Monday, October 08, 2007

হেমন্তের পাতাঝরার দিনে

- একটা দু'টা করে পাতা ঝরে পড়ে। বছরের এই সময়টা আসলেই মন খারাপ হয় শুধু শুধু। ঝিরঝিরে বাতাসে শুকিয়ে যাওয়া পাতা উড়ে যায় বলেই বোধহয়। আগে টিভিতে মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলীর এ্যাড দেখানোর সময় এমন দৃশ্য দেখাতো। তখনো এরকম একটা শুষ্ক অনুভুতি জাগতো মনে। জিন্সের পকেটে হাত পুরে আমি আপন মনে হেঁটে যাই লাল শুকনো পাতা মাড়িয়ে। হঠাৎ চোখ পড়ে পাশের বেঞ্চিতে। সোনালী চুলের বাদামী চামড়ার যুগল। খুব অন্তরঙ্গ হয়ে ছুঁয়ে আছে পরষ্পরকে। মনটা দোলা দিয়ে ওঠে। এমনতর দৃশ্যে নয়, ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে! গলায় মাফলারটা টেনেটুনে ঠিকঠাক করি আবার। সাতদিন ধরে ভুগছি, নইলে কি আর মাফলার আমার গলায় ওঠে! অয়োময়ের হানিফের মতো হঠাৎ কাশি ওঠে। বিষ্ময়ের চোখে দুইজোরা চোখ ফেরে আমার দিকে। খানিক অস্বস্তি হয়। পা থেমে থাকে না। সিগনালে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে তার কলাপাতা রঙের কিউটি সাইকেলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তার বাবা। দুজনের মাথায়ই সাইকেল হেলমেট। টকটক করে কি যেন বললো বাবাকে। কথা বলার ঢঙ দেখে মনে হলো, টুক করে খেয়ে ফেলি পিচকুটাকে। সবুজ হতেই এক্কাদোক্কা করে রাস্তা পার হয়ে একসময় দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো তারা। হারানো দিনের মতো করেই হারিয়ে গেলো সুন্দর মুখটা। পা চলে আবারো। একটা ফাঁকা বেঞ্চ পেয়ে বসে পড়ি আমি। ক্লান্ত পা আর চলছে না যে!

এখানকার ফ্লু গুলো কেমন জানি। শরীর ভয়ানক দুর্বল করে দেয়। একেকবার মনে হয় ডেঙ্গু হলোনা তো আবার! পরক্ষণেই মনে হয়, ধুর ডেঙ্গু হবে কেমনে? এখানে কি মশা কামড়ায় আমাকে? ক্লান্তি এবার আমাকে নস্টালজিক করে দেয়। হেমন্তেরএরকম একটা ঝলমল পড়ন্ত দুপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। সরষে ক্ষেত আমার দারুণ প্রিয়। সেই হলুদ সরষে ক্ষেতে আমি দৌড়ে গেছি কত শতবার। জ্বরের সময় মা মাথায় পানি দিতো আর ভর্ৎসণা করতো, খালি হাতে ধরে ধরে অসুখ বানায় । এখন মাথায় পানি দেয়ার জন্য মা কাছে নেই। বকা ঝকা করারও কেউ নেই। সেদিনও বলছিলো, তুই আসবিনা ? আমি কি সাধে পড়ে আছি এখানে?

শরীরটা আবারো দুর্বল লাগে। বসে থাকতেও ইচ্ছে হয় না। একটা রিক্সা করে শহরময় ঘুরে বেড়াতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। রাস্তায় থেমে কোন একটা বেস্ট ইন ঢাকায় দুধ-চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা মেরে দেয়া যেতো। আমার ঘরে চা নেই, কফিও নেই। কোন দোকানে ঢুকেও খেতে ইচ্ছে করছে না। কোন এপেটিটও নেই। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয় নি, তারপরও কোন ক্ষুধা নেই। তবে দুর্বলানুভুতিটা প্রকট। বাড়িতে থাকলে মায়ের কয়েক পশলা ঝাড়ি হয়ে যেতো এতোক্ষণে। সেদিনও জেরা করছিলো, কি খেয়েছি, কি রেঁধেছি, ঈদে কি করবো, এইসব হাবিজাবি। আমি হু-হা করি। মা কি করে জানবে হয়তো ঈদের দিনও সাত সকালে উঠে কামলা খাটতে দৌড়াতে হবে। ঈদের দিনও হয়তো সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরার টান থাকবে না। হয়তো এই বেঞ্চটিতে বসে কোন এক ঈদের স্মৃতিচারণ করবো। প্রচন্ড ঠান্ডায় হয়তো দুয়েকটা কাশি দেবো। গলায় মাফলার তুলবোনা তবুও। পরেরবার ফোনে কথা বলার সময় বসে যাওয়া গলার গরগর শুনে মা হয়তো অকাতরে ধমকে যাবে আবার।

No comments: