Monday, February 25, 2008

হাত বাড়িয়ে দাও...

দেশে থাকাকালীন ছাদের কার্ণিশে উবু হয়ে সিগারেট ধরানোটা কখনোই হয়নি। বারান্দার রেলিঙেও না। বিদেশের বাড়িতে ছাদ নামক জায়গাটির বড়ই অভাব। রাতের বেলা হঠাৎ একাকীত্ব গলাটিপে ধরলে একটু পায়চারী করে তা দূর করার কোন পথই খোলা রাখেনি এখানকার ছাদের নকশাকারীরা।

ভাগ্যক্রমে এখন যেখানে থাকি সেখানে এক চিলতে ছাদ রাখা আছে আমার মতো বিষাদগ্রস্তদের জন্য। একটা টেবিলের পাশে কয়েকটা বেতের চেয়ারও রাখা আছে সেখানে। পেট সমান উঁচু গ্রীলের ঠিক ওপাশেই পাথরের টুকরো ফেলা চওড়া একটা শেড। এটাই আমার বিষণ্ণতাদূরীকরণের উদ্যান, নগ্ন আকাশের নিচে ধূমপানের এক স্বতস্ফুর্ত অভয়ারণ্য।

চারতলায় রাওখারদের টিভি রুম পেরিয়ে পাশের কাঁচের দরোজা খুলে বেরিয়ে পড়লেই মেলে মুক্তির আনন্দ!

ছাদ থেকে সন্ধ্যার আলোতে মেকেনহাইম ইন্ডাস্ট্রী পার্কের হলুদ বাতির সারিগুলো দেখে উপর থেকে রাতের বেলার এথেন্সকে মনে হয়। হাতের বাঁ দিকে, একটু দূরে, লোকালয় ক্রমশঃ উঁচু হতে হতে বিরাট পাহাড়ের আদল। তার চূড়ায় সন্ধ্যা বেলায় আলো জ্বলে একমাত্র চার্চের মাস্তুলে। ডানদিকে ঘনবসতি লোকালয় ডুইসডর্ফ ছাড়িয়ে ব্রুজারবেয়ার্গ। ঐদিকে তাকাই না, মন আরও বিষণ্ণ হয়। ইট-কাঠ-পরিবর্গের শহর দেখতে ভালো লাগেনা এই সময়টায়।

বসন্তের আগমনী বার্তা প্রকৃতি পেয়ে গেছে আগেভাগেই। নতুন পাতা এখনি জাগেনি গাছে। মার্চের ২০ তারিখে কাগজে-কলমে বসন্ত শুরু হবে। তবে পাখিরা গাইছে এখন থেকেই। ছাদের রেলিঙে কনুই ঠেকিয়ে উপুর হয়ে পাখির মুষলধারে কিচিরমিচির শুনতে শুনতে সিগারেটে চুমুক দিয়ে সিদ্ধান্তটা ফাইনালাইজ করার একটা তাগিদ এলো ভেতরে। তাগিদের সাথে সাথে একটা গানের লাইনও মনে এলো, 'সময় হয়েছে ফিরে যাবার / মন কেনো যেতে চায় না!'

************************
শিরোনামের জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো এই গানটার প্রতি
************************

No comments: