Wednesday, December 27, 2006

রিমেম্বার হোয়েন ইট রেইনড্ :: ভালো (না)লাগা অনুভূতি

এই একটা গান, দেবার আগে ভাবছিলাম বাংলা করে দিবো, কিন্ত করতে গিয়ে সাহসে কুলালো না, পিছিয়ে এলাম। আমার দ্বারা এর বাংলা করা সম্ভব না। যে সুন্দর করে গাওয়া, যে অদ্ভুত রকমের শৈলী আছে গানটাতে, বাংলা করতে গেলেই তা ব্যহত হবে আমার হাতে।

গানটি যেভাবে আছে, যেরকম আছে সেভাবেই তার স্বাতন্ত্র্য বিদ্যমান।
"টিয়ার্স অব হোপ রান ডাউন মাই স্কিন, টিয়ার্স ফর ইয়্যু দেট য়্যুল নেভার ড্রাই, দে ম্যাগনিফাই দ্যা ওয়ান উইদিন, লেট দ্যা আউটসাইড স্লোলী ডাই..." কীভাবে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে!

http://www.box.net/public/8ol65sqp0k

Sunday, December 03, 2006

আমরা কেনো লিখি

আমরা এখানে যারা লিখি, কেনো লিখি আমরা? উদ্দেশ্যটা কি আমাদের? একটা মন্তব্যের জন্য, নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখতে পাবার আকাঙ্খা, নাকি নিজের মনের ভেতরে এলোমেলো ভাবে এদিক ওদিক ঢুঁ মারতে থাকা কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনার অবিরত তাড়নার ফলে!

মনেপড়ে সেই কবে প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম। মাসের হিসেবে তো বেশ অনেকগুলো মাস হয়েই গেলো। প্রথম আলো দৈনিকের কল্যানে জানলাম সামহোয়্যার বলে একটা সাইট বাংলায় ব্লগিং করার সুযোগ এনে দিচ্ছে। নিতান্তই আগ্রহের বশে, অনেকটা খাপছাড়া ভাবেই নিতান্ত অলসতায় ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট টাইপ করলাম। চোখের সামনের এলসিডি স্ক্রীনে ভেসে উঠলো আগাগোড়া ঝকঝকে বাংলা হরফে ভরা ওয়েবসাইট টা। ব্যস্ততার কারণে তেমন কিছুই করা হয়ে উঠেনি আর। সাথে সাথেই উইন্ডোটা বন্ধ করে দিয়ে আবার কাজে মনোনিবেশ!

তখনো ভাবিনি এই সাইটটা আমাকে এতদূর নিয়ে আসবে, সব মিলিয়ে নিজের পোস্ট হবে দেড়শতাধিক (কিছু অবশ্য ডিলিটেড)। খুব কাছ থেকে কিছু মানুষকে অনুভব করতে শেখাবে। যাদেরকে জীবনে দেখিনি, যাদের কথা কোনদিন শুনিনি তাদের সাথে হয়ে যাবে আত্মীয়তা, একেবারে হার্ট টু হার্ট। কার নাম বলবো? কার নাম বাদ দেবো? এমন কী কেউ আছে যার নামটা কখনো সামহোয়্যারের পাতায় দেখে মনে হয়েছে আমার “আরে একেতো আমি চিনি না“! পেছনের এতোগুলো দিন পার করে এসে মনে হচ্ছে সবাই ই যেন এক অদৃশ্য সূতায় গাঁথা হয়ে আছি। কতো বাক-বিতন্ডা, কতো ঝগড়া, কতো চিতকার চেঁচামেচির পরেও কারো জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে কেউ ভুল করে না, ভুল করেনা কোনো অনুপ্রেরণামূলক পোস্টে নিজের মন্তব্য দিতেও।

আমার কেনো যেনো মনেহয় মূলত সেই অদৃশ্য সূতার টানের কারনেই আমরা ফিরে ফিরে আসি এই ব্লগের পাতায়। ভাগাভাগি করে নেই প্রতিদিনের টুকিটাকি জিনিষের সাথে খুব গুরু-গম্ভীর কিছু তত্ত্ব। যার তাড়নাতে আমাদের মাথায় চেপে বসে লেখার “সিন্দাবাদের ভূত“, আঙুল চলে কী-বোর্ডে, সামহোয়্যারের পাতা ভরে যায় পোস্টের পর পোস্টে!

প্রথম যখন ভার্চুয়াল আত্মীয়তার খাতিরে সবার সাথে আমার পরিচিত, খুব কাছ থেকে দেখা উত্তরাধুনিক একজন লেখকের বই শেয়ার করলাম সেদিনও বুঝে উঠতে পারিনি কেনো লিখি আমরা। উপলব্ধিটা এসেছে ধীরে ধীরে। দিনের পর দিন সবাইকে একটু একটু করে জানার পর। অনেকেই যখন আমার সেই পোস্টে নিজেদের অংশগ্রহন করলেন, নিজের উপস্থিতি জানান দিলেন, অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, একজন লেখকের কী শক্তি! আমি যাদেরকে আমার ভার্চুয়াল আত্মীয় বলে জানি, তারা অনেকেই আমার ভিজ্যুয়াল আত্মীয়কে চেনেন। লেখার কারনেই একজন মানুষ কেবল একটি এনটিটি হয়ে দেশ-কাল-সীমানার গন্ডি পেরিয়ে সবার মাঝে এক মেলবন্ধন রচনা করতে পারেন। এই বন্ধনকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করতেই কিনা লিখে যাই আমরা।

এই লেখার তাড়নায়ই মাসকাওয়াথ আহসানের লেখা গুলো নিয়ে অনলাইন আর্কাইভ করার কথা ভাবি। ভাবনা থেকে প্রস্তাব এবং তারপর উতসাহ এবং সহযোগিতা। আমাকে সর্বান্তকরণে পিঠ চাপড়ে গেছেন আমার ভার্চুয়াল এবং রিয়েল টাইমের আত্মীয়রা। আর্কাইভকে তুলে ধরার জন্য দাঁড়িয়ে গেলো একটা ওয়েব সাইট। ওয়েব সাইটটি শেষ করার পর, নিজের অসুস্থাবস্থায় বসে বসে ভাবছিলাম, আমরা কেনো লিখি, বিশেষ করে আমি কেনো লিখি...।

ব্লগের আমার ভার্চুয়াল আত্মীয়দের পাশাপাশি যে মানুষটি নীরবে অবদান রেখে চলেছেন, আমার অজান্তে আমার ব্লগে ঢুঁ মেরেছেন, আমার লেখার ভুল গুলো ধরে দিয়েছেন, বাকী অনেকের লেখার কথা তুলে এনেছেন আলাপে, তার অবদান মোটেও কম না। আমাকে লেখার হাতেখড়ি যদি সামহোয়্যার এবং সামহোয়্যারের আমার ভার্চুয়াল আত্মীয়রা দিয়ে থাকেন তাহলে সেই হাতেখড়িকে আলো দেখিয়ে পথ দেখিয়ে চলেছেন মাসকাওয়াথ আহসান। ব্লগের কারো অবদান আমি আলাদা করে দেখতে পারিনা মাসকাওয়াথ আহসানের চেয়ে। একজন চোখের সামনে, আর অন্যরা চোখের আড়ালে থেকে আমাকে হাত ধরে এগিয়ে দিচ্ছেন লেখার ভুবনের সামনের দিকে।

আমি এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে সবার উচ্ছ্বাসকে সযতনে সাথে করে! উচ্ছ্বাস থেকেই উচ্ছ্বলতার বশবর্তী হয়ে আমার করা ওয়েব সাইটটা রেখে দিলাম এখানে সবার সাথে আমাকে শেয়ার করার জন্য। হয়তো সবার স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতিই আমাকে তথা আমাদের সাহায্য করবে “আমরা কেনো লিখি“- এই অতি সরল প্রশ্নটার খুব সুন্দর একটা সমাধান পেতে!

বইয়ের তাক

Saturday, November 04, 2006

জেল হত্যা দিবস!!



গতকাল ছিলো ৩রা নভেম্বর, বাঙালী জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর, কলঙ্কময় দিন গুলোর একটা। জেল হত্যা দিবস!!

৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালো রাতের পর খন্দকার মোশতাক তার মন্ত্রিসভায় যোগ দেবার জন্য আহ্বান করেণ বঙ্গবন্ধুর চার ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে। বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে বের করে নিজ পায়ে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখা এবং দেখানো এই মানুষ গুলো খন্দকার মোশতাকের সেই আহ্বান ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেণ।

প্রত্যাখাত হয়ে খন্দকার মোশতাক গ্রেফতার করেণ চার নেতাকে। ভাগ্য তার দিকেও যায় নি। উতখাত হয়ে যেতে হয় তাকে ২রা নভেম্বর। কিন্ত ঠিক তার পরপরই ১৫ আগস্টের ঘাতকেরা কারাগারের নিউসেলের ভেতরে ঢুকে ব্রাশ ফায়ার করে চার জাতীয় নেতার উপর। শুধু তাই নয়, তাদের হীন, অসুস্থ মানসিকতার তাড়নায় চার নেতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বেয়নেট নিয়ে।

এই ৩রা নভেম্বর, বাংলাদেশের জন্মের পর স্বাধীন বাংলার মাটিতে প্রাণ দিতে হলো বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। তাদের অপরাধ কী ছিলো? একটা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা! যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটা দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখানো! জাতির মহান নেতা, যার আহ্বানে সারা জাতি একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলো- তার প্রতি আনুগত্য দেখানো!

জেলহত্যার সেই দিনটি থেকে ২১টা বছর এর বিচারকাজ স্থগিত করে রাখা হয়। পূণর্বাসিত করা হয় হত্যাকারীদের। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এর বিচার কাজ শুরু হয় এবং ২০০৪ সালে রায় ঘোষনা করা হয়। চার্জশীটে উল্লিখিত ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের সাজা হয়। এর মধ্যে ৩ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি এবং বাকি ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যথাযোগ্য প্রমানের অভাবে মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে যায় বিএনপি নেতা কে এম ওবায়দুর রহমান, জাতীয় পার্টি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক মন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর (অব:) খায়রুজ্জামান।

হত্যাকান্ড সংগঠিত হবার এতোগুলো বছর পরে ঘোষিত মামলার রায় নিয়ে চার জাতীয় নেতার পরিবার পরিজন সন্তুষ্ট নন মোটেই। তাদের মতে এ রায় ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, এখনো পর্যন্ত এ মামলায় কাউকে শাস্তি দেয়া হয় নি!

Saturday, October 28, 2006

বাংলা খান, বাংলা পড়েন, বাংলায় ঘুমান, বাংলায় স্বপ্ন দেখেন, লেখেন কেবল ইউনিকোডে :: সৌজন্যে - ইউনিকোড



ইউনিকোড নিয়ে, ইউনিকোডে লেখা নিয়ে মহাতুলকালাম কান্ড। কেমনে লেখবো, কী দিয়ে লেখবো, কেন লেখবো, প্রয়োজনীয় লিংক ই বা পাবো কই- এই নিয়ে চুলহীন অনেকেও ছেড়ার জন্য মাথায় অনবরত হাত দিয়ে যাচ্ছেন। বিজ্ঞজনের কাছে “এফ১“ চেয়ে অনেকে অলরেডী পোস্টিয়েও ফেলেছেন। এই কষ্টকর, ব্যারাছ্যারা অবস্থা দেখে ভাবলাম, অভিজ্ঞজন না হই, সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবেই নাহয় একটা “জ্ঞানদান পোস্ট“ নামিয়ে দেই। নিজেরও একটা পোস্ট বাড়লো, আবার ফেলাডিং ও হলো না। যাত্রাও দেখলাম, আবার কলাও বেচে ফেললাম!

তো যা বলছিলাম- কেমনে লেখবো ইউনিকোড?

উপায় জলবত তরলং। সম্পূরক প্রশ্ন করি উত্তর দেবার আগে। কেমনে লেখতে চান, অনলাইনে নাকি অফলাইনে?
অনলাইনে লেখতে চাইলে কোন সফটওয়্যার ডাউনলোড-ইনস্টলেশনের দরকার নাই। এতে করে হয়তো আমার মতো আনাড়ীরা “অই মিয়া ভাইরাস দিলা ক্যান হালায়“ টাইপের বকা খাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে পারবেন।

এক্ষেত্রে হাসিন ভাইয়ের টুলসটা কাজে আসতে পারে।
এছাড়াও কাজে লাগতে পারে মাহবুব মুর্শেদ এবং অরূপের যৌথ উদ্দোগের কনভার্টারটা

যদি অফলাইনে লেখতে চান যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে- তাহলে আপনাকে কষ্ট করে একটা সফটওয়্যার ডাউনলোড এবং পরে ইনস্টল করতে হবে।
সেক্ষেত্রে অভ্র কী-বোর্ড হতে পারে ভালো একটা চয়েস। অভ্র ডাউনলোড এবং ইনস্টলেশন শেষ হলে হাতের কাছে উইন্ডোজের সিডিটা রেডী (সিডি রমে ঢুকিয়ে) রাখুন।

“কন্ট্রোল প্যানেলে --- রিজিওনাল সেটিংস --- ল্যাঙ্গুয়েজ“ ট্যাবে গিয়ে (ইনক্লুডিং থাই, ইংরেজীতে কী লিখা আছে জানি না, আমার এখানে অন্য ভাষায় দেখছি) চেকবক্স দুটো টিক দিয়ে “অ্যাপ্লাই“ বাটনে ক্লিক করে পরে ও.কে. চেপে বেরিয়ে আসুন। পিসি রিস্টার্ট খাবে, ব্যাপার না... লেট ইট বি!

রি-স্টার্ট খাওয়ার পর এখন আপনার পিসি যে স্টেজে আছে সেটাকেই ধরে নিতে পারেণ “ইউনিকোড অ্যানাবেলড“ স্টেজ। মনিটরের উপরের দিকে (অভ্র কী-বোর্ডের) একটা বার দেখতে পাবেন। সেখানে “সিস্টেম ডিফলট“ লেখাটায় চাপ দিলে একবার “বাংলা“ একবার “সিস্টেম ডিফলট“ লেখা আসবে। তার পাশে সেটিংসে ক্লিক করলে দেখা যাবে একটা লিস্ট শো করবে ওখান থেকে “ইউনিবিজয়“, “ফোনেটিক“ প্রভৃতি অপশন নেয়া যাবে লে-আউটের জন্য।

ইউনিবিজয়, সাধারণ বিজয় লেআউটের মতোই। যারা বিজয়ে পারদর্শী তারা চোখ বন্ধ করে লেখা শুরু করতে পারেণ। তবে যারা সামহোয়্যারে ফোনেটিকে লেখেন, তাদের প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা লাগবে, কিন্ত সেটা কেটে যাবে আস্তে আস্তে।

কেন ইউনিকোডে লেখবো- এরকম এ্যাটাকিং প্রশ্নটা অনেকের মনেই আছে, আমারো আছে। আমি আমার পয়েন্টটা শেয়ার করি। আমি খুব জরুরী কিছু ওয়ার্ডে লিখতে চাই, এখন আমার কাছে বিজয় নেই। ম্যানেজ করার ও উপায় নেই, অনলাইনেও সহজলভ্য না, আমি সামহোয়্যারে লিখতে চাইছি না সেটা। এখন আমি কী করবো...?

আচ্ছা ধরাযাক যাইহোক লিখলাম কোনভাবে। এখন এটা আমি কৌশিক ভাইকে পাঠাবো, কারণ তার জন্যও এটা ততোটাই জরুরী যতোটা আমার জন্য। উপরন্তু তার এসেসমেন্টের দরকার আছে লেখাটায়। এখন তার পিসিতে বিজয় ইনস্টল করা নেই। সে আমার লেখাটা পড়বে কী করে!

এমএসএন বা ইয়াহু তে ’জরিনার’ সাথে চ্যাট করার সময় ইংরেজিতে লিখতে হয়। অনেক সময় শখ হয়, আহারে যদি বাংলা অক্ষরে লিখতে পারতাম, “ওগো জরিণা বাগানে হাটিতেছে খাসি, তুমি জানো না আমি তোমায় কত্তো ভালোবাসি“!

এইসব সমস্যার সবগুলোরই সমাধান হয়ে যায় ইউনিকোড থাকলে। এটলিস্ট লেখা গুলো পড়ার জন্য খুব সহজেই ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোড করে নেয়া যায়। ইউনিকোডের সবচাইতে বড়দিক হলো এর সহজলভ্যতা। কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কপিরাইট করা সফটওয়্যারের উপর নির্ভর করতে হয় না।

Wednesday, October 11, 2006

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৪

চেতনার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির একটা ঝাপ্টা লাগে মুখে। উড়িয়ে নিয়ে যায় উতলা হাওয়া, বেরোরার সেই ঝটকা ভাবটা নেই। আছে মাউন্ট কোলাহ্, ড্রুয়িটের ঝরঝরে শিহরণ। তিনবোন- জিগজাগের ভূতুরে শান্ত নিবিরতা পেরিয়ে, গোধূলী বেলার কনে দেখা আলোর সোনালী রঙে আটলান্টিক সিটির জাহাজ সদৃশ ক্যাসিনোর আধোজল আধোডাঙা মাড়িয়ে গজে ওঠা রঙীন পাখায় ভর করে ভাবনার প্রজাপতি ছুঁটে চলে ভিসিইউ ক্যাম্পাসের গাঢ় সবুজ উদ্দ্যানের মখমল পরিসরে। শীতের আগমনে ঝরে পরা বিহবল পত্রকুল কড়কড় শব্দে পদদলিত করে হেঁটে যায় কয়েকজোড়া মনুষ্যকপোত। পথের ওপর বিছিয়ে থাকা উষ্ণ আবরণ অতি কষ্টে নিজখেদ নিবৃত করে।

Saturday, October 07, 2006

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০৩

সর্বশেষ কৃত্রিম আলোটাও নিভে যায় 'শুট' করে। নি:ছিদ্্র অন্ধকারে ডুবন্ত আসবাবহীন ঘরের প্রতিটা কোণ জুড়ে কেবল মোমবাতি আর মোমবাতি। নানা আকার নানা বর্ণ ছাপিয়ে এক মিশ্র ঘ্রাণে ঘ্রাণেন্দ্রীয় ব্যতিব্যস্ত , উদ্ভাসিত ভৌতিক আলোয়! হর্ণস্বি গামি সিটি রেলের ট্রেনটা বেরোরা এসে থামে। জনমানবহীন প্লাটফরম দেখে রোবটের মতো চালকের মুখেও কাষ্ঠহাসি ফোটে!

Monday, October 02, 2006

শিরোনামহীন অনুভূতি




রোণে দে আজ হামকো, দো আঁখে সো জানে দে-
বাহু মে লে লে অর খুদকো ভিগ জানে দে!


হ্যায় যো সিনে মে ক্কয়েদ দরিয়া, ভো ছুট যায়েগা-
হ্যায় ইতনা দার্দ কে তেরা দামান, ভিগ জায়েগা!!

কাল সন্ধ্যা থেকে মাথায় এই লাইন গুলো ঘুরছে। সত্যি বলছি আমি প্রেমে পড়িনি। প্রেমে পড়া আমার হবে না কখনোই, এটা জানি।
নাহ, মন ও খারাপ না, কিন্ত যখন কিছু অনুভূতি এসে ’হঠাত’ দরজায় টোকা মেরে যায়, তখন খুব একটা ভালো ও লাগে না।

ভালো লাগে না এই জন্যে যে, দরজায় টোকাটা আর “টোকা“-র পর্যায়ে থাকে না। সেটা হয়ে যায় প্রচন্ড জোড়ে ধাক্কা-ধাক্কি!

শান্তিপ্রিয় মানুষ আমি, দ্বার-রুদ্ধ করে ঘুমানোর পর দরজায় “সুনামির“ আন্দোলন ভাল্লাগে?

Saturday, September 30, 2006

সে দিনগুলো ০২


কোন ফরমালিটি ছাড়াই আমরা তিনজন খুব কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলাম। আমাদের পেরিয়ে যাওয়া সময় আর ঘটে যাওয়া ঘটনার মাঝে বুদ্ধদেব বসুর “পুরাণা পল্টনের“ ছায়া দেখতে পেতাম কখনো সখনো।

আমার আর সুজার ছিল ভিডিও গেমস খেলার বাতিক। ভুশার সেই শখ ছিল না, এ নিয়ে ওকে অনেক খেপাতাম। সেও সুযোগ পেলে দেড়-হাত নিত আমাদের উপর! আমাদের তিনজনেরই আলাদা কিছু বন্ধু ছিল। আমার স্কুলের রজব আলী- মাস্টার ছিল যার উপাধি, টালটু বরিশাইল্যা- কলেজে সুজার প্রথম দিকের বন্ধু, থেতে মুরাদ- ভুশার এলাকা আর ইশকুলের দোস্ত।

শুরুর দিকে ছয়জন মোটামুটি একই সাথে জুট্টি বাঁধলেও সেটা কেমন করে যেনো তিনে এসে ঠেকলো একসময়।

ক্লাশে একেকজন বিভিন্ন সময়ে ঢুকলেও একসাথে বের হওয়া, একসাথে খেতে যাওয়া, একসাথে ল্যাবে যাওয়া, একসাথে ফাঁকি দেয়া, মধুমিতায় সিনেমা দেখতে যাওয়া, বাদামের প্যাকেট হাতে কমলাপুর স্টেশনের কোন এক প্লাটফরমের শেষ প্রান্তের সবুজ লন পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া, একসাথে রিক্সায় ঘুরতে যাওয়া, রাস্তায় কোন এক সুন্দরী ললনাকে পরষ্পরের “ভাবী“ বানানো, এমন কি একসাথে একজনের প্রেমে পড়াও হয়েছে আমাদের!

আমরা তিনজন। একজনের প্রেমে পড়ে একজন লিখেছে কবিতা, একজন লিখেছে গল্প আর একজন জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টি মেলে দিয়ে শুনেছে রবিবাবুর গান। সৌভাগ্যবশতঃ সেই একজনকে সেদিনের পর আর দেখা যায়নি বলেই বন্ধুতটা টিকে গিয়েছিল। নাহলে কী হতো কে জানে!

রিক্সা করে কোথাও যাবার সময় ভাড়া ঠিক করার আগেই তড়াক করে লাফ দিয়ে সুজা উপরে উঠে বসতো, তার দেখাদেখি আমি, আর ভুশা করতো দামাদামি। এইকাজটা ও বরাবরই খুব ভালো পারতো। কখনো আমাদের ওপর ক্ষেপে গিয়ে এই রিক্সা ছেড়ে অন্য রিক্সার সাথে ভাড়া ঠিক করে নিজেই আগে উঠে বসে থাকতো গিয়ে। আমরাও নামবোনা নামবোনা করে একসময় ঠিকই ওর সাথে গিয়ে বসতাম। তবে প্রতিশোধ নিতাম ওর মাংশালো গাত্রে “ফ্রী-হ্যান্ড এক্সারসাইজ“ করে।

ল্যাবে হতো মজা। তিনজন তিন গ্রুপের সাথে ল্যাব করতাম। কিন্ত যখনই মেক-আপ খাওয়ার চান্স দেখেছি, আস্তে করে সরে এসে সুজা কিংবা ভুশার গ্রুপে মিশে গেছি। সাথের মুরগীগুলা কাউ কাউ করলেই তিনজনের সমসরে হুমকি, “তাইলে কিন্ত তোরেই বাইর কইরা দিমু“। যে ল্যাব গুলো একা করতে হতো, খবর হয়ে যেতো। আমি কলেজের শেষ দিন পর্যন্ত “মিটার স্কেলের ব্যবহার“ শেষ করতে পারিনি। অথচ এটা দিয়েই আমাদের ফিজিক্স ল্যাব শুরু হয়েছিলো।

চোখের সামনে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো একএক করে। ভদ্র স্যারের কানমলা, সুশীল স্যারের ঝারি, আজমল স্যারের মজার পচানী, মিজান (ভুঁইয়া) স্যারের হুমকি, মুক্তার স্যারের চিবানো ধামকি, মনোরঞ্জন স্যারের “থার্ড বেনচ মিডল ম্যান“ টাইপের শকুন দৃষ্টি, সুশান্ত স্যারের ঢিলাঢালা শাষন ছাপিয়ে আমরা তিনজন একদিন নিজেদের আবিষ্কার করলাম বিজ্ঞান কলেজের একরুমে।

এইচ, এইচ, সি পরীক্ষার শেষদিন বের হবার মুহুর্তে বারান্দায় মাথায় চাটি মারাকে কেন্দ্র করে লেগে গেলো সুজা আর জুয়েল রোজারিওর মধ্যে। জুয়েলকে উপুর্যপরী লাথি দিয়ে ফ্লোরে বসিয়ে দিয়ে সুজা ঠিক পরমুহুর্তেই আবার আমাদের আলোচনায় ফিরে আসে। আমার মাথায় ততক্ষণে অন্য চিন্তা।

ফার্মগেটের ফিরিঙি পাড়ার পোলা জুয়েল। কলেজে কখনো আমাদের তিনজনের কারুর সাথেই ওদের গ্রুপটার তেমন সুসম্পর্ক ছিলো না। তার ওপর সবার সামনে আজকের এই “অপমান“!

গেটের কাছের কলেজের সামনের বারান্দায় আসতেই বুঝতে পারলাম, যা ভেবেছি তার চাইতেও বড় চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

সুজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বল্লাম, “ব্যাটা! আজ তু বহত পিটেগা“।

Friday, September 29, 2006

সে দিনগুলো...

গ্রুপ বিভাজনের পর বেশ কয়েকদিন ক্লাশ কামাই দিয়ে নিজের আসন খুজে পেলাম শেষ বেনচের ঠিক আগের বেনচের এক কোনায়। তিন জনের বসার জায়গা, মাঝের জন সুজার সাথে আগেই পরিচয় হয়েছে সেই প্রথম দিন থেকে, গ্রুপ বিভাজনের আগেই। কয়েকদিন যেতে না যেতেই আরো বেশ কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক জমে গেলো। ভালোই চলছিল দিনগুলো।

একদিন সুশীল স্যারের ক্লাশে পিছন থেকে একজন পিঠে ধুপ-ধাপ কিল বসাচ্ছে। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম নতুন পাবলিক, মানে এতদিনে এই এলো প্রথম। আমি ক্লাশ কামাইয়ের দাদা হলে সে কামাইয়ের পরদাদা। আমাকে ফিরে তাকাতেই সাদা দাঁত গুলো বের করে হাসি দিয়ে হাত গুটিয়ে পিছনে চলে যায়। আমিও কিছু না বলে স্যারের বকবক শুনি।

একটু পর আবারো ধুপাধপ কিল। নয়া পোলা, কান্ধে উইঠা বইলে তো সমস্যা! এইবার আমি একটু বিরক্ত হয়েই তাকাই। এইবারো সেই একই হাসি। না হাসলে অবশ্য ওকে ট্রেস করা মুশকিল হয়ে পড়তো। হাসে বলেই দাঁত গুলো দেখা যায়, আর দাঁত গুলো দেখা যায় বলেই ওর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। এইবার বলে, “পিছে তাকাস কেন, সামনে তাকা”।

প্রথম দেখায় ক্লাশ মেট হোক আর নব্য-শশুর বাড়ির দারোয়ানই হোক এটলিস্ট “তুমি” সম্বোধন করার অলিখিত একটা নিয়ম আছে। খেয়াল করলাম এখানে কোনই ভদ্রতার বালাই নেই। আমিও যথারীতি এক ডিগ্রী সরেস উত্তর দিলাম, “শালা ভুশা কিলাস কেন, এইটা তোর বাপের শরীর”?

ভেবেছিলাম একটা সশস্ত্র প্রতিরোধ আসবে। কিন্তু কিছুই আসলো না। ক্লাশ শেষের ব্রেকে ওকে দেখতে পেলাম না কোথাও। “শালা ভাগা দিছে”- যেইনা সুজা বলছে, দেখি গ্রুপ ৪ এর দিক থেকে দৌড়ে এদিকে আসছে ভুশা মিয়া।

"ভাগে নাইরে, ওই দেখ আইতাছে"....!

Sunday, September 17, 2006

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০২




গ্রে মেটারে অবস্থানরত সুনিয়ন্ত্রিত ঘূন পোকাটা কটকট কামড়ে জানান দেয় অর্ধদশক পূর্তির কথা। প্রবল উৎসাহে ফুটুশ শব্দে শ্যাম্পেনের কর্ক খোলা না হলেও ধোঁয়ার কুন্ডলী ক্রমাগত দলা পাকিয়ে ওপরে উঠে যায়। বদ্ধ চোখ, ঘন নীলের মাঝে উঁকি দিয়ে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি দেখে। অনিয়ন্ত্রিত ধেয়ে চলা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে স্মৃতি ছুট লাগায়। উপত্যকার গহীনে হাতরে ফেরে আপন অস্তিত্বের চারুকলা। আঙুলের ফাঁকে পুড়তে থাকা ধোঁয়ার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। উপরে মুখ টিপে হাসতে থাকে শরতের এক টুকরা আকাশ।

Wednesday, September 13, 2006

আমি প্রেমে পড়েছি :: না না, তার নাম বলবো না!


“কাজল কালো মেয়েটি, ডাগড় ডাগড় আঁখিটি,
না না তার নাম বলবো না, নাম বলবো না...
তোমরা তাকে দেখেছো, গল্প পড়ে জেনেছো-
না না তার নাম বলবো না, নাম বলবো না...“!!

অবশেষে.... হ্যাঁ গো হ্যাঁ অবশেষে... ধুসর গোধূলি প্রেমে পড়েছে।

শুনেছি সবাই নাকি প্রেমে পড়ে, তারওপর প্রথম যারে ভালো লাগে তারে নাকি সারা জনমেও ভুলা যায় না। সত্যি বলছি, আমার প্রথম যে কারে ভালো লেগেছিল, তার কথা আমার কিছুই মনে নেই। আমার ভালো লাগার সূচকটা আবার খুব তারাতারি ই এদিক সেদিক ঘুরে যায় কিনা...

তবে যতদূর পর্যন্ত যেতে পাড়ি, যার কথা মনে পড়ে, আমি শিওর তার আগেও বেশ কয়েকজন কে ভালো লেগেছিল আমার। এতে “আমার কি দোষ বলো, যারে দেখি লাগে ভালো...“

নিজের প্রেমে পড়ার কথা স্বীকার করতেই হাঁটু পানিতে নামলাম। অন্যভাবে বলতে গেলে,“আমি যে প্রেমে পড়েছি...“, এই কথাটা ঢোল-ঢাক্কর বাজিয়ে, সবার কর্ণ-কূহরে প্রবিষ্ট করানোই আপাতঃ সাধ, সেইসাথে অনেক দিনের সুপ্ত বাসনাও!

বলছিলাম আমার প্রেমে পড়ার কথা।

আমি তাকে সামনা সামনি দেখিনি কখনো। দেখেছি দেখার যন্ত্রের মাধ্যমে (ধন্যবাদ আধুনিক বিজ্ঞান), তার স্পর্শ আমি কখনো পাই নি, বুঝিনি ফিসফিস করে কথা বলার সময় তার মুখের বাতাসে আমার কানের অনুভূতি। অথচ তার কথা আমি শুনেছি, অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রবন যন্ত্রকে তার প্রতিটা বাচন ভঙি আমার কানে পৌঁছে দেবার জন্য।


শারীরিক আবেদনে (মূখশ্রী প্রভৃতিতে) হয়তো তার সমসাময়িক বা অনূজদের সাথে কোন তুলনায় আনা যাবে না, কিন্ত শী ইজ দ্যা ওয়ান...

গায়ের রং ও আহামরি এমন কিছু না যে ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি লাগবে না, কিন্ত আমি জানি ওর আছে দ্রৌপদী সৌন্দর্য যা আসে কারো ভেতরের ও ভেতর থেকে।

হাসি টা ওর জগত ভুলানো। শুধু আমি না, যে দেখেছে সেই ভুলেছে, আমি ওভার শিওর।

আমি সেই মেয়েটির প্রেমে পড়েছি, একেবারে আড়-গোড় ভেঙে! আমি জানি এ প্রেমের কোন গতি নেই, নেই কোন গন্তব্য। তারপর ও আমি বলবো আমি তার প্রেমে পড়েছি... একেবারে ঠিক ফাঁসির মঞ্চে উঠার আগ পর্যন্ত বলে যাবো!

কিন্ত কে সে??

আপনারা (অনেকেই) তাকে দেখেছেন, অনেকেই তার কথা শুনেছেন, অনেকেই তার গল্প পড়েছেন... তবুও জানেন না কে সে! হাউ ফানি!!

শিরোনামে তার নাম বলবোনা বলে উললেখ থাকলেও ঠিক করেছি এ যাত্রা তার নাম টা বলেই দেব।


জানে জিগার, অন্দর কি মালেকীন, হৃদয়ের সালেকীন (এর মানে জানি না), হুসনে কইলজা, কিডনী কি টুকরা, হাজারো হার্টের রোগীর হৃদয়ের ধুকধুক বন্ধ করে দেয়া, সেই জন হলো মাধুরী দীক্ষিত।

মন“ সিনেমাতে একটা পাক্কু তোতলা পিচ্চির কথা মনে আছে হয়তো অনেকের। ঐযে দৌড়ে এসে টিচার কে বলছিল, টিচার, টিচার আমাকেও ষোল বছরের বানিয়ে দাও না, তারপর আমি ও প্রেম করবো“।

টিচার খুব উতসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “প্রেম কব্বা! তা কার শাতে“?

উতসাহী পিচ্চির চোখ বুজানো উত্তর ছিল, “মমমমমাধুরী জ্বি সে“।

হ্যাঁ সেই মাধুরী, যে “দিল ধাক ধাক করনে লাগা...“ গানটা দিয়ে আমার দিলে মোচড়া মেরে দিয়েছিল। সেই মাধুরী যে “না জানি কাহা দিল খেঁা গেয়া...“ বলে জগত ভোলানো হাসি দিয়ে চলে যাবার পর আমি আর আমার দিল খঁুঝে পাইনি। আবিষ্কার করেছি ইয়া ভুসমা সাইজের একটা পাত্থর সেখানে।

সেই মাধুরীর কথা বলছি, যে “দেখা হ্যায় পেহেলি বার...“ বলে আমার চোখেতে হাজার তারার পাহাড় এনে দিয়েছিল।

আমি সেই মাধুরীর প্রেমে এখনো হাবুডুবু খাই... খাই আর ভাসি... ভাসি আর খাই.... আহারে আমার মাধুরী!

Saturday, September 09, 2006

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০১

জিন লেফার্সের দালানের মাথার ওপর ফুঁচকি দিয়ে চতুর্দশীর চাঁদ তার বিশাল রূপালী অস্তিত্ব জানান দেয়। গ্যালারিয়া কাউফহফের সামনের স্ট্রীট লাইটের মায়াবী আলো মিশে একাকার হয়ে যায় নবযৌবনা শশীর চোখ ধাঁধানো এ্যালুমিনিয়াম আলোয়। প্রকান্ড গীর্জার সুউচ্চ চূড়ার দিকে তাকিয়ে বেথোফেনের পায়ের কাছে বাঁধানো বেদিতে রি-লাক্সিং মুডে মাথায় দিকে লাল-সাদা কী জাতের ফুল, উলটো দিকে দোদূল্যমান পা। মাথার ভেতরের ধুসর পদার্থে অনেক গুলো বছরের না মেলা সমীকরণের প্রবল ৎসুনামী!

Sunday, August 20, 2006

দ্যা স্ট্রেইট স্টোরী....

জার্মানীতে আমার প্রথম দিককার কথা।

পশ্চিমা জীবনযাত্রার সাথে অভ্যস্ত হলেও ভাষাগত কারণে খানিকটা সময় নিতে হচ্ছে পারিপাশ্বিêকতার সাথে ধাতস্থঃ হতে।

এমনি সময়ে, কোন এক ঠান্ডা রাতে টেলিভিশনের স্টেশন ঘুরাতে গিয়ে এক জায়গায় আটকে গেলো চোখজোড়া। একটা সিনেমা চলছে, “দ্যা স্ট্রেইট স্টোরী“।

ক্যামেরার অদ্ভুত সুন্দর কাজ আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যপটে ভরপুর সিনেমার জার্মান ডায়ালগ গুলো না বুঝলেও মজে গেলাম তাতে।

সিনেমাটার গল্প রচিত হয়েছে অলভিন স্ট্রেইট নামক জনৈক ভদ্রলোকের সত্যিকার জীবন কাহিনীকে কেন্দ্রকরে। মুগ্ধতার আবেশ জড়ানো সিনেমাটার প্রধান চরিত্র অলভিন স্ট্রেইট আত্ম-অহংকারী এক ব্যক্তিত্ব। দশ বছর সময় ধরে নিজের ছোট ভাই লাইল-এর সাথে কোন যোগাযোগ নেই আত্মাভিমানের কারণে। কিন্ত যখন ছোট ভাই কল করে তার স্ট্রোক-এর খবর জানালো তখন সব অহংকার ভুলে গিয়ে ভাইকে দেখতে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে অলভিন স্ট্রেইট।

অলভিন স্ট্রেইট যেখানে থাকে সেই আইওয়া, লরেন্স থেকে ছোট ভাই লাইল-এর বসত উইসকনজিন, মাউন্ট জায়ান প্রায় ৩০০ মাইল দূর। ৭৩ বছর বয়সী অলভিন কারো থেকে রাইড নেবে না আত্মসম্মানে হেঁাচট লাগবে বলে। দৃষ্টিশক্তির অপর্যাপ্ততার দরুণ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায় তঁার, কোমরের সমস্যার কারণে হঁাটার সময় দুহাতে কেইন ব্যবহার করতে হয় পায়ে উপযুক্ত জোড় (enough strength) পায়না বলে।

এই অবস্থায় ঘন্টায় পঁাচ মাইল দ্রুতির নিজের 1966 John Deere লন-মাওয়ারটা বেছে নেয় অলভিন। দীর্ঘ পথের ধীর ভ্রমনে অলভিন স্ট্রেইটের মোকাবেলা হয় হরেক রকম মানুষ আর পরিস্থিতির সাথে, ঘটে কিছু ঘটনা যা কিনা গেঁথে যায় হÕদয়ের ভেতরে।

ব্রাদারহুডের অপূর্ব মহীমায় চিত্রিত সিনেমাটির অলভিন স্ট্রেইট চরিত্রে নিজেকে আরেকবার প্রমান করেছেন “স্পার্টাকাস মিজারী“ খ্যাত রিচার্ড ফার্ণসওয়ার্থ।

Friday, July 28, 2006

“ছালা, গালি কী গাছে ধরে.....“

শঁাখারী বাজারের কোন এক গলি। একটা স্বর্ণকারের দোকানের সামনে খাড়ায়া আছি। হালার গেছি দূর্গা পঁূজার দাওয়াত রক্ষা করতে। আমার ইমিডিয়েট বস, তারপর আবার বড়ই সেনেহ করেণ, না গিয়া থাহি ক্যামনে?

শাপলার মোড় থেইক্যা রিáা লমু চিন্তা করছি। কোন রিক্সাওয়ালাই যাইবো না। মেজাজ টা গেলো বিলা হইয়া।

আগাইতে আগাইতে ইত্তেফাকের মোড়। এক চান্দুরে পাইলাম। বড়ই রসিক মনে কইলো। মাথায় তেল চুপচুপ করে। মাঝখান দিয়া সিঁথি করা।

: অই মামু যাইবেন ওয়ারী?

: হ যামু। মাগার ওয়ারী কোন্ডে নামবেন?

অহন ডিরেকশন দেই ক্যামনে? অর মাথাডাই বাইছ্যা লইলাম। মাথার চুল ধইরা আগাইতে আগাইতে নাক পর্যন্ত নাইমা কইলাম। এইহানে যামু....। লগের জন হাসে, “আপনে পারেণ ও ভাই...“।

লইয়া গেলো। রাস্তায় প্রবীর দাদার বারকয়েক ফোন, অই মিয়া আইতাছ তো?

গিয়া হুনি ’মা’রে নিয়া নাকি লোকজন রওনা দিয়া দিছে। দাদা আমাগো লাইগা যায় নাই। লগে লগে কইলাম লন দেহি দাদা, মা’রে বিসর্জন দিয়া আহি। দাদা অবাক, কয় কী হালায়? মুসলমানের পোলা হইয়া যাইবো মা’রে বিসর্জন দিতে?

দৌড় লাগাইলাম শঁাখারী বাজারের দিকে। রাস্তায় গিয়াই দেখা মিল্লো তাগো বিসর্জন যাত্রার। গিয়া দেহি আরো অনেকরেই চিনি। পোলাপাইন কয়, কি কর মিয়া এইহানে? কথা না বাড়াইয়া কই দেও দেহি কান্ধে লই।

শঁাখারী বাজারের এদিকে গিয়াই দেহি বিশাল জ্যাম। টেরাক টোরাক লইয়া লোকজন রওনা করছে পুরাণ ঢাকার চিপা গল্লি দিয়া। লোকজন সব খাড়াইয়া গ্যাছে আগাইতে না পাইর‌্যা। আমি আরো ৩ জন রাস্তার পাশে একটা স্বর্ণের দোকানের সামনে খাড়াইয়া রইছি, কাঠামের লাহান। হঠাত আমার চোখ পড়লো উপরে।

বড়ই সৌন্দর্য। উপর থাইকাও দেহি টাংকী ভালোই চলতাছে। সমানে চালাইলাম... সাপোর্টিং ও আছিলো ভালোই। এর মাঝে স্বর্ণের দোকান থাইক্যা এক চাচা মিয়া আইসা কয়, “এইহানে খাড়াইয়া কী করেণ? মা’র গাড়ি ধইরা না গিয়া খাড়াইবেন।“ যতোই বুঝাই আমরা ভালা পোলা, টাংকী কী জিনিষ চিনি ই না, হালার বুইড়া হুনলোই না। দিলো খেদাইয়া।

মনের দুঃখে আইয়া রাস্তায় খাড়াইলাম আবার। এদিকে চলতাছে যা চলোনের। হালার বুইরা অহন কী কইবা? - - এই পর্যন্ত ঠিক ই আছিলো, বাস্তব উপাখ্যান।

আজিব কারবার, দেখি মাইয়াডা নাইমা আইতাছে, আমার রক্ত হীম হওয়া ধরছে। দূরে থাইক্যা বহুত কিছুই করণ যায় মাগার সামনে আইলে সিংহের ও বুক কঁাপে পয়লা পরথম। তাই হইতাছিল আমার। ঠিক করতাছি কী করুম, কী কমু না কমু, কোন জায়গায় পয়লা ডেট টা হইবো এইসব....।

হঠাত ই আমার বেসুরা ফোনটা ক্যান ক্যান কইরা সুমধুর স্বরে চেঁচাইয়া উঠলো। দপ্তরের কাম বাড়িতে বইয়া করতে গিয়া ঘুমাইছি ই ঘন্টা খানেক হয়। এই নিশী রাইতে আবার কেডা জ্বালাইতে ফোন করলো?

হাত বাড়াইয়া, চোখ বুইনজাই ধরলাম। “হ্যালো...“কোন কথা নাই, দি্বতীয় বার হ্যালো, হের পর কথা হুনলাম। অপরিচিত না। ভাবলাম কেউ হয়তো শয়তানী করতাছে। উত্তর আইলো, “আছেন ক্যামন, কী স্বপ্ন দেখতাছিলেন !“ আমি কই হালার খাজুরা আলাপের আর টাইম পাওনা, আছি ক্যামন!

ক্যাডা আপণে?
:আমি? আমি শোধ নেবার লাইগ্যা ফোন করলাম।

আমি চিন্তা কইর‌্যা পাইতাছি না কার বারা ভাতে ছাই দিছি আমি যে শোধ নিতে এই রাইত বিরাইতে আমার এতো সুন্দর স্বপ্নের চৌদ্দটা বাজায়া দিলো। একবার পাইলে হইতো, বুঝাইতাম মজা কারে কয়। অহনো ধরবার পারতাছি না ক্যাঠা।

অই পাশ থাইকা কয়, হোনেন, আপনের ঘুম ভাংছে না? এইবার রাইখা দেই!

আমি কইলাম মিয়া অহনো যে গাইল পারি নাই আপনের কপাল ভালা। হুইন্না দেহি ব্যাটা খুশী ই হইলো। কয় দ্যান দেহি কয়েকটা গালি।

আমি তো পুরা ফঁাপড়ে। হারা জীবন মাইনষেরে আমি ভড়কাইয়া গেলাম আর আইজকা দি্বতীয় বারের মতো নিজেই ভড়কাইয়া গেলাম?

গালি তো দিবার পারলাম না। মাগার মনে মনে ঠিক ই কইলাম, “ছালা গালি কি গাছে ধরে যে ঝাকি দিবা আর টুপটুপ কইর‌্যা পড়বো“?

সর্ব সাকুল্যে দেড় ঘন্টা ঘুমাইয়া কামে যাওনের সময় অনেক কষ্ট কইরা মনে কইরা বাইর করলাম পাবলিক টা ক্যাডা যে আমার সুইট ড্রীম ডারে বিটার বানাইয়া দিছে...।

ঈমানে কইতাছি, রাগ লাগলেও ভালাই লাগছে পরে। কারণ নেক্সট শোধটা আমি লমু.... টাইম মতো। তহন বুঝবো চান্দু মজা, কত ধানে কত চাইল হয়!

Sunday, July 23, 2006

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ৪)

বাইরের অন্ধকারের সাথে সুর মেলাতেই কিনা প্রবল শব্দে কাছে কোথাও কিছু একটা বিস্ফোরিত হওয়ার সাথে সাথেই ঘরটা অন্ধকারে ডুবে গেলো। লোডশেডিং, অন্যসময় হলে হয়তো শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠতো একটা মোমবাতির জন্য- অথচ এখন এই অন্ধকারটাই ভালো লাগছে তার। থেকে থেকে চমকে ওঠা বিদুøতের ঝলকানী, জানালার গ্রীল ভেদ করে আসা ঠান্ডা, ভেজা বাতাস, আকাশের অঝোর কান্না যেনো এতোক্ষণ এই অন্ধকার টুকুরই প্রতীক্ষায় ছিলো পূর্ণতা পাবার।


সেদিনের সেই দেখা হবার পর তো অনেকগুলো দিন কেটে গেলো শুভ্রা শিপলুর টিকিটিও খুঁজে পেলো না ক্যাম্পাসের নানা জায়গা চষেও। একদিন তো শিপলুর দেয়া নাম্বারে ডায়ালও করেছিল সে। উফ, কী অস্থিরতাটাই না কাজ করছিল সেসময়।

দুরুদুরু বুকে ৯৮৭... ... ডায়াল করে শেষ সংখ্যাটা চাপার সাথে সাথেই দুরুদুরুবু শব্দটা ধুপধাপ ছাপিয়ে দামামার আওয়াজ জানান দিচ্ছিলো বুকে। প্রতিটা রিঙের “টু-উ-উ-উ-ট“ শব্দ কানে আসার সাথে সাথে শুভ্রার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তার হার্ট এটাক হলো! ওপার থেকে একটা “হ্যালো“ শুনেই চকিতে “ঘড়াত“ করে রেখেদিয়েছিলো ফোনটা।

পরে নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছিল সে। এমন একটা কাজ কেন করলো সে! সেতো এতোটা আনস্মার্ট না যে কাউকে ফোন করে কথা না বলে রেখে দিবে। কিন্ত সেসময় তার এমন লাগছিলো কেন? নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো, বুকের ধুরুপ ধারুপ শব্দটা গলা পর্যন্ত এসে যেন চেপে ধরতে চাইছিলো তার। এ অবস্থায় কী করে সে কথা বলতো, কী করে জিজ্ঞেস করতো “আমি কি শিপলুর সাথে একটু কথা বলতে পারি...?“।

আচ্ছা তখন কথা হলেই বা কী জিজ্ঞেস করতো শুভ্রা, কী হতো তাদের কথোপকথন!

ঃএই যে কেমন আছেন?
ঃ ঐ যে, ফাটাফাটি! তা আপনি কেমন আছেন?

ঃ ভাআআআলো তো!
ঃ হুমমম, তা গরীবকে কি জন্য ইয়াদ করলেন বলেন দেখি।

ঃ এমনি ফোন করা। হাতে তেমন কোন কাজ নেই, ভাবলাম আপনাকে একটু ডিস্টার্ব করি।
ঃ যার নেই হাতে কাজ, বসে বসে খই ভাজ। আপনিও এই কাজটা করতে পারেণ। খই ভাজা প্র্যাকটিস করতে থাকেন। ভবিষ্যতে কাজে দিবে...।

ঃ হাহাহা, আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়? অমাবস্যায় চাঁদ দেখে বেড়ান নাকি নিজেকে ডুমুরের ফুল হিসেবে ভাবতে ভালো লাগে? নাকি দাম বাড়ান নিজের...!
ঃ হাহাহাহা

ঃ হাসছেন কেন? যা জানতে চাইছি ঠিক ঠিক উত্তর দিন।
ঃ আরে মুশকিল, আপনি কি আমার বিয়ে করা ঘরের বউ নাকি যে ঠিকঠিক সব উত্তর দিতে হবে নাহলে হরতাল, ধম্মঘট ডেকে দেবেন....!

এতটুকু ভাবতেই শুভ্রার মুখটা লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট বাঁকা হয়ে সেখানে লজ্জার একটা হাসি নিজেই টের পেলো। “বিয়ে করা ঘরের বউ“, কথাটা জানি কেমন! কথাটায় খারাপ কিছুই নেই, অথচ কেমন লজ্জা লজ্জা কথাটা! এই কথাটা কেনো তার মনে এলো?

এই হয়েছে একটা সমস্যা তার। নিজের মনেই নিজে একটা কল্পিত চিত্র এঁকে, আবার নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া শুভ্রার অবচেতন মনের একটা কাজ। যখন একা থাকে, নিজের অজান্তেই সে অনেক কিছু ভাবে যার অনেক গুলোরই শেষ হয় কান, মুখ লাল হয়ে যাওয়া দিয়ে! যেমনটা হলো এখন। আর ভাবনা গুলোও এমন, যতোই লজ্জা হোক, যতোই কান লাল হোক, ভাবতে ভালোই লাগে, অদ্ভুত শিহরণ লাগে মনে। নিজেকে মনে হয় প্রজাপতির রঙীন ডানায় ভর করে উড়ে চলেছে।

এমনই অসম্ভব ভালো লাগা কিছু কথা ভাবতে ভাবতে বাঙলা একাডেমির সামনের রাস্তাটা ধরে কার্জনের দিকে যাচ্ছিলো শুভ্রা। ওখানে পুরো গ্রুপটার থাকার কথা, সেখান থেকে সবার সাথে নন্দনে যাবার কথা। অনেকদিন আগের প্ল্যান, সবার একত্রে সময় সুযোগের অপেক্ষায় খালি পিছিয়ে যাচ্ছিল তারিখটা।

হাঁটতে হাঁটতে বাঙলা একাডেমির টাইলস ফেলা ফুটপাথ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথাটা উঁচু করে সামনে তাকাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলোনা শুভ্রা। সামনে থেকে একটা রিক্সায় করে এদিকেই আসছে শিপলু। এও কী সম্ভব!

পড়নে গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পলো টি-শার্ট, চোখে কালো রোদচশমা। সাথে একগাদা কাগজের স্তুপ। শুভ্রার কাছে আসতেই রিক্সাটা থেমে গেলো।

শুভ্রা যেনো কিছুই দেখতে পায়নি, এমন একটা ভাব করে, একটুও দেরী না করে পাশের চুড়িওয়ালার রেশমী চুড়ির ঝুড়ির উপর ঝুঁকে পরে চুড়ি দেখতে লাগলো সে...

“দেখি তো মামা ঐ নীল রঙের গুলো.....“

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ৩)

সারা বাড়িময় চেঁচামেচি, চিতকার, সবার এদিক ওদিক ছোঁটাছুটি- সব মিলিয়ে বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। এরই মাঝে ডায়রীতে ঘষঘষ করে কী যেনো লিখে যাচ্ছে শুভ্রা, গত জন্মদিনে বাবার দেয়া ’মাউন্ট ব্লঁা’ কলমটা দিয়ে।

কলমের কালীর সেই গন্ধটা, খাতায় লেখার সেই আওয়াজ সে এখনো পাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর পর, আজকের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়। ভেজা বাতাসের ছোঁয়ায়। জানালার গ্রীলের পাশে। উড়ে চলা সাদা সিফনের শাড়ির অঁাচলের সাথে নিজেও উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে সেদিনের সেই সময়টায়।

সারা বাড়ি জুড়ে উতসবের প্রস্ততি, মার্বেলে বঁাধানো বারান্দা, সিঁড়িতে ধপধপ করে চলা, নিজের ঘর, বারান্দায় দঁাড়িয়ে খোলা চুলে বাতাস মাখা... সবকিছু যেনো সময়ের গহীন উপত্যকা থেকে তঁার ইন্দ্রীয়ের সামনে এসে হাজির হয়েছে।

নাকি সময়-কাল সব থেমে আছে এখন, আর সে নিজেই সময়ের অভিযাত্রী হয়ে ছঁুটে যাচ্ছে অবচেতন মনের কোনায় সচেতন হয়ে পড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পোস্টমর্টেমে!

অনেক জঁাকজমকের ভেতর দিয়েই মার্বেল পাথরের বাড়ির উতসব শেষ হলো। শুভ্রার মা হঁাফ ছেড়ে বঁাচলেন, কী খঁাটুনি টাই না গেলো এই ক’দিন। শুভ্রার নিজেরো বেশ ক’দিন ক্লাশ কামাই হয়েছে।

এটা অবশ্য বড় কোন ব্যাপার না ওর জন্যে। ও মাঝে মাঝেই ইউনি, ক্লাশ, টিউটোরিয়াল সব ফঁাকি মেরে বেড়ায়। কিন্ত বন্ধুত্বে ফঁাকি মারে না। সময় করে দল বেঁধে শহরময় চষে বেড়ানো, আড্ডায় মাতোয়ারা হওয়া, অকারণে হাসির ফুলঝুড়ি উঠা, ধানমন্ডি মাঠের সামনে বসে ফুচকা খাওয়া, চারুকলার সামনে ভেনালের কঁাঠাল পাতায় মোড়া ঠোঙায় বিরিয়ানী খাওয়া, ইচ্ছে হলেই নীরবে গিয়ে ভর্তা-ভাত গলাধঃকরণ - সবই চলে। বন্ধুরাও সব ওরই মতো, স্ক্রু-ঢিলা টাইপ।

এমনই একদিন চারুকলার দেয়াল ঘেঁষে কাঠের চেয়ারে বসে, ভেনালের কঁাঠাল পাতার ঠোঙায় সাদা প্লাষ্টিকের চামচের সাথে হাসির ঝড় উঠছে একেকজনের মুখে। শুভ্রার দৃষ্টি আটকে গেলো অস্থায়ী দোকানটার সামনের দিকে দঁাড়িয়ে অর্ডার দিতে থাকা একজনের দিকে।

বারকয়েক আপাদ মস্তক দেখে নিল সে ছেলেটাকে। চোখে রোদ চশমা, চুল ছোট করে ছঁাটা, হাফ হাতা শার্ট, গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট, পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল।

কোথাও আগে এনকাউন্টার হয়েছে শিওর, কিন্ত মনে পড়ছে না কোথায়, কীভাবে। পরক্ষণেই মস্তিষ্ক তঁার আহবানে সাড়া দিল, পরশুদিন সন্ধ্যার দিকে ডাস থেকে চা নিয়ে ফেরার সময় এর সাথেই প্রায় সংঘর্ষ এড়িয়ে নিজের এবং বন্ধুদের চায়ের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অপমান থেকে রক্ষা করেছিল শুভ্রা।

দুইটা ’সরি’ বিনিময়, তারপর যারযার পথে চলে যাওয়া, এইতো! এক নিমিষের জন্য তাকিয়েছিল বলে দেরী করে হলেও ধরতে পেরেছে, এই ছেলেটি ই ডাসের সেই ছেলেটি। কিন্ত এতো অল্প সময়ে তো শুভ্রার কারো চেহারা মনে থাকে না।

“হুমমম, ব্রেন ব্যাটার উন্নতি হয়েছে মনে হয়“ নিজের মনেই নিজে হেসে উঠলো।

“কিরে একা একা হাসছিস কেনো, জ্বীণে ধরছে নাকি“? এই নিয়ে সবার মাঝে আবার হাসির রোল। জ্বীণে ধরার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চারুকলার ইয়া বড় বকুল গাছ থেকে শুরু করে আই ই আর-এর নির্জন ক্যাম্পাস হয়ে ফুলার রোডের সাড়ি সাড়ি কড়ই গাছ, কিছুই বাদ গেলো না। একেকজন একেক কথা বলে, আর সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে।

এর ঠিক তিনদিন পর টি এস সি থেকে বের হয়ে, সামনে দঁাড়িয়ে শুভ্রা অপেক্ষা করছে বন্ধুদের। আবারো সেই ছেলে, এবার মস্তিষ্ক আর সময় নিল না সাহায্যে এগিয়ে আসতে।

“এক্সকিউজ মী, আপনি মফিজ না?“

ছেলেটা থমকে দঁাড়িয়ে ঘাড় ঘুরে একবার পিছনে তাকিয়ে নিয়ে বলে, “আমাকে বলছেন?“

“হঁ্যা, আপনাকেই বলছি। এতো ঢং করছেন কেনো?“

“আরে মুশকিল, ঢং করবো কেন? আমি ভাবলাম আমি ভবিষ্যতে চলে গেছি আর আপনি আমার ছেলেকে ডাকছেন। আমার নামতো মফিজ না, তবে ছেলে হলে তার নাম ’মফিজ’ ই রাখবো, কথা দিচ্ছি“।

“উপপস, সরি, কিছু মনে করবেন না। আমার মনে হচ্ছিল আমি আপনাকে চিনি.....“

“ব্যাপার না, অনেকের ই অনেককে দেখে চেনা চেনা লাগে। পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ, সৃষ্টিকর্তা হয়তো মজা করার জন্যেই কারো কারো মাঝে মিল দিয়ে পাঠিয়েছেন...“।

“আপনি কি নিশাত কে চিনেন...“?

“কোন নিশাত! উত্তরার?..... ওহ ওয়েইট, আপনি ই কি সেই বদমেজাজী মহিলা“?

“জ্বি... আমি ই সেই বদমেজাজী মহিলা“ - হাসতে হাসতে বল্লো শুভ্রা।

পরিচয়ের শুরুটা এখানেই। এখানেই দঁাড়িয়ে আধা ঘন্টার মতো কথা হয়েছিল সেদিন ওদের। শিপলু বুঝতে পারেণি মেয়েটা এতোটা প্রানোচ্ছ্বল কথা বলতে পারে। অন্তত সেদিনের ঘটনার পরতো নয়ই।

শুভ্রাও ভাবতে পারেণি অভদ্র বলে যাকে গালি দিয়েছিল, তার মধ্যে এতোটা সমীহ জাগানোর মতো সন্মান বিদ্যমান। তাড়াহুড়ার কারণে শিপলুকে সেদিন ছুটতে হয়েছিল।

কিন্ত টি এস সি-র সামনে থেকে শুরু হওয়া তাদের সেই পথ চলা গঁুটি গঁুটি পায়ে এগিয়েছিল সেই দিনটি পর্যন্ত, যেদিন শিপলু টি এস সি-র সামনে থেকেই শুভ্রার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল, শেষ বিদায়....।

Tuesday, July 11, 2006

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ২)

.... বাইরে ঝুম ঝুম শব্দে আকাশ কেঁদে চলেছে। জানালার গ্রীল গলে আসা ঠান্ডা বাতাস টা যেনো সেদিনকার বারান্দার সেই বাতাস। প্রচন্ড রাগে, ঘৃণায় লাল হয়ে যাওয়া মুখের ওপর এলোচুল গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিলো।

উড়ে চলা সাদা সিফনের অঁাচলটা এবার টেনে ধরলো শুভ্রা, চুল গুলো থাকলো সেভাবেই। নষ্টালজিয়া আজ তাকে পেয়ে বসেছে, কোন বঁাধাই আজ মানার নয়। বঁাধা সে নিজেও দিতে চায় না, আজকে সে মনের গহীণে ঝাপ দিয়ে দেখতে চায়, কি আছে ওখানে। কেন স্বপ্ন গুলো অবাস্তব এখন, কেন আকাশ ও ভয় পায় এমন স্বপ্ন দেখতে!

সেদিনের অনুভূতিটা কতো প্রখর, কতো জীবন্ত আজো, এখনো। সে এখন বসে আছে বিষন্নমনে জানালার ধারে, বৃষ্টিস্নাত পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য অবলোকনে। অথচ নিজেকে আবিষ্কার করছে সেদিনের সেই বারান্দায়, অপরিচিত একজনের হাতে নিজের প্রিয় থেকে প্রিয়তর ডায়রীটি ধরা অবস্থায়।

“কে আপনি? কী চান এখানে? আমার ডায়েরী পড়ছেন কেন আপনি, হঁ্যা...?“- আগুন ঝরে পড়লো শুভ্রার কন্ঠে।

হতভম্ব হয়ে যাওয়া যুবকটি আমতা আমতা করে বললো, “না মানে ইয়ে, আমি.... আমি নিশাতের চাচাতো ভাই....। আন্টি মানে ইয়ে, আপনার মা আমাকে....“

“মা ডেকে পাঠিয়েছেন তো এখানে কি করছেন? আর আপনি আমার ডায়েরী ই বা খুললেন কেনো। এটা তো কোন ভদ্র মানুষের পরিচয় না“!

এবার মনেহয় যুবকটির কোথাও লাগলো খুব। ঠাশ করে বলে উঠলো, “তা আপনি যেভাবে কথা বলছেন সেটা বুঝি খুব ভদ্রতার পরিচায়ক“?

“হাউ ডেয়ার ইয়্যু টু কল মি ইনডিসেন্ট.....“

“ইংরেজী গাল দিবেন না দয়াকরে। আমি আপনাকে ইনডিসেন্ট বলিনি। বলেছি আপনি যেভাবে আমাকে অভদ্র বলছেন সেটাও কোন ভদ্র মানুষের বলার ধরণ না। আর বারবার যেটা বলে অপবাদ দিচ্ছেন আপনার ডায়েরীর গুপ্তধন চুরি করে ফেলছি বলে, সেটাও ঠিক না। আমি এসেছি, কারণ আমাকে বলা হয়েছে এই বারান্দাটায় আল্পনার কাজটা দেখতে। সে জন্যেই এখানে আসা। এসে দেখলাম বাতাসে আপনার এই সাতরাজার ধনের প্রায় সব পাতাই উড়ে যাচ্ছিল পতপত করে। ধরে গুছিয়ে যেইনা বন্ধ করেছি, অমনি শুরু করে দিলেন এক ধামা বুলি। ধামা চিনেন? তা চিনবেন কি করে, চিনেন কতগুলা ইংরেজী শব্দ, আর জানেন কি করে তা যেখানে সেখানে অব্যবহার করা যায়। ধরেণ আপনার সম্রাট অশোকের হারানো সোনার চামচ......“।

ধরাক করে ডায়েরীটা মেঝেতে ফেলে রেখে খটখট করে চলে গেলো ছেলেটা।

ধাতস্থ হতে খানিক সময় নিল শুভ্রা।
কী হয়ে গেলো এটা? তার মুখের ওপর তো এমন করে কেউ কথা বলে না।

এই ছেলে কি অপমান করে গেলো তাকে? আশ্চর্যতো, ছেলেটার মিনিমাম কোন ডীসেন্সী, ওহ না, নো ইংলিশ - ন্যুনতম শালীনতা জ্ঞান ও কি নেই? একটা মেয়ে মানুষের সাথে কি করে কথা বলতে হয় শেখেনি, ছোঁহ....!

Sunday, July 09, 2006

অপরিপূর্ণ (ফাটাফাটি) গল্প ..... (পর্ব - ১)

..... সাদা শিফনের শাড়ির পেছনের ঘটনাটাই সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। এইতো সেদিন, অথচ এর মাঝে কেটে গেছে কয়েকটা বছর। স্পষ্ট মনে আছে সব। চোখের সামনে ভাসছে একের পর একটা মুহুর্ত। সেদিনের গন্ধটাও নাকে লাগছে, মনে হচ্ছে যেন হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাবে সবকিছু।

মার্বেল পাথরের বারান্দায় উবু হয়ে নিজের ডায়রীতে কিছু একটা লিখছে শুভ্রা। সারা বড়িময় শোনা যাচ্ছে এর ওর ইতস্ততঃ ছুটাছুটি, দাপাদাপি আর কোলাহল। মায়ের গলা কানে আসছে একটু পরপরই। মায়ের সবকিছু কড়ায় গন্ডায় পরিপূর্ণ হওয়া চাই। কোন খঁুত থাকা চলবেনা কিছুতে। তাই নিজের হাতেই সব তদারকি করছেন। হঠাত ই কানে এলো, “শুভ্রা কই গেলি। এদিকে একটু আয় তো“!

ব্যস কম্মো সাবার। মায়ের ডাক পড়লে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক শুভ্রা, ঠিকই তার ছুটে আসা চাই। “আসি মা“, বলে ডায়রীটা সেখানেই ফেলে রেখে ধুপ ধুপ শব্দে বারান্দা ধরে দৌড়।

তেমন কিছুই না। সিঁড়িতে গঁাদা ফুলের মালা লাগনো হবে। মালা লাগাবে ফুলওয়ালারাই। মায়ের অন্যকাজ আছে বলে এই তদারকির দায়িত্বটা পড়েছে শুভ্রার ঘাড়ে।

“দেখবো তোর রুচিবোধের পরীক্ষা, কেমন সাজাতে পারিস আজ। অবশ্য আমার বিশ্বাস আছে তোর ওপর“।“কি আর দেখবে, আমি তো তোমারই মেয়ে মা!“

মা তার ভুবন ভুলানো হাসিটা দিয়ে চলে যাবার মুহুর্তে শুভ্রার কপালে একটা ছোট্ট আদর করে দিলেন। বুঝতে শেখার পর থেকে কেবল মাত্র মা ছাড়া তার গাল, কপাল কেউ ছঁুতে পারেনি, আদর করা তো দুরের কথা।

অনেক কসরতের পর সিঁড়ি ঘরটাকে খুব সুন্দর করে সাজনো গেলো। ভাগ্যিস মা ওকে ডেকেছিল, নাহলে ফুলওয়ালারা যেভাবে সাজানো শুরু করেছিল, এতো সুন্দর মার্বেল পাথরে মোড়া বাড়িটাও শাহবাগের মোড়ের কোন অগোছালো, স্তপিকৃত ফুলের দোকান হয়ে যেতো এতোক্ষনে।

থ্যাংক গড.... বলে রুপোর নূপুর পড়া কঁাচা হলুদ রঙের পা ফেলে সিঁড়ি ভাঙতে গিয়েই মনে পড়লো ডায়রীর কথা। আবারো ধপধপ করে দৌড়ে উঠে এলো মার্বেলের বারান্দায়।

অপরিচিত একজনকে নিজের ডায়রী হাতে দেখে জ্বলে উঠলো শুভ্রা। আলগা বাতাসে উড়ে চলা খোলা চুলের কঁাচা হলুদ রঙের মুখটা মুহুর্তেই হয়ে উঠলো লাল টকটকে। লজ্জ্বায় নয়, প্রচন্ড রাগে, ঘৃণায়......

Saturday, May 13, 2006

প্রাপ্তি-র জন্যে প্রার্থনা... প্রার্থনা এবং প্রাপ্তি... অশ্রুসজল একজনের আবেদন

প্রাপ্তি, একটা নাম, একটা ফুটফুটে বাচ্চা, যাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিতে প্রবল সাধ জাগে মনে। কি সুন্দর, কি মায়াভরা একটা মুখ!

“মানুষের নিজের শরীরের বাইরে যদি হৃতপিন্ড কোথাও ধুক ধুক করে সেটা সন্তানের শরীর“ - এরকম একটা কথা প্রচলিত আছে। মায়াময়ী প্রাপ্তির শরীরেও তো কারো হৃতপিন্ড ধুক ধুক করছে। অসীম মমতায় কাছে টেনে ধরে আছে বাবা-মাকে।

প্রাপ্তি যে কিনা হঁাটতে শিখেই বুঝতে পারলো এই পৃথিবীতে তার দিন গুলো শেষ হয়ে আসছে, নিভে যাচ্ছে চোখের সামনের আলোগুলো এক এক করে। এই প্রাপ্তি, যে কিনা কেবল নিজের বাবা-মায়ের হৃতপিন্ড নিয়েই মৃত্যুর সাথে লড়ে যাচ্ছে না, বরং এই পৃথিবীর বিভিন্ন কোনের হাজারো মানুষের চেতনায় নিজেকে আসীন করতে পেরেছে।

যদি তাই না হবে, তাহলে কেনো ঘুমের মধ্যে মায়াভরা মুখটা নিয়ে হাজির হবে, কেনো বলবে, “আমি যদি তোমার তনয়া হতাম, আংকেল“, কেনইবা তার জন্যে চোখের কোন ভিজে উঠবে, কেন নিজের জীবনের বিনিময়ে তার সুন্দর হাসিটুকু কমনা করা হবে... কেনো?

আমরা কি করতে পারবো তার হিসেব না করে বরং চিন্তা করি, “কি করা লাগবে“। তার চিকিতসার জন্যে, এতো মায়াময় হাসিটা পৃথিবীতে ধরে রাখতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই, যা আমরা যোগাতে পারবো না।

“আমরা কেউ ছোট নই, সকলেই বড় মানুষ,সকলেই এক সাথে বড় মানুষ আমরা“ - আমার চোখে খুব বড় মাপের মানুষ এই কথাটা বল্লেন। আসলেই তো, আমরা কি সম,িলিতভাবে পারবোনা, প্রাপ্তির প্রাপ্ত অধিকার টুকু ফিরিয়ে দিতে !

Wednesday, May 10, 2006

একলা রাতের, অজানা পথের পথিক.......

মাঝে মাঝে মাথায় ঝেঁকে বসে সিন্দাবাদের ভ্রমন প্রিয় ভূত। কালকে রাতে হঠাত কি মনে করে বেরিয়ে পড়লাম। একটুবৃষ্টি হয়েছিলো, তার পরশে সব ধোয়া, তকতক, রাস্তা খানিক ভেজা ভেজা, কোন মানুষজন নেই... থেকে থেকে দুয়েকটা গাড়ি চলে যাচ্ছে.... ভোঁ... ছুরুত করে জমে থাকা পানি ছিঁটিয়ে।

এই রাস্তায় আমি কখনো হঁাটিনি। দরকার পড়েনি ইনফ্যাক্ট। কালকেও হয়তো হঁাটা হতো না। সিন্দাবাদের ভূতের কারণে ঘুরতে বেরিয়ে বাস, ট্রাম সব মিস। নাইট বাস কখন, কোত্থেকে ছাড়বে জানি না। যেখান থেকে ফিরছি, জায়গাটা আমার খুব পরিচিত না যে!

হাঁটতে লাগলাম অপরিচিত জায়গার অপরিচিত সেই রাস্তা ধরে। রাস্তার ধারে নাম জানি না এমন কিছু গাছ আর খুব সুন্দর করে কাটা ঘাসের মধ্য দিয়ে পায়েহঁাটা পথ।

রাস্তার ধারের সোডিয়াম সদৃশ বাতির মিডিয়াম আলোতে এক আলো-অঁাধারীর অপূর্ব অদ্ভুত মিশ্রন.....। আমি হেঁটে যাচ্ছি, যাচ্ছি অজানার উদ্দেশ্যে.... যাচ্ছি... যাচ্ছি ... যাচ্ছি

মাথার ভেতরে কেউ একজন কথা বলে যাচ্ছে, ঠিক কথা না, ঝগড়া। আবার ঝগড়াও না.... কী যেনো, বুঝতে পারি না। কিন্ত বলেই যাচ্ছে নিরন্তর, অনন্ত, অনবরত, সীমাহীন, বস্তাপঁচা কিছু কথা....আমিও তাল দিয়ে যাচ্ছি সমান তালে...।

Wednesday, April 26, 2006

পৃথিবী, ... ... ...আমার হাতের মুঠায়

পৃথিবী- (এখন পর্যন্ত) সৌরজগতের একমাত্র বসবাসযোগ্য গ্রহ। পৃথিবী র তুলনায় ধূলিকনার মতো ক্ষুদ্র আমাদের কাছে এর আয়তন বিশাল। স্কুলে আব্দুল্লাহ আল মূতি-র লেখা একটা প্রবন্ধে পড়েছিলাম এরকমই কিছু।....

পৃথিবী র তুলনায় আমরা ধূলিকনার চেয়েও ক্ষুদ্র, সৌরজগতের তুলনায় পৃথিবী ক্ষুদ্র, ছায়াপথের তুলনায় সৌরজগত আরো ক্ষুদ্র, পুরো মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের ছায়াপথ ও নেহায়েত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র।

এখন এই মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের অতি প্রিয় পৃথিবী র আয়তনটা কেমন দাড়ায়, ভাবা যায়? ভাবলে কেমন লাগে না যে, আল্লাহ এত বড়ো মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র একটা স্থানের, আরো ক্ষুদ্র আমাদের ভালো-মন্দ পর্যবেক্ষন করছেন, কঠিন শাস্তি অথবা পরম সুখ দিবেন বলে।

পুরো মহাবিশ্বেছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ছায়াপথের মধ্যে অন্তত এমন একটি ছায়াপথ তো নিশ্চই থাকার কথা যেখানে অন্তত একটি নক্ষত্র পাওয়া যাবে সূর্যের মতো, যেখানে অন্তত একটি গ্রহ পাওয়া যেতে পারে পৃথিবীর মতো, যেখানে প্রানের স্পন্দন থাকতে পারে।

গথষ মষ ইলথধর সিনেমাতে দেখেছিলাম পুরো মহাবিশ্বকে একটা ছোট বলের মধ্যে কল্পনা করার। উপরের ছবিটা দেখে ওরকমই কিছু মনে হয়েছিল বিধায় শেয়ার করলাম এখানে।

কতো বিশাল একটা অস্তিত্বের এক কোনায় পড়ে থেকে কীসব জিনিষ নিয়ে বিতন্ডা করে যাচ্ছি আমরা, তাও কেবল তর্কের খাতিরে।

Tuesday, April 25, 2006

... শিরোনামহীন বৃষ্টি ....উদাসী-একাকীত্ব-বিষন্নতা

" আজ আকাশের মনের কথা ঝরো ঝরো বাজে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে
দিঘির কালো জলের পরে মেঘের ছায়া ঘনিয়ে ধরে
বাতাস বহে যুগান্তরের প্রাচীন বেদনা যে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে

অঁাধার বাতায়নে
একলা আমার কানাকানি ঐ আকাশের সনে
্লান স্মৃতির বাণী যত পল্লব মমরের মতো
সজল সুরে ওঠে জেগে ঝিলমুখর সঁাঝে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে "

00000000

- কোথায় যেন কী মিসিং... বাপ্পার “বৃষ্টি প ড়ে“ গানটা আরো উদাস করে দিচ্ছে.... “ঐ ছেলেটার আকাশ উপুর,- মনের ভেতর অলস দুপুর“.... কোথায় যেনো নিয়ে যেতে চাইছে ব্রম্নচারী এই আমাকে....
“উদাসী-একাকীত্ব-বিষন্নতা“ -র মন্ত্র-মুগ্ধ আলিঙ্গনে আবদ্ধ আমি... একটা খোলা মাঠ, অঝোর ধারায় বৃষ্টি.... চারদিকে হালকা কুয়াশার জাল.... আমি ভিজে যাচ্ছি, মাথা নিচু করে... চুপচাপ বসে...।

কবিতার জন্য ঋণী ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Wednesday, March 22, 2006

... ... ...তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে

আশ্চর্য লাগে কখনো কখনো যখন এরকম বয়সী কাউকে দেখি সম্পুর্ণ একা। স্বামী হয়তো অনেক আগেই বিগত, ছেলে-মেয়ে থেকেও নেই। যেকোনো কারণেই হোক তারা বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকেন না, সবকিছু তাদের একাই করতে হয়, কেনাকাটা থেকে শুরু করে ঘরের টুকুটাকি সব কাজ...। কষ্ট লাগে, তাদের দেখলে, ভাবতে গেলে তাদের একাকিত্ব জীবন।

কয়েকদিন আগে মার্গারেট নামে এক বৃদ্ধার সাথে কথা হচ্ছিল। আমার প্রাথমিক ধারণা মতে সে ছিলো এক বদমেজাজী, বিদঘুটে, পানলিïসু মহিলা। কিন্ত যখন কথা হলো, বুঝলাম তার একমাত্র ছেলে যে একটা জার্মান টিভি চ্যানেলের টেকনিক্যাল অপারেটর, আর একমাত্র মেয়ে যে কিনা হল্যান্ডে পড়াশুনা করতে গিয়ে লা-পাত্তা।

মার্গারেটের অভিযোগ, তার মেয়ে ভুল মানুষের সাথে প্রেমে পড়েছে যে কিনা তাকে ব্যবহার করছে কেবল। মার্গারেট নিজে তাকে ফোন করে, মেয়ে কখনোই না।আমি এক পর্যায়ে বল্লাম, তুমি পান করো কেনো? ওর একটা হাত ধরলাম.... মার্গারেট নিজেকে সামাল দিতে পারলোনা আর। কেঁদে ফেললো, বললো, তুমি জানোনা আমি কতো একা, আর এই একাকীত্ব থেকে, একাকীত্বের যন্ত্রনা থেকে বাচার জন্য আমি পান করি..... আমার আর কোন উপায় নেই যে।

আমি কিছু বলতে যেয়েও আর কথা বাড়াতে পারিনি। অবাক হয়ে শুরু তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরা দেখেছি.... ওর বয়সের ভারে কঁুচকে যাওয়া চামড়ার হাত দুটু আমার হাতে শক্ত করে ধরে, অসহায় বোধ করেছি, ছটফট করেছি ওর জন্যে কিছু না করতে পারার মানসিক অস্বস্থিতে.....।

তবুও সময় কেটে যায়, তবুও জীবন বয়ে চলে..... তার নিজস্ব নিয়মে....। যেমনটা বয়ে যাচ্ছে মার্গারেটের..... যেমনটা আমাদের....। মার্গারেটের একাকীত্ব যেনো আমাকেও বুঝিয়ে দিতে চাইলো, “সব কিছুর মাঝে আমিও কতো একা, কতো নিঃসঙ্গ এই আমি.....“।

Thursday, March 16, 2006

ব্লগানেট অফ দ্যা “এ্যাপ“

কেউ যদি ভাবেন আমি Planet of the Apes এর গল্প বলতে চাইছি তাহলে মুড়ি খান। ওই হিমু, ওগরে ফরাসী দেশের ফেরেশ মুড়ি দেতো বাপ।

আসলে ঘটনা প্যাচ খাইছে অন্য জায়গায়।

সায়েনস ফিকশান লেখক, প্রখ্যাত হৈমিক ধারার প্রবর্তক মাননীয় হিমু কর্তৃক সংকলিত স্বনামধন্য, সেরা বিজ্ঞানী (যে কিনা অগনিত সেরা জার্ণাল প্রসব করিয়াছে এবং ইহা বিজ্ঞানীর অন্যতম সহকারী শ্রাবন দত্ত কর্তৃক সুপারিশকৃত) জনাবে কেবলাকান্ত ওরফে ড. ওমর আলী, সংক্ষেপে ও. আলী-কে নিয়া লিখিত সায়েনস ফিকশান আসলেই সত্যি কাহিনী হিসাবে প্রতিণ্ঠা পেয়েছে।

ব্লগানেট অফ দ্যা “এ্যাপ“-এর একমাত্র পত্রিকা “কাওয়ালী কথন“ এর বরাত দিয়ে একের অধিক সূত্র জানায়, বিজ্ঞানী ও. আলি “ময়ুর কন্ঠী নীল পোশান“ পান করেণ যাতে সময়ের কনিণ্ঠ আঙ্গুল ধরে সভ্যতার প্রাথমিক স্তরে গিয়ে ডারউইন ব্যাটার মাথায় প্রিয় বেসবলের ব্যাট খানা দিয়ে “পাতাইল্যা“ একটা বারি মেরে প্রমান করতে পারেণ ডারউইন হালায় একটা গঞ্জিকাসেবন কারী। (কেউ যেন “গঞ্জিকা“ ভুল করে “ধম্পিকা“ না শোনেন, তাইলে কইলাম খবর আছে....) যাইহোক।

“বাইঞ্চোত ডারউইন, আমার লগে টাফালিং...? খাড়া আইতাছি, তোর হাঙ্কি-পাঙ্কি আর বিটলামী ছুটাইতে। বাসে, ট্রামে যেইহানে পামু, মেরুদন্ড পাতাইল্যা এমুন একটা বারি দিমু.... খাড়াইতেই পারবিনা মরার আগে, থিওরী ঝারবি কেমনে....?“ এই বলে যেই না “পাতাইল্যা বারির“ একটা শ্যাডো করতে যাবেন ও. আলী, অমনি সহকারী শ্রাবন দাস (মতান্তরে শ্রাবন দত্ত) কোতাইয়া উঠলো,

ঃ ওস্তাদ করেণ কী? আরেট্টু হইলেই তো আমার ভবলীলা সাংগ হইছিলো....।

বদমেজাজী ও. আলী হুংকার দিয়া ফাল দিয়া উঠিলো,

ঃ stupide, pourquoi n'avez-vous pas apporté le camara?,

যার বাংলা মানে হইলো, “মুর্খ, ক্যামেরা না নিয়া আইছস ক্যান“? এত্তবড় আবিষ্কার করতে যাইতাছি, আর ফটুক থাকবো না আমার? শিগঘীর ক্যামেরা নিয়া আয়....।

ও. আলীর রুদ্র মুর্তি আর হাতে বেসবল ব্যাট খানা দেখিয়া শ্রাবন দাস উর্ধশ্বাসে প্রস্থান করলো।

যাইহোক, পরের ঘটনা আপনারা “কাওয়ালী কথন“ পত্রিকার কল্যানে পড়িয়া থাকিবেন। কিন্ত পরে যা হলো তা নিম্নরুপঃ

যেই না হাতের ক্যামেরাখান ঝলসাইয়া উঠিলো, বেসবল হাতে ওস্তাদ ও. আলীকে সামনে আগাতে দেখে শ্রাবন দাস প্রমাদ গুনলেন। বললেন, “গুরু, চলেন এক কাম করি শুরু“।

ঃ সবারে খাওয়াই এই পোশান, হের পরে আমরা হমু বান্দর রাজ্যে (ব্লগানেট)-র হর্তা কর্তা। আফনে রাজা আর আমি হমু পেরধান মন্ত্রি। কয়েকটা পাবলিক অলরেডী কিছু পোশান গিল্লা বইসা আছে, আমারা এই পোশান গিলছি দেখলে চোখ বুঞ্জাইয়া গিল্লা ফেলবো। কিন্ত প্রবলেম হইলো কতকগুলা “বদ-তমিজ“ রে নিয়া। এগুলাতো হাজার টা প্রশ্ন করবো এই পোশান গিলতে কইলে। নালায়েক গুলা বাগরা বাধাইবো আমাদের “ব্লগানেট অফ দ্যা এ্যাপস“ প্রজেক্টে। তবে নিরাশ হইয়েন না বস, আফনের বেসবলের ব্যাট টাতো আছেই, দিবেন কোমড় পাতালি একটা.... বারি খাইয়া যখন কোত কইরা উঠবো, আমি দিমু জাহেল গুলার মুখে “পোশান“ ঢাইল্যা, না খাই য়া যাইবো কই.... মুহাহাহাহাহা.....

উপরের বর্ণনা যা দেখলেন, তা “কাওয়ালী কথন“ হতে সংগৃহিত। আরো রোমহর্ষক ঘটনার বিস্তারিত (বিতারিত না জনাব) বিবরণ পাবেন ড. ও. আলী লিখিত, কলকলি বেগম প্রকাশিত, “আমি কাওয়ালী গাইছি“ নামক বইতে।

আমাদের পরবর্তি সংকলন “সার্ভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্ট ইন ব্লগানেট“ নিয়ে হাজির হবেন.... কে কে হাত তোলেন? ....... হাত দেখতে পাইছি, তাই অপেক্ষায় আছি “সার্ভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্ট ইন ব্লগানেট“ পড়ার জন্য।


রিপোর্ট ঃ কাওয়ালী পোশান না খাইতে চাওয়া, বেসবল ব্যাটের ভয়ে দৌড়ের উপর থাকা এক পাবলিক, ব্লগানেট, সামহোয়্যারইন।