Sunday, June 17, 2007

বাবা দিবসের আখ্যান

এদেশের লেবার রুমে যাবার নিয়ম কানুনে বেশ কড়াকড়ি। নিয়মকানুন ব্যাপারটাই আমার অসহনীয় লাগে। আর আমার 'লেইট' হওয়াটা কখনোই কাটাতে পারিনি, আজ এতোগুলো বছর পরেও।

প্রাণের সহধর্মীনি স্ট্রেচারে শুয়ে আছে লেবার রুমে, তাকে কথা দিয়েছি আমি তার সাথে থাকবো, কিন্তু এখনো আমাকে নানা রকম কাগজপত্রে সই করে যেতে হচ্ছে। ওদিকে আমার আদরের বউ বলে দিয়েছে আমার হাতে হাত রাখা ছাড়া এনাস্থেশিয়া নেবে না। ডাক্তাররা যতোই বুঝাচ্ছে এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে, কিন্তু বউ নাছোড় বান্দা হয়ে গোঁ ধরে রয়েছে।

একজন নার্স এসে আমাকে যখন জানালো এ কথা। আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠলো সতেরো বছরের সেই অবোধ বালিকার কথা। একগুঁয়ে আর কাকে বলে। সেই প্রথম দিন থেকেই তার একগুয়েমীটাকে আমার ভালো লেগে এসেছে। আশ্চর্য! কোনদিক দিয়ে দিন কেটে যায়। সেদিনের ১৭ বছরের বালিকা, যে চটাং চটাং কথা বলতো আমাকে, সে আজকে আমার মেয়ের মা হবে!

একগাদা কাগজ সই করার পর ডাক্তারের সাথে ঢুকলাম লেবার রুমে। আমাকে দেখেই সে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। "তুমি একটা এম্পটি হেড। এতো দেরী করলে কেন, কষ্ট তো হচ্ছে আমার, তুমি বুঝবাটা কি..." ডাক্তার নার্সরা এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ী করে। আমি আস্তে করে গিয়ে ওর বাম হাতটা আমার ডান হাতে নিলাম, কপাল থেকে রেশমী চুলের জঙলা সরিয়ে আলতো করে চুমো খেয়ে বললাম, "বধূ আমি আছি তোমার পাশে। আমাদের স্বপ্ন আজ জন্ম নিবে। জন্ম হবে একটা নতুন উচ্ছ্বাসের, এই উচ্ছ্বাস তোমার আমার। আমাদের 'তনয়া'...।"

ও আতংকিত চোখ করে বললো, "আমার ভয় করছে। আমি যদি না বাঁচি আর..."
বললাম, "ভয় পেয়োনা জান। ভেবে দেখতো কতোগুলো দিন আমরা এই স্বপ্নের জাল বুনে গেছি। কতগুলো বৃস্টিস্নাত রাত কাটিয়েছি আমরা খোলা আকাশের নিচে, সেই সিঁড়িতে বসে তোমার বাম হাত আমার ডান হাতে ধরা...। আমি আছি তোমার সাথে, ভয় নেই একটুও!

নার্সের হাতের মাস্ক ওর নাক-মুখ আড়াল করে দিতেই যেন গভীর ঘুমে ঢলে পড়লো। আমার ভেতরটা কেমন যেন খচ করে উঠলো, সয়ে নিলাম।

তনয়ার জন্ম হলো। আমার তনয়া, আমাদের তনয়া, আমাদের দুজনের মিলিত স্বপ্ন। আজকে আমার, আমাদের তনয়ার ৬ বছর পূর্ণ হলো বধূ, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো! তুমি কি দেখতে পাচ্ছো আমাদের স্বপ্নের বেড়ে ওঠা, আমার বাবা হওয়ার গম্ভীরতা!

No comments: