান দলের বিপর্যয়ে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনারত, আম্পায়ারদ্বয় নিজেদের ওয়াইফ নিয়ে 'বীচিং'-এ মগ্ন, আউট হওয়া ব্যাটসম্যান তখন মাটিতে পড়ে থাকা ব্যাটখানা বগল দাবা করে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করলেন।

বাউণ্ডারী লাইনের কাছে এসে হঠাতই কোন এক ফিল্ডারের চিতকার কানে এলো তার। কী ব্যাপার, আউট হওয়া ব্যাটসম্যানকে আবার ডাকে কেনো? খুব বিরক্তিভরে পেছন ফিরে তাকালেন। এক কামান গালি ছুড়তে যাবেন অমনি তাকিয়ে দেখেন এক আম্পায়ার তারদিকে ভুড়ি দুলিয়ে দৌড়ে আসছেন আর বলছেন, "আরে করছো কি!! দিয়ে যাও বলছি, দিয়ে যাও..."!

একেতো মনের ক্ষেদ তারওপর পেছন থেকে ডাকাডাকি! আম্পায়ারের মাথা বরাবর বারি দেবার জন্য বগলের ব্যাটটা রেডি করতে গিয়ে বেচারা ব্যাটসম্যান সামনে তাকিয়ে দেখেন ক্রিজে তার ব্যাট পড়ে আছে, মানে ব্যাটের বদলে পড়ে থাকা স্ট্যাম্প বগলে নিয়ে হাঁটা দিয়েছেন বাল্লেবাজ মহাশয়!

Saturday, May 26, 2007

ক্রীড়ারঙ্গ!

উরুগুয়েতে যেবার বিশ্বকাপ হয় তখনকার কথা। ফাইনাল খেলা, তুমুল উত্তেজনা। সেকেণ্ড হাফের ও শেষের দিক। যে কেউ একটা গোল দিয়ে ফেললেই কেল্লা খতম!
আর্জেন্টাইন কোচ ভদ্রলোক ঘেমে নেয়ে ফেলে শার্ট খুলে টিশার্ট পরেছেন। অস্থিরচিত্তে হাফদৌড় দিচ্ছেন সাইড লাইনের সমান্তরালে। হঠাৎ আর্জেন্টিনা দলের প্রধান খেলোয়ার প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের ঠ্যাঙের সাথে প্যাঁচ খেয়ে ধরাশায়ী। গ্যালারীতে সবাই হায় হায় করে উঠলো। অবস্থা গুরুতর, খেলোয়াড়টি শুয়ে পড়ে এপাশ ওপাশ করছে। হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে, থেরাপিস্টের ব্যাগখানা তুলে কোচ নিজেই দৌড় লাগালেন প্রিয় খেলোয়াড়ের শুশ্রূষা করতে। কিন্তু বাধ সাধলো অমসৃন মাঠ। উল্টে পড়ে গেলেন তিনি। ব্যাগের ভিতরে থাকা কাঁচের ক্লোরোফর্মের শিশিও গেলো ভেঙে। ফলফল যা হবার তাই। খেলোয়াড়কে ফেলে রেখে এখন কোচকে স্ট্রেচারে করে এনে শুইয়ে রাখা হলো রিজার্ভড বেঞ্চের পাশে।
খেলার বাকি সময়টা নিশ্চিন্তে তিনি নাক ডেকে গভীর ঘুম ঘুমিয়েছেন!

*****************

স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সময়ের একটা ম্যাচের কথা বলি। তখন ক্রিকেটের অনেক নিয়ম কানুনই পাকাপোক্তভাবে আসেনি। অস্ট্রেলিয়া ইংল্যাণ্ডের একটা ম্যাচ চলছে তখন। অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস। বেলা শেষের দিকে উইকেটের টার্ণ কাজে লাগিয়ে স্পিনাররা বল করছেন। এরকমই এক ঘূর্ণীবলে মারতে যাবার আগে পা পিছলে পড়ে গেলেন ব্যাটসম্যান আর বল গিয়ে আঘাত করলো ঠিক তার মাথায়। না ভাইসব ভয় পাইয়েন না, রমন লাম্বার মতো কিছু হয়নি, মাথায় হেলমেট ছিলো! কিন্তু ঘটনা প্যাঁচ খাইছে অন্য জায়গায়। স্ট্যাম্পের সামনে ঠ্যাঙ থাকলে এলবিডব্লিউ দেয়া যায়, মাথা থাকলে কি আউট দিবে আম্পায়াররা?

এই নিয়ে রীতিমতো হাউকাউ। আউট হয়েছে এটা কনফার্ম শুধু টাইপটা নিয়েই জটলা। পরে অনেক হুমড়িতুমড়ির পর ঠিক হলো, 'এইচবিডব্লিউ'। বিশ্বাস করেন, ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই একমাত্র 'এইচবিডব্লিউ' আউট, মানে "হেড বিফোর দ্যা উইকেট!"।।

Tuesday, May 15, 2007

পিসি মিত্তিরের রহস্য উন্মোচন : পিয়ালীর বিয়ে!

নাগরী বাজারের সেমেট্রির ওয়ালে বসে বসে বাদামের প্যাকেটের ভেতর অমনযোগী হাত চালাচ্ছেন গোয়েন্দা প্যারীচাঁদ মিত্তির। পিসি মিত্তির বলে যিনি এক নামে পরিচিত একেবারে সুউচ্চ ডন এলবাবাদমদম এর কাছেও।

হাতের ডানদিকে কতগুলো কাগজ, তার ওপর একটা আতশী কাঁচ। হাতের বাম দিকে আধো খাওয়া বাদামের প্যাকেট। এই নির্জন সেমেট্রির ওয়ালে পিসি মিত্তিরকে পা দুলিয়ে আয়েশী ভঙিতে পায়েস খাবার মতো মনে হলেও ঘটনা কিন্তু একদমই সেরকম না। এবারের 'কেইস'টা একটু বিখাউজ্যা। জটলা খুলতে গিয়ে গিট্টু আরো লেগে যাচ্ছে। সাসপেক্টসরাও ইয়্যুজুয়াল না। সবাইকেই মনে হচ্ছে পুকুরের কাঁদার কাছাকাছির। "দেয়ার মাস্ট বি সাম ওয়ে..." বলেই শ্যাওলা পড়া ওয়ালে ডান হাত দিয়ে একটা কিল মারে পিসি মিত্তির। হাতের কনুইয়ের খোঁচা লেগে আতশী কাঁচ সহ কাগজ গুলো পরে যায় মাটিতে।

সুন্দর জোছনা রাত। সাক্ষাত পূর্ণিমা। ইয়া বড় একটা চাঁদ মনেহয় কয়েকশো মিটার দূরেই আছে। এমন রোমান্টিক একটা পরিবেশে কিনা তাকে ভাবতে হচ্ছে একটা ঘিরিঙ্গি মার্কা কেইস নিয়ে! চার্চের দিকে তাকিয়ে পিসিমিত্তির দেখে ফাদার স্টিফেনের ঘরের বাতি এখনো জ্বলছে। ফাদারের সাথে দেখা করতে যাবে নাকি পানজোরা ফিরে যাবে এমন দোটানায় যখন সে দুলছে ঠিক তখনো কাছে কোথাও 'পতপত' শব্দ তুলে একটা প্যাঁচা উড়ে গেলো, ঠিক তার পরক্ষণেই ডেকে উঠলো ভয়ার্ত কণ্ঠে!

ডাকটাকে অনুসরণ করতে গিয়েই তার চোখ আটকে গেলো মাটিতে পড়ে থাকা কাগজ গুলোয়। চাঁদের স্পষ্ট আলোয় ঝলমলে মুখের ছবিটা দেখতে পেলো সে। হাতে তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো সাসপেক্টসদের প্রোফাইলগুলো আবার...

সাসপেক্ট ১ : শরিফ বেগতিক
বয়স : ৩২ বছর ৩ মাস ৩ দিন
বাবার নাম : অজ্ঞাত,
বউয়ের নাম : অজ্ঞাত,
শালির পরিমান : সম্ভবত ১ টা (শিউর না),
শালির বয়স : অজ্ঞাত,
পেশা : ব্লগিং (ফুলটাইম)
স্পেশাল কোয়ালিটি : রমনীভাগানী;


সাসপেক্ট ২ : টাকশিক
বয়স : ৩৩ বছর ৫ মাস ৪ দিন
বাবার নাম : অজ্ঞাত,
বউয়ের নাম : অজ্ঞাত,
শালির পরিমান : ১টা,
শালির বয়স : বেশী না,
পেশা : ফাঁপড়বাজী,
স্পেশাল কোয়ালিটি : গালাগালি;

সাসপেক্ট ৩ : কামাল ডাঙ্গর
বয়স : ৩৫ বছর ৯ মাস ৬ দিন,
[সাসপেক্ট বড়ই ঘিরিঙ্গি। কোন রেকর্ড নাই]

প্রথম পাতা উল্টিয়ে পিসি মিত্তির যেইনা দ্বিতীয় পাতায় সাসপেক্ট ৪ -এর ডিটেইলসে চোখ বুলাতে যাবে ঠিক তখনি অদূরে কেউ যেনো সেমেট্রির ঝরা পাতায় খুব দ্রুত পা মাড়িয়ে পেছনের অপেক্ষাকৃত অন্ধকারের দিকে ছুটে গেলো। পিসি মিত্তিরও কাগজ গুলো রেখে ছুটলো পেছন পেছন। কালো গাউন পরা কেউ দৌড়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। সেমেট্রির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে একটা ইঁদুরের গর্তে পা ফেঁসে গিয়ে ধপাস করে না পড়লে হয়তো ধরে ফেলতে পারতো গাউন পরা "ছায়া" টাকে। একটু পরেই একটা সাদা রঙের মাইক্রো বেড়িয়ে যেতে দেখলো মাটিতে ধপাস অবস্থাতেই।

"বাহ্‌, শুরু করতে না করতেই লেজে 'কোম্পানী' লেগে গেলো"! -ঠোঁটের কানায় হাসি ঝুলিয়ে পিসি মিত্তির উঠে পড়লো। হাত দিয়ে ঝাপ্টিয়ে জামায় লেগে থাকা ধূলা ঝেড়ে রওনা দিলো শ্যাওলা পরা ওয়ালের দিকে, যেখানে আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেট আর কাগজগুলো পড়ে আছে।

ফিরে এসে কাগজগুলো হাতে নিয়েই কিছু একটা অসামঞ্জস্য ঠেকলো তার। কাজগগুলো উল্টে দেখলো ভেতর থেকে কয়েকটা মীসিং। সাসপেক্ট ১, ২, ৩, তারপরে ৪ আসার কথা। কিন্তু সেই এনটায়ার পাতাটাই গায়েব। এবার শব্দ করে হেসে ওঠে পিসি মিত্তির। ওভার কোটের ভেতর থেকে টিনের কৌটায় চুমুক দেবার পরপর সেই হাসিটাও মিলিয়ে যায় যখন সে টের পায় তার আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেটটাও হতচ্ছাড়াটা নিয়ে পালিয়েছে।

পিসি মিত্তিরের এবার কান্নায় গলা ধরে আসে!



(-চলবে-)

দ্যা নেমেসিস

"মাথার ওপরে অদ্ভুত রকমের এক পাখি উড়তে থাকবে, ডাকতে থাকবে তার বিচিত্র সুরে। আশ্চর্য হলো, সেই ডাক কেবল তুমিই শুনবে, উপর দিকে তাকালে পাখিটি কেবল তোমারই দৃষ্টিগোচর হবে! তোমার সাথে থাকা এমনকি তোমার সবচাইতে কাছের বন্ধুটিও কিছুই বুঝতে পারবে না। মনে রাখবে, এর জন্য কেবল তোমাকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। তোমাকেই মুক্ত করতে হবে তাকে, তার সাথেই তোমার পরিণতি। একটা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে তোমার তাকে অর্জন করে নিতে হবে" - এই পর্যন্ত শুনেই হঠাত মাথার ওপরে অদ্ভুত আকারের এক পাখির অস্তিত্বের সাথে তার আশ্চর্য রকমের ডাক্‌ অনুরণিত হলো।

"যদি কিছু দেখে থাকো, যদি কিছু শুনে থাকো - তাহলে সময় চলে এসেছে। এখন আর পিছু হটার কোন পথ নেই। তোমাকে যেতেই হবে, যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে, রাজকন্যাকে মুক্ত করে তার গলায় মালা তোমাকেই পড়াতে হবে"।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা গেলো রাজকন্যা নিজেই হাজির "যোদ্ধা"কে নিয়ে যেতে। কিন্তু একি, রাজকন্যার মাথার চুল চাঁছা কেনো! কোজাক রাজকন্যার জন্য যুদ্ধে মারা যাবার রিস্ক নেবো না, ভাবতেই কিনা দিলো হামলা করে! আমার আবার স্বগতোক্তি , "আগেরটাই তো ভালো ছিলো"।

রাজকন্যার (!) সঙ্গীসাথী পাকড়াও হলো, তাঁকে বলা হলো 'তুমি এগোও আমি আসছি'। সে তার সাথীদের নিয়ে নিজের চ্যারিয়ট ছুটিয়ে দিলো। বন্দীদের খাবার তদারকী দেখতে গিয়ে দেখা হলো ফ্রেড এর সঙ্গে।
: সেকি ফ্রেড তুমি এখানে কি করো!

খুব দুঃখের সঙ্গে ফ্রেড দুই লাইনে তার কথা বললো। ভাবছি, ফ্রেডকে সাথে নিয়ে নেবো কিনা। হাজার হোক, পুরনো বন্ধু। একা একা জঙ লড়ার সময় ভরসা তো পাবো...!

Friday, May 11, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ১০

বরিষনের ছোঁয়া থেকে গা বাঁচিয়ে এঁকে বেঁকে হেঁটে যায় মাঝবয়সী রমনী রঙীন ছত্রী হাতে। অদূরে বিদ্যালয় ফেরত বালিকার কলরবে মুখর বিকিকিনির ঘর। গোল পাকিয়ে উঠতে থাকা সিগারের ধুসর ধোঁয়ার সাথে চিন্তাও কুণ্ডলী পাকায়। কালবৈশাখীর প্রবল তোড় থেকে বাঁচতে কিশোর আশ্রয় নেয় সুবিশাল বটবৃক্ষের তলে। চোখের সামনে উড়ে যায় চালা, উপড়ে যায় বৃক্ষ সমূলে। ভয়ে সিঁথিয়ে গেলেই মনে পড়ে যায় মায়ের মুখ। বাতাসের ঝাপ্টা কমতেই ভৌঁদৌড়। মায়ের ভর্ৎসনার সাথে মিশিয়ে ঘরে বানানো ঝালমুড়ি খায়। মুক্তিবেগে চিন্তা ধাবিত হয়ে ফিরে আসে আবার যান্ত্রিক সভ্যতায়, মাঝের অনেক গুলো দশক ছাড়িয়ে। সর্বশেষ সুখটান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে জ্বলন্ত সিগার, 'এখনো অনেক কাজ করার বাকী'!

Monday, May 07, 2007

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এবং ব্যর্থ কিছু 'কমিটমেন্ট'

সময়টা আসলেই খারাপ, খুব খারাপ। এতো চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এরকম 'হা-ভাত' অবস্থায়তো পড়তে হয়নি কখনোই। সবসময়ই একটা সচল, ঝরঝরে অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে পেরেছি, তেমন কোন ঝামেলা ছাড়াই- কিন্তু এখন!

বলছিলাম লেখার সম্ভাবনা নিয়ে। আগের মতো সাবলীল ভাবটা যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। ব্লগের পাতা খুললেই মনে হতো লিখে ভাসিয়ে দিই। আর এখন ঠিক উল্টো। আলসেমী একটা কারণ হলেও প্রধান কারণ যেনো অন্যকিছু। অন্য কোন কারণে, অন্য কোনখানে, অন্য কোন প্রয়োজনে, অন্য কিছু করে যাচ্ছি, অন্য ভাবে বুনে যাচ্ছি সময়ের সূতা।

ইদানিং একটা সিরিয়াল নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি। সারারাত জেগে দেখতেও ক্লান্তি জাগে না। অদ্ভুত এক ঘোর নিয়ে আটকে থাকি। "এলিয়াস" এ সিআইএর নানা দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ডের মাঝেও বিভিন্ন সম্পর্কের প্রতি কমিটমেন্টটা সুদারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে কলাকুশলীরা। এজেন্ট সিডনী ব্রিস্টো আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে পুনরায় জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মাঝখানে যখন কেটে যায় দুটো বছর, এলএ থেকে নিজেকে আবিষ্কার করে হংকং-এ, সেইফহাউজে দেখা হয় সহকর্মী ভন এর সাথে- সবকিছুই কেমন খাপছাড়া লাগে।

ফিরে আসার পরে সিডনীর জানা হয় ভন এর সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার গভীরতা। ছয়মাস দেশের বাইরে কাটানোর পর এনএসএ-র একজন অফিসারের সাথে পরিণয়, সিআইএ ছেড়ে ফ্রেঞ্চ শিক্ষক হিসেবে আত্মনিয়োগ, এসবই ছিলো দুবছর আগের প্রাপ্ত উপাত্তের ডিএনএ পরীক্ষায় সিডনীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর, তাঁর স্মৃতি জাগানিয়া জায়গা গুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে ভন এর এরূপ আচরণ।

সাজানো সেট, সাজানো কাহিনী হলেও কেমন একটা ধাক্কা মারার মতো অবস্থা। বুঝতে পারি, মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। তথাপি কোথায় যেনো কি বেজে ওঠে, কোথায় যেনো নি:শব্দেই 'একটু খারাপ লাগা' ডুকরে উঠে। শরত বাবুর কথার মতো একেবারে গলা পর্যন্ত ফেনাইয়া উঠে...!


প্রতি বছরের মে মাসের প্রথম শনিবার রাইন ল্যাণ্ডের অধিবাসীরা এক অদ্ভুত উৎসব করে। "রাইন আম ফ্লামেন"- আতশবাজির আলোতে রাইন নদী। বিশ্বের নামকরা সঙ্গীতের মূর্ছনার সাথে নদীর উপরের আকাশে খেলা করে নানা রকমের আতশবাজি। বিয়ার-মদের মহোৎসব হয়, চিৎকার, চেঁচামেচি, কোলাহল সব কিছুতেই ভরে থাকে চারদিক।

একবারই গিয়েছিলাম, প্রথমবার। তারপর থেকে আর যাওয়া হয় নি। ইচ্ছে করেনি এমন না, কিন্তু ঐ যে কমিটমেন্ট। নিজের সাথে কিছু কমিটমেন্টের কারণে খুব প্রিয় একটা বিনোদন থেকে স্বেচ্ছায় গুটায়ন।

হ্যামিলন, শহরটা খুব বেশী দূরে নয়! জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তেই চলে "মিউজিক্যাল র্যাট" উৎসব। যেদিন থেকে জানলাম ছোটবেলায় জানা হ্যামিলন শহরটার খুব কাছেই আছি, সেই থেকেই একেক করে দিন গুনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে কবে আমার কমিটমেন্ট পূরণ হবে, কবে আমি শতশত ইঁদুরের মাড়ানো রাস্তায় পা ফেলবো, কবে আমি সেই পাহাড়টি একটু ছুঁয়ে দেখবো যে পাহাড়টির ওপাশে হারিয়ে গেছে একদল কিশোর ভবিষ্যতের কমিটমেন্ট নিয়ে।

ইনস্ট্রুমেন্টালের দিকে ঝোঁক নতুন না। খুব ভেতর থেকে নাড়িয়ে যায় এমন ইনস্ট্রুমেন্টালের ভক্ত আমি বরাবরই। জুবায়ের এর বাশীর এই ইনস্ট্রুমেন্টালটা যখন শুনলাম ভালো লাগাতে সময় লাগে নি খুব বেশী।

রাতে বিছানায় শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে বাঁশীর সুরের সাথে মিশে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম, আমি দাঁড়িয়ে আছি সবুজ ঘাসের একটা খোলা মাঠে। ঝুম করে সূক্ষ্ণ ধারায় বৃষ্টি নেমেছে, বোতাম খোলা সাদা পাতলা শার্টের শরীর ও হাতা নিয়ে বৃষ্টি ও বাতাস কাড়াকাড়ি করছে, আমি শুনছি ইনস্ট্রুমেন্টটা, চুল বেয়ে, কানের ধার বেয়ে, গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে... এক অজানা কমিটমেন্ট নিয়ে!

Saturday, May 05, 2007

ললনাদুর্ঘট : গল্পের শুরু

মেজারের বিলা হওয়ার রেট জ্যামিতিক হারে বাড়তাছে, যেকোন মূহুর্তে উষ্ণ পারদ ঠাশ কইরা গিয়া ব্রক্ষ্মতালুতে হিট করতে পারে।

কইতাছিলাম হল্যাণ্ডের সেই ললনারে বিদায় দেয়ার সময়টার কথা। ট্যাঁওট্যাঁও শব্দে আইসিই ট্রেইনের দরজা বন্ধ হওয়ার সময়টার কথা! দরজা লাইগা গেলো, কাঁচের ঐপাড় থেকে দেখলাম তখনো খাড়ায়া আছে। চোখে প্রশ্ন, মাগার উত্তর কই? হাত নাইড়া বিদায় নিলাম, ট্রেইনও আস্তে আস্তে সাপের মতো মোচড়াইতে মোচড়াইতে কোলনের ডয়চেব্রুকের ওপর দিয়া হাঁটা দিলো, আর কাঁটাপাতলা দিলাম সামনে আগাইয়া ডোমের নিচ দিয়া।

মিউজিয়াম লুডভিগের এইখানে রেলিঙের উইঠা পা দোলাইয়া বইসা কতোক্ষণ মনের আনন্দে বাংলা গান গাইলাম। খুব যে খারাপ গাইছি তার প্রমাণ হইলো, গান গাইলাম অথচ কোন হালায়ই পয়সা টয়সা দিলো না। অবশ্য এমন চিপায় দেয়ারও কথা না। যাইহোক, আমার গানের প্রতিভা মোটামুটি মাঠেই মারা গেলো এই যাত্রায়। হাতের মোবাইলটা বাইর করলাম কি মনে কইরা!

"সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে,লোহার ঐ ব্রীজটা তোমার ভারে ভাইঙা না পড়লে তুমি এখন ডুসেলডর্ফ ছাড়াইছো। ঘরযাত্রা শুভ হোক তোমার"! সেণ্ড করে দিলাম ০০৩১৬...
সাথে সাথেই রিপ্লাই, "মোবাইলটা হাতেই আছিলো। ভাবতেছিলাম তুমি শর্ট ম্যাসেজ করবা। আমি খুব খুশী হইছি। তুমি কি করো"!

একই জায়গায়, একইভাবে বইসা কতোক্ষণ ম্যাসেজ ম্যাসেজ খেললাম। এখন এগুলা লেখতে গেলে পাঠক কইবেন আমি শিমুলের ছাদের কাউয়া খেদানের ধান্ধায় নামছি। থাকুক, কইয়া কাম নাই। আমি রেলিং থেকে নাইমা হাঁটা দিলাম নয়মার্কটের দিকে। পেটের ভেতরে ততক্ষণে বিলাই টম, ইন্দুর জেরীরে সমানে দৌড়াইতাছে!

তার বেশ অনেকদিন পর, হঠাত ফোন কল। হল্যাণ্ড থেকে আবার ক্যাডা ফোনায় আমারে? ধরলাম, হ্যালো কইতেই শুনি সেই চিবানি ইংরেজীতে জিগায়, "আছো কেমন"? জরুরী ভিত্তিতে ইমেইল ঠিকানা নিলো। একটু পরে মেইল চেক কইরাই দেখি কয়েক লাইনের একটা চিঠি। "আমি মনেহয় খুব শীঘ্রই জার্মানীতে আসতেছি"। ভালো তো, আসলে আসো, দেখা হইলে হবে। রিপ্লাইও করলাম এই-সেই, ইনিয়ে-বিনিয়ে।

কয়েকদিন পরে জানাইলো 'পরশুদিন' আসতেছে, সকালের ট্রেইনে। সকাল মানে সকাল সাড়ে দশটায় কোলনে নামবো। লে হালুয়া, আমার অবস্থা টাইট। এমনিতেই পুঁজিবাদীরা আমারে সহ্য করতে পারে না, তারওপর কামলায় ঢোকার আগেই যদি বাং মারি তাইলে উল্টা পোঙা নিজেরই যাইবো। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গেলাম স্টেশনে। ঠাণ্ডায় সব জইমা আছে, আমি খালি ঘামতাছি। বাইরে না, ভিতরে ভিতরে। শালার ট্রেইন ও আইজকাই লেইট করতে হইলো। আসে না আসে না... খাড়াইয়া আছিতো আছিই।

সাপের মতো মোচড়াইয়া ট্রেইনটা অবশেষে প্লাটফরমে ঢুকলো। থামলে পরে প্যাটপ্যাট শব্দে দরজা খুলতে থাকলো। আমি তখন ভাবলাম, মাস খানেক আগে দেখা হইছে, তাও খুব বেশী সময়ের জন্য না। চিনতে পারুম তো!

লোকজন নামতে শুরু করলো, আমার অবস্থা তখন চরমে। সবাইরেই মনে হয় চিনি। সেইরম অবস্থা একেবারে, ঘামছিও মনেহয় একটু আধটু - এমন অবস্থা হইলে আমি অনেক পরিচিত মানুষও চিনতে পারি না। মনে ভয় ঢুইকা গেলো, যদি চিনতে না পারি তাইলে কি হইবো!

Friday, May 04, 2007

ললনা গল্পের খসড়া-

সময়টা বড়ই দুর্গম, তবে দুর্বার কিনা জানি না- বারবার টেরাই মাইরাও কিছু বাইর হইতাছে না। হাল ছাড়ি নাই এখনো, "খাড়াও তুমি জরিনা, আমি তোমারে ছাড়ুম না। লেইখাই ছাড়ুম তোমারে নিয়া কাহিনী, ভয় নাই লাগেও যদি পিছে তোমার প্রেমিক বাহিনী"!

কইতাছিলাম আইফেলের সেই ললনাদুর্ঘটের কথা।

আমি হা কইরা হাঁপাই আর টেরাইয়া টেরাইয়া চাইয়া একটা মুচকি হাসি দেই ছুড়ির দিকে। হঠাত দেখি সে কেমন পরিচিত ভাষায় কথা বইলা উঠলো। আমি চোখ ডলি, ভুল শুনি নাকি ঘরে ঘুমাইয়া খোয়াব দেখি, বুঝতাছি না।

আহা কতদিন পরে পরিচিত ভাষায় কথা শুনলাম। আঙুলের কর গোণা ধরলাম, কইদিন হইলো সেই হিসাব বাইর করতে। শয়তান ছেমরী দিলো আমার হিসাবের তেরোটা বাজাইয়া- "এই ট্রেইন খাড়ায়া রইছে ক্যালা, সিঙ্গেল ট্র্যাক নাকি!"?

ইচ্ছা করতাছিলো চিক্কুর মাইরা কই, "নজমুল হুদা কি ত্রিভুজের কিছু লাগে? আমি ক্যামনে কমু ট্রেইনের লাইন কয়ডা"!
কিছু কইলাম না, দাঁত বাইর কইরা হাঁসি দিয়া কইলাম, এনাউন্সে তো কইলো উল্টা দিকের রেল গাড়ি আইতে দেরী হইবো, চুপ কইরা বইয়া থাকো, কথা কইয়ো না...। ফুড ফর ওয়ার্ক- কথা কম কাজ বেশী!

বেটিগা থ' খাইয়া। কয় কি হালায়! আমন্ত্রন জানাইলো পাশের সিটে বসার। ভাইবা দেখলাম মন্দ না, এক ঘন্টার ভ্রমনটা খারাপ হয় না তাইলে!

বইসা গেলাম পাশের সিটে। তার চিবানী মার্কা কথা শুইনাই বুঝলাম পাশের দেশ হল্যাণ্ডের পাবলিক। ভাইয়ের এখানে বেড়াইতে আসে মাঝ সাঝে। স্কেটিং খুব পছন্দের একটা স্পোর্ট, আর ক'দিন পর বরফ ভালো করে জমলে অস্ট্রিয়া যাবে ভাই-ভাবীর সাথে।

মেয়েটার মাথা পরিষ্কার, কথা বলে দারুণ, আমার মতো ভোম্বল টাইপের না। জমে গেলাম কথায় কথায়। এই কথা সেই কথা নানান কথা এলোপাথারী কথায়! কেটে গেলো ঘন্টা, কোলনে পৌঁছে গেলাম সময় মতোই। ঘড়ি দেখে বললো, হাতে এখনো ৩৫ মিনিট সময় আছে, আমার তাড়া না থাকলে যেন ওকে একটু সময় দিই। দিমু না, হইবো না, যা বেটি ভাগ, খাইয়া আর কাম নাই! নিজের সাথে এই টাইপের যুদ্ধ করেও নিজেকে মানাতে বাধ্য হলাম। স্টেশনের নিচেই একটা দারুণ ক্যাফেতে বসলাম সময় কাটানোর নিমিত্তে!

আমার কথার সাধারণত কোন লাইন বাইন থাকে না। সেই জন্যই বলতে পারছি না এক্সাক্টলী কি কথা হইছিলো সেদিন, তবে মনে আছে পশ্চিমে এই প্রথম কোন সুদর্শনা ললনার সাথে একলা বইসা কফির গেলাসে চুমুক মারতাছি।

৫ মিনিটের মধ্যেই ৩৫ মিনিট শেষ হইয়া গেলোগা (হালার ঘড়ি)। এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে গিয়া তারে আইসিই ট্রেইনে তুইলা দেবার আগেই নিজের ফোন নাম্বারটা দিয়া কইলো যেন যোগাযোগ করি। দরজা বন্ধ হওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে আইসা আমারে জড়াইয়া ধইরা কইলো, "আমি আবার আইতাছি..."!

আমি কিছু বুইঝা, কিছু কইতে গিয়া দেখি, ও ততক্ষণে ট্রেইনের ভিতরে, দরজা ট্যাঁওট্যাঁও শব্দ কইরা বন্ধ হইয়া যাইতাছে!

Sunday, April 29, 2007

হায়রে ললনা!

: ফিল গ্লুক
: ডাংকে
: ভিডারজেন
: আউফ ভিডারজেন...

ঘটনাটা অনেক আগেরই বটে। বছরের হিসেবে এই ধরুন কাপল অফ ইযারস! বেলজিয়াম বর্ডারের কাছে আইফেল নামক এলাকায় যাযাবরি ঘুর্ণনে সচলায়ন আমি। পাহাড়ি উপত্যকায় একটা ছোট্ট ছিমছাম শহরের (গ্রাম বলাই ঠিক হবে) ট্রেইন স্টেশনের স্টেশন মাস্টারনীর তালমিস্রিহাসিযুক্ত শুভকামনা নিয়ে দৌড়ে গিয়ে কোন রকমে ট্রেইনে উঠলাম।

এই ট্রেইন মিস করলে আরও এক ঘন্টা বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তবে মন্দ হতো না। জায়গাটা দারুণ। একটা গির্জা আছে বিরাট উঁচু, কয়েকশ বছরের পুরনো। প্রতি আধা ঘন্টায় ঢংঢং করে যখন বেজে উঠে ঘন্টিটা, মনেহয় জনমানবহীন কোন গ্রামে এই বুঝি পাশের সেমেট্রি থেকে খালবাকল ওঠা একদঙ্গল ভূত এসে আমার সাথে রসিকতা শুরু করবে এখনই।

রাস্তার লেভেল থেকে ঘুরানো পথ বেয়ে বেয়ে একেবারে পাহারের উপরে উঠে যাওয়া যায়, যেখান থেকে পুরো গ্রামটাকে দারুণ সুন্দর করে উপভোগ করা যায়। পাহারের গায়ে বাড়িগুলো দেখা যায়, কী করে পাহারের একেক পরতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। সবার নিচে ট্রেইন লাইন, যখন ট্রেইন যায় - ওপরের পাহাড় থেকে মনে হয় কীড়ামতো কোন পোকা বাঁকাত্যাড়া হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

ট্রেইনে উঠে হাঁপাচ্ছিলাম ১৫০ মিটার স্প্রিন্টের কারণে। হাঁপাতে হাঁপাতেই গিয়ে একটা ফোর সিটারের একটায় পা ছড়িয়ে বসে হা করে নি:শ্বাস ফেলছি। হঠাত মনে হলো পাশের সিট থেকে একজোড়া চোখ আমাকে খুব কৌতূহলী হয়ে অনুসরণ করছে। আমি হা করে নি:শ্বাস ফেলতে ফেলতেই সেদিকে তাকালাম... বিনিময় হলো দুইটা কদমফুলহাসি... শুরু হলো নতুন কিছু...

Wednesday, April 25, 2007

বৈশাখ : বাঙালী জাতির সংগ্রামের আরেক আখ্যান

******************************

এবার হাজারদুয়ারীর নতুন সংখ্যা আপলোড করার আগ মূহুর্তে দারুণ কিছু সময় কেটেছে ভোর বেলা, পাখীদের কলতানে। মনে হইছে আমি যেন সেই গ্রামের রাস্তাটা ধইরা একটা ভোঁ দৌড় দিতাছি...

*******************************


চৈত্রসংক্রান্তি, চৈত্র মাসের শেষদিনটির গোধূলী লগ্নে ধূলো উড়িয়ে ঘরে ফেরা রাখাল কি জানে একটু পরেই লাল সূর্যটা ডুবে গিয়ে যে নতুন দিনের আগমনী বার্তা জানাবে সেই নতুন দিনের আগমন ইতিহাস! গাঁয়ের মহাজন কি জানে তাঁর খাজাঞ্চি বগলের নিচে যে লাল মলাটের স্বাস্থ্যবান খাতাটি নিয়ে ঘুরে তার হিসাব বন্ধের পিছনে 'হালখাতা' নামক শব্দটির ইতিহাস! গঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ী কি জানে, তাঁর সকল ক্রেতার কাছ থেকে পুরনো বছরের হিসাব বুঝে নিয়ে যে মুফতে মিষ্টিমুখ করিয়ে দিলো তার পেছনের ঘটনা! কিংবা ওইযে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, অশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে অভ্যস্ত যে ছাত্রটি গায়ে দামী পাঞ্জাবী চড়িয়ে সাতসকালে রমনার বটমূলে গিয়ে হেরে গলায় "এসো হে বৈশাখ, এসো এসো" গানে তাল মেলাচ্ছে সে কি জানে এই গানটির পেছনের ইতিহাস!

আমি নিশ্চিত না হয়েও বলতে পারি, অনেকেই জানে না বৈশাখের ইতিহাস, বৈশাখের ঐতিহ্য, বৈশাখের আবেদন একজন বাঙালীর জীবনে কতটুকু।

বৈশাখ বাঙালীর জীবনে এমনি এমনি আসেনি। এদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার চেষ্টা করেছে বৈশাখের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে, প্রচার করেছে "হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি" বলে। কিন্ত ইতিহাস বলে, যার হাত দিয়ে বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তন হয়েছে তিনি কেবল মুসলমানই ছিলেন না বরং সারা মুসলিম বিশ্বে একজন নামকরা, উদারপন্থি শাসক হিসেবে আজও পরিচিত। সেই জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবরের শাসনভার গ্রহনের আগে মুঘল আমলের পুরোটা সময় ধরেই কৃষিখাজনা আদায় হতো হিজরী সনের হিসাবে।

হিজরী সন আসলে চাঁদের হিসাব অনুযায়ী নির্ধারিত হয় কিন্ত উপমহাদেশের সারা বছরের কৃষিকাজ চাঁদের সাথে অতোটা সম্পর্কায়িত নয়, যে কারণে কৃষকেরা তখন খাজনা প্রদানে প্রতিকূলতার স্বীকার হতো। যথাসময়ে যথাযোগ্য খাজনা আদায়ের অভিপ্রায়ে তখন সম্রাট আকবর তাঁর সভার বিশিষ্ট গুণীজন ফাতেউল্লাহ্ সিরাজীকে দিয়ে হিজরী চন্দ্রাব্দ এবং বাংলা পঞ্জিকার সমণ্বয়ে "বাংলা বছর"-এর প্রচলন করেন, যা "ফসলী সন" নামে ১৫৮৪ এর মার্চ মাসে প্রবর্তিত হয়। আসলে ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের দিনটি থেকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বছরের সূত্রপাত হয়।

সম্রাট আকবরের আমল থেকেই বাংলা নতুন বছরাগমনের অর্থাৎ বৈশাখের প্রথম দিনটির উৎসবমূখর উদযাপন হয়ে আসছে। বছরের শেষদিন, চৈত্রসংক্রান্তির সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুব দেবার আগেই পুরাতন অর্থবছরের সকল হিসাব চুকিয়ে ফেলার নিয়ম। বছরের প্রথম দিন মহাজন, ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতা বন্ধুদের নিমন্ত্রন করে মিস্টিমুখ করানোর মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবসায়ীক লেনদেনের পুনঃসূচনা করতেন "হালখাতা" বা হিসাবের নতুন খাতা খুলে। লুপ্তপ্রায় এই ধারাটা সোনা-ব্যবসায়ীরা আজও ধরে রেখেছে।

সম্রাট আকবরের আমলে সর্বভারতে খাজণা আদায়ের নতুন বছরের সূচনা হলেও, পুরনো দিনের সকল হিসাব পেছনে ফেলে আনন্দের নতুন বছরে পদার্পন বাঙালীদের মাঝে ঐতিহ্য হিসেবে টিকে গেছে। সবচাইতে বর্ণাঢ্য বৈশাখ উদযাপন হয় ঢকা শহরকে ঘিরে। বছরের প্রথম সূর্যের আলোকে বরণ করে নিতে দলে দলে লোক সমবেত হয় রমনার বটবৃক্ষের তলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা সারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর প্রদক্ষিণ করে। সাদা পাজামার সাথে পাঞ্জবী পরিহিত ছেলেদের পাশে খোঁপায় বেলী ফুলের মালায় সজ্জ্বিত হয়ে, লাল পেড়ে সাদা শাড়ীর তরুণীরা মেতে ওঠে "ইলিশ-পান্তা" উৎসবে।

গ্রামাঞ্চল ও কোনদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই "পহেলা বৈশাখ" উদযাপনে। জায়গায় জায়গায় বসে মেলা হরেক রকম জিনিষের পসরা সাজিয়ে। বাড়ি বাড়ি বিলানো হয় ঘরে তৈরী মিস্টি, নতুন চালের পায়েস ইত্যাদি।

আর সবকিছু ছাপিয়ে এ প্রজন্মের একজন বাঙালীকে বৈশাখ যা শেখায় তা হলো সংগ্রাম করার সংকল্প। বাংলা সংস্কৃতির ওপর কালো থাবা বিস্তারে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। পাকিস্তান সরকারের এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতেই "ছায়ানট" ১৯৬৫ সালে রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "এসো হে বৈশাখ এসো এসো" গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু করে। বস্তুত এই দিনটি থেকেই "পহেলা বৈশাখ" বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম এক পরিচায়ক রূপ ধারণ করে। ১৯৭২ সালে 'পহেলা বৈশাখ' বাংলাদেশের জাতীয় পার্বন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ২১এ ফেব্রুয়ারীর মতোই থামিয়ে দিতে চেয়েছে বৈশাখের উদযাপন। সেই সূত্র ধরেই ২০০১ সালের বোমা-গ্রেনেড হামলা।

কিন্ত অজেয় বাঙালীর সামনে মাথা তুলে কোনদিনই দাঁড়াতে পারেনি কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি। পহেলা বৈশাখের আবেদনও শেষ হয়ে যায়নি শত বাঁধার মুখেও। ঢাকা পেরিয়ে বৈশাখ আজ পালিত হয় জার্মানীর প্রাক্তন রাজধানী বনেও, পালিত হয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে যেখানে ন্যূনতম সংখ্যক বাঙালীও বিদ্যমান।

এইতো আমাদের বাঙালী ঐতিহ্য, এইতো আমাদের বৈশাখের ঐতিহ্য, শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সহস্র প্রতিকূলতা পেরিয়ে, রাস্ট্রীয় অস্থিতিশীলতার মাঝেও আমাদেরকে মাতিয়ে তোলে বর্ষবরণ উদযাপনে।

দেরীতে হলেও আমার ব্লগের পাঠকদের জন্য রইলো বাংলা নতুন বছরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।

************************

লেখাটি একই সাথে হাজারদুয়ারীতে প্রকাশিত।

Wednesday, April 18, 2007

ধীরে ধীরে!

ধীরে ধীরে সকালের সূর্য্য ঢলে পড়ে একসময় পশ্চিমাকাশে,
ধীরে ধীরে গোধূলী পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে একসময়,
ধুরুধুরু বুকে একসময় কাছে আসা প্রিয়ার চকচকে চোখ ঘোলাটে হয়ে আসে ধীরে ধীরে,
ধীরে ধীরে সবাই 'ইনোসেন্স' এর দিকে রিটার্ণ করে
এবং-

সকল গুজবই সত্যি হয় একসময় ধীরে ধীরে...
ধীরে ধীরে...!

Sunday, April 01, 2007

স্কুলের টিফিনের টাকার জন্য...

স্কুলের বারান্দায় দাঁড়ানো শীর্ণ বসনের কোন এক কিশোর গভীর শূন্যদৃষ্টি মেলে দেয় আকাশের দিকে। বিড়বিড় করে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে কি যেন বলে। শক্ত চোয়াল, ক্ষিপ্র চাহনীতেই বুঝা যায় ঝগড়ায় মত্ত সে জগৎ-পিতার সাথে। হঠাৎ করেই ক্লাস রুমে ঢুকে ছোঁ মেরে বেঞ্চের ওপর থেকে বইগুলো তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

গ্রামের স্কুল, অত পাহাড়া কোথায়! টিফিন পীড়িয়ডে সবাই ব্যস্ত টিফিনে। ছেলেদের একটা জটলা ঘিরে আছে স্কুলের পাশের পুরির দোকানটিতে। দোকানটির সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেটি কতোক্ষণ পুরি ভাজা দেখে।

বিকেল পর্যন্ত থাকা লাগে স্কুলে, কিছু একটা পেটে না পড়লে টিফিনের পরের ক্লাস গুলোর কিছুই যেন ঢুকেনা মাথায়। রাজ্যের ক্ষুধা নিয়ে ছেলেটি দিনের পর দিন স্কুলের ক্লাস গুলো করে যায়। পুরির দোকানী একের পর এক খোলা পুরি ভেজে সামনের নিউজপ্রিন্ট বিছানো বড় থালাটিতে রাখে। ছেলেটির সহপাঠীদেরই অনেকেই ভেতরে বসে তেঁতুলের চাঁটনী সহযোগে গরম গরম পুরি খেয়ে যাচ্ছে। সে কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে....।

দরিদ্্র বাবার কোন সামর্থ্য নেই ছেলের স্কুলের খরচ যুগিয়ে টিফিনের জন্য পয়সা দেয় আলাদা করে। ঠিক করে, সহপাঠীদের টিফিন খাওয়ার দৃশ্যে তাকিয়ে না থেকে নিজেই উপার্জন করবে নিজের টিফিনের খরচ। যোগার করে আরও দুইজন তার মতো বন্ধু। তিনজনে মিলে ঠিক করে কাছে কোথাও মজুরি খাটবে। যে টাকা পাবে তা তিনজন ভাগ করে নিবে। কিন্ত খবরদার! বাড়িতে জানানো যাবে না- তাহলে বাবা পিঠের চামরা আস্ত রাখবে না।

পরদিন সকালে তিনজন স্কুলের নাম করে বেরিয়ে যায় মজুরির খোঁজে। মিলেও যায়। গ্রামের এক গৃহস্থের ধানক্ষেতে নিড়ানি দেবার কাজ। চুক্তি 150 টাকা। সারাদিন তিনজনে হাড়ভাঙা খাঁটুনি দিয়ে উপড়ে ফেলে গৃহস্থের বেঁধে দেয়া বিরাট সীমানার ক্ষেতের আগাছা। সন্ধ্যায় গৃহস্থ 100 টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে বাকিটা কাল দিবে, হাটে।

তিন বন্ধু চলে আসে। পরদিন স্কুলে যায়। এবার তারাও টিফিন টাইমে পাশের দোকানের পুরি খেতে পারবে, গরমে চান্দি ফাটার সময় খেতে পারবে আইসক্রিমও। এক বন্ধু হঠাৎ মনে করিয়ে দেয়, গতকালের পাওনা 50 টাকার কথা। আগে টাকাটা নিয়ে তারপরেই নাহয় টিফিন করা যাবে একসাথে মজা করে। গৃহস্থের কাছে যায় তিনজনই। টাকা চায় শূন্যদৃষ্টি মেলে ধরা সেই ছেলেটি। কিন্ত একি...!

গৃহস্থ টাকা দেয়ার বদলে ছেলেটিকে জোরে জোরে কিল-চড়-ঘুষি মারতে থাকে অনবরত। দরিদ্্র বাবা মায়ের সেভেন পড়ুয়া সন্তান, সে কেন বয়স্ক , শক্ত পেশীর গৃহস্থের হাতের কঠোর মার সহ্য করতে পারবে! ঘটনাস্থলেই দমবন্ধ হয়ে মারা যায় ছেলেটি।

পুলিশ আসে, গৃহস্থ স্বীকার করে পাওনা 50 টাকার কথা, কিন্ত আঘাতের কথা নয়। বাকিদুজন কিশোর বন্ধু কাঁদতে কাঁদতে সাক্ষ্য দেয় ঘটনার। পুলিশ নিয়ে যায় ছেলেটির লাশ আর গৃহস্থকে। হয়তো লোকটির বিচার হবে, ফাঁসির রায় হবে বিচারে, কিন্ত -

দরিদ্্র মা-বাবা কি ফিরে পাবে তাদের নয়নের ধন ছেলেকে? যে ছেলেটিকে মাত্র 50 টা টাকার জন্য বেঘোরে প্রাণ দিতে হলো!
=========================

তথ্যসূত্র : দৈনিক প্রথম আলো
উৎসর্গ : রংপুরের জিকরুল হক, যে কেবল 14 বছর বয়সেই চেষ্টা করেছিলো নিজের পায়ে দাঁড়াতে, বাবা মায়ের বোঝা খানিকটা হালকা করতে।

মনটা খারাপ খবরটা পড়ার পর থেকেই

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৯

অবশেষে বিদেয় হয় বিষাদের হরিষ। ঝলমলে চাঁদ অবলোকনে আনমনো হাত অভ্যাস বশে তুলে আনে এসএমএসের যন্ত্র। পরক্ষণেই সপ্তদিবস আগের 'সস্তা' শব্দ, মেঘ এনে ঢেকে দেয় উৎফুল্লতা। কংকরের বাঁধানো গাছের গোড়ায় বসে খেয়াল হয়, বাতাসে বসন্তের ছোঁয়া। ধাক্কা লাগে এসে, বসন্ত এবং সস্তা অনুভূতির। স্মৃতি হাতড়ে ফিরে বন্ধুদের সঙ্গ, অজানা ভাবনায় আবেশি হয়ে ওঠে মন নামক ফালতু বস্তু। কেটে যায় প্রহর- টিকটিক- টিকটিক! কোকোনাটকিসের ননএ্যালকোহলিক ড্রিঙ্কস গলাধঃকরণ, বসে যাওয়া ফাঁটা বাঁশে পুটুর পটুর। নিদ্্রাদেবীর আদর অ-ভোগে বোয়াল মাছের চোখ ঢাকতে কালো চশমার আবির্ভাব। শরীরে রোদ লাগে, মনেও যায় মেখে! গেনারেল আনসাইগারের একটা গ্যাস বেলুন বাতাসের তোড়ে উড়ে যায় রাইনের দিকে, সূতায় বাঁধা একটা অপ্রিয় শব্দের ধারক নিয়ে- "বৃষ্টিনুপূর"

Saturday, March 31, 2007

নিজের দেখা / শোনা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার আর্কাইভের জন্য-

71 সালের মাঝামাঝি কোন একটা সময়। আমার স্মৃতিশক্তি বিট্রে করছে ইদানিং আমার সাথে, নাহলে তারিখটা সহ-ই বলা যেতো। আমাদের মাধবদী এলাকায় যুদ্ধে লিপ্ত আছে কয়েকটা মুক্তিসেনার গ্রুপ। তেমনি এক গ্রুপের কমান্ডার আনোয়ার। ভীষন সাহসী আর নির্ভিক। আলগী নামক গ্রামে এক অপারেশনে আসে। এই আলগী গ্রামের অবস্থান মাধবদী বাজার থেকে খুব বেশী দূরে নয়। মাধবদী বাজারে অপারেশন চালানোর জন্য কান্দাপাড়া আর আলগী গ্রামের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

নুরালাপুর হয়ে আনোয়ারের গ্রুপ আলগী ভুঁইয়া বাড়িতে অবস্থান নেয়। পাক-হানাদারদের ভয়ে আলগী গ্রাম প্রায় ফাঁকা তখন। আলগী গ্রামে তখন ইতস্ততঃ ঝোপঝাড় আর জঙ্গল। একটা বড়, মাটির রাস্তা এঁকে বেঁকে মাধবদী বাজারের দিকে চলে গেছে।

ভুঁইয়া বাড়ির দোতলা দালানটিতে গড়ে ওঠে আনোয়ারদের আস্তানা। উদ্দেশ্য, এখান থেকেই আস্তে আস্তে মাধবদী বাজার মুক্ত করে সামনে পাঁচদোনার দিকে এগুবে তাঁরা।

সব প্ল্যান ঠিক হয়। কবে অপারেশন হবে, কে কোথায়, কোনদিক দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালাবে, সবকিছু। অপারেশনের আগের রাতে, যখন সবাই গভীর ঘুমে। তখনই হঠাৎ বুটের ধুপধাপ আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আনোয়ারদের। কিছু বুঝার আগেই বাড়িটি তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে পাক সেনারা। বাকি একদিকে কাঁটাবন। লম্বা চাবুকের মতো লতার সারা গায়ে কাঁটা। ঐ কাঁটার ঘন জঙ্গল ছিলো সেদিকটায়। কয়েকজন ঝুপ ঝুপ করে লাফিয়ে পড়ে সেই কাঁটায়। কোন মতে সারা শরীর ছিলে বের হয়ে দৌড়ে চলে যায় ডৌকাদীর দিকে। পালাতে পারে না আনোয়ার সহ কয়েকজন। আটকা পড়ে তারা।

ঘরে ঘরে তল্লাশী হয়। পাওয়া যায় যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম। "সাক্ষাৎ মুক্তি"- প্রমাণিত। এগিয়ে আসে রশীদ, রাজাকার রশীদ নামে যিনি এখন সর্বাধিক পরিচিত। মাধবদীর অদূরে বাগবাড়ি নামক জায়গায় যার বাড়ি। তার নির্দেশে বেঁধে ফেলা হয় আনোয়ার আর তাঁর সঙ্গীদের। আনোয়ার শুধু একবার বলে, "আপনে না আমার চাচতো ভাই...! আপনে এই জালিমগো হয়া আমারে মারোনের লাইগ্যা লইয়া যাইতাছেন, রশীদ ভাই? অহনো সময় আছে আমরা ইচ্ছা করলেই এগোরে শ্যাষ কইরা দিতাম পারি...।" রাজাকার রশীদ তখন আনোয়ারকে ধমক দিয়ে বলে, "দেশের লগে গাদ্দারী করছস তুই। এহন তোরে মায়া কইরা আমি মরমু নিহি"?

বাড়ির নিচে কাঁঠাল গাছের সাথে বাঁধা হয় তিনজন মুক্তি সেনানী কে। তারপর রাজাকার রশীদের নির্দেশে তাঁদের বুক বরাবর চালানো হয় গুলি। গুলির ধাক্কায় দেহ গুলো লাফিয়ে ওঠে, রক্তে ভেসে কাঁঠাল গাছের তলা...। রশীদেরা ফিরে যায় একসময়। আনোয়ারদের লাশ ফেলে রেখে যায় রক্তের নালায়।

আমি যতোবারই ঐ বাড়িটির সামনে দিয়ে যেতাম, ততবারই মনে হতো- হয়তো ঠিক এখানটাতেই পড়েছিলো আনোয়ারের মুক্তিকামী শরীরটি, হয়তো এখনো তিনি ঘোলা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে এক জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে। আমি, স্বাধীনতা-উত্তর এক প্রজন্ম, কী-ই বা করতে পেরেছি আনোয়ারদের জন্য?

কিছু যে করিনি তাও তো নয়। যখন সেভেনে পড়ি তখন রশীদ রাজাকারের ছোট ভাই আমাদের বাড়িতে আসে। আমি সবার সামনেই চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম, "তোমার ভাই একটা রাজাকার..."। প্রবল শাসনের ভেতর রাখা আমার মা আমার এমনতর 'ঔদ্ধত্বে' সেদিন কিছুই বলেনি। কেউ যদি ঢাকা থেকে সিলেট গেলে পাঁচরূখী বাজারের পর একটা জায়গায় 'উট মার্কা ঢেউটিন'-এর কারখানা দেখতে পাবেন। জায়গাটার নাম বাগবাড়ি। লোকাল বাসের এখানে একটা স্টপেজ আছে, "রশীদ রাজাকারের বাড়ি"। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর মনে হয় স্টপেজটা ঐভাবে আর বলে না কেউ।

লোকটি এখনো জীবিত যে!

Friday, March 30, 2007

এখন ই সময় স্বপ্ন বোনার...


আমরা স্বপ্নে বাঁচি, স্বপ্ন গড়ি, স্বপ্ন বুকে ধরে দেবো পাড়ি, বহুদূর...

একই চাঁদ - - একই আকাশ তলে আমরা জোছনা দেখি ওরা কাণ্না ভোলে। করি আজকে তাই স্বপ্ন বাছাই, পূর্ণিমার আলোয় তাদের দেখাই।।

হঠাৎ থমকে উঠি। সারা শরীর নেচে ওঠে। ভালো লাগায় না, শংকায়। চোখ খুলে বুঝতে পারি ঘুমাচ্ছিলাম। ভেঙে যায়। কষ্ট হয় দুচোখের পাতা আবার এক করতে, আবার ঘুমের রাজ্যের মেঘ ধরে ধরে দৌড়ে বেরাতে!

শীত শেষের বরিষন। বলা উচিৎ বসন্তের আগমনের। কান পেতে থাকলে বুঝা যায়- ঝরঝর ঝরঝর। নুপূরের শব্দ ভালো লাগে। বৃষ্টি যদি নুপূর হয়ে কারো পায়ে ঝরতে থাকে। নুপূর পায়ে বৃষ্টির রিনঝিন রিনঝিন নাচ...। তন্দ্্রালু হয়ে সেই শব্দে বিভোর হয়ে যাই। চোখ মুদে আসে আপনা থেকেই, ক্লান্ত যে খুব! আবারো স্বপ্নের দেশে, মেঘের রাজ্যে, দু'হাতে স্বপ্ন আর মেঘ ছুঁয়ে দেই আমি।

শুকনা বালুর পায়ের নিচে সুড়সুড়ির জ্যান্ত অনুভুতি। সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত- ঠিক মনে নেই। তবে আলোটা দারুণ লাগে। সমূদ্্রপারের সুড়সুড়ি জাগানো বালুর তট ধরে হেঁটে যাই আনমনে। একদম একা!

মাথার ভেতর কথোপকথন। পূর্ণেন্দু পত্রীর না। আমার নিজের। নিজেকে নিজে বুঝাই, আর কতো! ওপেন দ্যা ডোর...। আবার নিজেই বলি- কই ভোরতো হয়নি! দোর খুলে যে বাতাস আসতে দিতে চাও, সে বাতাস তো তোমার জন্য বহমান নয়। এ যে স্বপ্নের বাতাস, ভুল বাতাস, তোমাকে শীতল করতে পারে না। তুমি স্বপ্ন দেখছো। স্বপ্ন!!

জীবনের সবচাইতে বড় কমপ্রোমাইজটা করে ফেলেছি, তাও এই স্বপ্নের জন্যই। কখনোতো হার মেনে নেইনি। আচ্ছা কমপ্রোমাইজ কি হারের সাথে তুলনা হয়! হয় বৈকি! না হলে- হোয়াই মী এন্ড অনলি মী...!

স্বপ্নের কথা আপাতত বাদ। হঠাৎই ভাঙা ঘরের চালা ভেদ করে ঠিকরে পরে এসে চাঁদের রূপালী আলো যেন। আহ কতগুলো দিন পর আবার আনন্দে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে। ভাসতে চাই এরকম অনবরত। ভোর বেলার স্বপ্ন পুরণ হয় শুনেছি। আমি বোধহয় সেই আশাতেই বুক বেঁধে আছি...।

প্রয়োজন শুধু একটু আশার, এখনই সময় স্বপ্ন বোনার- আমরা স্বপ্নে বাঁচি, স্বপ্ন গড়ি, স্বপ্ন বুকে ধরে দেবো পাড়ি, বহুদূর...

আমি পরাজিত হবো না, আমরা পরাজিত হবো না। মেঘেরা কখনোই পরাজিত হয় না...! স্বপ্নেরা কখনোই পরাজিত হয় না...!!

Monday, March 26, 2007

স্বাধীনতা দিবসের স্যালুট :: ঘোষক নিয়ে ক্যাচাল

লেখাটা একই সাথে হাজারদুয়ারীতে প্রকাশিত, যা আজকেই আপ হয়েছে।

========================

স্বাধীনতার 36তম বার্ষিকীতে এসেও যে বিষয় গুলো এখনো মুখরোচক, ঘোষক বিতর্ক তার মধ্যে অন্যতম। এতগুলো দিন অতিবাহিত করার পরেও স্বাধিনতার ঘোষক বিতর্কে এখনো একমত হওয়া গেলো না। স্থান দেয়া গেলো না স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জন্য সংরক্ষিত আসনে, দেওয়া হলো না তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার, অন্যতম মুক্তিসেনানী মেজর জিয়াউর রহমানকে তাঁর যোগ্য সম্মান।

বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে চলেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক ক্ষেত্র এদিক দিয়ে সবচাইতে এগিয়ে। বর্গীদের হানা বন্ধ হলেও তাদের উত্তরসূরীরা কখনোই থেমে ছিলো না এদেশে। ধন-সম্পদের মতো তারা তাদের হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকেও। কালো পর্দা দিয়ে দৃষ্টি ঢেঁকে দিয়েছে এদেশের মানুষের, রেখেছে অন্ধকারে। রচিত হয়েছে নতুন ইতিহাস, যে ইতিহাস সত্যকে ধারণ করেনা সে ইতিহাস। স্বাধীনতার নানা ঘটনার সাথে চাপা পরে গেছে "স্বাধীনতার ঘোষক"-এর প্রকৃত নাম।

স্বাধীনতার ঘোষকের কথা বললে সাধারনভাবে যে প্রমান সবাই চোখের সামনে পেতে চায় তা হলো 'দি স্টেটসম্যান' পত্রিকার মার্চ 27, 1971 এর সংখ্যাটি। মি. রহমান-এর উদ্বৃতি দিয়ে প্রকাশ করা ঘোষনাটিকেই ধরা হয় মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষনা। বলাহয় মি, রহমান বলতে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানকেই বুঝিয়েছিলো স্টেটসম্যান। আর তাই মেজর জিয়াউর রহমান হলেন বংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা ছিলো খানিকটা ভিন্ন। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম থেকে প্রথম যে ঘোষনাটা পাঠ করেন (বঙ্গবন্ধুর পক্ষে) তার সময় ছিলো 27 মার্চ সন্ধ্যা 7টা 30 মিনিট। 27 মাচের্র সন্ধ্যায় প্রচারিত ঘোষনাটি 27 তারিখের পত্রিকায় আসাটা কোনভাবেই যুক্তিসিদ্ধ হয় না। তাহলে দি স্টেটসম্যান কোন ঘোষনার কথে উল্লেখ করেছিলো, আর মি, রহমান বলতে তাহলে কাকে বুঝিয়েছিলো?

ইতিহাস বিকৃতির স্বীকার অনেকেই মানতে নারাজ যে 25শে মাচের্র কালো রাতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতে আটক হবার আগেই আলোচনা ভেস্তে গেলে কি পরিস্থিতি হতে পারে তা আঁচ করেছিলেন এবং তাঁর লিখিত দু'টি ঘোষনার পাশাপাশি নিজের কণ্ঠে একটি মেসেজ তৈরী করেছিলেন যা কিনা 25শে মাচের্র কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হত্যাজজ্ঞ শুরু হওয়ার পর একটি হ্যান্ডি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে প্রচার করা হয়।

এই প্রিরেকর্ডেড মেসেজ এবং হ্যান্ডি ট্রান্সমিটারের বিষয়টি গোঁপন থাকে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং এবং তাঁর খুব কাছের কয়েকজন সিনিয়র সহকর্মীর মাঝে। 25শে মার্চ রাত 11:30 মিনিটে বলধা গার্ডেন থেকে হ্যান্ডি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে 'রেডিও পাকিস্তান ঢাকা'-এর ফ্রিকোয়েন্সীর খুব কছাকাছি ফ্রিকোয়েন্সীতে প্রচার করা হয় প্রি-রেকর্ডেড মেসেজটি, যাতে করে যারা যারা রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র শুনবে তারা তখন মেসেজটিও শুনতে পাবে, এই ছিলো উদ্দেশ্য। আর সবচেয়ে বড় যে উদ্দেশ্যটি ছিলো তা হলো ঢাকায় অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কাছে মেসেজটি পৌঁছানো। সে উদ্দেশ্য যে সফল হয়েছিলো তার প্রমান ডেভিড লসাকের 'পাকিস্তান ক্রাইসিস' বইটি। এই মেসেজটিই হচ্ছে মহান স্বাধীনতার ঘোষনা যা বাংলাদেশ ডকুমেন্ট হিসেবে ভারতে সংরক্ষিত আছে এবং যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলে রস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর আমলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তৎকালীন ডেইলী টেলিগ্রাফের সাংবাদিক লসাক তাঁর বইটি প্রকাশ করেন বিলেত ফিরে গিয়ে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগেই।

গোটা পৃথিবী যাতে বাংলার মানুষের স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলনকে উগ্র-বিচ্ছিণ্ণতাবাদীদের আন্দোলনে রূপ না দিতে পারে সেজন্যই বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা করেছিলেন সঠিক সময়ের। সিদ্দিক সালিক তাঁর "হুইটনেস টু স্যারেন্ডার"-এ লিখেছেন যে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সিনিয়র সহকর্মীর মাঝে গোঁপন বৈঠকের সময়ই নির্ধারিত হয়েছিলো যুদ্ধ বাঁধলে কয়টা সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ পরিচালিত হবে এবং কে হবেন যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।

25 শে মার্চ রাতে ইয়াহিয়া বাঙালী জাতিকে ব্লাফ দিয়ে পালিয়ে যাবার পরই বঙ্গবন্ধু গোঁপন পরামর্শ মোতাবেক সিনিয়র নেতাদের ভারতে পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার নির্দেশনা দেন। অত:পর তিনি নায়ীম গওহর ও মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে টেলিফোন বার্তা পাঠান চট্টগ্রামে জহুর আহম্মদ ও এমআর সিদ্দিকের কছে। এর পরপরই বলধা গার্ডেন থেকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর "দিস মে বি মাই লাস্ট মেসেজ, ফ্রম টুডে বাঙলা দেশ ইজ ইন্ডিপেন্ডেন্ট..." এই অবিস্মরণীয় প্রি-রেকর্ডেড মেসেজটি। এই মেসেজটির কথা ইয়াহিয়া খান 26 মার্চ বেতার ভাষনে বলেছিলেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত শ্বেতপত্রেও উল্লেখ করা হয়।

একই ঘোষনার মেসেজ ইপিআর যখন পাঠাতে শুরু করে ততোক্ষণে 25 শে মাচের্র রাত শেষ হয়ে 26 শে মার্চ শুরু হয়ে গিয়েছিলো বলেই আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করি 26 শে মার্চ।

রবার্ট পেইনের ম্যাসাকার অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু তখন আরেকটি যুদ্ধ ঘোষনার মেসেজ ডিকটেট করেন "পাক আর্মি সাডেনলী এট্যাক্ট ইপিআর বেইস এট পিলখানা এন্ড রাজারবাগ পুলিস লাইন, কিলিং সিটিজেন্স..."।

26 শে মার্চ দুপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় এম এ হান্নানের ভরাট কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা বার্তা। বেলাল মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানে আবুল কাশেম সন্দীপ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার উল্লেখ করে সাধারণকে উদ্দীপ্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন।

এর মধ্যে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ফোর্স নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে করতে পিছিয়ে পটিয়া চলে আসেন। তখন তাঁকে অনুরোধ করা হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাহারা বসানোর জন্য। মেজর জিয়া সে অনুরোধ সানন্দে গ্রহন করেন এবং 27 তারিখ সন্ধ্যায় তিনি বেতার কেন্দ্র পরিদর্শনে এলে বেলাল মোহাম্মদ তাঁকে অনুরোধ জানান যেন সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে তিনি একটি ঘোষনা দেন।

মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পরপর দুটি ঘোষনা পাঠ করেন যার দ্বিতীয়টি ছিলো এরকম, "আই, মেজর জিয়াউর রহমান ডু হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার দ্যা ইনডিপেন্ডেস অফ বাংলাদেশ অন বিহাফ অফ আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লীডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান...", বেলাল মোহাম্মদের "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" বইতে উল্লেখ আছে তা।

একথা ঠিক যে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষনা সবচাইতে বেশী মানুষ শুনেছে এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকে পলিটিশিয়ানদের সাথে সেনাবাহিনীও যোগ দিয়েছে যুদ্ধে- এই ঘোষনায় সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তুমুল জাগরণ তৈরী হয়।

পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার মেসেজ পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধুর প্রি-রেকর্ডেড সেই মেসেজটির মাধ্যমে। আর মাস পিপোলের কাছেই যদি মেসেজ পৌঁছানোর কথা বলি, তাহলে 7-ই মাচের্র সেই অবিস্মরণীয় ভাষনের কথা বলতে হয়।

আরো দলিল আছে, চাইলে আরও দেয়া যাবে। এখানে যতটুকু আপাতত দরকার, দিলাম এখানে-এবার আপনারাই ঠিক করুন, স্বাধীনতার ঘোষকের স্থানে কাকে বসানো যায়,
সিদ্ধান্ত আপনাদের...

---------------------

রেফারেন্স:

*পাকিস্তান ক্রাইসিস - ডেভিড লসাক
*হুইটনেস টু স্যারেন্ডার - সিদ্দিক সালিক
*আমেরিকান স্লট রিপোর্ট
*পাকিস্তান সরকারের শ্বেতপত্র
*ম্যাসাকার - রবার্ট পেইন
*স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র - বেলাল মোহাম্মদ
*বাহজাদ আহমেদ

Saturday, March 24, 2007

বাতিঘর সকাশে চরৈবতি

আচ্ছা ঐযে দূরে একটা চূড়া দেখা যায়, ওপরে খুব সম্ভবত একটা বাতি- ওটার নাম কি?
ঐটা লাইটহাউজ, বাতিঘর। উপকূলে জাহাজীদের অভিভাবক। কোন এক ঝড়ের রাতে যখন সমূদ্্র উতলা-রাক্ষসী রূপ ধারণ করে, তখন জাহাজীদের একমাত্র আশ্রয় খুব সম্ভবত এই "বাতিঘর"।

দূরের জাহাজগুলো বাতিঘরের ঠিকরে পড়া আলো দেখে পথ খুঁজে নেয়, এগিয়ে চলে গন্তব্যে, নির্বিঘ্ণে নির্ভার হয়ে। বাতিঘর থেকে যায় তাঁর আপন জায়গায়, অন্য জাহাজকে পথ দেখানোর নিমিত্তে। বাতিঘর কিন্ত নিজেও জানে না যে সে কতগুলো জাহাজকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করেছে কোন এক ঝড়ো তিমিরে। সে শুধু জানে আলো বিলাতে... বিলিয়ে যায় সে, কোন শর্ত ছাড়াই!

অরণ্যকেশী, স্বল্প পরিচয়ের কোন এক দ্্রৌপদীকে একনিমিষেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তব জীবনের বাতিঘরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রেই দ্্বিতীয়বার ভাবা যায় না। কিছু কিছু ব্যাপার থাকে, সিদ্ধান্ত নিতে হয় তড়িৎ- কোন সমীকরণ মেনে হয় না তা। এই সিদ্ধান্তটা এরকমই এক অংকবহির্ভূত সমীকরণ, যার অনুসরণে গণিতের মার্কায় "সর্বই" কাটা গেলেও আত্মউপলব্ধির মুকুটে আরো একটা সফল পালকের সংযুক্তি ঘটে।

সেই আত্মোপলব্ধির মাত্রাটা বেড়ে যায় যখন বুঝা যায় পরাজিত মেঘের দলে আরো একটা খন্ড মেঘ এসে আপন করে নেয় সবকিছু, বাতিঘরের আলো অনুসরণকারী আরো একটা জাহাজের সংখ্যা বাড়ে...

সিদ্ধান্তের বাস্ত ব রূপায়নে পু-ঝিকঝিক না হলেও খুব শান্ত ভাবে অথচ ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে যায় দ্্রুতগামী পাত-গাড়ী, রাস্তায় জমে থাকা ঝরে যাওয়া পাতার ওপর থেকে দৃষ্টি চলে যায় কৃত্রিম বরফ দিয়ে বানানো "স্কেটিঙের মঞ্চে" হৈ হুল্লায় মেতে থাকা মেশিনরূপী মানুষের পানে।

লেখাটার সূত্র : পাওয়া যাবে এখানে (1ম থেকে 3য় খন্ড)

Thursday, March 15, 2007

দিবা-রাত্রির গল্প

নষ্টালজিয়া, প্রবাসী কিম্বা পরবাসী বাঙালীর তৃষ্ণাকাতর হৃদয়ে এক ফোঁটা বৃষ্টি-বারির ছোঁয়া। নষ্টালজিয়ার ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে অভুক্ত মন এক মুহূর্তে ছুটে যায় গাঁয়ের সেই পথটি ধরে, সেই বাড়িটির সামনে। যে বাড়ির রাণ্নাঘরে মা সযতনে উনুনের পরে ভাতের হাঁড়ি চড়ায় ফি বেলায়।

মায়ের হাতের বানানো আলু ভর্তায় গাছের কাগজি লেবু চটকিয়ে গরম ভাত খাওয়ার পরম স্বাদ অন্য কোন কিছুতেই পূরণ হবার নয় নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন কোন বাঙালী মায়ের সন্তানের। ম্যাকডোনালডসের সুস্বাদু, সুদর্শন রয়েল টিএস ও ফেল মারে অতি সাধারন ভাবে রাঁধা মায়ের হাতের মুরগীর সালুনের কাছে। লাল লাল ঝোলের মুরগীর সালুন, ঘি দিয়ে ভাজা আলু ভর্তা, লেবু আর মায়ের উদ্বিগ্ন চোখের চাহনী সহযোগে কতোদিন খাইনা পেট পুরে, গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে!

পরদেশের বাঙালী রেস্টুরেন্ট গুলোও পরবাসীই হয়। সেখানে মসলা গুলো একই থাকলেও কোথায় যেনো কী নেই। আসলেই তো মায়ের হাতের মমতার ছোঁয়া তো সুদূর পশ্চিমের এই রেস্তোঁরা গুলোয় পাওয়া দুষ্কর। কখনো সখনো এরকম কোন এক রেস্টুরেন্টে দেখা মিলে অরণ্যকেশী লাবণ্যের। না, শেষের কবিতার লাবণ্য না, একেবারে সাবঅলটার্ণ যুগের লাবণ্য, একজন রাত্রি!

এই রাত্রির লাবণ্যময় চোখের গভীরতা, চিবুকের গাঢ়ত্ব কিংবা চুলপ্রপাতের মাঝে ডুব দিয়ে একনিমিষেই চলে যাওয়া যায় নিজের রচিত কোন সমান্তরাল পৃথিবীতে। যেখানে সে বিকেলের চায়ের সাথে ডালপুরী ভেজে উপস্থিত করে গ্রীনরোডের কোন এক ছোট্ট এ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর লাল-সবুজ গ্রামীন চেকের শাড়ির আঁচলে কখনো গুটিসুটি খায় ছোট্ট ছেলে, আর কখনো আলতো করে টান দেয় নাস্টালজিয়ার কার্পেটে ভাসতে থাকা পরবাসী বাঙালী।

হঠাৎ করেই মিস্টি সম্বোধনে অ্যালিসের ওয়ান্ডার ল্যান্ড থেকে ফিরে আসে ক্ষুধায় কাতর নস্টালজিক মানুষটি। টের পায় রেস্টুরেন্টের খাবার সামনে ঠান্ডা হয়ে গেছে, খাওয়ার ইচ্ছে উবে গেছে সেই কখন। জানাহয়, এতোক্ষণ ধরে স্বপ্নের জাল বুনে চলা সঙ্গীটির নাম জানা হয় রাত্রি না, দিবাও না। অরণ্যকেশীর নাম আসলে দ্বীপান্বিতা।

এগিয়ে চলে মাহির সাথে দ্বীপান্বিতার কথোপকথন

Tuesday, March 13, 2007

তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো...

ভায়োলিনের সুর আমার বরাবরই পছন্দ। বাঁশী আর ভায়োলিনের মধ্যে একটা ঠান্ডা-লড়াই ও জমে উঠতে পারে অবশ্য এনিয়ে। কিটারোর চাইতে শেরাটনে বাজানো বাঁশিওয়ালার প্রতি আমার আলাদা একটা টান অনুভূত হয়, সেটা বোধকরি সুরের আধুনিকতার সীমানা ছাড়িয়ে শিল্পীর আন্তরিকতার ছোঁয়ার কারনে। প্রবাস জীবনের শুরুর দিকে আমার কাছে একটা এ্যালবাম ছিলো, "রোমান্টিক ভায়োলিন"। সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকতাম ভায়োলিনে।

যখন বাঁশীর সুরে "ফ্লাই" শুনলাম প্রথম, মজে গেলাম সেটাতেও। একেএকে জড়ো করলাম সেই এ্যালবামের মনেধরা সুর গুলোও। সব ছাঁপিয়ে তখন ঘর উজার করে বাজতো ফ্লাই- ফ্লাই - আর ফ্লাই, মনের মধ্যে উড়িয়ে চলা ভাবনার উদ্্রেক করে।

যাযাবরী মনন লালন করি আমি, খালি উড়াল দিতে চায় ফাঁক-ফোঁকর পেলেই। বাঁধা-ধরা কোন কিছুই বেশীদিন ভালো লাগে না। সুযোগ পেলেই দে-দৌড়, ধনাধন দৌড়...।

এবারো দিলাম একটা দৌড়, না আপাতত উলটো না। সোজা সাপ্টা দৌড়, যে কারনেই ফেরার তাগিদটাও ততটাই বোধ করছি, যতোটা করেছিলাম দৌড় দেবার সময়ও। মাঝখান থেকে চারটা দিন আরো কিছু উদ্ভট পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়েছে। উপায় নাই গোলাম হোসেন- হয়ে মাথা কাত করে, ক্যাবলা কান্তের মতো নাক-মুখ খিঁচিয়ে নিম পাতার রসের মতো গিলতে হয়েছে।

শুরুটাই আসলে ভালো হয়নি! মোবাইলে নতুন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহার করি। বড়ই তামশার জিনিষ। একবার নেট-এ ঢুকলে বের হবার আর রাস্তা খুঁজে পাইনা। ভাষা ইংরেজী করে চেষ্টা করেছি, নেটে ঢুকে না। বিদেশী ভাষায় কানেক্টেড হবার পরে, ডিসকানেক্ট ক্যামনে হয়- এইটা তো যাযাবর জানে না! ফলাফল, নেট চলে টিল দ্যা এন্ড অফ...

সেদিন মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকাইয়া ট্রেন থেকে নামতে গিয়া প্লাটফরমে খাইছি উষ্ঠা! ব্যাপার না, অনেকেই শুকনাতেও হোঁচট খায়, আমিও খাইছি, নম্মাল! কিন্ত আমার এইবার যাযাবরী যাত্রার শুরুতে - কোলন শহরের নয়মার্কট (নিউমার্কেট)- এর (সাবওয়ে) ট্রাম স্টেশনে নামতে গিয়া ঘটলো অঘটন টা।

চোখ আমার যথারীতি মোবাইলের সুন্দরী স্ক্রীনে। সিঁড়ি দেখলেই লাফায়া নামার নিয়ম। সেই নিয়ম পালন করতে গিয়াই...। নব্য টাইলস করা সোঁপানে ডান পা পড়লো প্রজেক্টেড জায়গাটার একটু তফাতে, খানিকটা ত্যাড়া হয়েই। চোখ তখনো মোবাইল থেকে সরে না। একটু পরে ধপাস শব্দ শুনে "কোন হালায় শুকনার মধ্যে আছাড় খাইলোরে" বলে বিরক্তি ভরে চারদিক তাকিয়ে বুঝলাম, উক্ত ব্যাক্তিটি আমিই।

সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখি সিঁড়িতে কাইজ হয়ে পড়ে আছি, ডান পা নাড়াতে পারছিনা। সবচাইতে যে অস্বস্তিকর ব্যাপার ছিলো তা হলো চারদিকে কম করে হলেও চারজোড়া ললনার আটজোড়া চোখ, এদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। মোবাইলটা কিন্ত তখনো হাতে ধরা! "যাক বইছি যখন, পানডা খাইয়া লই" ভাব নিয়া টুইস্টেড ঠ্যাঙটা নিয়ে টেনে টেনে ট্রামে উঠলাম। কারন তখন ব্যাথার চাইতে অক্টেড ললনার চোখ গুলোই বেশী পীড়া দিচ্ছিলো (মনখারাপ)।

ভাইয়ের বাসায় আসলে সময়টা ভালোই কাটে। ইচ্ছেমতো, পাগলের মতো ঘুমাই। ভাবী বিদেশী হলেও রান্নাটা শিখে গেছে আগুন। আমি গরীবে-মুফতি, কি-না-কি খাই, এই দিকটা বেশ ভালোই চিন্তা করে। আর আমিও এখানে এলে আগামী এক মাসের খাওয়া উটের মতো করে স্টোর করে নিয়ে যাই! খাওয়া আর ঘুম ছাইড়া যাইতে শখ হয় না। কিন্ত যাইতে তো হইবোই, আইজ আর কাইল...।

শিরোনামটার সাথে লেখাটা গেলো কি? আসলে শিরোনামটার উদ্দেশ্য ছোট্ট তুমিন! -যার একটু শুভকামনা পাওনা আমাদের কাছ থেকে!

গানটার জন্য ধন্যবাদ তাঁকে, যার কাছ থেকে পেয়েছি।

Wednesday, March 07, 2007

শোক সংবাদ : দুষ্টু রাজপুত্তুর ধরা পড়িয়াছে

সারা পৃথিবীতে আপামর বাঙালীর মাঝে শোকের মাতম পড়িয়া গিয়াছে। কেহ কেহ রাস্তায় নামিয়া বুক-পিঠ চাপরাইয়া “হায় আজপুত্তুর... হায় আজপুত্তুর“ বলিয়া মহরমের ন্যায় শোক মিছিল করিতে নামিয়া গিয়াছে। কাহারো কাহারো আখি জলে রাস্তা প্লাবিত হইয়া জনজীবনে ধ্বস নামিয়া গিয়াছে। সবার কথা একটাই- “কামঠা কি ঠিক হইলে বাহে“?

আজপুত্তুরের বেলায় না হয় ঠিক হয় নাই মাগার তাহার সহিত জোটে জোট লাগানো দলের শিক্ষার্থী সংগঠনের সভাসদের পদ অধিকারী দুগ্ধে ধৌত তাহের ছাহেব (সালাম)কে কোন বেয়াক্কেল আটক করিয়াছে উহা জানিতে বড়ই মন চাহিতেছে। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ পাইয়াছে, এই ঘটনায় ও সর্ব সাধারন ক্রন্দন করিতে করিতে মূর্ছা গিয়াছেন।

আপনারা যারা উপরিউক্ত সংবাদদ্বয়ে মর্মাহত, বিমর্ষ হইয়া পড়িয়াছেন - উহারা একেএকে, দলেদলে, সদলবলে, আস্তে কইরা একটা টোকা মাইরা যাইয়েন।

ভাইয়েরা আমার, আমি দু:খের জ্বালায় আর লেখতে পারতাছি না, আঁখির জলের বানের কারনে কিছুই দৃশ্যম করিতে পারিতেছি না বিধায় এইখানেই লেখাখানির ইতি টানিতে হইলো।

ভবদীয়,
শোক সন্তপ্ত এক ভক্ত

অগ্নি ঝরা মার্চ :: লিখুন মনের দুয়ার খুলে

অগ্নিঝরা মার্চ মাস, বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিসত্তায় ওতপ্রোতভাবে জড়ানো একটি মাস। এই মার্চ না এলে বাংলাদেশ নিজের স্বরূপে প্রস্ফুটিত হতে পারতো কি না কে জানে! বঙ্গবন্ধুর অণলবর্ষি ভাষন, নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমন, স্বাধীনতা ঘোষনা এবং বীর বাঙালীর নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া- এসবই জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের উপাদান।

গর্বিত বাঙালীর চোখের সামনে বাংলা মা বারবার হয়েছে লাঞ্ছিত, অপমানিত। সম্মানের মার্চ মাস এবং তার আবেদন হয়েছে প্রতিমুহূর্তে অবলুণ্ঠিত। রাজনীতি নামক কুইনাইনের ফাঁদে পড়ে ৩৫ বছরেও বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হতে পারলো না। ক্ষমতায় আসীন হয়ে শাসকগোষ্ঠি দেশের চেয়ে, দেশের মানুষের চেয়ে নিজের অবস্খানকেই সর্বাগ্রে ঠাঁই দিয়েছে। জন্মের এতগুলো বছর পরেও বাংলাদেশ তাঁর নিজের একটি শক্ত রাজনৈতিক অবকাঠামো পেলোনা যার জোরে খুব শক্ত একটা ভিত্তি দাবী করতে পারে জাতি।

পেশাদারী রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বাঁক নিয়েছে সুশীল সমাজের রাজনীতির দিকে, অ্যামেচার রাজনীতির বিশাল সূচনা (গ্র্যান্ড ওপেনিং) হতে চলেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। কতোটা কি ভালো হচ্ছে, কতোটা কি হবে- সেটা সময়ই ভালো বলে দিবে আমাদের।

আমরা দেশের ভালো প্রত্যাশা করি, উন্নয়ন প্রত্যাশা করি, জনগনের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রত্যাশা করি। কোন নাগরিকই যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে, কোন নাগরিককেই যেন খোলা আকাশের নিচে দাড়াতে হয় পরিবার সহ - এই নিশ্চয়তা টুকু চাই আমরা আমাদের সো-কলড সুশীল এবং প্রফেশনাল রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে।

আমাদের অনেক কিছুই বলার আছে, অনেক কিছু ভাবার আছে। আমরা বলতে চাই, দেশের রাজনীতিতে সাধারন মানুষের নিশ্চিত অংশগ্রহন চাই। আমরা বলবো দেশের রাজনীতি নিয়ে, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে, দেশের চলমান পরিস্খিতি নিয়ে - আমরা, হাজারদুয়ারী ডট কম।

দেশমাতার একজন সচেতন সন্তান হিসেবে তুলে ধরুন বাংলাদেশ নিয়ে আপনার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা হাজারদুয়ারীর পাতায়। দেশীয় চলমান প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্খার প্রেক্ষিতে মেলে ধরুন আপনার ভাবনা সবার সামনে। লেখা পাঠিয়ে দিন hajarduari@gmail.com - এই ঠিকানায় ১২ই মার্চের মধ্যে।

হাজারদুয়ারী আপনার ভাবনা প্রকাশের জায়গা, আপনার নিজের চেতনার উঠোনে প্রবেশের একটি দুয়ার!

হাজারদুয়ারীতে লেখালেখি নিয়ে আরো জানুন এখানে

Thursday, February 08, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৮

ভেতর থেকে দুমড়ে-মুচড়ে উঠে একটা অব্যক্ত অনুভূতি। একটা অবাক ভালোলাগা উড়িয়ে নিয়ে যায়, নিষিদ্ধ নগরীর বদ্ধ হেরেমের সুউচ্চ টাওয়ারে। সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকা সেন্ডউইচে আধা কামড়ে বাগড়া বসায় ঝরে পরা তুষার কণা। বিদঘুটে ঠান্ডা বাতাস হাড়ে কাঁপন ধরায় অহরহ। পদযুগল এগিয়ে চলে নিরুদ্দেশে। মুঠোফোনের সাইলেন্ট বীপে শুরু হয় বিরক্তিকর কথোপকথনের শব্দ। ভূমিকাহীন খেয়ালীপনা চলে সময়ের সাথে। একে একে গড়িয়ে যায় ট্রামের লোহার চাকা। পেছনে পরে থাকে খিলখিল শব্দের কলকল ধ্বনি। বয়ে যায় সময়, তেড়ে যায় বাস। ঠান্ডার প্রবল প্রকোপে এগিয়ে যেতে যেতে ভাবি, কী হলো এইটা?

Tuesday, February 06, 2007

ব্লুট অরাঙ্গেন - রক্তিম কমলার বস্ত্রাহরণ

পোস্টের শিরোনাম কিংবা ফটুক দেখে এমন ভাবার দরকার নেই যে আমি কমলার ব্যবসায় কোমরে পড়নের লুঙি বেন্ধে নেমেছি। তবে লোকজনের সে রকম খাইছলত, ভাবতেও পারেন আমি পাশের গ্রামের সুন্দরী কমলার গুনকীর্তনে করতাল বাজানোর জন্য চান্স খুঁজতেছি! সেক্ষেত্রে আমার কিছুই বলার নেই, তবে লেখার আছে।

কমলার সাথে আমার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুবিধার না। তার ভেতরের সৌন্দর্য উপভোগ করাতো দূর অস্ত, যতোবার চেষ্টা করেছি তাকে নিরাবরণ করতে ততোবারই আমার চোখ দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গা-যমুনা! আমিও চোখ মুছতে মুছতে তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য রাস্তা ধরেছি।

একবার এক বন্ধুর বাসার বসার ঘরে পা ছড়িয়ে টেলিভিশন দেখছি। যথারীতি পাশে ছিলো কমলা এবং আমার মহিলা বন্ধুটি। এইবার বন্ধুটির দিকে একটু কেমন করে তাকাতেই বুঝে গেলো কি বলছি। কমলার 'বস্ত্রহরণ', মাথা ঝাঁকিয়ে জানালো আমাকে সাহায্য করা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। নিজে পারলে কর না পারলে বইয়া থাক!

দেস না ভাই, এমুন করস ক্যা?
:- এ্যাঁ... আমি খুইলা দিমু আর মজা লুটবি তুই, হইবো না...
আরে দেস না, আমি পারলে কি তোরে কই?
:- না পারলে গিয়া বিয়া কইরা ল, আমারে কস ক্যা? যা ফুট!

শেষমেষ অবশ্য বন্ধুটারে অতি কষ্টে পটিয়েছিলাম কমলার আবরণ খুলে আমার সামনে উপস্খাপন করতে। আর আমিও মহা সুখে, ডিভাইন আনন্দে কমলার স্বাদ উপভোগ করেছিলাম... আহা!!

আজকে এক নতুন কমলার সাথে পরিচয় হলো আমার। আমার বন্ধুটি তো এখন আমার পাশে নেই আমাকে সাহায্য করার জন্য। বাধ্য হয়ে নিজেই হাত চালালাম। অপরিপক্ক ভাবে এদিক ওদিক হাত চালাতেই ঘাবড়ে গেলাম - ওকি রক্ত বেরোয় যে! কমলার আগে আমিই মারলাম চিৎকার সজোরে...।

আমার চিৎকার শুনে একজন বললো। ভয়ের কিছু নাই, এটাই স্বাভাবিক। আমি আকাশ থেকে পড়লাম হলদে জিনিষের জায়গায় লাল জিনিষ দেখলে ঘাবড়ানোটাই স্বাভাবিক জানতাম, এখন শুনছি উলটোটা... ঘটনা কি?

অবশেষে হাত টাত মাখিয়ে, এখানে ওখানে 'রক্ত' লাগিয়ে তারপর উপভোগ করা হলো আমার রক্তিম কমলা। একটু টক টক লাগে, কিন্ত অসম্ভব রকমের দারুণ স্বাদ। দেখতে সভাবিক কমলার মতোই শুধু ভেতরটা হলদে না হয়ে লালচে।

ক্ষুধা ছিলো প্রচন্ড, খেয়ে নিয়েছি গোটা কয়েক। খাওয়ার পর ভাবলাম এবার শেয়ার করি সবার সাথে আমার কমলা খাওয়া!!

Sunday, February 04, 2007

অপারেশন ক্লীনহার্ট!

২০০১ এর নির্বাচনের পরের ঘটনা। রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টের জলপাই রঙের দোস্ত ঢাকায় আসছে। মুলাকাত স্খল কলাবাগানের হেলভেশিয়া। রাজেন্দ্্রপুরের আরেক জলপাই চিঙড়ি মাছের মাথার মতো জলপাই জিপে হাজির। সাথের আর্কিটেক্ট পড়ুয়া দোস্ত ছাড়া বাকি তিনজনই আমরা মাশাল্লাহ্ তালপাতার সেপাই। তবে বুয়েটের ভাবি আর্কিটেক্ট চান্দুরে গালিভারের বংশধর বলে ঠিক চালিয়ে দেয়া যায়।

আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান হলেও তৎকালীন লেফটেন্যান্ট চাঙ্কি দুজনের ভাবসাবই আলাদা ছিলো অধ:স্খনদের কাছে। মি. রাজেন্দ্্রপুর যেভাবে নামলো গাড়ি থেকে, ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আর্কিটেক্টরে বলি, দোস্ত দিমু নাকি দৌড়?

আমি আগেই বলেছি জলপাই রঙরে আমি বড়ই সমীহ করে চলি। কে জানে কোনদিন, কোনদিক দিয়ে ক্লীন হার্টের নামে আমাকেই দুনিয়া থেকে ক্লীন করে দেয় ব্যাটারা। ভয়েডরে থাকাই স্বাভাবিক। নি:শ্বাসের নাই বিশ্বাস। এক মিনিটের নাই ভরসা গাইতে গিয়া ডেখা গেলো ফিরোজ সাঁই-এর মতো আমিও নাই!

হেলভেশিয়ায় বসার পর কয়েক দফা বার্গার আর কোলা খতমের পর, কয়েক প্রস্ত কুশলাদি আদান-প্রদানের পর কথায় কথায় মি. রাজশাহী তাঁর গল্প বলা ধরলো।

স্খানীয় কোন এক চেয়ারম্যানের পোলার বিরুদ্ধে (লোকাল) মাস্তানীর অভিযোগ। এমনকি বাপ নিজেও পোলার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। গ্রামের কোন এক লোকের সুন্দরী বউকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। ওকে ধরে আনা হয়েছে, টীমের ইনচার্জ ছিলো আমার শান্ত-শিষ্ট দোস্তটা। গুঁতালেও যে টু শব্দও সহজে বের করতে চায় না, সে।

এ পর্যায়ে আমি হাসি। থাম শালা, তুই একটা মিশনের চার্জ নিয়া গেছস, তাও মাস্তান ধরতে? ব্যাটা মুখ গম্ভীর করে বলে, তুই জানোস এই আমিই আমাদের ব্যাচে 'সোর্ড অফ অনার' পাইছি!

আর্কিটেক্ট আর মি. রাজেন্দ্্রপুরের ভরসায় মেনে নেই। আবারো শুরু হয় গল্প।

ধরে এনে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো-
: তুই অমুকের (নামটা আমার মনে নেই) বউরে তুইলা আনছস?
- জ্বি না স্যার...

: কথা শেষ হবার আগেই থাপ্পর। মিথ্যা কথা কস ক্যা.... ঠিক কইরা ক।
- জ্বি স্যার আনছি।

: (বড়দের কাজ) করছস?
- না স্যার আমি ফুলের টোকাটাও দেই নাই...

: (চরম গালি) পোলা, তাইলে কি পুজা দেওয়ার লাইগা আনছো? (আবার থাপ্পর)
- জ্বি স্যার করছি...।

: হুমম, কয়বার?
- স্যার একবার...

: (এইবার হাঁটুর গিঁঠে লাথি) একবারের লাইগা এতো কিছু করলি, আর আমারেও কষ্ট দিলি। তোরে ধরতে আমার কষ্ট হয় নাই?
- স্যার দুইবার ....

: (আবারো বিচ্ছিরি গালি) পোলা, ঠিক কইরা ক, কয়বার.... (এবার ধমাধম মার)

এবার ঐ ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলে, স্যার আপনে যতোবার কন ততবারই করছি, তাও আমারে ছাইড়া দেন স্যার। আর জীবনে কোনদিন কোন মাইয়া মাইনষের দিকে ফিরা তাকামু না। ও আমার মা লাগে...।

এইবার আবার শুরু হয় মার। (গালি দিয়ে) তুই তো জাহান্নামের কীট রে, তুই তোর মার লগে এই করস?

Saturday, January 27, 2007

দুধভাত খাই, জলপাইয়ের গুনগান গাই

এই চোপ শালা, এক্কেরে কথা কবি না কইলাম। কইলেই ভুড়ি গালাইয়া দিমু।

জো কথা বোল গ্যায়া, সামঝো খালাস হোগেয়া। মেরে আঙনেমে তুমহারা ক্যায়া কাম হ্যায়, নিজের পেছনে কে রে নিজে নিজে বাঁশ দ্যায়?

কে কে পপ সাম্রাট আজম খানের চুপ, চুপ, চুপ - অনামিকা চুপ গানটা শুনতাছেন হাত উঠান।.... হ্যান্ডস আপ!!

আরে ধুরঃ মিয়া, এমনে উঠাইছেন ক্যা? আমি কি বন্দুক তাঁক করছি? অহ, বুঝছি, বোম্বার ডর! আরে মিয়া এইটা তো বোম্বা না। এইটা তো জলপাই! এইটা খায়, আবার মাঝে মইধ্যে মাথায় ও দ্যায় তৈল বানাইয়া। হাত নামান কইতাছি।

আরেহ, আবার কী হইলো? অমোন বাংলা 'দ-এর মতো বেঁকা হইয়া রইলেন ক্যা? সোজা হোন মিয়া। আপনেগোরে নিয়া আর পারি না। এত্ত আন-ইস্মার্ট আপনেরা। আমার জলপাই রঙের স্যুট দেইখ্যা ডরে কুতকুত করতাছেন। বঙ্গবাজার থনে কিনছি, সেকেন্ড হ্যান্ড। কেমুন হইছে মালডা কন দেহি!

মর জ্বালা, তোঁতলান ক্যালা আবার? আমি কি আপনেরে কিছু কইছি? আরে কালা রঙ দেখলেই কি ক্রস ফায়ার ভাবতে হইবো? কালাগো অহন বেইল নাই। মাথায় সস্তা নাইরক্যাল তৈল দেওনের দিন ভুইল্যা যান। হেইদিন বোয়াল মাছে খাইয়া ফেলছে। অখন থাইক্যা দামী অলিভয়েল দিবেন মাথায়।

কি!!! কোন হালায় কয় চুল উইঠ্যা যায়, দিমুনি ঠুশ কইরা?

আরেহ না, আপনে ডরাণ ক্যা, আপনেরে কিছু কইছি?

সয়াবিন তেলে পুঁটি মাছের ভাজি খাওন ভুইল্যা যান। অলিভয়েলে ভাইজ্যা খাইয়া দেখেন কীরম টেস্ট! ইয়াম্মী.....

আর হুনেন, এইসব এন্টারনেট ফেন্টারনেট থোন গাট্টি বাইন্ধা ফালাইয়া। পত্রিক পড়ার দরকার কি? পত্রিকার কাগজ বানাইতে ট্যাহা লাগে না? এত্তো খবর দেইখা কি দেশোদ্ধার করবেন নি? ভীতিবি আছে না, ঐটাতে খবর দেখবেন গররিব দেশের মানুষ, এতো শখ ক্যা?

দ্যাশে অহন উন্নয়ন আনতে হইবো, ট্যাহা জমাইতে হইবো, এন্টারনেটে বালগিং কইরা, পত্রিকায় আবঝাব লেহা দিয়া, বিভিন্ন চ্যানেলের বাগানা নারীগো পড়া খবর দেইখা উন্নয়নের বারোটা বাজানি ঠিক না। এইটা হইতে দেওয়াও ঠিক না।

তয় গান হুনেন ঠিকাছে। কোনডা হুনবেন এইডা তো কইলাম ই।

চুপ, চুপ, চুপ - বাংলার মানুষ চুপ! এইডা হুনলে আপভি ভালা, হাম ভি ভালা, দ্যাশ ভি ভালা, বড় মামা ভি ভালা, ছোড মামাভি!

এর অন্যথা হইলেই বয়াম ভরা জলপাইর আচার, বুইঝেন কইলাম!!

আর বেশি ক্যারাঞ্চি করলে... ডাইরেক্ট দেশদ্রোহী এবং ফাঁসির কাষ্ঠ- কথাডা মনে থাকে জানি। ঐ কে আছো ওরে নিয়া যাও।

নে-ক্স-ট....

Friday, January 26, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৭

সন্ধ্যার আগমনে ক্ষিপ্ত মেজাজ বিক্ষিপ্ত করে ছড়িয়ে দেয় সমস্ত ভাবনা। পটাপট খুলে যেতে থাকে খিলহীন দরোজার কপাট। পথে যেতে যেতে এর ওর 'মাদাররে-ফাদার' গালি দিয়ে চৌদ্দতম বংশধরের উদ্ধার করা হয় সারা। ঘরে ফিরে ওভাবেই বালিশে এলিয়ে দেয়া মাথায় নামে স্বপ্নের ভীর। বেরসিক মোবাইল সুর বাজিয়ে যায় সমান তালে বিনা ছন্দপতনে। খুঁজে পাওয়া যায় পুরাণা পলটনের সেই গলি। পরমুহুর্তেই বদল দৃশ্যপট। ঘাড় ঘুরাণো এক চপলা, মেঘকালো কেশরাজীর ফাঁকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে...। অপ্রস্তুত মনেহয়, কায়মনোবাক্যে দৃশ্যপট বদলে যাবার প্রার্থণা। ঠিক তখনই কানে আসে 'বীপ' শব্দটা - "কি মিয়া ঘুমাও নাকি..."। সামলে নিতে সময় লাগে, অবাস্তবে আশ্বস্ত হওয়া হয়। ঘোরের মধ্যেই শোনা যায়, "... নট ইন কাভারেজ"...!

Wednesday, January 24, 2007

নাগরিক হালচাল : অরণ্যের আহবান

নগরে নগরে ঘুরেও নিজের মধ্যে নগরায়ণ ঘটাতে ব্যর্থ আমি। আমাকে পল্লী বাংলার পলি মাটির মায়াবী আদরে সিক্ত পললের বুক চিড়ে উঠে আসা মাঠভর্তি সবুজ ধানের চারা এখনো হাতছানি দেয়। বাতাস যেনো কানে কানে ফিসফিস করে বলে যায়, 'ছুঁড়ে ফেল এই কৃত্রিম সভ্যতা, আমি তোকে তোর অরণ্য ফিরিয়ে দেবো'। এক মাঠ ভরা সর্ষে ক্ষেত, হলুদ ফুলের সমাহার, কাঁধে পাকা ধানের ঝাঁপি বয়ে নিয়ে যাওয়া চুক্তি ভিত্তিক কৃষি-শ্রমিক, মেঠো পথে হৈ হৈ করে দৌড়ে যাওয়া একদল উচ্ছবল কিশোরের উল্লাস, গাঁয়ের ঠিক ঢোকার পথে মোড়ের দোকানটার বাঁশের বেঞ্চিতে পা তুলে বসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে তৃপ্তির চুমুক - সবই ফিরে পেতে ইচ্ছে জাগে, সব...।

ইচ্ছে জাগে, কনকনে শীতের সকালে আরিচা ঘাট থেকে পেট ভরে খেজুর রস খেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাসে ঢুকে গায়ে চাদরটা জড়িয়ে খানিক ঘুমিয়ে নিতে। ইচ্ছে জাগে ওয়ার্ণার ব্রাদার্স থেকে কেনা 'লুনী টুনস' এর ছবি আঁকা সাদা টি-শার্ট টা গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ি কোন এক গোধূলি বেলায়। আলতা পায়ে, এক প্যাঁচের তাঁতের শাড়ি পড়া কোন তরুণীর ফিতা বাঁধা বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে চলে যাওয়া দেখি চোখ ভরে। ইচ্ছে জাগে সন্ধ্যার ক্ষণে পুকুর পাড়টায় বসি, সেই কৃষäচূড়া গাছটার নিচে। সকালে উঠে রাস্তার ধারের দূর্বায় জমে থাকা শিশির কণার স্পর্শে ঠান্ডায় 'ফেটে যাওয়া' ভাব নিয়ে উদ্দেশ্যহীন পথচলা কতদিন হয় না।

নাগরিক জীবন, নগরে বসবাস, নিজেকে উত্তরাধুনিক রূপে উপস্খাপন করার প্রয়াস - সব মেকি হয়ে যায় একটা সময়। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে, মজ্জা কাঁপানো শীতে গৃহ-উত্তাপক যন্ত্রের প্রভাবে উষä ঘরে ফিরতে মন সায় দেয় না। থেকে থেকে মন এই নাগরিক সভ্যতা ছেড়ে কেবলই চায় চলে যেতে সেই অরণ্যে, যেখানে প্রজাপতির ডানায় ভর করে আসে পলাতক জোছনার বন্যা। সেই জোছনায় হারিয়ে যেতে চায় মন। পাথরের স্কয়ারে বসে বাজানো বেথোফেনের সপ্তম সিম্ফনীর চাইতে মহুয়ার গন্ধে মাতাল করা আকাশের নিচে আলতা রঙের পদ্ম ফুলের পুকুরের ধারে বসে সাঁওতাল রাতের হাওয়ায় ভাসানো কোন বাশী বাদকের সুর শুনতে বড়ই ইচ্ছে জাগে আমার।

Saturday, January 20, 2007

বিশেষ প্রতিবেদন : আমি তাকে কাছ থেকে দেখেছি

শেষ পর্যন্ত আমি তারে কাছ থেকে দেখেছি। তার স্পর্শ না পেলেও তার গায়ের গন্ধ আমার নাকে লেগেছে। আমাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে গেছে সে সন্তর্পণে। আমাকে সে যারপরনাই করেছে শিহরিত, আহ্লাদিত, চমকিত, পুলকিত, বঞ্চিত!

সবাই যেখানে তাকে নিয়ে মাতামাতি করছে, তখন আমার ভাগ্যে সে চলে এলো অপ্রত্যাশিত ভাবেই। আমি বাজি ধরেই বলতে পারি, আমি উহাকে যেরূপে পাইয়াছিলাম, সেইরূপে অন্য কেহই তাহাকে উপলব্ধি করিতে পারে নাই। ভাবছিলাম তার উষä পরশের ছুঁয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটুকু নিজের মধ্যেই রেখে দিবো, দেবো না কভু তারে অন্যের তরে বহিতে - কিন্ত বাঁধ সাধলো যে এখানে...!

সকালে খালাতো ভাইয়ের ফোন পাই। এই খবর সেই খবরের মাঝেও সে খবরটা ঠিকই দিয়ে দেয়, “আজ তো সে আসছে তোর ওখানে“। ভাব করি যেনো কিছুই হয়নি, কিন্ত ভেতরে একটা উত্তেজনা কাজ করতে থাকে চেপে থেকে। একটা সময় চিপায় পড়ে ভুলেও যাই তার কথা, তার আসার কথা, তার চলার কথা। তার সাথে “হতে পারে দেখা“ টাইপের সম্ভাবিলিটির কথাও।

দৌড়ে ইশটিশানের সাদা রঙের রেলগাড়িটাতে চড়ে বসি। যাচ্ছি আর ভাবছি- বয়ে যাওয়া সময়ের কথা, ঢুলু ঢুলু চোখে কাটানো নির্ঘুম রাতের কথা, জানালার কাঁচে বৃষ্টির ঝটকা...। হঠাৎ মনে হলো সে আসছে, তার নুপূরের সুর যেনো কানে ভেসে এলো আমার। তার চুড়ির শব্দ আমার কানে রিমঝিম রিমঝিম ঝঙ্কার তুলে যাচ্ছে যেনো।

নিজের মাথায় আলতো করে টোকা দিয়ে সম্বিত ফিরে পাই, ধুর, কী ভাবি এইসব? দুইরাত না ঘুম আর আসতে চাওয়া জ্বরের আগমনী বার্তায় গিঁঠে গিঁঠে ব্যাথাকে বাহবা দেই এই ভাবালুতার জন্য। কিন্ত তারপরেও সে আসছে, অন্য সবাই বুঝতে পারছে কিনা কে জানে, আমি পারছি...।

হঠাৎ এ্যানাউন্সমেন্ট, “... ভিয়ার বিটেন ইয়ার এন্টশুলডিগুং“। বসে রইলাম ঠাঁয়। একটু পর আবার চলতে শুরু করলো ঝাঁকি দিয়ে, কিন্ত সে আসছে, এখনো আসছে, শুধু বুঝতে পারছি না কোন দিক থেকে - সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডাইনে নাকি বায় থেকে?

হঠাৎ কোন এক অজানা জায়গায় নামিয়ে দিলো আমাদের। ওমা, জীবনেও কাস্ট্রপ রাক্সাওয়ের নাম শুনিনি। এ ক্যামন জায়গা রে বাবা? মুখে কুলুপ আঁটা আমি অন্য সবার সাথে নেমে আসি। একবার মনেহয় এই ভর সন্ধ্যে বেলাম ডাকাতি হবে নাতো আবার? ছি: ছি: জার্মান, তোমরা এতো খারাপ? এক বাঙালরে একলা পাইয়া ডেকাতি করবা? পারলে দলবল সহ ধইরো! কিন্ত ঘটনা হলো আমি তো একলা না, সাথে আরো প্রায় মোর দ্যান আধা শতক কর্ম ফেরত পাবলিক।

কাস্ট্রপ রাক্সাওয়ের বাইরের স্কয়ারে এসে দাড়াই...। মনে মনে একটা বিড়ি ফুঁকার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করছি, এমনই সময়... হ্যা ঠিক এমনই সময় ঘটলো তার সাথে আমার প্রবল সাক্ষাত, একটা জোড় ধাক্কা!

আরেকটু হলেই পড়ে যেতাম, কোন রকমে সামনে নিয়ে উলটা দিকে দৌড়। যতোক্ষণ না নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছেছি ততোক্ষণ আর পিছন ফিরে তাকাইনি। এরই মধ্যে উদগ্রীব ভাই আর কয়েকজনের মুঠো ফোনে পালস আসা শুরু করেছে। সারা দেশে তার আগমনের কারণে ট্রেইন চলাচল বন্ধ!

হ্যাঁ ভাইসব আমি “তার“ কথাই বলছি। কালকে সন্ধ্যায় তান্ডব চালানো সেই টর্নেডোটি। যার আঘাতে কিনা কেবল জার্মানীতেই মারা গেছে ১১ জন। ধংস হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, স্খাপনা।.... .... ...।

আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। শইলডা ভালা না। দূব্বল পাইতাছি না...

Wednesday, January 17, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৬

ক্লান্ত চোখের পিটপিটানিতে ধরা পড়ে রিঙলেস মুঠোফোনের আলোর খেলা। ওপাশের সম্বোধনকে সাথে করে কনকনে রাত 20... 40... 60... সেকেন্ড ধরে হারিয়ে যায় সময়ের গহীন উপত্যকায়। বদ্ধ চোখে ভাবনার সাগরে ডুব দেয়া চেতনা বাস্তবে ফিরে আসে 'কুষ্ঠ' রোগের প্রত্যাশায়। কোন এক অবসেশনে আবারো সর্বোনাশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে চেতনারা ঘটঘট কড়া নাড়ে। ঘুমের অজুহাতে দৃশ্যপট ছাড়লেও আবেশী মন থাকে অবশ হয়ে! কেটে যায় সময়, প্রহর, মুহুর্ত ঘন্টার এককে। এ্যাক্সেসে গন্ডগোল বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, সম্ভবতঃ রিপুর তাড়নায় ঘটাশ শব্দে ছেদ পড়ে। যান্ত্রিক গোলযোগকে দায়ী করে ক্লান্ত বাহু তার কাজ করে চলে স্বয়ংক্রীয়। যদি বুঝা যেতো গোলযোগ হয় ইচ্ছাকৃত, হয়তো পাথরের ওজনটা আরেকটু বাড়তো না!

Tuesday, January 02, 2007

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৫

সময়ের স্রোতে উড়া চলা কোয়ান্টাসের ডানায় ভর করে কিংসফোর্ড স্মিথের বহির্মুখে পরিচিত সেই মুখ, বন্ধু কী খবর বল? কতোদিন দেখি নি!! চারচাকার পঙ্খীরাজ প্রিন্সেস হাইওয়ে থেকে রকডেইল হয়ে ইস্টউডের দিকে ছুটে, চোখের পর্দায় পিছনে হটে যায় পূর্ব পরিচিত রাস্তার ধার। রাতের আলোয় টোঁটোঁ করে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায় কয়েক জোড়া চোখ। বর্ষবরণে সার্কুলার কীতে সম্মিলিত চিৎকার, "দোস্ত কে জানি গোলাপ জল ছিঁটায় রে"। অনেক গুলো দিনের শেষে অকারণে হেসে কুটিকুটির খেলা চলে অনবরতঃ। অক্লান্তিকর ঘূর্ণন শেষে ক্লান্ত দেহের ঠাঁই হয় ফেরৎ জাহাজের মোলায়েম আসনে। পরিচিত বিমর্ষ মুখ গুলোকে পাশ কাটিয়ে দৈত্যাকার জাহাজ হ্যাঙ্গার ছেড়ে বেরিয়ে আসে। গোধূলির আলোতে উপর থেকে আবারো বিদায় জানানো হয় কিংসফোর্ড স্মিথ ইন্টারন্যাশনালকে...!