Thursday, August 14, 2008

আই বিলিভ, আই ক্যান ফ্লাই...

০১.
ডেস্কটপটা হঠাৎ করে চোখ উলটে দিলো সেই কবে। আলসেমি করে তার গায়ে আর হাত বুলানো হয় নি। ছোট ভাইটার এডমিশন হলো একটু দূরের শহরে। একা থাকাটা কষ্টকর, বুঝি বলে সঙ্গে ল্যাপটপটা দিয়ে দিলাম। ঘরে নেট নাই। টায়ার্ড ও থাকি চূড়ান্ত। রাতে ফিরেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি। এক সময় ঘুমিয়ে যাই। সচলে আগের মতো সময় দিতে পারি না। একটা ব্যবধান তৈরী হচ্ছে বুঝতে পারি, কিন্তু করার থাকে না কিছুই।

খালাতো ভাই এসেছে তার বড়ো ভাইয়ের কাছে বেড়াতে এক মাসের জন্য। সেদিন গেলাম দেখা করতে। কেমন ন্যাতানো মনে হলো। বুঝলাম মানচিত্রের সীমানা খুব বড় একটা ফ্যাক্টর ফেলে মানুষের মধ্যে। আমরা তিনজন বাইরে থেকে ফিরছি। বাসায় ঢুকার পথে জানতে পারলাম খালাতো ভাইয়ের জার্মান শাশুড়ি এসেছেন মেয়ের বাসায় বেড়াতে। বেড়াতে আসা খালাতো ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'মায়ই কে দেখে কী করবেন'। আমি বললাম, "তিনি জার্মান হলেও আমাদের কালচারের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল। আপনি পায়ে ধরে সালাম করতে পারেন। আমিও করেছি। বিশ ইউরো বখশিষ ও পেয়েছি। বুঝলেন, খুব ভালো মহিলা।"

এর দুই মিনিট পরে যা ঘটলো তার ইমপ্যাক্ট আমার উপরে আসার আগে আমি লা-পাত্তা। খালাতো ভাই ঘরে ঢুকেই ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা আমাদের মায়ই মা'র সামনে ঝুঁকতে ঝুঁকতে একসময় খপ করে পা ধরে ফেললো এবং যথারীতি বাঙালী স্টাইলে কদমবুচি শুরু করলো। বেচারী মায়ই মা, জীবনেও এরকম অবস্থায় পড়েন নাই বোধ করি। হেই হেই করে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেললেন। খালাতো ভাই তখনো তাঁর পা ধরেই আছে!

০২.
বছরে একটা দিনের সন্ধ্যায় আমার ম্যানলী'র রিবস এণ্ড রিবনের কথা মনে হয়। ম্যানলী হলো সেই জায়গা যেখানে মিনিস্কার্ট পরা প্রীতি জিনটা আর পাংকুকাট আমির খান সেই বিখ্যাত "বুঝিনা হালায় লোকজন যে পীরিত করে ক্যান" গানটা গায়। রিবস এণ্ড রিবন, এখানে যাওয়া এবং খাওয়ার মতো স্বাস্থ্য আমার পকেটের কোনো কালেই ছিলো না। অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে আসার ঠিক আগের দিন। আমার কাছের কলিগেরা মিলে আমার জন্য সেখানে একটা পার্টি ছুড়ে দেয়। কারণ অবশ্য আরো একটা ছিলো। দিনটা ছিলো ১২-ই আগস্ট।

সেদিনের সেই সন্ধ্যায় মাইকের সাথে যখন রিবস এণ্ড রিবনে পৌঁছাই তখন সেখানে উজ্জল মুখের আট-দশজন উঠে হাত মিলিয়েছিলো, বার্থডে উইশ করেছিলো। সময়ের সাথে সেই মুখগুলো হারিয়ে গেলেও অনুভূতিটা এখনো রয়ে গেছে সতেজ। এই যেনো একটু আগেই ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা!

সেই ১২-ই আগস্ট থেকে এই ১২-ই আগস্ট। আমি বড়ো হয়েছি, বুড়ো হয়েছি, বুড়িয়েও গেছি হয়তো খানিকটা! অনুভূতিগুলো রয়ে গেছে তরতাজা। এর মধ্যে প্রতিটা ১২-ই আগস্ট স্বতন্ত্র হয়ে একটা বোর্ডে লাল-নীল আলপিনে আঁটা হয়ে আছে। বোর্ডের দিকে ঘুরে তাকালে একেকটা ঘটনা, একেকটা হাস্যোজ্জ্বল অবয়ব হাতছানি দেয়। আমি উড়ে যাই, খোলা মনের জানালা দিয়ে। উড়ি, ডিগবাজী খাই শূন্যে ঠিক গেরোবাজ কবুতরের মতো। বাস্তবতার সূতার টানে ফিরে আসি আবার, খোলা জানালাটা বন্ধ করে দেই সন্তর্পণে, পরের বছর এই দিনে আবার ডানা ছড়িয়ে উড়াল দেবার প্রত্যাশায়!

মুমু আর স্বপ্নাহত (ওরফে জিহাদ)। আমার খুব প্রিয় সচলদের দুজন। এবার জানালা খোলার কাজটা এই দুজন করেছে। জানালা খোলা পেয়েছি, দৌড়ে বের হয়ে গেছি সেই খোলা জানালা দিয়ে, উড়ে বেরিয়েছি দিনমান, একদমই নিজের মতো করে। আমাকে এই অসামান্য সুযোগটুকু করে দেবার জন্য হের্সৎলিশেন ডাংক মুমু এবং জিহাদ।

গত দুই বছরে এমন অনেক শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু মিলেছে যাদের বেশিরভাগকেই এমনকি এই জীবনে কখনো দেখিওনি। এই বন্ধুরা আমাকে আমার বিশেষ দিনটিতে নানাভাবে শুভাশীষ জানিয়েছেন, আমাকে কৃতজ্ঞতায় অভিসিক্ত করেছেন। ফিলেন ডাংক! ফিলেন ফিলেন ডাংক!!

No comments: