Thursday, August 28, 2008

গুরুচন্ডালী - ০০৯

০১।

বহুদিন পরে পরানের দোস্তের দন্তমোবারক দেখার সৌভাগ্য হইছে। সেই গুড়াগাড়া বেলায় বাণিজ্যমেলায় গেলে কিংবা কোনো গ্যাদারিং ফ্যাদারিং সংক্রান্ত জায়গায় গেলে তারে বলা হতো তুই যেইখানেই থাকস দন্তবিকশিত হাসি ঝুলাইয়া রাখবি তোর মন্ডলমুখে। এছাড়া তো তোরে চৈত্রমাসের ভর দুপুরেও চর্টলাইট মাইরাও খুঁইজা পাওন যাইবো না।

আমি জিগাইলাম অ দোস্ত দ্রুইট পাহাড় কোনদিকে রে!
দোস্ত জানায়, এইতো দুই ইশটপ পরেই। ক্যা!
আমি বলি এমনেই। কিন্তু কথা হইলো ঐ পাহাড় এপিং পিপিং ছাড়ায়া কালো শহরের দিকে আসলো ক্যামনে?
দোস্ত কয়, কি আবোল তাবোল কস হালার নাতি। হারা দুনিয়া গাড়ি চালায়া ভাইজা খাইলি আর অখন কস ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী কবে থাইকা! তুই কি নীল পাহাড়ের কথাও ভুইলা গেলি নাকি!
আমি এইবার কনফিডেন্ট জবাব ছুড়ি, তা ভুলুম ক্যা হালায় ভূষা। ঐ জিনিষ তো পিপিং লাইনেই!

আমার এই কথা শুইনা দোস্ত আমার হাসতে হাসতে টাশকি খাইয়া যায় আরকি! আমি বেক্কলের মতো নাক ঘঁষতে থাকি। কয়, ঠান্ডা কলের তলে মাথা চুবাইয়া রাখ। ঠান্ডা হইবো!

বুঝলাম ৭ বছর অনেক লম্বা একটা সময়। মাথার ঘুলিঘুপচিতে ফাঁড়ি রাস্তা, সদর রাস্তার মানচিত্র আঁকা থাকার কথা থাকলেও আদতে তা নাই। কখন সেগুলা ম্যালফাংশনের কবলে পইড়া লাইন-বেলাইন হইয়া গেছে সেটা টেরও পাই নাই!

০২।

ভ্রমনরত খালাতো ভাইয়ের সম্মানে পুরা জ্ঞাতিগুষ্ঠি গেছিলাম এমিউজমেন্ট পার্কে। যতোটা টাশকি খাওয়ার কথা আছিলো ততোটা খাই নাই। ক্যান খাই নাই সেইটা লাখ টাকার প্রশ্নো। পল্টি খাওয়া রোলার কোস্টারের চেহারা মোবারক দেইখা ঐদিক দিয়া হাঁটা দেই নাই ভুলেও। ছোট ভাই আর ভাতিজা কয়েকটন পরিমান আনন্দ নিয়া বার কয়েক ঐটাতে চইড়া আসছে। আর নরমাল রোলার কোষ্টার তো পানিভাত!

"ভাসারবান", রোলার কোস্টারের পানির ভার্সন। এইটা ততোটা "ডেন্ডারাস" না মনে কইরা ভাস্তি সহ গেলাম। ভাই আর ভাবী গেলো না। তো লাইন দেখি দুইটা। একটা ওয়াইল্ড আরেকটা স্টোন। আমি তো আর জম্মন ভাষা খুবেকটা বুঝি না। ছোট ভাই দেখে শুনে ভ্রমনরত খালাতো ভাই, আমার ভাস্তি আর আমারে ওয়াইল্ড লাইনে রেখে নিজে আর ভাইস্তা কেটে পড়লো স্টোন লাইনের দিকে। বললো আমাদেরটাই নাকি অপেক্ষাকৃত সহজ।

নৌকার আদলের কোস্টার যাত্রা শুরু করলো। কোন এক ঘুরপথে টুকুশ করে একটা ছবিও উঠে গেলো। সামনে খালাতো ভাই, তারপর ভাস্তি আর একদম পেছনে আমি। ভাস্তি সাইজে তেলাপোকা টাইপের হওয়াতে আমার দুইহাত দিয়ে সীটবেল্টের মতো আটকে রেখেছি। মজাই হচ্ছে। হঠাৎ দেখি সামনে বিশাল বড় খাদ। আমি এই খাদ দেখে ভয়ের চোটে দোয়াদুরুদ পড়াও ভুলে গেলাম। খাদের কিনাড়ায় এসে আর কিছু মনে নেই। যখন সম্বিৎ ফিরলো তখন শুনি ভাস্তি বলতেছে, "চাচা আমি তো পুরা উড়াল দিতাছিলাম!" আর আমি ভাবি, প্রায় সোজা হয়ে পড়ন্ত ঐ নৌকায় যদি কোনোমতে আমার হাতটা ফস্কে যেতো তাইলে কী অবস্থাটা হইতো!

এই ঘটনার অবশ্য শোধ নিছিলাম দুইটা ঘটনা ঘটিয়ে। ঘটনা এক. বিশাল বড় ফ্যামিলি নৌকায় যেখানে বেশ বড় এ্যাবড়ো থেবড়ো পানিপথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজেকে প্রায় গোসল করায়ে বের হতে হয়, সেখানে মাঝপথে বিশাল ঘিরিঙ্গি টাইপের একটা 'পাদ' মেরে। আমাদের সঙ্গী কয়েকজন বিদেশী আরোহীর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেখে মনে যে আনন্দ পাইছি সেইটা ঐ নৌকায় নিজেরে কাকের মতো ভিজে চুপচুপা অবস্থায় আবিষ্কার করার বিরক্তির বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

দ্বিতীয় ঘটনাটার বলি ছিলো আমার সিধামিধা খালাতো ভাই। বেচারা জানখান্দান করা কোনো রাইডেই চড়ে নাই। ট্রেন, চড়কিগাছ এইসব ননহার্মফুল বাহনে উইঠা প্রবল তৃপ্তিতে ঢেঁকুর তুলতে সে যখন মত্ত তখনই তারে নিয়া ঢুকলাম রহস্যময় প্রাসাদে। ঢুকার পথেই এক কিম্ভুতকিমাকার ছদ্মবেশধারী কেউ খালাতো ভাইকে এমন ভয় পাইয়ে দিলো বেচারা আরেকটু হলেই যায় আরকি!

নানা চিপাগলিটলি ঘুরে শেষে গিয়ে হাজির হলাম বিশাল এক হল ঘরে। এখানে দেয়ার ধরে অনেক গুলো চেয়ার সাজানো। চেয়ারের ওপর থেকে আবার শক্ত বেল্টের মতো জিনিষ ঝুলানো। বুঝলাম এইটাই সেইটা! ফ্রী-ফল। একটানে কয়েকশ ফুট উপরে তুলে নিয়ে আস্তে করে ছেড়ে দেয়। ব্যস এইবার বুঝ ফ্রী-ফল কী জিনিষ! ভাইস্তা আর আমি মোটামুটি পিছলাইয়া বের হয়ে আসলাম হল ঘর থেকে। ছোট ভাই রয়ে গেলো। আমার পেছন পেছন দরজা পর্যন্ত এসে খালাতো ভাই বলে কই যাস! বেচারা তো ভাষাবুলি কিছুই বুঝে না। আমি বললাম আমার বাথরুম পাইছে। আপনে থাকেন। ঐযে বগা আছে, বগার সাথে গিয়া বইসা থাকেন। এইখানে মনেহয় থ্রি-ডি সিনেমা দেখাবে। বেচারা হাতের ব্যাগ আমার কাছে রেখে ফিরে গেলো আর ঠিক তার পরপরই সেই হল ঘরটার বাইরের দিকের দরোজাটা গেলো বন্ধ হয়ে। ভাইস্তা বলে, চাচা না ডরায়, হার্ট এ্যাটাক করলে? জবাবে আমি বলি, কেবল আল্লাহরে ডাক এখন!

No comments: