Friday, May 09, 2008

গুরুচন্ডালী - ০০৬

জ্বর নেই গায়ে অথচ উপরের পাটির ঠোঁটে প্রমাণ সাইজের ক্ষেত্রফল দখল করে বুক ফুলিয়ে ফুঁড়ে উঠেছে কয়েকলক্ষ জ্বরঠোসা। অনুভূতির ব্যাপার তো আসে পরে, দৃষ্টিতেই কেমন কিম্ভুতকিমাকার ঠেকছে জায়গাটা। দেখে মনেহয় যেনো কোনো দুষ্টু বালিকা সিলেটী 'খামের' তাড়নায় আমার ঠোঁটে কামড়ে দিয়েছে!

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত 'সামার' বাবুর দেখা মিললো। বসন্তের শুরুতে বরফের দেখা দেওয়া মনে বিলম্বিত সামার আসার পাগলা ঘন্টি বাজালেও খুব শীঘ্রই ললনাদের বসনে দুর্ভিক্ষের আভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে আয়েশ করে। বেচারা চোখ দীর্ঘ নয় মাস পর কিছু কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে বটে কিন্তু মন বেচারা এবারও মিইয়ে থাকবে গ্রীষ্মসূধা পান হতে বিরত থেকে। এইটা একটা "নো-গুড সিচুয়েশন"। চারিদিকে অপার সৌন্দর্যের হাতছানি, আমি সবুজের কথা বলি না, বলি আশরাফুল মাখলুকাতের কথা! যদি হালায় বাজারের লাউয়ের লাহান ইট্টু ছুঁইয়া টুইয়া দেখতে পারতাম!

দুই উইকএন্ড আগে সকাল বেলা সাইকেল নিয়া বাইর হয়ে গেছিলাম সুন্দর একটা দিনের শুরু দেখে। তাপমাত্রা তখনো চান্দিতে এ্যাটাক করা শুরু করেনি। ট্রেনে করে সাইকেল সহ মোটামুটি কিছুদূর গিয়ে সাইকেলট্র্যাকে প্যাডেল মেরে ফিরতিপথ ধরেছিলাম। ১৭ কিলোমিটারের সেই পথটা আক্ষরিক অর্থেই ছবির মতো সুন্দর ছিলো। কখনো কান্ট্রিরোড, কখনো হাইওয়ের সমান্তরালে সরু দ্বিচক্রযানের পথ, সেই পথ আপেল বাগানের ভেতর দিয়ে গিয়ে পড়েছে (গজারী কিংবা পাইন গাছের) জঙ্গলে। মেঠো সেই পথে গীয়ার বদলে হু-হা করে প্যাডেল মেরে ফসলী জমিতে গিয়ে পড়েছি। এখানে শুঁকিয়ে যাওয়া কাঁদানাটির পথ। ট্র্যাক্টরের চাকার তৈরী ইয়া বড় গর্তে তখনো কিছু জমে থাকা পানি। সেই ফসলি জমি পেরিয়ে আবারও কান্ট্রিরোড। কিছুদূর গিয়েই পথটা ঢুকে গেলো একটা ছোট্ট লোকালয়ে। ছোট ছোট একতলা, দোচালা টালির ছাদের বাড়ি। কয়েকটার চিমনী দিয়ে দেখলাম ধোঁয়া উঠছে। শালারা পিচের কয়লা ব্যবহার করে ঘরে আগুন জ্বালাতে। আগের রাত গুলোতে ঠান্ডার প্রকোপটা খুব বেশি না হলেও একদম শূন্যের কাছে ছিলোনা! কুকুরের দড়ি হাতে দেখা মিললো গোটা কয়েক আবাল-বৃদ্ধা-ললনা। ললনা দেখে গতি কিছুটা মন্থর করে, কান থেকে ইয়ারফোনের ডিবলাটা খুলে হুদাহুদিই জিজ্ঞেস করলাম আমি সঠিক ট্র্যাকে আছি কীনা! সুন্দরী অবশ্য কুত্তার দড়ি হাত বদল করে আমাকে তর্জনী বাঁকিয়ে দেখিয়ে দেয় বাকিটা পথের নকশা। আমি সামনের দেখানো পথের দিকে তাকাই না, অপার শৈল্পীকতায় একজন হাওয়া সন্তানের হাতের নড়াচড়া খেয়াল করি ভালো করে। ঈমাণে কই, এই নড়াচড়ার ফলে কোন অঙ্গে কতোটা ঢেউ খাইয়াছিলো তাহা ব্যক্ত করিবার কোনো কুইজ থাকিলে আমি দশে দশ পাইয়া শিক্ষকদিগকে দেখাইয়া দিতাম বটে! কিন্তু আপাতত সে আশার গুড়ে ওড়লা। সময়টা আধা-মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না।

আমি আবারও প্যাডেলে ঘচাং করে পাড়া মারি। সাইকেল চলতে থাকে। খুব ছোট্ট একটা ঝোপ পেরিয়ে এবার এসে পড়ি বেশ ঢালু একটা জায়গায়। চূড়ায় থাকা আমি অনেক নিচে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের পরিচিত সড়ক দেখতে পাই। তারও নিচে খাদ, সেই খাদ আবার উঁচু হতে হতে আরেক চূড়ায় গিয়ে ঠেকেছে। সেখানে আবার একটা লোকালয়ও আছে। সমান্তরাল রেখায় লোকালয়টি উচ্চতার দৃষ্টিতে আমার সমান হলেও মাঝখানে রয়েছে বিশাল এক দূরত্ব। দার্শনিক এরিস্টটলের মতো মাথা একবার এদিক আরেকবার ওদিক করে প্যাডেলে জোর দিলাম। সাইকেল আমার হাওয়ার বেগে নামতে লাগলো সর্পিল পথ বেয়ে, দুইপাশে বুক সমান উঁচু সরিষাক্ষেতের মাতানো সুগন্ধ নাকে গুঁজে দিয়ে। আমি মুহূর্তেই আমার গ্রামের হেমন্তের কোনো সকালে ফিরে গেলাম টুক করে।

গত সপ্তাহান্তে তীরুদা'র হঠাৎ নিমন্ত্রণে চলেও যাই হঠাৎ। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকাল সকাল পৌঁছানোর চেষ্টা করেও সেই তিপ্পান্ন সালের বদভ্যাস বশতঃ পৌঁছাই নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট পর। বদ্দা সুমন চৌধুরীকে চিনি আগে থেকেই, হিমু নামের কালবালিশ (কোলবালিশ না জনাব)কে হয়তো দেখেছি কলেজে, কিন্তু মনে না থাকার সম্ভাবনা নিরানব্বই শতাংশ। তীরুদার সঙ্গে কখনো সাক্ষাত হয় নি, আর সচল মিষ্টভাষী শাহীন ভাই- এই প্রথমবার।

স্টেশন থেকে বদ্দাই এগিয়ে নিতে এলেন। বললেন বাকীরা কাছে কোথাও আছে। অনেকেই হয়তো প্রমাদ গুণে রেখেছিলেন হিমু আর ধুসর এক জায়গায় হলে সেখানে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে বিয়ে নামক জিনিষের কিছু 'বাইপ্রোডাক্ট'কে কেন্দ্র করে। বদ্দাও হয়তো ধারণা করেছিলেন তাই-ই। ক্যাফেতে বসে থাকা তিনজনের মধ্যে তীরুদাকে সনাক্ত করা যায় খুব সহজেই। বাকী থাকলেন শাহীন ভাই আর আমাদের হিমু। হিমুকেও না চেনার কোনো কারণ নেই। ঝলমলে রৌদ্দূরে এক পশলা কয়লার বস্তা দেখলেই জনগণ মনে করতে পারেন ওটা হিমু, এতে হিমু'র সেন্টু খাওয়ারও কিছু নেই আর জনগণেরও ঈদের খুশিতে কোলাকুলি করার কিছু নেই। বদ্দার উদ্বেগকে ভুল প্রমাণিত করে বসলাম হিমুর পাশেই। হিমুও অত্যন্ত আতিথেয়তায় বরণ করলো আমাকে। আফটার অল দোস্ত মানুষতো!

এর পরের ঘটনা গুলোর বর্ণনা অবশ্য ভুলবাল হলেও কিছুমিছু উঠে এসেছে হিমুর ফিকশনে। তবে হিমু যে কথাটি বলতে ভুলে গেছে তা হলো আমাদের বনাগমনের অধ্যায়টা। কোথাও হাঁটতে যাওয়া বলে কাছেই একটা বনে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের। ওখানে আমি আর হিমু একবার পাশাপাশি হাঁটছিলাম। হিমু বলে, দোস্ত এখন হাগতে পারলে ভালো লাগতো রে! আমি বলি, ঠিক। ওপেন এয়ার কনসার্ট!
হিমু অবশ্য শুয়ে শুয়ে হাগার কথা বলে। আমি শরীয়তে মানা আছে বলে গাছের ডালায় বসে হাগার প্রস্তাব দেই। ব্যাটা রাজী হয় না। আমাকে "এক চাপে হাগা, তার কলাকৌশল এবং তার উপকারিতা" নিয়ে পৌণে দশ মিনিটের একটা লেকচার দেয়। আমি বেকুবের মতো তব্দা লেগে শুনি। হাগেন আলোচনা আর বেশিদূর যায় না বদ্দার চলে আসাতে। হাজার হোক মুরুব্বি মানুষ তো!

হিমু তার পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্র্যাকিং-এ ঘটে যাওয়া ঘটনার বেশ রোমহর্ষক বর্ণনা শোনায় আমাকে। বাঙালীরা কীভাবে পাহাড়ীদের শোষণ করছে তার একটা ধারনা পাই টার কাছ থেকে।

বান্দরবানে হানিমুন করার আশা ব্যক্ত করি তার কাছে। শুনে হিমু ঠোঁট কুঞ্চিত করে হাসে। আমি বুঝিনা এর মানে কী দাঁড়ায়।

: তুই যা ব্যাটা ঐখানে, তারপর টের পাবি হিমু কী চিজ!

অথবা-

: ডরাইস না দোস্ত। আমি তো থাকুমই তোর লগে। তোর আর ডর কী!

আমি মনে মনে ভাবি, না অন্য কিছুকে ডরাই না। আমার যতো ডর তোরে নিয়াই শালা!!

No comments: