Monday, October 15, 2007

আমার ছেলেবেলা - ডিলিটেড সিন!

আমি ভয়ানক রকম অতীতচারী। হুটহাট করে চলে যাই সময়ের উপত্যকা পেরিয়ে অতীতের বিভিন্ন সময়ের খানা-খন্দে। নাচি, গাই, উড়ে বেড়াই নিজের মতো করে সেসব জায়গায়। রি-কল করি, স্মৃতির মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই টিমটিমে আলোয় স্মরণ করি হারিয়ে যেতে বসা মুখগুলোকে।অনেক আগে থেকেই ভাবছিলাম নিজের ফেলে আসা ছেলেবেলা কে তুলে ধরবো। ডায়েরী লেখার অভ্যাস কোন কালেই ছিলো না। ব্লগিং প্লাটফরম মনের আবঝাব বের করার একটা উপায় বের করে দিলো।

কথায় বলে স্বভাব যায় না মলে। আমি অলওয়েজ লেইট লতিফ। এগারোতম বেলায় কাজ না করলে হয় না আমার। সেই জন্যই লেখা শুরু করেও থমকে ছিলো। মাঝখানে পড়লাম অসুখে। নাক-কান-গলা এক হয়ে সম্মিলিত বাঁশরী বাজানো শুরু করলো। কাশি শুনলে যক্ষ্না রুগীও ভয়ে দৌঁড়ে পালাবে। এই অবস্থায় লেখাটা কোন ভাবেই এগুচ্ছিলো না। ঠিক করলাম ঈদের দিন যেহেতু বইটা বের হবে, ঈদের দিন সকাল সকাল লেখাটা পাঠিয়ে দেবো নে বেগতিক ভাইয়ের তড়িৎ ডাকে। এতো সকালে তো আর বই দিবেন না উনি। ঈদের দিন, সেমাই-দই খাবেন, খেজুর খোরমা খাবেন, ভাবীর সঙ্গে একটু খুনসুটি করবেন তার পরে না সচলায়তন!ওমা কীসের কি! সারা রাত বসে লেখা শেষ করে সচলে ঢুকে দেখি, ব্যাটা বই অলরেডি বানিয়ে আপ করে বসে আছে।

বিরাস বদনে তাও দিলাম লেখাটা পাঠিয়ে। কিন্তু বাদ পড়ে গেলো কিছু সিন। পরে চিন্তা করে দেখলাম ভালোই হলো। লেখাগুলোকে ডিলিটেড সিন হিসেবে চালিয়ে যাবে

ডিলিটেড সিন এক.

এসএসসি পরীক্ষার আগে। টেস্টের পর আমাদের স্কুলে কোচিং হতো। ওল্ড টেন বলে আলাদা একটা ক্লাসই ছিলো ঐতিহ্য অনুযায়ী। আমি এজ ইয়্যুজুয়াল একদিন গেলে তিনদিন কামাই মারি। তখন স্কুলে যাবার ব্যাপারটা আমার কাছে সিসটেম লস মনে হতো আসলে। তার চাইতে খাল পাড় ধরে হাঁটা। ঐ পাড়ের মেয়েদের সঙ্গে টাংকি মারা, পাট ক্ষেটের আইলে বসে সারা বেলা গল্প করতে করতেই আমার সময় কেটে যায়, স্কুলে যাবার বেইল কই?
দুই তিনদিন বাদে স্কুলে গিয়ে দেখি আবহাওয়া থমথমে। আমার সবার সঙ্গেই বিশেষ খাতির। ফার্স্ট গার্লের সঙ্গে বিটলামির ব্যাপারটা স্কুলের মোটামুটি সবাই জানে। যে কারণে মেয়েদের সঙ্গেও মাঝে মাঝেই গপশপ হয় আরকি!সেদিন দেখি অবস্থা ভিন্ন। কোন মেয়ে ছেলেদের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। আমার মেয়ে ইয়ার-দোস্ত গুলাও ক্যামন পানসে হয়ে গেছে। পিছনে বসে এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি!

রুমা। আমাদের ব্যাচের সবচাইতে সুন্দরী না হলেও একটা দিকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। নাইনে থাকা কালীন কে জানি রুমাকে উদ্দেশ্য করে দেয়ালে "মিল্ক ভিটা" লিখে রেখছিলো খড়িমাটি দিয়ে।ঘটনার দিন কিছু বাবজুইট্টা (আমি কই না, লোকে কয়) পোলাপান পিছনে বসে বসে বুট খাচ্ছিলো রউফ স্যারের ইংরেজী ক্লাসে। রউফ স্যার হলেন মাটির মানুষ। ক্লাসে এসে হয় নিজে লিখবেন নয় সবাইকে দিয়ে লেখাবেন। কে, কোথায় হাউ কাউ করলো সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ করেন না। সেদিন তিনি লিখছিলেন। রুমা বিষণ্ণ বদনে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকাদের মতো বেঞ্চে উবু হয়ে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে ঝিমাচ্ছিলো। বুট খাওয়া পোলাপাইন গুলার চোখ চলে গেলো জায়গা মতো। একজন আরেকজনের সঙ্গে বাজী ধরলো, "কেডা সই করতে পারবো"!নিয়ম হলো, নিজের বইয়ের উপর বুট রেখে তারপর আঙুলে টোকা দিয়ে ফায়ার করতে হবে। সোবহানের দোকানের আলুপুরী বাজি।

শইপ্যা, হলো ত্যাঁদরের একশেষ। ও কইলো আমি পারুম। সুন্দর কইরা বুট তার বইয়ের উপর রেখে দিলো ইয়া জোরে এক টোক্টা। সঙ্গে সঙ্গেই ভীষণ জোরে "উহঃ" বলে রুমা জায়গামতো হাত দিয়ে চেপে ধরলো। হঠাৎ উহঃ শব্দে রউফ স্যার পেছন ফিরলেন। বাকীরাও।সবার দৃষ্টি রুমার দিকে, রুমার দৃষ্টি এদিকে। কিন্তু কে মেরেছে, কোথায় মেরেছে সেটা তো আর বলা যায় না। ও শুধু বললো, এদিক থেকে ছেলেরা বুট দিয়ে ঢিল্লায়। ওর হাতের পজিশন দেখে স্যার যা বুঝার বুঝলেন। সাড় ধরে সামনের কয়েকটা বেঞ্চ বাদ দিয়ে নিজের মন উজার করে পিটালেন সব গুলাকে। আর বললেন, ভবিষ্যতে যেনো কোনদিন এরকম আচরণ না করে কোন মেয়ের সাথে।

রউফ স্যারের এক মেয়ে পড়তো আমাদের সঙ্গেই। ওর সঙ্গে মাঝে সাঝেই এয়ে, উয়ে বাতচিত করতাম। এই ঘটনার কথা শুনে, মাইরের ভয়ে আর তার সাথে একলা কোন জায়গায় দেখা করিনি। করলেও দুই মিনিটের বেশি না।

No comments: