Saturday, September 30, 2006

সে দিনগুলো ০২


কোন ফরমালিটি ছাড়াই আমরা তিনজন খুব কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলাম। আমাদের পেরিয়ে যাওয়া সময় আর ঘটে যাওয়া ঘটনার মাঝে বুদ্ধদেব বসুর “পুরাণা পল্টনের“ ছায়া দেখতে পেতাম কখনো সখনো।

আমার আর সুজার ছিল ভিডিও গেমস খেলার বাতিক। ভুশার সেই শখ ছিল না, এ নিয়ে ওকে অনেক খেপাতাম। সেও সুযোগ পেলে দেড়-হাত নিত আমাদের উপর! আমাদের তিনজনেরই আলাদা কিছু বন্ধু ছিল। আমার স্কুলের রজব আলী- মাস্টার ছিল যার উপাধি, টালটু বরিশাইল্যা- কলেজে সুজার প্রথম দিকের বন্ধু, থেতে মুরাদ- ভুশার এলাকা আর ইশকুলের দোস্ত।

শুরুর দিকে ছয়জন মোটামুটি একই সাথে জুট্টি বাঁধলেও সেটা কেমন করে যেনো তিনে এসে ঠেকলো একসময়।

ক্লাশে একেকজন বিভিন্ন সময়ে ঢুকলেও একসাথে বের হওয়া, একসাথে খেতে যাওয়া, একসাথে ল্যাবে যাওয়া, একসাথে ফাঁকি দেয়া, মধুমিতায় সিনেমা দেখতে যাওয়া, বাদামের প্যাকেট হাতে কমলাপুর স্টেশনের কোন এক প্লাটফরমের শেষ প্রান্তের সবুজ লন পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া, একসাথে রিক্সায় ঘুরতে যাওয়া, রাস্তায় কোন এক সুন্দরী ললনাকে পরষ্পরের “ভাবী“ বানানো, এমন কি একসাথে একজনের প্রেমে পড়াও হয়েছে আমাদের!

আমরা তিনজন। একজনের প্রেমে পড়ে একজন লিখেছে কবিতা, একজন লিখেছে গল্প আর একজন জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টি মেলে দিয়ে শুনেছে রবিবাবুর গান। সৌভাগ্যবশতঃ সেই একজনকে সেদিনের পর আর দেখা যায়নি বলেই বন্ধুতটা টিকে গিয়েছিল। নাহলে কী হতো কে জানে!

রিক্সা করে কোথাও যাবার সময় ভাড়া ঠিক করার আগেই তড়াক করে লাফ দিয়ে সুজা উপরে উঠে বসতো, তার দেখাদেখি আমি, আর ভুশা করতো দামাদামি। এইকাজটা ও বরাবরই খুব ভালো পারতো। কখনো আমাদের ওপর ক্ষেপে গিয়ে এই রিক্সা ছেড়ে অন্য রিক্সার সাথে ভাড়া ঠিক করে নিজেই আগে উঠে বসে থাকতো গিয়ে। আমরাও নামবোনা নামবোনা করে একসময় ঠিকই ওর সাথে গিয়ে বসতাম। তবে প্রতিশোধ নিতাম ওর মাংশালো গাত্রে “ফ্রী-হ্যান্ড এক্সারসাইজ“ করে।

ল্যাবে হতো মজা। তিনজন তিন গ্রুপের সাথে ল্যাব করতাম। কিন্ত যখনই মেক-আপ খাওয়ার চান্স দেখেছি, আস্তে করে সরে এসে সুজা কিংবা ভুশার গ্রুপে মিশে গেছি। সাথের মুরগীগুলা কাউ কাউ করলেই তিনজনের সমসরে হুমকি, “তাইলে কিন্ত তোরেই বাইর কইরা দিমু“। যে ল্যাব গুলো একা করতে হতো, খবর হয়ে যেতো। আমি কলেজের শেষ দিন পর্যন্ত “মিটার স্কেলের ব্যবহার“ শেষ করতে পারিনি। অথচ এটা দিয়েই আমাদের ফিজিক্স ল্যাব শুরু হয়েছিলো।

চোখের সামনে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো একএক করে। ভদ্র স্যারের কানমলা, সুশীল স্যারের ঝারি, আজমল স্যারের মজার পচানী, মিজান (ভুঁইয়া) স্যারের হুমকি, মুক্তার স্যারের চিবানো ধামকি, মনোরঞ্জন স্যারের “থার্ড বেনচ মিডল ম্যান“ টাইপের শকুন দৃষ্টি, সুশান্ত স্যারের ঢিলাঢালা শাষন ছাপিয়ে আমরা তিনজন একদিন নিজেদের আবিষ্কার করলাম বিজ্ঞান কলেজের একরুমে।

এইচ, এইচ, সি পরীক্ষার শেষদিন বের হবার মুহুর্তে বারান্দায় মাথায় চাটি মারাকে কেন্দ্র করে লেগে গেলো সুজা আর জুয়েল রোজারিওর মধ্যে। জুয়েলকে উপুর্যপরী লাথি দিয়ে ফ্লোরে বসিয়ে দিয়ে সুজা ঠিক পরমুহুর্তেই আবার আমাদের আলোচনায় ফিরে আসে। আমার মাথায় ততক্ষণে অন্য চিন্তা।

ফার্মগেটের ফিরিঙি পাড়ার পোলা জুয়েল। কলেজে কখনো আমাদের তিনজনের কারুর সাথেই ওদের গ্রুপটার তেমন সুসম্পর্ক ছিলো না। তার ওপর সবার সামনে আজকের এই “অপমান“!

গেটের কাছের কলেজের সামনের বারান্দায় আসতেই বুঝতে পারলাম, যা ভেবেছি তার চাইতেও বড় চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

সুজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বল্লাম, “ব্যাটা! আজ তু বহত পিটেগা“।

Friday, September 29, 2006

সে দিনগুলো...

গ্রুপ বিভাজনের পর বেশ কয়েকদিন ক্লাশ কামাই দিয়ে নিজের আসন খুজে পেলাম শেষ বেনচের ঠিক আগের বেনচের এক কোনায়। তিন জনের বসার জায়গা, মাঝের জন সুজার সাথে আগেই পরিচয় হয়েছে সেই প্রথম দিন থেকে, গ্রুপ বিভাজনের আগেই। কয়েকদিন যেতে না যেতেই আরো বেশ কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক জমে গেলো। ভালোই চলছিল দিনগুলো।

একদিন সুশীল স্যারের ক্লাশে পিছন থেকে একজন পিঠে ধুপ-ধাপ কিল বসাচ্ছে। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম নতুন পাবলিক, মানে এতদিনে এই এলো প্রথম। আমি ক্লাশ কামাইয়ের দাদা হলে সে কামাইয়ের পরদাদা। আমাকে ফিরে তাকাতেই সাদা দাঁত গুলো বের করে হাসি দিয়ে হাত গুটিয়ে পিছনে চলে যায়। আমিও কিছু না বলে স্যারের বকবক শুনি।

একটু পর আবারো ধুপাধপ কিল। নয়া পোলা, কান্ধে উইঠা বইলে তো সমস্যা! এইবার আমি একটু বিরক্ত হয়েই তাকাই। এইবারো সেই একই হাসি। না হাসলে অবশ্য ওকে ট্রেস করা মুশকিল হয়ে পড়তো। হাসে বলেই দাঁত গুলো দেখা যায়, আর দাঁত গুলো দেখা যায় বলেই ওর অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। এইবার বলে, “পিছে তাকাস কেন, সামনে তাকা”।

প্রথম দেখায় ক্লাশ মেট হোক আর নব্য-শশুর বাড়ির দারোয়ানই হোক এটলিস্ট “তুমি” সম্বোধন করার অলিখিত একটা নিয়ম আছে। খেয়াল করলাম এখানে কোনই ভদ্রতার বালাই নেই। আমিও যথারীতি এক ডিগ্রী সরেস উত্তর দিলাম, “শালা ভুশা কিলাস কেন, এইটা তোর বাপের শরীর”?

ভেবেছিলাম একটা সশস্ত্র প্রতিরোধ আসবে। কিন্তু কিছুই আসলো না। ক্লাশ শেষের ব্রেকে ওকে দেখতে পেলাম না কোথাও। “শালা ভাগা দিছে”- যেইনা সুজা বলছে, দেখি গ্রুপ ৪ এর দিক থেকে দৌড়ে এদিকে আসছে ভুশা মিয়া।

"ভাগে নাইরে, ওই দেখ আইতাছে"....!

Sunday, September 17, 2006

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০২




গ্রে মেটারে অবস্থানরত সুনিয়ন্ত্রিত ঘূন পোকাটা কটকট কামড়ে জানান দেয় অর্ধদশক পূর্তির কথা। প্রবল উৎসাহে ফুটুশ শব্দে শ্যাম্পেনের কর্ক খোলা না হলেও ধোঁয়ার কুন্ডলী ক্রমাগত দলা পাকিয়ে ওপরে উঠে যায়। বদ্ধ চোখ, ঘন নীলের মাঝে উঁকি দিয়ে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি দেখে। অনিয়ন্ত্রিত ধেয়ে চলা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে স্মৃতি ছুট লাগায়। উপত্যকার গহীনে হাতরে ফেরে আপন অস্তিত্বের চারুকলা। আঙুলের ফাঁকে পুড়তে থাকা ধোঁয়ার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। উপরে মুখ টিপে হাসতে থাকে শরতের এক টুকরা আকাশ।

Wednesday, September 13, 2006

আমি প্রেমে পড়েছি :: না না, তার নাম বলবো না!


“কাজল কালো মেয়েটি, ডাগড় ডাগড় আঁখিটি,
না না তার নাম বলবো না, নাম বলবো না...
তোমরা তাকে দেখেছো, গল্প পড়ে জেনেছো-
না না তার নাম বলবো না, নাম বলবো না...“!!

অবশেষে.... হ্যাঁ গো হ্যাঁ অবশেষে... ধুসর গোধূলি প্রেমে পড়েছে।

শুনেছি সবাই নাকি প্রেমে পড়ে, তারওপর প্রথম যারে ভালো লাগে তারে নাকি সারা জনমেও ভুলা যায় না। সত্যি বলছি, আমার প্রথম যে কারে ভালো লেগেছিল, তার কথা আমার কিছুই মনে নেই। আমার ভালো লাগার সূচকটা আবার খুব তারাতারি ই এদিক সেদিক ঘুরে যায় কিনা...

তবে যতদূর পর্যন্ত যেতে পাড়ি, যার কথা মনে পড়ে, আমি শিওর তার আগেও বেশ কয়েকজন কে ভালো লেগেছিল আমার। এতে “আমার কি দোষ বলো, যারে দেখি লাগে ভালো...“

নিজের প্রেমে পড়ার কথা স্বীকার করতেই হাঁটু পানিতে নামলাম। অন্যভাবে বলতে গেলে,“আমি যে প্রেমে পড়েছি...“, এই কথাটা ঢোল-ঢাক্কর বাজিয়ে, সবার কর্ণ-কূহরে প্রবিষ্ট করানোই আপাতঃ সাধ, সেইসাথে অনেক দিনের সুপ্ত বাসনাও!

বলছিলাম আমার প্রেমে পড়ার কথা।

আমি তাকে সামনা সামনি দেখিনি কখনো। দেখেছি দেখার যন্ত্রের মাধ্যমে (ধন্যবাদ আধুনিক বিজ্ঞান), তার স্পর্শ আমি কখনো পাই নি, বুঝিনি ফিসফিস করে কথা বলার সময় তার মুখের বাতাসে আমার কানের অনুভূতি। অথচ তার কথা আমি শুনেছি, অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রবন যন্ত্রকে তার প্রতিটা বাচন ভঙি আমার কানে পৌঁছে দেবার জন্য।


শারীরিক আবেদনে (মূখশ্রী প্রভৃতিতে) হয়তো তার সমসাময়িক বা অনূজদের সাথে কোন তুলনায় আনা যাবে না, কিন্ত শী ইজ দ্যা ওয়ান...

গায়ের রং ও আহামরি এমন কিছু না যে ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি লাগবে না, কিন্ত আমি জানি ওর আছে দ্রৌপদী সৌন্দর্য যা আসে কারো ভেতরের ও ভেতর থেকে।

হাসি টা ওর জগত ভুলানো। শুধু আমি না, যে দেখেছে সেই ভুলেছে, আমি ওভার শিওর।

আমি সেই মেয়েটির প্রেমে পড়েছি, একেবারে আড়-গোড় ভেঙে! আমি জানি এ প্রেমের কোন গতি নেই, নেই কোন গন্তব্য। তারপর ও আমি বলবো আমি তার প্রেমে পড়েছি... একেবারে ঠিক ফাঁসির মঞ্চে উঠার আগ পর্যন্ত বলে যাবো!

কিন্ত কে সে??

আপনারা (অনেকেই) তাকে দেখেছেন, অনেকেই তার কথা শুনেছেন, অনেকেই তার গল্প পড়েছেন... তবুও জানেন না কে সে! হাউ ফানি!!

শিরোনামে তার নাম বলবোনা বলে উললেখ থাকলেও ঠিক করেছি এ যাত্রা তার নাম টা বলেই দেব।


জানে জিগার, অন্দর কি মালেকীন, হৃদয়ের সালেকীন (এর মানে জানি না), হুসনে কইলজা, কিডনী কি টুকরা, হাজারো হার্টের রোগীর হৃদয়ের ধুকধুক বন্ধ করে দেয়া, সেই জন হলো মাধুরী দীক্ষিত।

মন“ সিনেমাতে একটা পাক্কু তোতলা পিচ্চির কথা মনে আছে হয়তো অনেকের। ঐযে দৌড়ে এসে টিচার কে বলছিল, টিচার, টিচার আমাকেও ষোল বছরের বানিয়ে দাও না, তারপর আমি ও প্রেম করবো“।

টিচার খুব উতসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “প্রেম কব্বা! তা কার শাতে“?

উতসাহী পিচ্চির চোখ বুজানো উত্তর ছিল, “মমমমমাধুরী জ্বি সে“।

হ্যাঁ সেই মাধুরী, যে “দিল ধাক ধাক করনে লাগা...“ গানটা দিয়ে আমার দিলে মোচড়া মেরে দিয়েছিল। সেই মাধুরী যে “না জানি কাহা দিল খেঁা গেয়া...“ বলে জগত ভোলানো হাসি দিয়ে চলে যাবার পর আমি আর আমার দিল খঁুঝে পাইনি। আবিষ্কার করেছি ইয়া ভুসমা সাইজের একটা পাত্থর সেখানে।

সেই মাধুরীর কথা বলছি, যে “দেখা হ্যায় পেহেলি বার...“ বলে আমার চোখেতে হাজার তারার পাহাড় এনে দিয়েছিল।

আমি সেই মাধুরীর প্রেমে এখনো হাবুডুবু খাই... খাই আর ভাসি... ভাসি আর খাই.... আহারে আমার মাধুরী!

Saturday, September 09, 2006

লেখার এলোমেলো ড্রাফট ০১

জিন লেফার্সের দালানের মাথার ওপর ফুঁচকি দিয়ে চতুর্দশীর চাঁদ তার বিশাল রূপালী অস্তিত্ব জানান দেয়। গ্যালারিয়া কাউফহফের সামনের স্ট্রীট লাইটের মায়াবী আলো মিশে একাকার হয়ে যায় নবযৌবনা শশীর চোখ ধাঁধানো এ্যালুমিনিয়াম আলোয়। প্রকান্ড গীর্জার সুউচ্চ চূড়ার দিকে তাকিয়ে বেথোফেনের পায়ের কাছে বাঁধানো বেদিতে রি-লাক্সিং মুডে মাথায় দিকে লাল-সাদা কী জাতের ফুল, উলটো দিকে দোদূল্যমান পা। মাথার ভেতরের ধুসর পদার্থে অনেক গুলো বছরের না মেলা সমীকরণের প্রবল ৎসুনামী!