Saturday, October 18, 2008

গুরুচন্ডালী - ০১১

প্রসঙ্গঃ দে দৌঁড়ঃ

বৈরাগী মন হলে যা হয় আরকি। ঘরবাড়ি-বিধি-বাঁধন ভালো লাগে না। মন খালি উড়ুৎ ফুরুৎ করে। সব ছেড়ে ছুড়ে ভাগা দিতে মন চায়। সবাই যেখানে সামনের দিকে দৌঁড়ায়, দৌঁড় শেষের লালফিতা ছুঁয়ে বিজয়ী হতে চায় সেখানে আমি হঠাৎ থেমে চোখ বন্ধ করে উল্টা দিকে ছুট লাগাই। কারো চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসে না। চোখ বন্ধ হলে কানও বন্ধ হয়ে যায়। মাথায় তখন একটাই চিন্তা কাজ করে। 'দে দৌঁড়', লাগা ভোঁ-দৌঁড়!

কিছুদিন পরপর যখন সবকিছু নাসিকা পর্যন্ত ভরে যায়, যখন আর কোনো কিছু ভালো লাগেনা, যখন সবকিছু অসহ্য হয়ে পড়তে শুরু করে- তখনই সবকিছু থেকে ছুটি নিতে হয় আমার। সবকিছু শাটডাউন করে বেরিয়ে পড়ি একদিকে। কোনো উপলক্ষ থাকলে ভালো নাহলেও ক্ষতি নেই। উপলক্ষ বানিয়ে নিতে কষ্ট হয় না। অনেকদিন থেকেই একটা দৌঁড় ডিউ হয়েছিলো। সবকিছু অসহ্য লাগতে শুরু করেছিলো বেশ কিছুদিন ধরে। নানান ঝামেলায় যখন নাভিশ্বাস চরমে তখনই সুযোগটা এলো। এক সিনিয়র ভাই এলেন ফ্রাইবুর্গে, কনফারেন্সে। চলে গেলাম সেদিকে। ঘুরেফিরে তাঁকে নিবাসগামী ফ্লাইটে তুলে দিয়ে এখন খালাতো ভাইয়ের এখানে অবস্থান নিয়েছি।

হামধূম এবং হাউকাউঃ

খালাতো ভাইয়ের এখানে এলে যে জিনিষটা হয় তা হলো ভোকাল কর্ডের যথেচ্ছা ব্যবহার। সবাই চিল্লায়। কোনো কারণ ছাড়াই। আমিও চিল্লাই। হুদাহুদিই। মাঝে মাঝে ভাবীকে জিজ্ঞাসী, হুদাহুদি চিল্লাও ক্যা? আস্তে বললেই তো শুনি। ভাবী জবাব দেন, তোমার ভাইয়ের লগে চিল্লাই, ভাইস্তা-ভাস্তির লগে চিল্লাই, তুমিও মাশাল্লা কম যাও না। দশবার না কইলে কথা কানে তুলো না। অতএব, চিল্লানো ছাড়া গতি নাই, কিছুই করার নাই গোলাম হোসেন। এই যেমন এই লেখাটা লেখার সময় কম করে হলেও তিনবার আমার উঠতে হয়েছে। একবার খাওয়ার জন্য। একবার গোসল করার জন্য আরেকবার কেনো উঠছি সেটা ভুলে গেছি। এবং প্রতিটা বারেই মহাতোড়েজোরে হাউকাউ হওয়ার আগে উঠি নাই। বিনাযুদ্ধে নাহি দেবো শূচাগ্র মেদিনী। একেবারে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ে গেছি! হাসি

... এবং খোমাখাতাঃ

ফেইসবুকে বন্ধু হবার আহ্বান এসে জড়ো হচ্ছে দিনদিন। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করতাম। এখন আস্তে করে ফেলে রাখি যদি অচেনা বা আধাচেনা হয়। পুরানো কিছু বন্ধু, কিছু পরিচিত মুখ বন্ধু তালিকায় যোগ হয়েছে। কথাবার্তা চালাচালি, মন্তব্য আদান-প্রদান, বার্তা প্রেরণ-গ্রহন সবই চলে এই মুষ্টিমেয় কয়েকজনের মধ্যে।

এরই মধ্যে একদিন কানাডা থেকে মামাতো বোন জানালেন, "হুমম দেখছিরে দেখছি..."। আমি বলি কী দেখছেন? "কী আবার তোর জার্মান বান্ধবী!" আমি মনে মনে ভাবি, 'লেও হালুয়া! আমার বান্ধবী আর আমি নিজেই দেখলাম না?' চিন্তিত বেশ কয়েকপ্রস্ত জেরা-প্রতিজেরার পর বুঝা গেলো যাকে আমার জার্মান বান্ধবী বলে বোন ভুল করেছিলো সে আসলে আমার (গার্ল)বান্ধবী নয়। আমেরিকা থেকে গোয়েটে ইনস্টিটিউটে পড়তে আসা এক বালিকা। তার একুশতম জন্মদিনটাকে একটু স্মরণীয় করে রাখতে কোলনের কয়েকটা জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম মাত্র! সব কিছু খুলে বলতেই বোনের মুখ থেকে "আহা" জাতীয় কিছু একটা বেরিয়ে গেলো। আর আমি মনে মনে বলি, "আমার কোনো ডোরে বাঁধা পড়া কিংবা ডোরে বেঁধে ফেলা এতোই সোজা!"
তবে খোমাখাতা নিয়ে গিয়ানজামের অবকাশ সর্বদাই রয়ে যায় আমার ক্ষেত্রে।

ধুরো হালায়...

ফ্রাঙ্কফুর্টে না কই যাইবো খালাতো ভাইয়ের ফ্যামিলি ঈদের (পূনর্মিলনী) পার্টিতে। এখন বাঁটে পইড়া আমারেও তাগো লগে যাইতে হইবো। এই নিয়া বাসায় পুরাদমে হাউকাউ। আমি শান্তিমতো একটু ব্লগামু তারও সিসটেম নাই। আমারে রেডি হওনের লাইগ্যা চাইরজনে প্রতি দশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর তাগাদা দিতাছে। ঐ যে আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া শুরু হইছে। ধুরো বাল যাইগা....!

No comments: