Wednesday, December 12, 2007

দিন যায় দিন... রাত আসে রাত

অবশেষে গেলাম। তার আগে অনেক জল্পনা-কল্পনা, কোথায় গেলে পাবো তারে। কত খুঁজলাম রাস্তার সাইনবোর্ডে, পিলাপাতায়, পেলাম না।অবশেষে অবস্থার বেগতিকে অনেকটা বাধ্য হয়েই গেলাম গালিভার সাইজের এক ব্যাটার কাছে কোন মহিলা ডাক্তার না পেয়ে। মনে কতো আশা ছিলো এট্টু টাংকি টুংকি মারবো! কপালে সইলো না। অবশ্য মহিলা ডাক্তারের অনুপস্থিতি পুষিয়ে দিলো ডাক্তার হাইশ-এর রিসেপশনের দুই ললনা।

স্পেসিমেন রেখে বিদেয় করে দিলো ৯ দিন পরে নতুন এক অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে। বেখেয়াল হলেও এইসব ব্যাপার মারাত্মক যতনে মাথায় রাখি আমি। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট করলাম মিস। কারণ তেমন জটিল কিছুই না। হার্টের কথা না শুনে মাইন্ডের ফিসফিসানিতে কান দিলাম। হার্ট বলছিলো যাওয়া উচিৎ, কিন্তু মাইন্ড বলে ধুর ব্যাটা ঘুমা চুপ কইরা! আমি আর কী করি, গেলাম আবার ঘুমাইয়া। পরেরদিন বিকেলে মুখটা যৎসামান্য কাচুমাচু করে ডাক্তারের ললনা রিসেপসনিস্টের লিফটগোড়ায় আবার আমি। আমাকে দেখেই হাউকাউ করে উঠলো বেচারী। তোমার লাইগ্যা ডাক্ঠার হাইশ পুরা আধা ঘন্টা বইসা থাইকা বেঁহুশ হইয়া গেছে। এই বেচারীরে আর হার্ট মাইন্ডের খপ্পরে ফেলে হার্ট করতে ইচ্ছে করলো না। বরং বললাম, আমি ইট্টু ডাক্তার সাবের কাছে যাই? বললো দাঁড়াও জিজ্ঞাসি লই আগে। আমি সেই অধমপাপী সাক্ষাতপ্রার্থী শুনে ডাক্তার সাফ মুখে জবাব দিয়ে দিলো, মুখ দেখতে চাইনা আমি ঐ পাপিষ্ঠের!

মুখ ভোঁতা করে আমি ডিসেম্বরের গুদগুদি বৃষ্টিপড়া সন্ধ্যার মুহূর্তে আলো ঝলমলে শহরের রাস্তায়। হাঁটছি আর ভাবছি মনখারাপ ভাবটা কাটাতে হলে কিছু একটা করতে হবে শীঘ্রই। অন্যসময় হলে চে'গেভারাতে গিয়ে দুপাত্র ফরাসী মেরলো অথবা রিসলিং কিম্বা ব্যাকার্ডি-স্প্রাইট মেরে দিয়ে ধ্যুম হয়ে মাধুরীর সাথে দিল ধাক ধাক কারনে লাগা নাচ শুরু করে দিতাম। সেটা হওয়ারও কোন চান্স এখন নেই। পাগলা পানির সাথে কিঞ্চিৎ মনকষাকষি পর্ব চলছে এখন যদিও তথাপি ইদানিং মনে বড়ই সাধ হয় একটু চেখে দেখি না বরং আগের মতোই রবি শংকর ইউরেনাসে বসে ভেনাসের কাঁধে তাঁর সেঁতার রেখে তাতে ফ্লোরাবশীকরণ সুর বাজায় কিনা! এমনি আবঝাব ভাবতে ভাবতে, চোখ ডলতে ডলতে, পথ চলতে চলতে দেখি একটা গাড়ি এসে থামলো একেবারে ঠিক রাস্তার পাশে, আমার অদূরে। চালক ক্ষণিকায় বিশাল বপু তরুনী। গাড়িটার পশ্চাতদেশ রাস্তার ওপর রেখে গ্রীবা ফুটপাথের সঙ্গে খানিক ঘষাঘষি করে শেষতক নেমে পড়ে হাঁটা দিলো অন্যদিকে। শিকার পেয়ে আর দেরী করে কোন হালায়! পরনের কালো জ্যাকেটটা টেনেটুনে ঠিক করে, তার পকেট থেকে একটা কলম বের করে হাতের কালো প্যাকেটটাকে এমনভাবে রাখলাম যেনো মনে হয় কোন মেশিন। গাড়ির কাছে গিয়ে একবার সামনে দাঁড়াই, পরক্ষণেই ঘুরে পেছনে যাই, পার্কিং দাগ দেখি গভীর মনোযোগে, দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে কি জানি ভাবি তারপর কাগজে কিছু লেখার জন্য যেইনা কলম হাতে ভাব নিচ্ছি অমনি বৃহদাকায় ললনা দৌড়ে এসে নিতান্ত কাতর অনুরোধ পরায়ন, বিশ্বাস করেন আমি এই মাত্র গাড়িটা এইখানে রাখছি।
খুব ইমার্জেন্সী দরকার ছিলো।

আমি নিরুত্তর, নিশ্চুপ, অচল এবং অটল।

ললনা কাঁদু কাঁদু। আধা মিনিটও হয় নাই আমি এখানে আসছি। আমি এখন থেকে আর এভাবে পার্ক করবো না! বিটে বিটে বিটে!!!

চান্স পাইলেই মানুষরে গুঁতাই। কখনো উল্টা গুঁতা খেয়ে ঠান্ডা হয়ে থাকি। তবে বেশিরভাগই গুঁতানোর ডান্ডা অপরপক্ষের দিকেই তাক করা থাকে।
উদাসী মন খানিকটা দাস হলো এই ঘটনার পরে। আরও আনন্দের ব্যাপার হলো ডাক্তার হাইশ-এর রিসেপশনিস্ট ফোন করলো নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে। এবছর কোন ফাঁকা জায়গা নেই আমাকে ফিট করার। আর্লিয়েস্ট ২ জানুয়ারী, আগামী বছর। প্রত্যুষ পৌনে অষ্ট ঘটিকা। আমি জানি এটা ঐ ব্যাটা গালিভারের বদমাশী। ব্যাটা দেখেশুনেবুঝে, ইচ্ছে করেই আমাকে ঐরকম একটা খাইষ্টা টাইমিঙের মধ্যে ফেলছে। ফোন ছাড়ার আগে রিসেপশনিস্ট ললনা কয়েক হালি বার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলো এবার যেনো মিস না করি, তাইলে ঘটনা বিশাল প্যাঁচ খাইবে।আমি কেমনে বুঝাই আমি হার্ট-মাইন্ডের এক চিড়ারমিলে গোবদা গোবদা ধানের মতো চিপা খেয়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। তবে শালা গালিভাররে একটা শিক্ষা দিতে হবে, এটা নোট করে রাখলাম টু-ডু-লিস্টে।

এক পরিচিত ট্রাভেল এজেন্টের কাছে দুইদিন ধর্ণা দিয়া তার করুনার ঝর্ণায় পানিটি বর্ষণ করাতে পারলাম না। 'টিকেট নাই'। এসটিএ ট্রাভেলসে গেলাম। বলে, ডিসেম্বর! ভুইলা যাও!! জানুয়ারীতে পাইবা তাও দাম পড়বো ৯১৩ টেকা, একদাম!!মনটা আবার রাজা মার্কা বেলুনের মতো ছ্যাঁদা হয়ে চুপশে চটচটে হয়ে গেলো। চুপসানো মন ফর্মে আনতে কি কি করলাম এই ক'দিন! তার একটা বিশাল ফিরিস্তি দেয়া যায়। কিন্তু তারও আগে মনেহয় এখন প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত ঘুমেরে। আমার এখন গভীর ঘুমে স্বপ্নাচেতন হয়ে মাধুরীর সঙ্গে দুষ্টু দুষ্টু গল্পে মশগুল থাকার কথা। তো না ঘুমিয়ে আমি এখন ব্লগাচ্ছি কেনো?

No comments: