গুরুচন্ডালী - ০০৭
মন করুণ পর্ব
ধুসর গোধূলি'র মনটা খারাপ করেছে। তা সে যেন-তেন খারাপ না। একেবারে দশাসই রকমের খারাপ। চিনচিনে খারাপ লাগাটা নেই তবে ভোঁতা ভ্যাপসা ভাব আছে। পুরো শূন্যতা না থাজকেও একটু খালি খালি লাগা আছে। আমার এই একটুর জন্য প্রেমে পড়া হলোনা- মন করুণের আপাতঃ কারণ হিসেবে এটাই দাঁড় করানো গেছে!
ট্রেনে উঠে সুবিধামতো জায়গার আকালে কোথায় বসা যায় এই নিয়ে ভেবে যখন এগুচ্ছিলাম তখনই চারজনা সীটের তিনটাই খালি পেয়ে ধুপুশ করে বসে পড়লাম। যেখানে বসলাম সেটা মোটেও আমার পছন্দের জায়গা না। উল্টোদিকে গাড়ি চললে কেমন উল্টা উল্টা লাগে দুনিয়া। নাকমুখ কুঁচকে সামনের সহযাত্রীর দিক দিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিতেই দেখলাম একজোড়া চোখ বেশ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আমাকে। আমি তাকালাম সে চোখে। ভয়ানক সুন্দর ফটিকা চোখ। মার্বেলের মতো স্বচ্ছ। একটু জুম আউট করলাম আমার দৃষ্টি। মুখায়বটাও দারুণ মিষ্টি। আরেকটু জুম আউট করলাম। নাহ্, এ পর্যায়ের দর্শনাবস্তুর কথা না বলাই ভালো। জুমইন করলাম। দৃষ্টি ডানে বামে ঘুরে ফোকাস মুখায়বে। নাকের ডগাটা একটু টেপ খাওয়া, একটু খাদ কিন্তু কেমন অদ্ভূত মিষ্টতা ছড়ানো সারাটা মুখ জুড়েই। দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম অন্যদিকে।
দৃষ্টি রেঞ্জের ভেতরে থাকায় বুঝতে পারছিলাম তখন সরিয়ে নেয়া চোখ জোড়া আবার আমার মুখের দিকে ফোকাসিত। একটু পর লেন্স ডানে ঘুরিয়ে জানালায় ফোকাস করার সময় চোখে চোখ আটকে গেলো। গোল গোল চোখ, সরে না। একটু পর নামিয়ে নিলো, সরিয়ে নিলাম আমিও। আবার, এবং আবারও, তারপর আবার! এবার আমি সরাবার আগে ভদ্রতাসুলভ মুখ বাঁকালাম।
বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। ওপরের জানালা কাত করা। ঠান্ডা একটা বাতাস ঢুকছে তাই। খুব সম্ভবত শীত লাগছে। জানালাটা লাগাতে চাইছে, পারছে না। কোনো বাক্য বিনিময় ছাড়াই সাহায্য প্রার্থনা করলো। আমি আস্তে করে উঠে লাগিয়ে দিলাম। সুন্দর-মিষ্টি মুখ ফুটে "আন্তরিক ধন্যবাদ" বের হলো। আমি হাসি দিয়ে ভদ্রতা সূচক উত্তর দিলাম। আবার সেই নীরবতা, দৃষ্টি ক্যামেরার আনুভূমিক সঞ্চারণ এবং সংযোগ! যে কয়বার আটকে গেলো, আমার দেখানো পথ অনুসরণ করে মুখ বাঁকা করে ভদ্রতা করতে চাইলো। ট্রেন যাবে অনেকটা পথ। আমি নেমে যাবো পথে। হিসাব কষছিলাম কোথায় গিয়ে শেষ হবে সুন্দর মুখের যাত্রা।
এক স্টেশন বাকি থাকতে কোলন শহরের নামাঙ্কিত কালো রঙের ব্যাগ থেকে কাগজ বের করে তাতে তাবাক ভরে পাকিয়ে সিগারেট বানানোর ফাঁকে আমার দিকে তাকিয়ে নিলো। কী জানি ছিলো সেই তাকানোতে! সে নেমে যাবে, কেমন লাগছিলো! কিন্তু সে নামলো না। আমার স্টেশনের অ্যানাউন্স হতেই উঠে চলে গেলো দরজার কাছে। এখন নামতে গেলে যদি ভাবে তাকে ফলো করছি! শালার কপাল...
উঠে দরজার কাছে যেতে আবারও চোখে চোখ পড়লো। আবারও সেই হার্টএ্যাটাক করানো মোনালিসা হাসি। নেমে গেলো আগে, পিছনে আমি ও কয়েকজন। ইচ্ছে করেই একটু পিছিয়ে গেলাম। সামনে গিয়ে ঘুরে আবার সে পেছনে এলো। কারও কি নিতে আসার কথা? আসেনি! আমার বাঙ্গুমন দোটানায় পড়ে গেলো। থামবো কি থামবো না! পা চলছে। মাথায় অনেক হিসাব, একের পর এক সশব্দে জট পাকাচ্ছে। চোখ সোজা, পথের দিকে। প্যান্টের পকেটে হাত, স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্লবোরো লাইটের প্যাকেট তুলে নিলো লাইটার সহ। আরেক হাত টুক করে একটা আগরবাতি বের করে সেটা জ্বালায়িত করলো। অবশেষে পা থামলো, থামলাম আমিও। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দূর টেনে নিয়ে এসেছে হতচ্ছাড়া পদযুগল। এখনতো আর ফেরা যায় না!
6 comments:
আবারো পড়লাম,বেশ ভাল লাগল।
অসংখ্য ধন্যবাদ টক্সিক এ্যামনেশিয়া (আপনার নামটা খুব কঠিনরে ভাই)।
ভাইয়া, মুমু আমাকে শুধু টক্স বলে। আপনিও তাই বলতে পারেন তবে আমার নতুন নাম দেখে বেশ একচোট হেসে নিলাম। হাঃ হাঃ হাঃ।
মুমুর যা খুশী ডাকুক, আমি আপনাকে ঐ নামেই ডাকি! আমি কঠিন জিনিষ উচ্চারণ করতে পারি না, তাই নিজের মতো করে সবকিছুর নাম রেখে দেই। :)
অসুবিধা নাই রুমন ভাই,
যা ইচ্ছা ডাকবেন। ব্যাপার না।
হুম
Post a Comment