Thursday, April 10, 2008

গুরুচন্ডালী - ০০৫

ঘরে ঢুকে পিসি'র দিকে তাকাতেই দেখি এভিজি তার ছেলেপুলে, নাতিপুতি সহ আমার পেয়ারের ডেলের ওপর খবরদারী করছে। কপাট ভেঙে তার প্রতিটা ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে কী সব আবোল তাবোল সন্দেহজনক হামলাকারীর খোঁজে। পাশে তাকিয়ে দেখি দাঁত কেলিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসছে হুকুমের আসামী, এক্ষেত্রে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আমারি স্বনামধন্য ছোট ভাই। ওর হাসি দেখেই আমার ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো! বুঝলাম ঘটনা খারাপ, শুধু খারাপই না- বেজায় খারাপ।

হাজার চারেক সন্দেহজনক হামলাকারী খুঁজে বের করে দিয়ে যখন এভিজি সাহেব বিদেয় নিলেন, তখন ডাক পড়লো আমার। কারণটা আগেই আন্দাজ করা ছিলো। বেচারা কম্পু স্টার্ট হতে নাকি অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ঘুরে ফিরে খালি ওয়েলকাম স্ক্রীণে চলে যায়। আমি অবশ্য আমার ডাক পড়ার আগেই হাতুরি-বাঁটাল নিয়ে রেডি হয়ে ছিলাম। ডাক পড়াটা কেবল সময়ের দাবী ছিলো মাত্র! ঘটনা নতুন না তো। এই যেমন নয়া নতুন সনি'র পি-টু হান্ড্রেড কিনে দেয়ার মাস খানেকের মধ্যে ফ্ল্যাশ গন। তারও আগে আমার স্বাধের তোশিবা স্যাটেলাইট সিরিজের কপালেও ভালো কিছু জোটেনি, পিলিপস এমপিথ্রি প্লেয়ার, গেলো তার কন্ট্রোল নষ্ট হয়ে, একটা ডেস্কটপ পড়ে আছে টেবিলের কোণায়, এগুলো অবশ্য কোনোটাই বেচারা ছোটভাইয়ের দোষ না। জিনিষ গুলোই হঠাৎ মানুষের মতো আচরণ করে বিগড়ে বসলো। সেই ধারাবাহিকতায় এই ব্যাটা ডেল ইন্সপাইরন যে গত কয়েকটা মাস কী করে সার্ভাইভ করলো সেটাই অষ্টম আশ্চর্য আমার কাছে।

রাতে ঘরে ফিরে চালিয়ে দিলাম এক্সপি। উদ্দেশ্য এভিজি মিয়া যা যা সাফা করে দিয়েছে, সেই চোর ছেচ্চরগুলোকে লাল কার্পেট সম্বর্ধণা দিয়ে ফেরৎ আনা। দুই নাম্বার উইন্ডোজে এক নাম্বার লেটেস্ট ব্রাউজার আর মিডিয়া প্লেয়ার ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক কিছুই করতে হয়েছে দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে। যাইহোক, ভাগ্য অতীব সুপ্রসন্ন হলে নাকি অতলান্তিকেও চর দেখা দেয়। আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো না। ঊনচল্লিশ মিনিট রিমেইনিং নামক সাইনবোর্ডটা দীর্ঘ দু'ঘন্টা ধরে মনিটর জুড়ে ঝুলানো দেখে বুঝলাম কাজ হবে না। এরে ধরি, ও ভাই তোমার এক্সপি আছে? উত্তর আসে, পিসিই নাই- এক্সপি দিয়া কী করুম? আরেকজনরে জিজ্ঞেস করি, ভাব নিয়ে উত্তর দেয় ভিসতা ইউজ করি! আমি পড়লাম না মহা গ্যাড়াকলে!

অবশেষে, ৩২ বিটের প্রসেসর আর ৫১২ র‌‌্যাম নিয়ে একটা রিস্ক নিয়েই ফেললাম। দিলাম ভিসতার হোম এডিশন ঢুকিয়ে শালার ভেতরে। এই ভিসতা যোগার হলো এখ বিরাট ইতিহাস নিয়ে। সংক্ষেপে বলে রাখি, পুরা ফাঁকতালে পাইছি, তাও জেনুইন। একেবারে সাইনবোর্ড টানানো।

এখন, পিসিতো দুইদিন পর স্টার্ট করা গেলো কিন্তু নেটে আর ঢুকা যায় না। ঐ দিকে সাদাত অমিত তারেক লাঠি নিয়ে স্বপ্নে তাড়া করে! ডরের চোটে না ঘুমিয়ে রাত কাটাই। নেটে যাওয়াটা ফরযে ক্বেফায়া হয়ে দাড়ায়। এক্সপি'র নেটগীয়ার ভিসতায় কাজ করে না। যাদের নেট ব্যবহার করি, শালারা চৌদ্দটা থেকে বিশটা পর্যন্ত দপ্তর খোলা রাখে। চৌদ্দটা বাজতে বাজতে আমার নিজের ধৈর্য্য ঘড়ির ব্যাটারী শেষ হওয়ার পথে। সলুশন পেলাম, আমার ইমেইল একটা লিংক পাঠানো হলো। সেখান থেকে ড্রাইভার ইনস্টল করে নিলেই হলো। আমি হাসলাম। যে আমি গত আড়াই দিন ধরে নেট সেবা পাইনা তার কাছে পাঠানো হয়েছে ইমেইল, 'ব্যাটা ইতর কোথাকার'। ইতর কথাটার মানে না বুঝে ব্যাটা বলে, "ভি বিটে!" আমি বলি কিছু না, ডাংকে।

কিচেনে গিয়ে আমার সিগারেট মেইট চান্দুকে জিজ্ঞেস করলাম নেট আছে কী না। কয় কাজ করে না। সুন্দরী আনিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম খালি মেইল চেক করবো! ছেমরি কয়, "জেয়ার টয়ার!" আমি কই, যা ফোট, মুড়ি খাগা গিয়া!

ড্রাইভার ইনস্টলড হলো। শত্তুরের মুখে পুরা ছাইয়ের স্তুপ ছড়িয়ে দিয়ে আমার নেট আবার আগের অবস্থানে ফিরে এলো। কিন্তু ঝামেলা বাধালো বত্রিশ বিট। একটা ব্রাউজার খুললেই হার্ডড্রাইভের বাতি আর নিভে না। ভাবে মনে হয় এই ব্যাটা টুয়েন্টিফোর-সেভেন সার্ভিস দেবার জন্য জানপ্রাণ! কী আর করা, এক ক্লিক করে আধা ঘন্টার একটা ঘুম দিয়ে উঠে তারপর ক্লিকের ফলাফল দেখতে পারি। মন্দ না। যাত্রা দেখার সাথে কলা বেঁচাও হয়ে যাচ্ছে আমার।

আমার স্কুল বেলায় সারাংশ লিখনে ফাঁকিবাজি এখন টেরপাই হাতেনাতে। পিসি খারাপ হইলো, এই ঘটনা লিখতে গিয়ে পুরা এক মহাকাব্য লিখে ফেললাম। এখন আমি সেই ঘটনাটা লেখি কেমনে? আরে ঐ যে সেদিন ট্রেনে কানে মোবাইলের তার ঠেসে ধরে গান শুনছিলাম যে। তারপর যে একটা কল এলো, আমার মোবাইলে সারাক্ষণই বীপ করা থাকে। সাধারণত কেউ বুঝেনা আমার কল এসেছে। এবারো তাই হলো। আমি বাইরের কন্ট্রোল থেকে রিসিভ করে কথা বলছি। ঠিক সামনে বসেছিলো দজন শুলারিন। একজন আবার দেখতে সেইরম। (আমি যে কেন শুলার হৈলাম না, আফসোস লাগে ) আমি যখন কথা শুরু করলাম ফোনে, সেইরম চেহারাধারী শুলারিন ললনার চোখের সঙ্গে টু টাইমস নাইনটি ডিগ্রী এঙ্গেল। ললনা আমাকে জিজ্ঞেস করে তাকে কিছু বলছি কিনা। আমি কোনো শব্দ না করে, তার দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা চালিয়ে যাই। মেয়েটা জবাব দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাষাগত অর্থোদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ক্ষ্যান্ত দেয়। এবার আমি আস্তে করে মাথা ঝাঁকিয়ে ঠোঁট নেড়ে বুঝাই তোমাকে না, মোবাইলে কথা বলি। মেয়েটা হাসিতে ভেঙে পড়ে, মদন হওয়ার আনন্দে। দুজনেই হাসে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। ফোনে কথা শেষ করে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমিও হাসি। ওদের মতো না। আমার মতো। তা দেখে তারাও হাসে। আমি খুশী হই। যাত্রা ভালো লাগে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। নেমে যায় সুন্দর সেই ললনা। আমি আবারও বিষাদে ডুবে যাই। নীল নয়নার ফাঁদে অল্পের জন্য পড়া হলোনা বলে আফসোস হয় বাকিটা পথ!

1 comment:

toxoid_toxaemia said...

ব্যাপার না ভাইয়া,পরের বারের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা।